সারাদেশ

ঢাকার নিম্ন আদালতের ১০৭ বিচারকের ৫২ জনই ছুটিতে

ডেস্ক রিপোর্ট: দেশের নিম্ন আদালতে সাধারণত দুই ধরণের ছুটি হয়। এক ধরণের ছুটি দুই ঈদসহ নানান দিবসের। আরেক ধরণের ছুটি হয় পুরো ডিসেম্বর মাস জুড়ে। এ ধরণের ছুটিকে বলা হয় অবকাশকালীন ছুটি। এ ধরণের ছুটিতে আদালতে কার্যক্রম চলে কিনা, চললে কীভাবে চলে? জামিন শুনানি, সাক্ষ্যগ্রহণ কিংবা অন্যান্য শুনানি কীভাবে হয়? বার্তা২৪.কমের পাঠকদের জন্য বিষয়টি তুলে ধরা হলো।

ঈদ বা অন্যান্য দিবসের ছুটিগুলো সাধারণত একদিন থেকে সর্বোচ্চ ৩ দিন পর্যন্ত বন্ধ থাকে। যদিও এবারই প্রথম ঈদে ৫ দিনের ছুটিতে যাচ্ছে দেশের নিম্ন আদালতসমূহ। এসব ছুটি দেশের সব আদালতসমূহ ভোগ করে থাকে। এসব ছুটিতে দেশের কনো আদালতে কোনো প্রকার সাক্ষ্যগ্রহণ কিংবা অন্য কোনো ধরণের শুনানি হয় না। এমনকি ডিসেম্বর মাসজুড়ে দীর্ঘ মেয়াদে ছুটির সময়ও ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট ছাড়া কোনো আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণ কিংবা অন্যান্য কোনো প্রকারের শুনানি হয় না।

ঢাকার ফৌজদারি মামলার আইনজীবী মো. শাহিনুর ইসলাম বার্তা২৪.কম-কে বলেন, জামিন চাওয়া একজন আসামির আইনগত অধিকার। সে কারণে ডিসেম্বর মাসের দীর্ঘমেয়াদী ছুটিতে দেশের জেলা জজ আদালত ও মহানগর দায়রা জজ আদালতসমুহে আসামির জামিন শুনানির জন্য ডিসেম্বরের বিভিন্ন তারিখে অবকাশকালীন আদালত চলে। আদালত অঙ্গনে এ ধরনের আদালত “ভ্যাকেশন কোর্ট” নামে পরিচিত। ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট থেকে জামিন বঞ্চিতরা এসব আদালতে জামিনের আবেদন করলে আদালত সেসব শুনানি গ্রহণ করেন।

তিনি আরও বলেন, তবে ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ডিসেম্বর মাসের অবকাশকালীন ছুটির সুবিধা পায় না। দেশের জজ আদালত বন্ধ থাকলেও ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নিয়মিত জামিন, রিমান্ড শুনানি ও সাক্ষ্যগ্রহণসহ সকল কার্যক্রম অন্যান্য সময়ের মতোই চলে।

ফৌজদারি আইন বিশেষজ্ঞ অ্যাডভোকেট এহসানুল হক সমাজী বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ১৮৯৮ সালের ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারার ক্ষমতাবলে আমলযোগ্য অপরাধের ক্ষেত্রে ৯টি কারণে পুলিশ যে কাউকে বিনা পরোয়ানায় বা আদেশ ছাড়াই গ্রেফতার করতে পারে।

এমন ৯টি কারণে আটককৃত ব্যক্তির অধিকার সমন্ধে বাংলাদেশ সংবিধানের তৃতীয় ভাগের মৌলিক অধিকার অধ্যায়ের ৩৩ (১) নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে- ‘গ্রেফতারকৃত কোনো ব্যক্তিকে যথাসম্ভব গ্রেফতারের কারণ জ্ঞাপন না করে প্রহরায় আটক রাখা যাবে না এবং উক্ত ব্যক্তিকে তার মনোনীত আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ ও তার আত্মপক্ষ সমর্থনের অধিকার হতে বঞ্চিত করা যাবে না।’

৩৩ (২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে- ‘গ্রেফতারকৃত ও প্রহরায় আটক ব্যক্তিকে ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হাজির করতে হবে এবং ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশ ব্যতীত তাকে তদতিরিক্ত প্রহরায় আটক রাখা যাবে না।’

তিনি আরও বলেন, তাছাড়া ফৌজদারি কার্যবিধির ৬০ ধারায় আটককারী পুলিশ কর্মকর্তা আটককৃত ব্যক্তিকে নিকটতম ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট অর্পণ এবং ৬১টি ধারায় ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি ব্যতীত আটককৃত ব্যক্তিকে ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় আটক না রাখার বিধান বর্ণিত হয়েছে।

সমাজী বলেন, বাংলাদেশের সংবিধান ও ফৌজদারি আইন অনুযায়ী কোনো ব্যক্তিকে গ্রেফতারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির হলে অবশ্যই ম্যাজিস্ট্রেট আদালত খোলা থাকতে হবে। তাই ঈদ, পূজা, বড়দিন অন্যান্য যে কোনো দিবস এমনটি ঝড় বৃষ্টি সাইক্লোন কিংবা মহামারির মধ্যেও অর্থাৎ বছরে ৩৬৫ দিনই ম্যাজিস্ট্রেট আদালত খোলা রাখতে হয়। তবে এসব ছুটিতে সব ম্যাজিস্ট্রেটকে ডিউটি করতে হয় না। ২/১জনকে পুরো জেলার শুনানি গ্রহণের এখতিয়ার দেওয়া হয়। এসব আদালতে শুধুমাত্র রিমান্ড ও জামিন আবেদনের উপর শুনানি গ্রহণ করা হয়। আর জামিন না মঞ্জুরের ক্ষেত্রে ওই সকল আসামিকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়।

ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে প্রশাসনিক কর্মকর্তা গিয়াস গিয়াস উদ্দিন আহমেদ বার্তা২৪.কম-কে জানান, এ বারের ঈদে ৫ দিন ছুটি হলেও দেশের কোনো আদালতে ভ্যাকেশন কোর্ট থাকবে না। তবে ঢাকার ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে রিমান্ড ও জামিন শুনানির জন্য দুইজন করে ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্বে থাকবেন।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *