সারাদেশ

রোগী দেখার সংখ্যা নির্দিষ্ট করে আইন তৈরি করা হবে: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

ডেস্ক রিপোর্ট: রাজধানীর কল্যাণপুরের অরভী ওভারসীসের সত্ত্বাধীকার মোহাম্মদ খালিকুজ্জামান হিরা। দীর্ঘদিন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শ্রমিকসহ নানা ভিসায় মানুষ পাঠানো ও সৌদি আরবে হজ যাত্রীদের পাঠান। সম্প্রতি সাবেক সেনা সদস্য ও অস্ট্রিলিয়ান নাগরিক এবং রাষ্ট্রপরিত আত্মীয় পরিচয়ে আব্দুল আজিজ ওরফে রাসেল নামের এক ব্যক্তি হিরাকে বলেন, দেশটিতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি রয়েছে। বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিতে চান। হিরাসহ ট্রাভেল ব্যবসায়ীদের বিশ্বাস অর্জনে আজিজ ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে এক কর্ণেলের সঙ্গে মিটিং করান। লেনদেনের চুক্তি শেষে ৫০টি ভিসা দেওয়ার নামে হিরার কাছ থেকে ৭০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন।

কিন্তু পাসপোর্টে ভুয়া ভিসা দেওয়ায় কোনো শ্রমিক বিদেশে যেতে পারেননি। ফলে প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে টাকা ফেরত চাইতে গিয়ে দেখেন আজিজ ও তার সহযোগিরা সবাই আত্মগোপনে চলে গেছেন। শুধু হিরা নয় আজিজের প্রতারণার ফাঁদে পা দিয়ে র্স্ববশান্ত হয়েছেন বহু ট্রাভেল ব্যবসায়ী ও রিক্রুটিং এজেন্সি।

প্রতারণার শিকার হিরা বলেন, নিজেকে অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক ও সেনা বাহিনীর কর্মকর্তা পরিচয় দিতেন। এছাড়া রাষ্ট্রপতির আত্মীয় পরিচয় দিয়ে আমাদের সঙ্গে কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশের ভিসা দেওয়ার কথা বলে আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। এমন কি তার প্রতারণার বিষয়টি টের পেয়ে টাকা ফেরত চাইতে গেলে এই সকল পরিচয় ব্যবহার করে আমাদের হুমকি ধমকি দেওয়া হত। আর রাসেল অস্ট্রেলিয়ান নাম্বার ব্যবহার করতেন। সে সরাসরি আমাদের সঙ্গে দেখা করত না, এজেন্টদের মাধ্যমে যোগাযোগ করত।

ডিএমপির রমনা থানায় ভুক্তভোগীদের মামলার প্রেক্ষিতে রাষ্ট্রপতির আত্মীয় পরিচয় দেওয়া সাবেক সেনা সার্জেন্ট আব্দুল আজিজসহ চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) – সাইবার এন্ড স্পেশাল ক্রাইম (দক্ষিণ) বিভাগ।

গ্রেফতারকৃতরা হলো- মূলহোতা আব্দুল আজিজ ওরফে রাসেল (৫৫), তার অন্যতম দুই সহযোগি মো. নুরুল হুদা (৬৪) ও লুৎফর রহমান রতন (৪৮)।

গতকাল রাজধানীর মিরপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে প্রতারক চক্রের মূলহোতাসহ তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

এ সময় তাদের কাছ থেকে প্রতারণার টাকা হাতিয়ে নিতে ব্যবহৃত বিভিন্ন ব্যাংকের কাগজ, ডেবিট/ক্রেডিট কার্ড, পাসপোর্ট ও নকল সিল উদ্ধার করা হয়েছে।

মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন-অর-রশীদ।

অতিরিক্ত কমিশনার হারুন বলেন, রাষ্ট্রপতির গ্রামের বাড়ি পাবনায়। তারই এলাকার সাবেক সেনা সদস্য আব্দুল আজিজ (৫৫) নিজেকে রাষ্ট্রপতির আত্মীয় ও অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক পরিচয়ে দিয়ে বিদেশে চাকরির ভিসা দেওয়ার নামে বিভিন্ন ট্রাভেল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। আজিজের অন্যতম সহযোগী নুরুল হুদা। মাঠ পর্যায়ে তাদের হয়ে কাজ করে  ফারুক, তুহিন, সরোয়ারসহ বেশ কয়েকজন এজেন্ট। তারা বিভিন্ন ট্রাভেল ব্যবসায়ীদের ভিসা দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ফাঁদে ফেলেন। আজিজের কথিত গ্রামীণ ট্রাভেলসের মাধ্যমে কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ভিসা দেওয়ার নামে টাকা হাতিয়ে নেন। আর নিজেকে অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক বিশ্বাসক করাতে আজিজ অস্ট্রেলিয়ার একটি ফোন নাম্বার ব্যবহার করে খোলা হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে যোগাযোগ করেন। সবাইকে বলেন তিনি অস্ট্রেলিয়াতে থাকেন এবং নুরুল হুদা হলেন তার বাংলাদেশী প্রতিনিধি। ট্রাভেল ব্যবসায়ীরা সাবেক সেনা সদস্য এবং অস্ট্রেলিয়ার হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার দেখে বিভ্রান্ত হয়ে তাকে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী হিসেবেই বিশ্বাস করে। তারা বিভিন্ন মানুষদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা এনে আজিজের কাছে দেয় ভিসা পাওয়ার আশায়। প্রতারক আজিজ তাদের টাকা হাতিয়ে নিয়ে অফিস গুটিয়ে আত্মগোপনে চলে যায়। আর  এই সকল টাকা নিতে ব্যবহার করা ব্যাংক একাউন্ট খোলা হয় ভুয়া এনআইডি কার্ড ও ঠিকানা। ফলে তাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সহজেই খুঁজে পেত না।

আজিজের প্রতারক হয়ে উঠার বিষয়ে হারুন বলেন, আজিজ ১৯৬৮ সালে পাবনায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৮৭ সালে সৈনিক পদে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন এবং ২০০৯ সালে সার্জেন্ট পদ থেকে অবসরে যান। অবসরে যাওয়ার পরে রাজধানীর কাকরাইলে ভিশন-২০২০ নামের একটি মাইক্রোক্রেডিট নামের একটি ক্ষুদ্র ঋণদান প্রতিষ্ঠানে যুক্ত হন। সেই প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন মানুষের প্রায় পাঁচ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে। এই ঘটনায় তার বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। এরপর ২০২০ সাল থেকে নুরুল হুদার সঙ্গে গ্রামীণ ট্রাভেলস এজেন্সি থেকে অস্ট্রেলিয়া-কানাডা থেকে শুরু করে বিভিন্ন দেশে শ্রমিক পাঠানোর কথা বলে প্রতারণার জাল বিস্তার করতে শুরু করেন। তিনি প্রাক্তন সেনা সদস্য এবং অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী বলে সবাইকে পরিচয় দিতেন। আর নুরুল হুদা তার দেশীয় প্রতিনিধি। তার দেশীয় কিছু সহযোগী বিভিন্ন এজেন্টদের কাছে গিয়ে গ্রামীণ ট্রাভেলসের মাধ্যমে কাজ করার পরামর্শ দিতো। আজিজ নিজের নামে রেজিস্টার্ডকৃত কোন কিছুই তিনি ব্যবহার করেন না। সকলেই জানেন তিনি অস্ট্রেলিয়াতে থাকেন। ট্রাভেল ও রিক্রুটিং এজেন্সী ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া কোটি কোটি টাকা নিজের  ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করতেন। প্রতারক আজিজের বিরুদ্ধে  পাঁচটি ও নুরুল হুদার বিরুদ্ধে দুটি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *