সারাদেশ

জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বাংলাদেশ বিশ্বে রোল মডেল: পরিবেশমন্ত্রী

ডেস্ক রিপোর্ট: ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল। সকাল ৯টা। হঠাৎ করেই বড় একটি দুর্ঘটনার সাক্ষী হয় দেশবাসী। ধ্বসে পড়ে রানা প্লাজা নামের একটি ভবন। প্রাণ হারায় হাজারের বেশি মানুষ। আহতের সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় আড়াই হাজার। আহতদের মধ্যে অনেককেই বরণ করতে হয়েছে আজীবন পঙ্গুত্ব।

আলোচিত সেই রানা প্লাজা ট্রাজেডির কেটে গেছে ১০ বছর। বিষাদ ভুলে গেছে অনেকেই। তবে কেমন আছে আহতরা। তা জানতে আমরা গিয়েছিলাম রানা প্লাজার সামনে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রানা প্লাজার সামনে শহীদদের স্মরণে একটি সৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হলেও তা পড়ে রয়েছে অযত্ন অবহেলায়। সামনে গাড়ির পার্কিং আর পেছনে ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। কিছুক্ষণ পর পর প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে যাচ্ছেন পথচারীরা।

সেদিন আহতদের মধ্যে একজন ফারুক হোসেন। রানা প্লাজা ভবনের নিচে দোকান ছিল তার। সেদিনের দুর্ঘটনায় তিনিও আহত হয়ে হাতের দুটি আঙুলের কর্মক্ষমতা হারিয়েছেন। কিন্তু পোশাক শ্রমিক না হওয়ার কারণে কোন ক্ষতিপূরণ পাননি তিনি।

দীর্ঘ চিকিৎসার পর এখন আবারও ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন তিনি। ফারুক হোসেন বার্তা২৪.কমের কাছে আক্ষেপ নিয়ে বলেন, সেদিন আমি দোকানে বসেছিলাম। কাস্টমার ছিল, চা বানাচ্ছিলাম। কিন্তু হঠাৎ আমরা ভূমিকম্পের মতো কিছু একটা অনুভব করতে-করতে দেখি ভবন নড়ছে। সাথে সাথে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলেও হাতে ভবনের একটি পিলার এসে আঘাত করলে আমার হাতের দুইটি আঙুল পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু এই ঘটনায় অনেকে নানা রকমের সাহায্য সহযোগিতা পেলেও আমি কোন সাহায্য পাইনি। অনেকদিন বউবাচ্চা নিয়ে অভাবে দিন কাটাইছি। অনেক সাংবাদিক আগে এসে ইন্টারভিউ নিয়েছে, কিন্তু কোন সাহায্য পাইনি।

সে দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া একজন পোশাকশ্রমিক রিক্তা। ডান হাত হারিয়ে এখন অসহায় জীবন পার করছেন গ্রামে শ্বশুরবাড়িতে। কাজ করার ক্ষমতা অর্ধেক হারিয়ে ফেলেছেন তিনি। এখনো সেই স্মৃতি মনে ভাসলে নির্বাক হয়ে যান তিনি। তাকে খুঁজতে গিয়ে বার্তা২৪.কমের প্রতিবেদকের সাথে কথা হয় তার পরিবারের সঙ্গে। রিক্তার শ্বশুর জানান সেদিনের সেই দুর্বিষহ ৭২ ঘণ্টার কথা।

তিনি বলেন, টানা ৭২ ঘণ্টা আমার ছেলের বউ এই ভবনে আটকে ছিল। আমরা প্রথমে ভেবেছিলাম হয়তো মারা গেছে। কিন্তু তিন দিন পরে আমি দেখতে পাই আমার ছেলের বউর মুখটা। আমার ছেলের বউ যখন আটকে থাকা অবস্থায় আমাকে আব্বা বলে ডাক দিল, তখন আমি নিজেকে আর ঠিক রাখতে পারিনি। শুধু আল্লাহর কাছে পুত্রবধূর প্রাণভিক্ষা চাইছি। তারপর আমি নিজে পাশে দাঁড়িয়ে থেকে রিক্তার ডান হাতের কনুই পর্যন্ত কেটে বের করেছি।

দুর্ঘটনার সময় রিক্তা গর্ভবতী ছিলেন। বর্তমানে তার একটা মেয়ে আছে ৯/১০ বছর বয়সের। বর্তমানে সে কোন কাজ একা ঠিকঠাক করতে পারে না। তবে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া সে এখনো বেঁচে আছে। ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সে সময় কিছু ক্ষতিপূরণ পেয়েছিলাম, কিন্তু তা খুবই সামান্য। শুনেছিলাম আরও অনেক কিছু পাবো। কিন্তু তার আর কোন খোঁজখবর নাই।

রানা প্লাজা ভবনটি যেখানে ছিল সেখানে শ্রমিকদের জন্যে একটি ভবন নির্মাণের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, অযত্নে অবহেলায় জায়গাটি ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। যদি এই জায়গায় শ্রমিকদের জন্য একটা বাসস্থান করে সংরক্ষণ করতো, শ্রমিকদের থাকার জায়গা দিতো তাহলে আরও ভালো হতো। এখনো অনেকে মানবেতর জীবনযাপন করছে।

স্থানীয় শ্রমিক নেতা রফিকুল ইসলাম সুজন বার্তা২৪.কমকে জানান, রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারের অভাবে রানা প্লাজার এই জায়গায় মানুষ ময়লা আবর্জনা ফেলে নোংরা করে ফেলছে। এছাড়া রাস্তার মানুষ হেঁটে যাওয়ার সময় এখানে প্রস্রাব-পায়খানা করে, যা শ্রমিকদের জন্যে অমর্যাদাকর।

এছাড়াও তিনি সরকার ও বিজিএমইএর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, আহত-নিহত শ্রমিক ও তাদের পরিবারকে পুনর্বাসন এবং এখনো যাদের চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হচ্ছে তাদের সুচিকিৎসার জন্য সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করুক। এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

এব্যাপারে কথা বলতে গেলে সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাহুল চন্দকে অফিসে গিয়ে পাওয়া যায়নি। তার সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করেও তার কোন বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *