সারাদেশ

বরিশালে ট্রলি উল্টে খাদে পড়ে চালক নিহত

ডেস্ক রিপোর্ট: একের পর এক ব্যাংক লুট, থানচি ও আলিকদমে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে ব্যাপক গোলাগুলির পর শুক্রবার (০৫ এপ্রিল) রাতে কেএনএফ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের এমন কর্মকাণ্ড নিয়ে বিবৃতি প্রদান করেছে।

মিডিয়া ও ইন্টেলিজেন্স উইং, কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) এর প্রাধান ‘কর্নেল সলোমন’ -এর বরাত দিয়ে ফেসবুকে একটি পোস্টে বলা হয়, ‘কেএনএফ কেন শান্তি আলোচনার শর্ত লঙ্ঘন করেছে? আজ এই প্রশ্ন শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটিসহ দেশের সকল বিজ্ঞা মহলের ও উচ্চ মহলের। কেএনএফ বৈঠক কালীন সময়ে স্বাক্ষরিত সমঝোতা শর্তাবলি ভঙ্গের কারণগুলো নিম্নে বিশদভাবে তুলে ধরা হল:

১) সরকার প্রথম সশরীরে বৈঠকে উভয়পক্ষ স্বাক্ষরিত শর্ত মোতাবেক কোনো রকমের কাজ সম্পাদন করেনি, বরং পুরোপুরি লঙ্ঘন করেছে। তা হলো:

ক) জেলে বন্দিদেরকে (যারা কেএনএফ-এর সদস্য নয় ও নিরীহ) এক মাসের মধ্যে ধাপে ধাপে মুক্তি দেবার কথা থাকলেও পাঁচ মাস পেরিয়ে গেলেও মুক্তি দেওয়া হয়নি। শুধু মুক্ত করা হয়েছে সেনাবাহিনীর ক্যাম্প থেকে জেলে বন্দি থাকা মেয়েটি (যে মেয়েটির জেলে বন্দি অবস্থায় গর্ভপাত হয়েছে।

২) বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বৈঠকের শর্তাবলি মারাত্মকভাবে লঙ্ঘন করেছে। যেমন- ক) সিভিলদের দ্বারা সেনাবাহিনীর কাজ বন্ধ হয়নি। আর প্রতিদিন ক্যাম্পে কাজ করতে দেওয়া হলেও গরিবদের হাতে কোনো ন্যায্য পারিশ্রমিক দেওয়া হয়নি; খ) সেনাবাহিনী সরকারের শান্তি আলোচনার প্রতি অনীহা প্রকাশ স্বরূপ নিরীহ জনগণের উপর অহেতুক হয়রানি ও গ্রেফতারের হুমকি দিয়ে আসছে; গ) যে ক্যাম্পগুলি সরিয়ে নেবার কথা সেগুলি সরিয়ে নেওয়া হয়নি। বরং সেখানে ক্যাম্প স্থাপন করে উল্টোভাবে চেকপোস্ট বসিয়ে সেখানে নিরীহ জনগণকে প্রতিনিয়ত হয়রানি করা হচ্ছে।

২) রুমা ক্যান্টনমেন্ট অধীন সুনসং পাড়া সেনা ক্যাম্প থেকে গুম হয়ে যাওয়া নিরীহ দুই জন পাড়াবাসীর ব্যাপারে দ্বিতীয় বৈঠকেও সদুত্তর দিতে ব্যর্থ সরকারি পক্ষ তথা শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি।

৩) ৪ হাজারেরও অধিক নিক্ষিপ্ত হওয়ার ফলে বমদের ধ্বংসপ্রাপ্ত গ্রামগুলোতে (যে গ্রামের লোকজন মিজোরামে শরণার্থী হিসেবে জীবন যাপন করছে) তথা সেই পরিত্যক্ত পাড়াগুলো বিজাতিদেরকে বেদখলের নির্দেশ দিয়েছে রুমা জোনের সেনা ক্যাম্প। এটি একটি জাতিগত দাঙ্গা সৃষ্টির সেনাবাহিনীর অসৎ উদ্দেশ্যে।

৪) সীমানা সড়ক নির্মাণ বন্ধ হয়নি এবং আদিবাসীদের পাহাড় বন-জঙ্গল উজাড় করে সেখানে বিল্ডিং নির্মাণের মাধ্যমে পর্যটন শিল্প গড়ে তুলবার চেষ্টা করা হচ্ছে, যা সীমান্তবর্তী অঞ্চলের আদিবাসী জনগোষ্ঠীদের জন্যে হুমকিস্বরূপ।

৫) শান্তি প্রতিষ্ঠার নামে শুধু প্রহসন ও কালক্ষেপণ করে কেএনএফকে দুর্বল ও নিস্তেজ করবার পাঁয়তারা চালিয়ে যাচ্ছে তা দিবালোকে কেএনএফ-এর ইন্টেলিজেন্স উইং-এর নজরে এসেছে।

৬) সরকারের কাছে কেএনএফ-এর উত্থাপিত যৌক্তিক দাবিগুলো অনুষ্ঠিত কয়েক দফা ভার্চুয়াল ও মুখোমুখি বৈঠকে কোনো স্থান পায়নি। বরং উপঢৌকন প্রদানসহ কিছু চাকুরির বিনিময়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আনার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন সরকার পক্ষ, যা কেএনএফ-এর সাথে বিশ্বাস ঘাতকতার শামিল। আর যেটি শান্তির আলোচনাকে মারাত্মকভাবে ব্যাঘাত ঘটিয়েছে।

৭) ২য় বার মুখোমুখি বৈঠকে কেএনএফ-এর দাবির প্রসঙ্গে সরকারের প্রতিনিধির কাছে উত্থাপিত প্রশ্নের কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি সরকারি পক্ষ। বরং কেএনএফ-এর অবস্থান ও আচরণ নিয়ে আমাদের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন।

৮) একদিকে পিস টককে কেন্দ্র করে সকল সশস্ত্র তৎপরতা কেএনএফকে বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে, অন্যদিকে রাষ্ট্রবাহিনী মদদপুষ্ট সংস্কারপন্থি সন্ত্রাসী বাহিনী ও সরকারপন্থি জেএসএসকে বাংলাদেশ গোয়েন্দা সংস্থা কেএনএফ-এর বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিচ্ছে। তাহলে কেএনএফ -এর পক্ষ থেকে তথা একপাক্ষিক শান্তির প্রক্রিয়া কতটুকু সুফল বয়ে আনবে এই প্রশ্ন রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রের সকল সচেতন মহলের কাছে।

৯) এলসিপিই তথা শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি গঠন করা হয়েছে দৃশ্যত শুধু লোক দেখানো আর কুকি-চিন জনগোষ্ঠীর প্রতি মিথ্যা আশ্বাস প্রদানের জন্যে। তারা শুধু নিয়ম বা শর্তাবলি বজায় রাখতে এবং সরকারের নিকট ইমেজ রক্ষার্থে কাজ করেছেন। প্রকৃতপক্ষে, সরকারের প্রতিনিধির মধ্যে আন্তরিকতা ও সদিচ্ছার অনেক ঘাটতি রয়েছে।

১০) শর্ত মোতাবেক সরকার পক্ষ আজ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত। কুকি-চিন জনগোষ্ঠীর জনসাধারণের জন্য কাজ করবার আশ্বাস প্রদান করলেও মানবিক সাহায্য ও ত্রাণ সহায়তার বিষয়ে আজও কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। প্রথমে ৩০ মে. টন খাদ্যশস্য পৌঁছে দেওয়া হয় দুর্গতদের মাঝে, সে সময় মাথাপিছু ৪/৫ কেজি যা একটা পরিবারের কাছে তুচ্ছ মাত্র। এখনও বান্দরবান জেলা পরিষদে ৫৭ মে. টন খাদ্যশস্য পড়ে আছে, যা এখনও বিতরণ করা হয়নি।

‘বাংলাদেশ গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই এবং শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি’র কাছে উপর্যুক্ত অভিযোগতগুলি সতর্কতার বাণী হিসেবে নয়-দশবার কেএনএফ-এর পক্ষ থেকে বলা/উত্থাপন হয়েছে যা পুরোপুরি কার্যকর হয়নি।’

‘এখানে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য এবং দেশের বিজ্ঞ মহল বা নীতিনির্ধারকগণের বিজ্ঞাতার্থে কেএনএফ-এর স্পষ্ট বক্তব্য বিগত- এক বছর বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তাদের কম্বিং অপারেশন কালীন সময়ে একজন বম নাবালিকাসহ ষাটোর্ধ্ব নিরীহ জনগণকে বিভিন্ন মামলায় ফাঁসিয়ে জেলে বন্দি করে রেখেছে। বন্দির কেউই কেএনএফ-এর সশস্ত্র সদস্য নয়। সেনা ক্যাম্পে দু’ জনকে গুম করা হয়েছে, ১৪ জনের উপর গণহত্যা চালিয়েছে।’

‘আলোচনায় যাবার সময় গ্রেফতার হওয়া দুজন কেএনএফ নিরস্ত্র সদস্য এখনও ক্যান্টনমেন্টে বন্দি করে রাখছে। এদিকে কেএনএফ অপারেশন চলাকালীন সময়ে কোনো নিরীহ বাঙ্গালিকে অহেতুক অপহরণ করা হয়নি, অপহরণ করা হলেও প্রয়োজনীয় জিজ্ঞাসাবাদের মুক্ত করা হয়, এর জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত- সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার ও ব্যাংক ম্যানেজার। এ যাবৎ কোনো বাঙালি বন্দি অবস্থায় কেএনএফ ক্যাম্পে নেই। আর কেএনএফ এখন পর্যন্ত কোনো নিরীহ বাঙালিকে হত্যা করেনি। এখানে একেবারেই পরিষ্কার যে, শান্তি আলোচনায় স্বাক্ষরিত সমঝোতা শর্তসমূহ লঙ্ঘন করেছে, কে আসলে শান্তি প্রতিষ্ঠা চাচ্ছে আর কে পাহাড়ে অশান্তি সৃষ্টি করতে চায়।’

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *