সারাদেশ

কালিয়াকৈরে আগুনে পুড়ল দোকানসহ অর্ধশতাধিক ঘর

ডেস্ক রিপোর্ট: মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা ফাতেমা বেগম। জীবনের চল্লিশটি বছর পার করেছেন সুস্থ স্বাভাবিক ভাবে। দুই ছেলে সন্তান ও স্বামীকে নিয়ে ছিলো তাদের সুখের সংসার। তবে সেই সুখ আর বেশি দিন সহ্য হলো না তাদের। হঠাৎ একদিন মাথা ব্যাথা তীব্র জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হন মিরপুরের ডেল্টা হাসপাতালে। হাসপাতালে ভর্তি হবার পর চিকিৎসক বেশকিছু পরিক্ষা-নিরীক্ষা করার পরমর্শ দেন ফাতেমা বেগমকে।

তারপর হাসপাতালের বিভিন্ন পরীক্ষার রেজাল্ট শুনে তাদের মাথায় যেনো আকাশ ভেঙে পড়লো। ডাক্তার জানায় ফাতেমা বেগম ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত। মুহূর্তেই নিজের অজান্তে ডুকরে কান্নাকাটি করেন ফাতেম বেগম ও তার পরিবারের সদস্যরা।

তবে ক্যান্সার চিকিৎসক ডাক্তার মো: দায়েম উদ্দিন ফাতেমা বেগম ও তার পরিবারের লোকজনকে অভয় দিয়ে বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছেন তিনি। নিয়মিত চিকিৎসা পেলে সুস্থ হয়ে যাবেন। তারপর শুরু হয় তার চিকিৎসা। দীর্ঘ এক বছরের চিকিৎসায় নয়টি কেমোথেরাপি দিতে হয়েছে তাকে। সেই সাথে দামি দামি সব ঔষধ ছিলো তার নিত্যসঙ্গী।

সবাই যখন পবিত্র ঈদুল ফিতরের আনন্দ বাড়িতে বসে ভাগাভাগি করছে ঠিক তখন ফাতেমা বেগমের মতো অসংখ্য মানুষ ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালের বেডে শুয়ে মৃত্যুর অপেক্ষা করছেন। আবার কেউ কেউ হাল না ছেড়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছেন।

ফাতেমা বেগমের ছেলে রোহান বার্তা.২৪ কম-কে জানান, তার মায়ের ক্যান্সার আক্রান্ত হবার খবরে প্রথমে তারা ঘাবড়ে গেলেও এখন তারা অনেকটা নিশ্চিন্ত। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, মাকে মোট ৯টি কেমোথেরাপি দিয়েছি। এখন আলহামদুলিল্লাহ মা অনেক ভালো আছে। সুস্থ আছেন। কিছু দিন আগেই আমরা মাকে বাড়িতে নিয়ে গেছি। তবে মাঝেমধ্যে চিকিৎসার প্রয়োজনে হাসপাতালে নিয়ে আসি। আজকে ঈদের দিনেও তাই নিয়ে এসেছি। তবে চিকিৎসার ব্যয় ও ঔষধের দুষ্প্রাপ্যতা নিয়ে তিনি অসন্তুষ্ট বলে জানান।

তিনি বলেন, ক্যান্সারের ঔষধ আরও সহজলভ্য এবং মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখা উচিৎ। আমরা অনেক কষ্ট করে মায়ের চিকিৎসা করিয়েছি। কিন্তু সবার পক্ষে এতো টাকা খরচ করে ক্যান্সারের চিকিৎসা করা সম্ভব না। মাকে সুস্থ করতে এক বছরে অন্তত ৯টি কেমোথেরাপি দিতে হয়েছে। প্রতিটি থেরাপি দিতে খরচ হয়েছে পনেরো হাজার টাকা করে। এছাড়া বেড ভাড়া, মেডিসিন, পরীক্ষা-নিরীক্ষা ইত্যাদি খরচ তো আছেই।

ফাতেমা বেগমের মতো আরও একজন ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী সাজেদা বেগম। সিরাজগঞ্জের শাহাজাদপুর থেকে ঢাকায় এসেছেন দীর্ঘ এক বছর ক্যান্সারের চিকিৎসা করাতে। নিয়মিত হাসপাতালে থেকে চিকিৎসা নেয়া অনেক খরচ। তাই হাসপাতালের পাশেই একটি ভাড়া বাসায় থেকে চিকিৎসা করাচ্ছেন তিনি।

সাজেদা বেগম জানান, প্রথমে মাথায় টিউমারের অপারেশন করাতে বগুড়ার শহীদ জিয়া মেডিকেলে চিকিৎসা নিতে গিয়ে ডাক্তার তার শরীরের ব্রেস্ট ক্যান্সারের উপস্থিতি লক্ষ করেন। তারপর ঢাকা মেডিকেলে রেফার্ড করলে মাস খানেক ঢাকা মেডিকেল তারপর মহাখালী ক্যান্সার হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে গিয়ে অনেক ঝক্কি-ঝামেলা পোহাতে হয়। পরবর্তীতে ঢাকা মেডিকেলের চিকিৎসক দীপক শাহার পরামর্শ অনুযায়ী তার প্রাইভেট চেম্বার ডেল্টা হাসপাতালে চিকিৎসা শুরু করেন। সপ্তাহে ৫ দিন রেডিও থেরাপি ও মাসে অন্তত একবার কেমোথেরাপি দিতে দিতে তার এ পর্যন্ত প্রায় চার লাখ টাকার উপরে খরচ হয়ে গেছে। ইলেক্ট্রেশিয়ান স্বামীর এই চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে অনেকটা হিমশিম খেতে হচ্ছে। তবুও সহায় সম্বল বিক্রি করে ধারদেনা করে চিকিৎসা ব্যয় মেটাচ্ছেন সাজেদা বেগম।

ঈদে সাজেদা বেগমের ঈদ কেমন কাটলো জানতে চাইলে, অশ্রুসিক্ত নয়নে সাজেদা বেগম বলেন, জীবনের এই ক্রান্তিলগ্নে ঈদের আনন্দ মনের মধ্যে নেই বাবা। ছেলে সন্তান স্বামী সবাইকে বাড়িতে রেখে ননদকে নিয়ে ঢাকা বসে চিকিৎসা নিচ্ছি। প্রতিবার রেডিও থেরাপি নিতে পাঁচ হাজার টাকা খরচ হয়। আর কেমোথেরাপি নিতে পনেরো হাজার টাকা খরচ হয়। এই খরচ জোগাড় করতেই আমাদের জীবন শেষ। এখন আল্লাহর কাছে একটাই চাওয়া সুস্থ শরীরে তিনি যেনো বাড়িতে ফিরিয়ে নেন। তাইলেই আমাদের ঈদের আনন্দ। এই ঈদ আমাদের কাছে ঈদের মতো লাগছে না। জীবনটা বিষের মতো লাগে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এর তথ্য মতে প্রতিদিন সারাবিশ্বে বাড়ছে ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। ধারণা করা হচ্ছে ২০৫০ সালে সারা বিশ্বে নতুন করে ক্যানসারে আক্রান্তের সংখ্যা ৩৫ মিলিয়ন ছাড়িয়ে যাবে। যা কিনা ২০২২ সালের তুলনায় প্রায় ৭৭ শতাংশ বেশি।

বাংলাদেশেও ক্যানসার রোগীর সংখ্যা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

সংস্থাটির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৮৫টি দেশ এবং ৩৬ ধরনের ক্যানসারের তথ্যের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। বাংলাদেশের বিষয়ে বলা হয়েছে, স্তন, খাদ্যনালী, ঠোঁট, ওরাল ক্যাভিটি এবং ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *