আন্তর্জাতিক

ছোট উড়োজাহাজ থেকে পানিতে ফেলা হয় মুক্তিপণের ব্যাগভর্তি ডলার

ডেস্ক রিপোর্ট: সোমালিয়ার জলদস্যুরা মুক্তিপণ পাওয়ার প্রায় ৮ ঘণ্টা পর বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ থেকে নেমে যায়। মু্ক্তিপণের ব্যগভর্তি ডলার পাওয়ার পর তারা জাহাজে এসে সেগুলো গুণে। নিজেদের চাহিদা অনুযায়ী ডলার পাওয়ার পর গভীর রাতে জাহাজ ছেড়ে যায় দস্যুরা।

দস্যুদের মুক্তিপণ বুঝিয়ে দেওয়ার সময় করা একটি ভিডিও পাওয়া গেছে। সেখানে দেখা যায় কীভাবে মুক্তিপণের অঙ্ক দস্যুদের হাতে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে, তা নাবিকেরা জাহাজের ডেকে থেকে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে প্রত্যক্ষ করেছেন। তাদের পেছন থেকে ভিডিও করা হচ্ছিল। সম্ভবত দস্যুদের হয়ে ব্যক্তি মধ্যস্থতা করেছেন তিনিই এই ভিডিও করছিলেন। তার সঙ্গে ছিল অস্ত্রধারী দস্যুরাও। শুরুতে দেখা যায় ছোট একটি উড়োজাহাজ এসে প্রথমে ডলারভর্তি একটি ব্যাগ জাহাজের পাশে ফেলে। আগে থেকেই ছোট দুটি স্পিডবোটে দস্যুরা জাহাজের পাশে ছিল। ব্যাগ পড়তেই দস্যুদের একজন অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে। পরে ছোট স্পিড বোট থেকে ব্যাগটি পানি থেকে নেওয়া হয়। এভাবে তিনটি ব্যাগ ফেলা হয়। মুক্তিপণের অঙ্ক বুঝে পাওয়ার প্রায় আট ঘণ্টা পর গভীর রাতে দস্যুরা জাহাজটি ছেড়ে যায়। তাঁর আগে অবশ্য জাহাজটির মালিকপক্ষ কেএসআরএম গ্রুপ শর্ত অনুযায়ী সব নাবিকের সঙ্গে কথা বলে সুস্থ আছেন সেটি নিশ্চিত হয়।

তবে মুক্তিপণ হিসেবে দস্যুদের কত ডলার দেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে মালিকপক্ষ কোনো কিছু জানায়নি। জাহাজটি দস্যুমুক্ত হওয়ার পর রোববার দুপুরে চট্টগ্রাম নগরীর আগ্রাবাদে কেএসআরএমের করপোরেট কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

আরও পড়ুন: জাহাজে দস্যু ছিল ৬৫ জন, যাওয়ার সময় দিয়েছে চিঠি

সংবাদ সম্মেলনে কেএসআরএম গ্রুপের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার জাহান বলেন, শনিবার দিবাগত রাত ৩টা নাগাদ সোমালিয়া উপকূল থেকে দস্যুমুক্ত হয়ে আমাদের জাহাজটি রওনা দিয়েছে। ঠিক ৩১দিন পর জাহাজটি ছাড়াতে সক্ষম হয়েছি আমরা। মূলত দস্যুপ্রবণ এলাকার প্রায় ৬০০ নটিক্যাল মাইল দূরে ছিল আমাদের জাহাজটি। গত ৮-১০ বছরে এই এলাকায় জাহাজ দস্যুদের দ্বারা আক্রান্ত হয়নি। সেজন্য আর্মগার্ড রাখা হয়নি। অন্য জাহাজগুলোও সেভাবে চলাচল করছিল। কিন্তু যুদ্ধ পরিস্থিতিতে যুদ্ধজাহাজগুলো অন্যদিকে ব্যস্ত হয়ে যাওয়ায় সুযোগ নেয় দস্যুরা। তবে খুব দ্রুত সময়ে আমরা নাবিকদের সুস্থ অবস্থায় ফেরত আনতে পারছি, সেজন্য সবার প্রতি কৃতজ্ঞ। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি খুবই গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীও যথেষ্ট আন্তরিকতা দেখিয়েছেন। আশা করছি ১৯ অথবা ২০ এপ্রিল জাহাজটি আরব আমিরাতের আল হারমিয়া বন্দরে পৌঁছাবে। সেখানে ৪-৫ দিনের একটি আনুষ্ঠানিকতা আছে। এরপর নাবিকদের দেশে ফিরিয়ে আনা হবে।’

কেএসআরএম’র সিইও মেহেরুল করিম বলেন, জাহান মণি দস্যুদের হাতে পড়ার সময় আমাদের জ্ঞানের অভাব ছিল। তখন উদ্ধারে সময় বেশি লেগেছিল। এবার জাহাজ দখলে নেওয়ার পর আমরা জাহাজের লোকেশন ট্রেক করতে থাকি। যোগাযোগ শুরুর পর প্রতিদিনই কথা হচ্ছিল। নাবিকরা কেমন আছে, কত তাড়াতাড়ি দস্যুরা জাহাজ ছেড়ে যাবে ইত্যাদি কথা হতো। দুই দিন আগে আমাদের দাবি ছিল,মুক্তিপণ পাওয়ার আগে প্রত্যেক নাবিকের ভিডিও দিতে হবে। সে অনুযায়ী আমরা প্রতিটি নাবিকের ভিডিও নিয়েছি। মুক্তিপণের প্রতিটি কাজ আইনগতভাবে করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে করা হয়েছে৷ কত ডলার সে বিষয়টি আমরা নানা কারণে বলতে পারছি না। ইউএসএ, ইউকে, সোমালিয়া, কেনিয়ার নিয়ম মানতে হয়েছে।’ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কেএসআএমের ডিএমডি সরোয়ার জাহান, পরিচালক করিম উদ্দিন, মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *