সারাদেশ

ময়লায় ছেয়ে গেছে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত

ডেস্ক রিপোর্ট: ছয় ফুট লম্বার বড় বড় বাঁশের খুঁটি। এক ফুট মাটিতে ডুবে, বাকি পাঁচ ফুটের নজর আকাশের দিকে। সংখ্যায় ‘ওরা’ ১৬৫টি। সেসবের আগায় কাঠের তক্তা লাগিয়ে বানানো হয়েছে মঞ্চ। তার ওপরে দেওয়া হয়েছে বালির আস্তরণ। ঐতিহাসিক আবদুল জব্বারের বলীখেলার শাহজালাল বলী-জীবন বলীদের জন্য লালদীঘি মাঠে এভাবেই তৈরি হচ্ছে রিং। এই বলীখেলার ১১৫তম আসর বসছে বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল)।

বলীখেলাকে সামনে রেখে সোমবার সকাল থেকে শুরু হয়েছে ২০ বাই ২০ ফুটের এই মঞ্চ তৈরির কাজ। আয়োজকদের আশা বুধবার (২৪ এপ্রিল) রাতের মধ্যে তৈরি হয়ে যাবে রিং। বুধবার বিকেলে লালদীঘি মাঠের দক্ষিণ পাশে গড়ে তোলা মঞ্চের চারপাশে ঢু মেরে দেখা যায়, ১০ জন শ্রমিক মঞ্চ তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কাঠফাটা রোদ উপেক্ষা করে কেউ বাঁশের সঙ্গে তক্তা জোড়া লাগাচ্ছিলেন। কেউবা করছিলেন মঞ্চের ওপর বালি দেওয়ার কাজ। কেউ কেউ রঙ বেরঙের কাপড় ও পতাকা সাঁটাচ্ছিলেন মঞ্চের চারপাশে। আয়োজক কমিটির সদস্যরা শ্রমিকদের নানা দিকনির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছিলেন।

তাজুল ইসলাম ও মোহাম্মদ মমিন নামের দুজন শ্রমিক বাঁশের সঙ্গে তক্তার জোড়া লাগাচ্ছিলেন পেরেক দিয়ে। জানতে চাইলে তারা বার্তা২৪.কমকে বলেন, তিনদিন ধরে কাজ করতেছি। মঞ্চ করতে ১৬৫টি বাঁশ মাটি খুঁড়ে বসাতে হয়েছে। এর সঙ্গে আরও কিছু বাঁশ দিতে হয়েছে চারপাশে দড়ি দিতে।

বলীখেলাকে ঘিরে বসেছে সারি সারি দোকান নিচে জমানো বালি ফেরি করে নিয়ে মঞ্চের ওপর ফেলছিলেন দুই শ্রমিক। তারা বলেন, বুধবার দুপুর থেকে মঞ্চের ওপর বালি ফেলার কাজ শুরু করেছি। দুপুরে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে আবার কাজ শুরু করি। সন্ধ্যার মধ্যে কাজ শেষ হয়ে যাবে।’ মঞ্চের ওপর দুই ট্রাকে করে আনা ৩০০ ঘনফুট বালি ফেলা হয়েছে বলে জানান শ্রমিকেরা।

বৃহস্পতিবার এই মঞ্চের ওপরেই লড়বেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা শতাধিক বলী। তার আগেই অবশ্য বলীখেলাকে কেন্দ্র করে লালদীঘি মাঠের চারপাশের প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বসেছে বৈশাখী মেলা। মেলায় মাটির হাঁড়ি-পাতিল, মৃৎশিল্প, খেলনা, গৃহসজ্জার জিনিসপত্র, খাবার, দা-খুন্তি, শীতলপাটি, ঝাড়ু, হাতপাখা, আসবাব, গাছের চারা—সবকিছুই পাওয়া যাচ্ছে হাতের কাছে।

আব্দুল জব্বার স্মৃতি কুস্তি প্রতিযোগিতা ও বৈশাখী মেলা কমিটির সভাপতি ও আন্দরকিল্লা ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জহর লাল হাজারী বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘এখন আর জব্বারের বলীখেলা ও মেলা শুধু চট্টগ্রামের ঐতিহ্য নয়, এটি সারাদেশের প্রাণের মেলা হয়ে দাঁড়িয়েছে। লালদীঘির মাঠে আগামীকাল বৃহস্পতিবার মেলার মূল আকর্ষণ বলীখেলা অনুষ্ঠিত হলেও বলীখেলা ঘিরে বৈশাখী মেলা শুরু হয়ে গেছে। তিন দিনের এই খেলা ও মেলা এখন বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী একটা আয়োজন। সেজন্য আমরা পুরো আয়োজন সুচারুরূপে সম্পন্ন করতে কোনো কিছুই বাকি রাখছি না।’

লালদীঘি মাঠে বৈশাখী মেলা বসছে এই বলীখেলা সারাদেশের কিশোর-তরুণদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে চায় আয়োজক কমিটি। সেটিই বলছিলেন জহর লাল হাজারী। বলেন, ‘মাদক ও কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত দিনে দিনে বেড়ে চলেছে। আমাদের এবারের প্রতিপাদ্য তাই নবীনদের কিশোর গ্যাং ও মাদক মুক্ত করে দেশীয় খেলার প্রতি আসক্ত করা। সেজন্য বলীখেলা শেষে দূর দূরান্ত থেকে অংশ নিতে আসা বলীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথাও ভাবছি আমরা।’

যুবসমাজকে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ করতে ১৯০৯ সালে চট্টগ্রামের বকশিরহাটের ব্যবসায়ী আবদুল জব্বার সওদাগর চালু করেছিলেন বলীখেলা। সময়ের ব্যবধানে লালদীঘির মাঠে বসা ‘জব্বারের বলীখেলা’ হয়ে উঠেছে এই জনপদের অন্যতম আকর্ষণ। শুধু কি তাই? বলীখেলাকে কেন্দ্র করে বৃহত্তর চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় বৈশাখী মেলাটিও বসে এখানে। ১৯০৯ সাল থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের একবছর বাদ দিলে প্রতিবছর এই মেলা হয়ে আসলেও করোনার থাবা এই আনন্দ-উৎসব থামিয়ে দিয়েছিল ২০২০ সালে। পরের বছরেও এই মেলা হয়নি একই কারণে। ২০২২ সালেও ঐতিহাসিক এই আয়োজনের ভবিষ্যৎ ঝুলেছিল সুতার ওপর। শেষ পর্যন্ত সিটি মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরীর প্রচেষ্টায় সড়কের মাঝখানে অস্থায়ীভাবে রিং তৈরি করে আয়োজন করা হয় বলীখেলার। গত বছর থেকে বলীখেলা ফিরেছে নিজের পুরনো ঠিকানা-লালদিঘী ময়দানে। এবারও সেখানেই হচ্ছে শতবর্ষী এই আসর।

এই বলীখেলায় অংশ নিতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শতাধিক বলী চট্টগ্রামে ছুটে আসেন। বলীখেলায় গত আসরে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন কুমিল্লার শাহজালাল বলী। তিনি হারান আগের বছরের চ্যাম্পিয়ন চকরিয়ার জীবন বলীকে। কয়েক বছর ধরে এই দুই বলীর মধ্যেই হচ্ছে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বীতা। এবারও কি এই দুই শীর্ষ বলীর মধ্যে হবে শিরোপা জয়ের লড়াই, নাকি নতুন কেউ এসে কেড়ে নেবে স্বপ্নের শিরোপা! সেটির জন্য অবশ্য অপেক্ষা করতে হবে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত!

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *