বেনাপোলে ৪ স্ক্যানার মেশিনের তিনটিই অচল, ঝুঁকিতে নিরাপদ বাণিজ্য
ডেস্ক রিপোর্ট: দেশের সবচেয়ে বড় স্থলবন্দর বেনাপোল বন্দরে পণ্য পরীক্ষণ ও পাসপোর্টধারীদের ব্যাগেজ তল্লাশিতে ব্যবহৃত ৪টি স্ক্যানার মেশিনের মধ্যে তিনটিই অচল হয়ে পড়েছে। এতে হয়রানি ও ঝুঁকিতে পড়েছে নিরাপদ বাণিজ্য।
জানাযায়, অচল স্ক্যানার মেশিন ও দুর্বল নিরাপত্তা ব্যবস্থার কারণে অবাধে অনিয়ম ও পাসপোর্টধারীদের মাধ্যমে চোরাচালানের ঘটনা ঘটছে এ বন্দরে। তবে অপরাধীরা অবাধে বাংলাদেশ অংশ পেরিয়ে গেলেও স্বর্ণের বারসহ আটক হচ্ছে ভারতে। স্ক্যানার মেশিন তদারকিতে নিযুক্ত ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ফাইবার অ্যাসোসিয়েটস বলছে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।
বাণিজ্য সংশ্লিষ্টরা অনলাইন নিউজ পোর্টাল বার্তা২৪.কম-কে জানান, বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদারে ৬ বছর আগে ৪টি স্ক্যানার মেশিন বাংলাদেশকে উপহার হিসেবে দেয় চীন সরকার। বেনাপোল বন্দরে নিরাপদ বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ঝুঁকি বাড়ায় এসময়ে ৪টির একটি স্ক্যানার স্থাপন হয় বন্দরের বাইপাস সড়কে পণ্য প্রবেশদ্বারে। অত্যাধুনিক মেশিনটি পণ্যবাহী ট্রাকে আসা রাসায়নিক, মাদক, অস্ত্র ও মিথ্যা ঘোষণার পণ্য শনাক্ত করতে সক্ষম।
এছাড়া ইমিগ্রেশন কাস্টমস রুটে চোরাচালান রোধে এনবিআরের অর্থায়নে বেনাপোল চেকপোস্ট কাস্টমসে আরও ৩টি স্ক্যানার মেশিন বসানো হয়। স্ক্যানার মেশিনটি কাস্টমসের পক্ষে পরিচালনা করে আসছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ফাইবার অ্যাসোসিয়েটস। গত কয়েক মাস ধরে স্ক্যানার মেশিনগুলো যান্ত্রিক ত্রুটিতে বার বার নষ্ট হলেও গেল সপ্তাহ থেকে একেবারে অচল হয়ে বন্ধ রয়েছে মোবাইল স্ক্যানার। আর দুই মাস ধরে অচল কাস্টমস ইমিগ্রেশনের দুটি স্ক্যানার। যা মেরামত করতে বড় অংকের অর্থের প্রয়োজন। কিন্তু চুক্তি অনুযায়ী বড় অংকের ব্যয় কাস্টমস বহন করার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় স্ক্যানার ৩টির কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এতে গার্মেন্টস পণ্যসহ জরুরি পণ্য খালাস করতে না পারায় বাণিজ্য ব্যাহতের পাশাপাশি চোরাচালান দিন দিন বেড়ে চলেছে। তবে স্ক্যানিং বন্ধ থাকলে অনেক দুনীতিবাজ কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীদের সুবিধা হয় বলেও অনেকে মন্তব্য করেন। সরকারকে শুল্কফাঁকি দিয়ে অনেকে দুর্নীতিবাজ কোটি কোটি কালো টাকার পাহাড় গড়েছেন।
ভারতীয় ট্রাকচালক রনজিত বার্তা২৪.কম-কে জানান, ভারত থেকে তিনি গার্মেন্টস পণ্য নিয়ে এসেছেন। কিন্তু বেনাপোল বন্দরের মোবাইল স্ক্যানার মেশিনটি বন্ধ থাকায় পণ্য খালাস করতে পারছেন না। এতে ভোগান্তি বেড়েছে।
পাসপোর্টধারী যাত্রী রহিম বার্তা২৪.কম-কে জানান, কাস্টমস ইমিগ্রেশনে স্ক্যানিং মেশিন বন্ধ থাকায় নিরাপত্তা ঘাটতির পাশাপাশি হয়রানি বেড়েছে। অনেকে পাচার কার্যক্রম চালাচ্ছে আবার অনেকের কোন অভিযোগ ছাড়া ব্যাগ খুলে জিনিসপত্র ছড়ানো হচ্ছে।
আমদানিকারক জাহাঙ্গীর হোসেন বার্তা২৪.কম-কে জানান, স্ক্যানিং ছাড়া বিকল্পভাবে পণ্য খালাসের ব্যবস্থা করছেন কাস্টম কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সেখানে হয়রানি ও নিরাপত্তা ঘাটতি থাকছে। দ্রুত স্ক্যানিং কার্যক্রম সচল হলে সেটি সবার জন্য ভাল।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক সুলতান মাহামুদ বিপুল বার্তা২৪.কম-কে জানান, বাণিজ্য নিরাপদ রাখতে স্ক্যানিং কার্যক্রম চালু করা জরুরি। এছাড়া জরুরি পণ্য খালাস করতে দেরি হওয়ায় শিল্প কলকারখানার উৎপাদন বিঘ্ন ঘটছে। বিষয়টি নিয়ে কাস্টমস কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা হয়েছে। আশা রাখছি তারা দ্রুত সচল করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিবেন।
বন্দর ও কাস্টমসে স্ক্যানার মেশিন তদারকিতে নিযুক্ত ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ফাইবার অ্যাসোসিয়েটসের বেনাপোলের কর্মকর্তা বনি আমিন বার্তা২৪.কম-কে জানান, কয়েক মাস ধরে স্ক্যানিং মেশিনগুলো যান্ত্রিক ত্রুটিতে বার বার নষ্ট হলেও গেল সপ্তাহ থেকে একেবারে অচল হয়ে বন্ধ রয়েছে মোবাইল স্ক্যানার। আর দুই মাস ধরে অচল কাস্টমস ইমিগ্রেশনের দুটি স্ক্যানার। যা মেরামত করতে বড় অংকের অর্থের প্রয়োজন। কিন্তু চুক্তি অনুযায়ী বড় অংকের ব্যয় কাস্টমস বহন করবে। বিষয়টি কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে চিঠিতে অবগত করা হয়েছে তারা দেখছেন।
এদিকে বন্দর ঘুরে গত ১৫ দিনের তথ্যে জানা যায়, গত ৮ নভেম্বর ভারতীয় পাসপোর্টধারী তৃপাকুরনাল সুজনাসকে ৭ গ্রাম স্বর্ণের বারসহ আটক করে চেকপোস্ট কাস্টমস শুল্ক গোয়েন্দা। ১ নভেম্বর ভারতীয় ট্রাকচালক সুরজ মগকে পেট্রাপোল বন্দরে ৭ কেজি স্বর্ণের বারসহ আটক হয়। ২৪ অক্টোবর শ্যামলী এন আর পরিবহনের চালক দেলোয়ার ও সুপারভাইজার শামিম মাহামুদকে ১১টি স্বর্ণের বারসহ আটক করে। এছাড়া ১৪ অক্টোবর ৪ বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীকে পেট্রাপোল চেকপোস্ট থেকে ১৯টি স্বর্ণের বার , ৪টি সোনার ব্রেসলেটসহ আটক করে বিএসএফ। এছাড়া বিভিন্ন সময় মিথ্যা ঘোষণার পণ্য ও ভায়াগ্রা, ফেনসিডিল, গাজার বড় চালান আটক হয়েছে বেনাপোল বন্দরে।
সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।