সারাদেশ

উত্তরবঙ্গের ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন রাখবে পুলিশ: ডিআইজি

ডেস্ক রিপোর্ট: ঈদ মানে খুশি! ঈদ মানে আনন্দ! ঈদের আনন্দ পরিবারের সঙ্গে ভাগাভাগি করার জন্য নাড়ির টানে বাড়ি ফেরেন মানুষ। কিন্তু ঈদযাত্রায় সাধারণ মানুষের ভোগান্তির আরেক নাম ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়ক।

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়ক দিয়ে উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলসহ ২৬টি জেলার মানুষ চলাচল করেন। ফলে ঈদে বাড়তি পরিবহনের চাপ পড়ে মহাসড়কটিতে।

দুই ঈদের ছুটিতে এ মহাসড়কে যানজট ও ভোগান্তি নিত্যদিনের সঙ্গী। গত কয়েক বছর ধরে টাঙ্গাইল জেলা পুলিশ প্রশাসনের নানা উদ্যোগে স্বস্তিতেই বাড়ি ফিরেছেন ঘরমুখো মানুষ। এবারের ঈদেও নেওয়া হয়েছে নানান পদক্ষেপ।

ভোগান্তি দূর করতে উত্তরবঙ্গগামী গাড়িগুলো ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত ওয়ানওয়ে (একমুখী) চলাচল করবে। ঢাকাগামী যানবাহন বঙ্গবন্ধু সেতু পার হয়ে গোলচত্বর দিয়ে ভূঞাপুর হয়ে এলেঙ্গা প্রবেশ করবে। এতে করে যানজট অনেকটা কমে যাবে।

মহাসড়কে চলছে মেরামত কাজ, ছবি-বার্তা২৪.কম সরেজমিন দেখা যায়, ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের এলেঙ্গা পর্যন্ত যানবাহনগুলো দ্রুতই আসতে পারে। কিন্তু এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার সড়ক দুই লেন হওয়ায় যানজটের সৃষ্টি হয়। এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু ১৩ কিলোমিটার সড়কের নির্মাণ কাজ চলমান। এলেঙ্গা থেকে ভূঞাপুর পর্যন্ত আঞ্চলিক সড়কেও রয়েছে একাধিক খানাখন্দ। সে কারণে ঢাকাবাহী যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বঙ্গবন্ধু সেতু কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন প্রায় ১৫-২০ হাজার যানবাহন বঙ্গবন্ধু সেতু দিয় পার হয়। ঈদের সময় তা বেড়ে যায় তিনগুণ। মোটরসাইকেলের চাপ থাকে অনেক বেশি। ১৩-১৪ হাজার মোটরসাইকেল সেতু দিয়ে পার হয়। এতে সেতুর উভয় প্রান্তে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয় এবং ভোগান্তিতে পড়েন ঘরে ফেরা মানুষ।

উত্তবঙ্গগামী ট্রাকচালক ইকবাল হোসেন বার্তা২৪.কমকে বলেন, চন্দ্রা থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত আমাদের আসতে কোনো সমস্যা হয় না। কিন্তু এলেঙ্গা থেকে সেতু পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়। গাড়ি ওভারটেকিং ও বিকল হওয়ার ফলে যানজট লেগে যায়।

উত্তরবঙ্গগামী বাসচালক শরিফ মিয়া বলেন, এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার রাস্তার কাজ চলছে। এ কারণে মহাসড়কে যানজট হবে। ঢাকা থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত চার লেন। এলেঙ্গার পর থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত দুই লেন হওয়াতে যানজটে পড়তে হয়। মহাসড়কে যানজট হলে ৭-৮ ঘণ্টা বসে থাকতে হয়।

বিগত বছরগুলোর অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, কয়েক বছর ধরে তেমন একটা যানজটে আটকা পড়ে থাকতে হয় না। তবে এবার এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত যানজটের আশঙ্কা করছি।

যাত্রী সুমন মিয়া বলেন, ঈদে যানজট হলে বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হয় নারী ও শিশুদের নিয়ে। এলেঙ্গা পর্যন্ত ভালো মতো আসতে পারলেও এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত যানজটের সৃষ্টি হয়। তবে কয়েক বছর ধরে যানজট কিছুটা কম হয়।

যাত্রী জাবেদ বলেন, এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের কাজ চলছে। এই কাজ যদি ঈদের সময় বন্ধ রাখে, তাহলে ভালো হয়।

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ঈদের সময় মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বেশি থাকে। কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়। ১৩ কিলোমিটার দুই লেন হওয়ায় সড়কে যানজট থাকে। একসঙ্গে এত গাড়ি রাস্তায় নামলে সমস্যা হবেই। অতিরিক্ত গাড়ির চাপের পাশাপাশি ফিটনেসহীন গাড়ি ও বেপরোয়া গাড়ি চলাচলই একটি বড় সমস্যা।

এলেঙ্গা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মীর মো. সাজেদুর রহমান জানান, ঈদে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা নিরাপদ রাখতে এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ড থেকে উত্তরবঙ্গমুখী যে লেনটি আছে, সেই ডাবল লেনটিকে ওয়ানওয়ে করা হবে।

এছাড়া বঙ্গবন্ধু সেতু থেকে গোল চত্বর হয়ে যে সড়কটি ভূঞাপুর হয়ে আসছে, সেই সড়কটি ঢাকামুখী লেন হয়ে যানবাহন ঢাকা যাবে। ঈদের আগেই চার লেনের যে কাজ চলছে, তা বন্ধ করে দেওয়া হবে।

তিনি বলেন, ইতোমধ্যে এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার সড়কের ৫ কিলোমিটারের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। সেই সড়ক দিয়েও যানবাহন চলাচল করতে পারবে। এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত আমাদের মোটরসাইকেল মোবাইল টিম থাকবে। কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে দ্রুতই রেকার দিয়ে সরানো যাবে, সেই ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।

বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের বঙ্গবন্ধু সেতু সাইট অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল হক খান পাভেল জানান, ঈদে মানুষের নির্বিঘ্নে বাড়ি যাওয়া নিশ্চিত করতে এবং ঈদের আগে সেতু ও সেতুর সংযোগ সড়ক যানজটমুক্ত রাখতে নানা পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

ঈদে ঘরমুখো মানুষ যাতে নির্বিঘ্নে বাড়ি যেতে পারে, সে জন্য সেতুর দু’পাশে ৯টি করে ১৮টি এবং মোটরসাইকেলের জন্য ২টি করে ৪টি টোল বক্স বসানো হবে।
স্বাভাবিক সময়ে বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে ১৮ থেকে ২০ হাজার যানবাহন চলাচল করে। সেতুতে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে সেই গাড়ি দ্রুত সরানোর জন্য দুটি রেকার প্রস্তুত রয়েছে। সেতুর মাঝে আমাদের লোক থাকবে। প্রতি ঈদে ১৩-১৫ হাজার মোটরসাইকেল সেতু দিয়ে পার হয়। গত ঈদ-উল আজহার সময় মোট ৫৯টি গাড়ি দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিল, যার ৫৩টিই ঘটেছিলে সেতুর ওপর।

মহাসড়ক নিরাপদ রাখতে সচেষ্ট কর্তৃপক্ষ, ছবি- বার্তা২৪.কম অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মো. শরফুদ্দীন বলেন, এলেঙ্গা থেকে সেতু পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার উত্তরবঙ্গগামী যানবাহন একমুখী চলাচল করবে। এবার ঈদে ৭শ পুলিশ সদস্য ২৪ ঘণ্টা হাইওয়েতে পালাক্রমে ডিউটি পালন করবেন। সড়কে রেকার রাখা হবে।

তিনি বলেন, সড়কে যে কাজ চলছে, তা আমরা পরিদর্শন করেছি। যেখানে মেরামত করা দরকার, মেরামত করিয়েছি। যখনই আমরা প্রয়োজন মনে করবো, তখনই সড়ক একমুখী করে দেওয়া হবে।

যাত্রীরা যানজটে আটকা পড়লে মহাসড়কের পাশে পেট্রোল পাম্প, হোটেল রেস্তোরাঁগুলোতে যাতে শৌচাগার ব্যবহার করতে পারেন, সেজন্য তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এ জন্য ২৫টি অস্থায়ী টয়লেট নির্মাণ করা হবে। ইফতার ও সেহরিতে যাতে অসুবিধা না হয়, সে জন্য এলেঙ্গা থেকে সেতু পর্যন্ত যানজটে আটকেপড়া মানুষদের পানি, শুকনা খাবার সরবরাহের জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *