আন্তর্জাতিক

ভারত ভ্রমণে ভোগান্তি: জীবন হারাচ্ছেন পাসপোর্টধারীরা

ডেস্ক রিপোর্ট: বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারত যাতায়াতে নোম্যান্স ল্যান্ডে দীর্ঘ লাইনে সীমাহীন দুর্ভোগ বেড়েছে পাসপোর্টধারীদের।

ভুক্তভোগীরা বলছেন, শীত, গরম আবার কখনো রোদ, বৃষ্টি মাথায় নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লম্বা লাইনে অসুস্থ হয়ে একের পর এক মৃত্যুর ঘটনা ঘটলেও টনক নড়েনি কর্তৃপক্ষের। তবে বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, প্যাসেঞ্জার টার্মিনালের সম্প্রসারণের কাজ চলছে আর ভারত অংশে যাত্রী সেবা বাড়াতে তাদের অনুরোধ জানানো হয়েছে।

বন্দর সূত্রে জানা যায়, বেনাপোল বন্দর ব্যবহার করে প্রতিদিন ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে প্রায় ৮ হাজার পাসপোর্টধারী যাত্রী যাতায়াত করে থাকেন। এদের অধিকাংশই চিকিৎসাসেবী।

আগে দূরপাল্লা থেকে ছেড়ে আসা রাত্রের বাসগুলো বেনাপোল বন্দরে পৌঁছাতো সকাল ৬টায়। কখনো কখনো ফেরিঘাটের যানজটে আরো দীর্ঘ সময় লাগতো। তবে পদ্মাসেতু চালু হওয়াতে যাতায়াতের এ ব্যবস্থা সহজ ও নিরাপদ হয়েছে।

এখন দূরপাল্পার বাসগুলো রাত সাড়ে ৩টার মধ্যে বন্দরে এসে পৌঁছায়। তবে বন্দর খোলে সকাল সাড়ে ৬টায়। বন্দরে প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল থাকলেও সেখানে পাসপোর্টধারীদের বিশ্রামের সুযোগ নেই। ফলে এখানে ৩ ঘণ্টা সড়কের ওপর দাঁড়িয়ে শীত, গরম, রোদ, বৃষ্টি মাথায় নিয়ে অপেক্ষা করতে হয় যাত্রীদের। পরে সকাল সাড়ে ৬টায় বন্দর খুললে শুরু হয়, যাত্রীদের ভ্রমণ ও বন্দর ট্যাক্স কেটে ইমিগ্রেশন কার্যক্রম।

৫ হাজার যাত্রীর ইমিগ্রেশন সারতে ২ ঘণ্টা সময় লাগে। পরে ভারতের ইমিগ্রেশন ও কাস্টমসে জনবল সংকটে কার্যক্রম সারতে নোম্যান্স ল্যান্ডে দীর্ঘ লাইন পড়ে। বিএসএফের নিয়ন্ত্রণাধীন সীমান্তে অনেকটা জেলখানার মতো পাসপোর্ট যাত্রীদের ৩ থেকে ৫ ঘণ্টা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। দুই পারের সময় ধরে কখনো কখনো ৬ থেকে ১০ ঘণ্টা পর্যন্তও বিড়ম্বনা সইতে হয় যাত্রীদের। এসময় কেউ অসুস্থ হয় পড়লে বা জরুরি প্রয়োজন হলে তাদের আর নোম্যান্স ল্যান্ডের বাইরে আসার সুযোগ থাকে না।

অভিযোগ পাওয়া গেছে, ঘণ্টার পর ঘণ্টা লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে অসুস্থ হয়ে জরুরি চিকিৎসা না পেয়ে গত ৪ বছরে অন্তত ৫ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এ দুর্ভাগ হয়েছে ফেরার সময়েও। তবে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এসব সমস্যা নিরসনে অনেকবার ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে বিভিন্ন সভায় অনুরোধ জানালেও সেবার মান বাড়েনি।

ইমিগ্রেশনের তথ্য বলছে, সবশেষ ৩০ মার্চ বাংলাদেশ ইমিগ্রেশন কার্যক্রম শেষ করে ভারতে প্রবেশের জন্য নোম্যান্স ল্যান্ডে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে অসুস্থ হয়ে মারা যান যশোর কোতোয়ালি থানার বকচর এলাকার গোলাম রসুলের ছেলে নুর ইসলাম।

এর আগে ২০২৩ সালের ২১ ডিসেম্বর হোসেন শেখ নামে এক বাংলাদেশি পাসপোর্টযাত্রী হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।

তিনি খুলনা জেলার দৌলতপুর উপজেলার পারমানিকপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। এছাড়া ২০২২ সালের ৮ নভেম্বর বেনাপোল সীমান্তে দীর্ঘলাইনে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে অসুস্থ হয়ে মারা যান বিপ্লবী দাস। তিনি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ফুলবাগান এলাকার রবিতোষের স্ত্রী।

২০২১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর আব্দুর রহিম নামে এক বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী যাত্রী হৃদক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান। তিনি ঢাকার দক্ষিণ খান এলাকার মো. জহিরুল হকের ছেলে।

২০১৯ সালের ২ মে বেনাপোল চেকপোস্টে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে দেবেন্দ্র চন্দ্র দাস নামে এক পাসপোর্টধারী যাত্রী মারা গেছেন। দেবেন্দ্র চন্দ্র দাস নারায়ণগঞ্জ জেলার ৪২৫/৯ ডিপি রোড এলাকার মৃত শশী চন্দ্র দাসের ছেলে।

এদিকে, ভুক্তভোগী পাসপোর্টধারী জানান, ভ্রমণ করের অর্থ বাড়লেও বাড়েনি সেবার মান। ভারত সীমান্তে সীমাহীন দুর্ভোগে জীবন হারাচ্ছেন পাসপোর্টধারীরা।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক সুলতান মাহামুদ বিপুল বার্তা২৪.কমকে জানান, বেনাপোল ইমিগ্রেশন কোনোরকমে পার হলেও ভারতীয় ইমিগ্রেশনে কাজের ধীরগতিতে নোম্যান্স ল্যান্ডে দীর্ঘলাইনে অসুস্থ হয়ে মারা যাচ্ছেন পাসপোর্টধারীরা। এ বিষয়ে তারা আন্তর্জাতিকমানের সেবা চেয়েছেন।

বেনাপোল আমদানি, রফতানি সমিতির সহসভাপতি আমিনুল হক বলেন, চিকিৎসা, ব্যবসা ও ভ্রমণে দুই দেশের মধ্যে যাতায়াত করছেন পাসপোর্টধারীরা। ভারত ভ্রমণে প্রত্যেক যাত্রীকে ভ্রমণ কর বাবদ বাংলাদেশ সরকারকে ১ হাজার ৫৫ টাকা ও ভিসা ফি বাবদ ভারত সরকারকে ৮শ ৫০ টাকা দিতে হয়। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না যাত্রীরা ।

এ বিষয়ে বেনাপোল স্থলবন্দর পরিচালক রেজাউল করিম জানান, বেনাপোল বন্দরে যাত্রী ছাউনি করতে জায়গা অধিগ্রহণের কাজ চলছে। ভারত অংশে সেবার মান বাড়াতে দেশটির কর্তৃপক্ষকে সভায় অনুরোধ জানানো হয়েছে।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *