বিনোদন

আত্মশুদ্ধির চেষ্টা পূর্ণতা পায় জাকাত আদায়ের মাধ্যমে: রোজিনা

ডেস্ক রিপোর্টঃ ঢালিউডের কিংবদন্তীতূল্য অভিনেত্রী রেনু রোজিনা। পেয়েছেন সেরা অভিনেত্রীর জাতীয় চলচ্চিত্রপুরস্কারসহ আজীবন সম্মাননা। এখনো চলচ্চিত্রঅঙ্গনে সরব তিনি। নিজেকে নিত্য নতুন আবেশে উপস্থাপন করে তরুণ প্রজন্মের কাছেও সমান জনপ্রিয়তা পেয়েছেন তিনি। আসছে ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে বিশেষ সাক্ষাৎকার দিয়েছেন বার্তা২৪.কমকে। কথা বলেছেন সিনিয়র নিউজরুম এডিটর মাসিদ রণ-

মাসিদ রণ : এবারের ঈদের দিনটা কিভাবে কাটানোর পরিকল্পনা?
রোজিনা : ঈদ মানেই তো উৎসব, ঈদ মানেই আনন্দ। সারা বছর আমরা ঈদের জন্য অপেক্ষা করি। টানা একমাস সিয়াম সাধনার পরে ঈদের দিনটি পাই আমরা। ঈদের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই নামাজ আদায় করে মিষ্টিমুখ করাটা আমাদের বাড়ির রেওয়াজ। আমার মনে হয়, ঈদের দিন যে আনন্দ হয় তার সঙ্গে অন্য কোন দিনের তুলনা হয় না। সারা বছর তো আমারা কতো ধরনের খাবার খাই, কিন্তু ঈদের দিন কোন খাবার রান্না করতে গেলে, খেতে কিংবা খাওয়াতে যে আনন্দ ও তৃপ্তি আসে তা অন্য সময় পাওয়া যায় না। ঈদে আমি কিছু না রান্না করলেও দু এক পদ রেজার্ড আইটেম করবই। আজও করেছি।

অভিনেত্রী রেনু রোজিনা

মাসিদ রণ : ঈদের সবচেয়ে বিশেষত্ব কোথায় বলে মনে করেন?

রোজিনা : দেখুন, ঈদে খাওয়া দাওয়া, নতুন পোশাক, সবার সঙ্গে দেখা করা, ঘুরতে যাওয়া, সিনেমা দেখা এসব তো আছেই। কিš‘ আমার সবচেয়ে ভালো লাগে জাকাতের বিষয়টি। পবিত্র রমযানে আমরা যে আত্মশুদ্ধির চেষ্টা করি সেটি পূর্ণতা পায় জাকাত আদায়ের মাধ্যমে। আশেপাশে দরিদ্র মানুষও যাতে ঈদের আনন্দ পরিপূর্ণভাবে উপভোগ করতে পারে এজন্য তাদেরকে কিছু অর্থ কিংবা নতুন পোশাক জাকাত হিসেবে দেওয়া যেতে পারে। জাকাত আদায়ের পর যে আত্মতৃপ্তি আসে তা আর কিছুতেই পাইনি। এবার আমার জাকাত আদায় শেষ করেছি আলহামদুলিল্লাহ। রাজবাড়ির গোয়ালন্দে আমার গ্রামের বাড়ি, সেখানকার আশেপাশের দরিদ্র মানুষ থেকে শুরু করে আমার উত্তরার বাড়ির আশেপাশের যতো ভিক্ষুক, কেয়ারটেকার, হেল্পিং হ্যান্ড সবাইকে নতুন পোশাক উপহার দিয়েছি। নিজের বাসার বাজার নিজেই করি, নিয়মিত বাজারে যেতে যেতে কিছু দোকানির সঙ্গে পরিচয় হয়েছে। তাদেরকেও উপহার দিয়েছি। নিকট আত্মীয়-স্বজনদের কথা তো আর বলার দরকার নেই। সবাইকে দিয়ে সবশেষে নিজের জন্য কিনি।

অভিনেত্রী রেনু রোজিনা

মাসিদ রণ : এবার ঈদে কী পোশাক পরবেন?

রোজিনা : আমার শাড়ী সবচেয়ে পছন্দ। ঈদের মেইন পোশাক শাড়ীই থাকবে। কোথাও বেড়াতে গেলে শাড়ীই পরব। তবে ঈদের দিন সকালে সালোয়ার কামিজ পরতে আরামবোধ করি। আজও তাই করেছি। কারণ এই সময় একটু কাজ করতে হয়, সালোয়ার-কামিজে কম্ফোর্টেবল লাগে। আমার প্রিয় রঙ কালো। কালো পোশাকতো কিনেছিই, এছাড়া গোলাপী, মাল্টিকালারসহ কয়েকটি পোশাক কিনেছি। এবার তো ঈদে গরম পড়েছে, ফলে আমি একটু কটন কিংবা কটন মিক্স কোন পোশাক বেছে নিয়েছি। গরমে হালকা রঙের পোশাক পরলে ভালো লাগে।

অভিনেত্রী রেনু রোজিনা

মাসিদ রণ : ঈদের সালামির বিষয়টা কতোটা উপভোগ করেন?

রোজিনা : আমার তো ভীষণ ভালো লাগে। শুধু আমার কেন? সালামি পেতে কার না ভালো লাগে? তবে এখন সালামি পাওয়ার চেয়ে দিতে হয় বেশি। এই সময়ে এসে সালামি দিতেই বেশি আনন্দ পাই। আর ছোটবেলায় আমাকে সবাই সালামি দিতেন। ঈদের সকাল থেকেই বাবা-মা, ভাই-বোন, চাচা-মামা সবাইকে সালাম করা শুরু করতাম (হাহাহা)। এমনকি বাড়ির পাশের রাস্তা দিয়ে কেউ গেলে তাকেও সালাম করতাম, যদি টাকা পাই! ছোট মানুষের মন বলে কথা।

অভিনেত্রী রেনু রোজিনা

মাসিদ রণ : ছোটবেলা কথা বললেন। সে সময়ের ঈদের কোন স্মৃতিগুলো বেশি মনে পড়ে?

রোজিনা : ছোটবেলার ঈদ মানেই নতুন জামা আর সালামি। রোযা আসলেই আমার নতুন জামার বায়না শুরু হতো। তার সঙ্গে ম্যাচিং জুতো, চুড়ি, কানের দুল, চুলের ফিতা, লিপস্টিক। এসবের প্রতি ছোটবেলা থেকেই আমার খুব আগ্রহ ছিল। আরেকটি মজার বিষয় ছিল, আমার জামা-জুতা ঘরের এক কোনে এমন জায়গায় লুকিয়ে রাখতাম যাতে কোন বন্ধু বান্ধব দেখতে না পারে! কী রঙের জামা কিনেছি সেটা পর্যন্ত কাউকে বলতাম না। ঈদের আগের রাতে উত্তেজনায় ঘুমই হতো না। অপেক্ষা করতাম কখন রাত পোহাবে আর নতুন ড্রেসটা পরব! ঘুম থেকে উঠেই কাঁচা হলুদ গায়ে মেখে গোসল করে একদম সেজেগুজে সালামি সংগ্রহ করে ঈদগাহে ছুটতাম!

অভিনেত্রী রেনু রোজিনা

মাসিদ রণ : একটা সময় ঈদে আপনার একাধিক সিনেমা মুক্তি পেত। তখনকার ঈদ কেমন ছিল?

রোজিনা : সে তো স্বর্ণালী অতীত। সিনেমা হল ছিল সারা দেশে প্রায় দুই হাজারের মতো। ঈদে এক ডজনের বেশি ছবি মুক্তি পেত। তারমধ্যে আমার একাধিক ছবি থাকতো। তখন আসলে সিনেমা ফ্লপ হতোই না খুব একটা। তাই ওসব নিয়ে চিন্তাও ছিল না। কারণ, সিনেমা যেমন ভালো হতো, তেমনি দর্শকও পরিবার নিয়ে হলে ছবি দেখতে যেতেন। একই ছবি একজন দর্শক ১০-১২ বারও দেখে ফেলতেন। আমি আমার সব ছবি হলে গিয়ে দেখতাম। ঈদের দিন না পারলেও দু-একদিন পরে বোরখা পরে দর্শকের মধ্যে বসেই ছবি দেখতাম। দর্শকের প্রতিক্রিয়া কাছ থেকে দেখার সেই অনুভূতি বলে বোঝানো যাবে না। এছাড়া নিজের ছবি হলে গিয়ে দেখলে অনেক ভুল ভ্রান্তি চোখে পড়ত। পরবর্তী ছবিতে সেই ভুলগুলো শুধরে নিতাম। আমি অন্য নায়িকাদের ছবিও দেখতাম। তারচেয়ে আরও ভালো করতে হবে সেই চিন্তা থেকেই দেখতাম।

 

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪ এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *