সারাদেশ

বাংলাদেশের ঢুকে দুই রাখালকে বিএসএফের গুলি

ডেস্ক রিপোর্ট: দরজায় কড়া নাড়ছে খুশির ঈদ।পবিত্র রমজান মাসে সিয়াম সাধনা শেষে দুয়ারে ঈদের আনন্দ। বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) পবিত্র ঈদুল ফিতর। প্রাণের উৎসবে যোগ দিতে শেকড়ের টানে ফেনীতে আসছেন নানা বয়সী মানুষ। ঈদের আনন্দ এরই মধ্যে ছড়িয়ে গেছে সবখানে। সবাইপবিত্র ঈদের নামাজ আদায়ে পরিবারের সাথে ঈদ আনন্দে ভাসতে মুখিয়ে আছে ।

ঈদের শেষ মূহুর্তের প্রস্তুতি নিচ্ছেন সবাই। জায়নামাজ, তসবি আর টুপির খোঁজে দোকানে দোকানে ভিড় জমাচ্ছেন অনেকেই। পরিবার-পরিজন নিয়ে ঈদের খুশি ভাগাভাগি করতে অনেকে ছেড়েছেন জেলাশহর। গ্রামের প্রতিটি ঘরেই চলছে আনন্দ উৎসব, ছুটিতে গ্রামে এসে পরিবারের সব সদস্যরা একত্রিত হয়েছেন। শেষ দিকের রমজানে একসাথে ইফতার আয়োজন করে ঈদের আগাম প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা। শেকড়ের টান আর উৎসবের আমেজে ভাসার অপেক্ষায় এলাকাবাসি।

কাটলো দীর্ঘ এক মাসের প্রতীক্ষা। পঞ্জিকা অনুযায়ী হিজরি শাওয়াল মাসের ১ তারিখে ঈদুল ফিতর উদযাপিত হয়। বুধবার দেশের আকাশে শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা না যাওয়াতে বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) দেশজুড়ে পালিত হবে পবিত্র ঈদুল ফিতর।

ঈদকে কেন্দ্র করে ফেনী শহর সেজেছে নান্দনিকতার ছোঁয়ায়। ফেনীর মিজান ময়দান যেখানে জেলার প্রধান ঈদ জামায়াত অনুষ্ঠিত হয়, সে ময়দানকে আধুনিকভাবে সাজিয়েছে পৌরসভা। ঘরমুখো মানুষের ঈদযাত্রা নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে ব্যস্ত সময় পার করছে পরিবহন শ্রমিকরা। অন্যদিকে শেষ মূহুর্তের বেচাবিক্রিতে ব্যস্ত ব্যাবসায়ীরা।

সরেজমিনে ফেনী শহর ঘুরে দেখা যায়, সেহরির সময় অব্দি চলছে বেচাকেনা। দোকান ও শপিংমল গুলোতে মানুষের উপচে পড়া ভীড়। সেলুন দোকানে লাইন ধরে চুল কাটতে ব্যস্ত সাধারণ মানুষ।

আশরাফ মাসুম নামে এক দোকানী বলেন, রাতের ৩টা অব্দিও মানুষ কেনাকাটা করছে। আমরা ১৬ থেকে ১৭ ঘটা ডিউটি করেও শেষ করতে পারছিনা। ভালোই বেচাবিক্রি হয়েছে। আর ১দিন, এরপর পরিবারের সাথে ঈদ করতে যাব।

কথা হয় বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের সাথে। ফয়সাল ইবনে আবেদীন। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তিনি। ঈদ করতে ফেনী এসে নিজের অনুভূতি জানিয়ে বলেন, শেষ কয়েকদিন ফেনীতে আসলে অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করে৷ মা বাবার সাথে সেহরি ইফতার করে গ্রামের বাড়িতে ঈদ করা হয়। এ আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করা যাবেনা।

ইসরাত জাহান নামে ঢাকায় বসবাসকারী একজন বলেন, ফেনীতে ঈদের আনন্দ অন্যরকম। নিজ জেলা শহরে ঈদ করতে আসার আনন্দ অন্যরকম। ঈদ যাত্রা অন্যবছরের তুলনায় অনেক ভালো ছিল। নির্বিঘ্নে ফেনী এসেছি।

আফরাশিম মিসা নামে একজন বলেন, গ্রামের বাড়িতে ঈদ করার আনন্দ অন্যরকম। পরিবারের সবাই একত্রিত হয়ে ঈদ উদযাপন করার জন্য মুখিয়ে আছি।

চুল কাটতে ব্যস্ত সময় পার করছেন নাপিত বাবুল শীল। তিনি বলেন, দোকানে কাস্টমার অনেক বেশি। সিরিয়াল ধরেও শেষ হচ্ছেনা। শেষ রাত অব্দি চুল কাটছি, তাও অনেককে ফেরত দিতে হচ্ছে পরদিনের জন্য।

শহরের যানযট নিরসনে নিরলস পরিশ্রম করছে জেলা ট্রাফিক বিভাগ। রাত ১২- ১টা অব্দি ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন তারা। কথা হয় কয়েকজন ট্রাফিক পুলিশের সাথে। তারা জানান, নিজ শহরে ঈদ উদযাপন করার সুযোগ নেই। মানুষের ভোগান্তি লাঘবে কাজ করাই আমাদের ঈদ আনন্দ। জেলা পুলিশের কঠোর নিরাপত্তায় ফেনীর মানুষকে সুন্দরভাবে ঈদ আনন্দ উপহার দেয়ার জন্য ট্রাফিক বিভাগ কাজ করছে।

তবে কিছু মানুষ করতে পারছেন না পরিবারের সাথে ঈদ উদযাপন। রাতের ২টায় কথা হয় শহরের শহীদ শহিদুল্লাহ কায়সার সড়কে একটি এটিএম বুথের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা মাহবুবুল হকের সাথে। পরিবার ছাড়া ঈদ উদযাপনের কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, পরিবারের জন্য টাকা রোজগার করলেও পরিবারের সঙ্গে ঈদ পালনের সুযোগ হয় না। ইচ্ছে থাকলেও পেটের দায়ে বাড়ি যেতে পারি না। ঈদের দিনেও ডিউটি করতে হবে। পরিবারের ঈদ উদযাপনের জন্য বাড়িতে বেতনের টাকা পাঠিয়ে দিয়েছি। আজ ৬ বছর এভাবেই যাচ্ছে। শুরুতে খারাপ লাগলেও এখন মানিয়ে নিয়েছি।

শেষ রাত অব্দি ফুটপাতে চলছে বেচাবিক্রি। ভ্রাম্যমাণ দোকানের একাধিক ব্যবসায়ী বলেন, ঈদ ঘনিয়ে আসার সঙ্গে ক্রেতার সংখ্যাও বাড়ছে। সকালে চাপ না থাকলেও বিকেল হওয়ার পরপরই ক্রেতাদের চাপ বাড়তে থাকে। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের প্রতিষ্ঠান ও বিপণি বিতানের তুলনায় ঈদ সামগ্রীর দাম ফুটপাতে অনেকটা সাধ্যের মধ্যে থাকায় এখানে আসছেন নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষজন। তারমধ্যে বেশিরভাগ লোকজনই আতর, টুপি ও পাঞ্জাবি কিনতে দোকানগুলোতে ভিড় করছেন।

রেহালা বেগম নামে আরেক ক্রেতা বলেন, আমি পৌরসভার ঝাড়ুদারের কাজ করি। তারপরও ছেলে-মেয়েদের খুশি করতে ঈদের কিছু কেনাকাটা করছি। এখান থেকে জামাকাপড়, টুপি ও পাঞ্জাবি নিয়েছি। কম দামে মোটামুটি ভালো পণ্যই পাওয়া যাচ্ছে ফুটপাতের দোকানে।

ফেনী শহর ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক পারভেজুল ইসলাম হাজারী বলেন, মানুষ নির্বিঘ্নে ব্যবসা করছে। কোন ধরনের সমস্যা হচ্ছে না। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ফেনী স্থানীয় সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী, পৌর মেয়র নজরুল ইসলাম স্বপন মিয়াজী, জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন সমন্বিতভাবে মাঠে কাজ করছে।

এদিকে জেলার প্রধান ঈদ জামায়াত সকাল ৮টায় ফেনীর মিজান ময়দানে অনুষ্ঠিত হবে। ঈদকে কেন্দ্র করে মিজান ময়দানকে তাপনিরোধক তাঁবু ও নানা আলোকসজ্জায় সজ্জিত করেছে ফেনী পৌরসভা। মুসল্লীদের জন্য নেয়া হচ্ছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

ফেনী পৌর মেয়র মোঃ নজরুল ইসলাম স্বপন মিয়াজী বলেন, ঈদের আনন্দ জমজমাট করতে ফেনী প্রস্তুত।এবার প্রথম ফেনীতে তাপ ও পানি নিরোধক তাঁবু বসানো হয়েছে। ঈদের দিনে বৃষ্টির পূর্বাভাস থাকাতে এ আয়োজন করা হয়েছে। পাশাপাশি গরমে নিরোধে ভ্রাম্যমাণ এসি ও উপরে ৫ শতাধিক সিলিং ফ্যানের ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়াও ঈদের দিন মুসল্লীদের জন্য তবারক ও পানির ব্যবস্থা থাকবে বলে জানান তিনি।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *