সারাদেশ

প্রাচীন স্থাপত্যের অনন্য নিদর্শন মজিদবাড়িয়া শাহী মসজিদ

ডেস্ক রিপোর্ট: দক্ষিণাঞ্চলের প্রাচীন মুসলিম স্থাপত্যের অনন্য নিদর্শন মজিদবাড়িয়া শাহী মসজিদ। এটি প্রায় ছয়’শ বছরের পুরোনো। বর্তমানে সংস্কারের অভাবে ধ্বংসের দারপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে মসজিদটি।

মসজিদটি প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধীনে থাকলেও দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় হারাতে বসেছে ঐতিহাসিক সৌন্দর্য ও ঐতিহ্য। মসজিদের ঐতিহ্য ধরে রাখতে সব ধরনের সহযোগিতা দেয়ার কথা জানালেন জেলা প্রশাসক নূর কুতুবুল আলম।

পটুয়াখালী জেলার মির্জাগঞ্জ উপজেলা সদরের ১৫ কিলোমিটার দক্ষিণে সাড়ে পাঁচশো বছরের ইতিহাস কাঁধে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ঐতিহাসিক মজিদবাড়িয়া শাহি মসজিদটি।

মসজিদের গায়ে প্রাপ্ত একটি শিলালিপি থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, স্বাধীন বাংলার ইলিয়াস শাহীর শাসনামলের শেষের দিকে সুলতান নাসিরউদ্দিন মাহমুদ শাহের পুত্র রুকনউদ্দিন বারবক শাহের (১৪৫৯-১৪৭৬ খ্রিঃ) শাসনামলে খান-ই মোয়াজ্জম উজিয়াল খান ১৪৬৫ খ্রিস্টাব্দে এই মসজিদ নির্মাণ করেন। মসজিদের গায়ে বিভিন্ন ধরনের শিল্প কর্মের কারুকাজ এখনও যে কারও নজর কাড়বে।

মসজিদটির দৈর্ঘ্য ৪৯ ফুট এবং প্রস্থ ৩৫ ফুট। এছাড়া পূর্ব দিকে রয়েছে সাড়ে ২১ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ৮ ফুট প্রস্থ একটি বারান্দা। মসজিদটির প্রধান কামরা বর্গাকারে নির্মিত এবং প্রত্যেকটির বাহু সাড়ে ২১ ফুট লম্বা। মসজিদের দেয়ালগুলি প্রায় সাড়ে ৬ ফুট চওড়া। মসজিদের পূর্ব দিকে ৩টি এবং উত্তর ও দক্ষিণ দিকে রয়েছে ৪টি করে দরজা। মসজিদটির প্রধান কামরার ৪ কোনায় ৪টি এবং বারান্দার ২ কোনায় ২টি মিনার আছে। মসজিদের পাশেই রয়েছে এক বিশাল দীঘি।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বৃটিশ আমলের শেষ দিকে সুন্দরবন এলাকার জঙ্গল পরিষ্কার করার সময় এই মসজিদটির সন্ধান পাওয়া যায়। আবার কেউ কেউ ধারণা করছে মসজিদটি মাটির নিচ থেকে অলৌকিকভাবে ওঠে এসেছে। ১৯৬০ সালে মসজিদটি মানুষের নজরে আসে। মসজিদটির নামানুসারেই স্থানীয় গ্রাম ও ইউনিয়নের নামকরণ করা হয় মজিদবাড়িয়া।

স্থানীয় যুবক মোঃ রাব্বি ইসলাম বলেন, আমরা ছোটবেলা থেকেই দেখেছি মসজিদটা এমনই। আমার দাদা দাদিও বলেছেন তারা ছোট থেকে মসজিদটা এভাবেই দেখছে। আমাদের মসজিদে একটা অজুখানা নেই এবং এই মসজিদের রাস্তাটা খুব জরাজীর্ণ অবস্থায় আছে। তাই আমাদের এই মসজিদে একটি অজুখানা ও মসজিদের রাস্তাটা সংস্কার করা খুব জরুরি। 

মসজিদের ইমাম মোঃ ইব্রাহীম খলিল বলেন, আমরা শুনেছি এই মসজিদ খান উজিয়াজ খান কর্তৃক বাদশাদের আমলে নির্মিত হয়েছে। প্রতিদিন এলাকার বহু মানুষ এই মসজিদে নামাজ পড়তে আসে। মসজিদটির চারদিক ভাঙা, যেকোনো সময় ভেঙে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ভেঙে পড়ার পূর্বেই সংস্কারের মাধ্যমে ঐতিহাসিক এই মসজিদটি সংরক্ষণ করা জরুরি।

মসজিদ কমিটির সদস্য মোঃ তৈয়েবুর রহমান বলেন, ঐতিহ্যবাহী এই মসজিদটি বর্তমানে জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি সংস্কার করার৷ যেহেতু এটি প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের আওতায় রয়েছে তাই আমরা মসজিদটির ঐতিহ্য রক্ষা ও মেরামতের মধ্য দিয়ে সংরক্ষণ করার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছি। সরকার বাহাদুরের সুনজর থাকলে এই ঐতিহাসিক মসজিদটি সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে।

এ বিষয়ে পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক নূর কুতুবুল আলম বলেন, আমরা প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরে যোগাযোগ করব তারা যাতে একটা ফান্ডের ব্যবস্থা করে। কারণ ভালো কিছু করতে গেলে অবশ্যই ভালো ফান্ডের দরকার। যদি তারা বরাদ্দ দিতে না পারে যতটুকু ম্যানেজ করা যায় ততটুকু দিয়ে সংস্কার করা দরকার। আমরা মির্জাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে কথা বলবো যাতে তিনি প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহণ করেন।

মসজিদটি দ্রুত সংস্কারের মাধ্যমে বাংলাদেশে মুসলিম শাসনের ইতিহাস, মুসলমানদরে অবদান ও ঐতিহাসিক নিদর্শন আগামী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে সরকার দৃষ্টি দেবে, এমন প্রত্যাশা সবার।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *