সারাদেশ

আইন মানছে না সিগারেট কোম্পানি, দিচ্ছে রাজস্ব ফাঁকি

ডেস্ক রিপোর্ট: তামাকজাত পণ্য ও সিগারেট কোম্পানিগুলো আইন না মেনে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে জানিয়ে এক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তামাক নিয়ন্ত্রণে কাজ করা কয়েকটি সংগঠন।

গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে বলা হয়, পণ্য মোড়কজাতকরণ বিধিমালা-২০২১ এবং ভোক্তা অধিকার আইন অনুসারে কোনো পণ্যের মোড়কে উৎপাদনের তারিখ দেওয়া বাধ্যতামূলক হলেও সিগারেট কোম্পানিগুলো এই আইন একেবারেই মানছে না।

৫৯ শতাংশ ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্যের (জর্দ্দা ও গুল) মোড়কে উৎপাদনের তারিখ পাওয়া গেলেও বিড়ি ও সিগারেটের প্যাকেটে সেই হার মাত্র ৩ শতাংশ। উৎপাদনের তারিখ না দেওয়ায় তামাক কোম্পানিগুলো কর ফাঁকির সুযোগ নিচ্ছে।

পাশাপাশি তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী প্রদান না করার সুযোগও নিচ্ছে তারা।

মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) গুলশানের একটি হোটেলে অ্যারিস্টোক্র্যাট ইন-এ টোব্যাকো কন্ট্রোল অ্যান্ড রিসার্চ সেল (টিসিআরসি), ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভির্সিটি ও বাংলাদেশ তামাকবিরোধী জোট (বাটা)-এর আয়োজনে ‘তামাকজাত দ্রব্যের সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী বাস্তবায়ন- বর্তমান অবস্থা’ শীর্ষক এক গবেষণার ফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব দাবি জানান।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ডিআইইউ) উপউপাচার্য প্রফেসর ড. গনেশ চন্দ্র সাহা।

এছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. গোলাম মহিউদ্দিন ফারুক, সিটিএফকে’র গ্র্যান্ট ম্যানেজার মো. আব্দুস সালাম মিয়া, ডেভেলপমেন্ট অ্যাক্টিভিটিস অব সোসাইটি (ডাস্)-এর টিম লিড আমিনুল ইসলাম বকুল, এইড ফাইন্ডেশনের প্রকল্প পরিচালক শাগুফতা সুলতানা, ব্যুরো অব ইকোনমিক রিসার্চ-এর প্রকল্প ব্যবস্থাপক হামিদুল ইসলাম হিল্লোল এবং ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির রিসার্চ অ্যান্ড পাবলিকেশন সেলের অতিরিক্ত পরিচালক প্রফেসর মো. আব্দুল বাসেদ।

অনুষ্ঠানটি সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ তামাকবিরোধী জোটের ভারপ্রাপ্ত সমন্বয়কারী এবং ‘প্রত্যাশা’ মাদকবিরোধী সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হেলাল আহমেদ।

টোব্যাকো কন্ট্রোল অ্যান্ড রিসার্চ সেল (টিসিআরসি)-এর প্রজেক্ট ম্যানেজার ফারহানা জামান লিজার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে গবেষণার মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন টোব্যাকো কন্ট্রোল অ্যান্ড রিসার্চ সেল (টিসিআরসি)-এর সদস্য সচিব ও প্রকল্প পরিচালক এবং ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক মো. বজলুর রহমান।

অনুষ্ঠানে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, সাংবাদিক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং বাংলাদেশে তামাক নিয়ন্ত্রণে কর্মরত বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধি ও বিশেষজ্ঞেরা উপস্থিত ছিলেন।

মূল প্রবন্ধে মো. বজলুর রহমান বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণের নানা পদ্ধতির মধ্যে তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী প্রদান অন্যতম। ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন-২০০৫ (সংশোধনী ২০১৩)-এর ধারা ১০ অনুযায়ী সব তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কের উভয়পাশের মূল প্রদর্শনী তলের উপরিভাগের ৫০ শতাংশ এলাকা জুড়ে তামাকের স্বাস্থ্য ক্ষতি সম্পর্কিত সচিত্র সতর্কবার্তা প্রদান করতে হবে।

টোব্যাকো কন্ট্রোল অ্যান্ড রিসার্চ সেল তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কের সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী বাস্তবায়নের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরতে গত ২০২৩ সালের নভেম্বর মাস থেকে ২০২৪ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত দেশের ৮টি বিভাগের বিভাগীয় শহর থেকে ২শ ৭২টি তামাকজাত দ্রব্যের মোড়ক থেকে তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে একটি গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করে।

গবেষণার উল্লেখযোগ্য ফলাফলের মধ্যে ৮৫ শতাংশ তামাকপণ্যের মোড়কে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী পাওয়া গেছে। ৭৬ শতাংশ মোড়কের উভয়পাশে এই সতর্কবাণী মুদ্রণ করা হয়নি। ২৬ শতাংশ মোড়কে ৫০ শতাংশ এলাকা জুড়ে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী মুদ্রণ করা হয়েছে। ৭ শতাংশ মোড়কে ছবির সঙ্গে লিখিত বার্তা প্রদান করেনি। ৭২ শতাংশ মোড়কের লিখিত সতর্কবাণী কালো জমিনে সাদা হরফে মুদ্রিত হয়েছে।

বিড়ির ৮০ শতাংশ মোড়কেই সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী ব্যান্ডরোল দিয়ে ঢেকে থাকতে দেখা গেছে এবং ২৫ শতাংশ মোড়কে ‘শুধুমাত্র বাংলাদেশে বিক্রয়ের জন্য অনুমোদিত’ মর্মে কোনো বাণী প্রদান করা হয়েছে। কোনো সিগারেটের কার্টনেই সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী পাওয়া যায়নি।

এছাড়া ৩৩ শতাংশ তামাকজাত পণ্যের মোড়কে ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন নম্বর পাওয়া গেছে। ৯ শতাংশ মোড়কে ট্রেড লাইসেন্স নম্বর ছিল। ৫১ শতাংশ মোড়কে উৎপাদনের তারিখ ছিল।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রফেসর ড. গনেশ চন্দ্র সাহা বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে উৎপাদিত পণ্যের মোড়কে উৎপাদনের তারিখ এবং উৎপাদনকারী কোম্পানির নাম, ঠিকানা প্রদান বাধ্যতামূলক করা উচিত। বিদেশি ব্র্যান্ডগুলো তামাকপণ্য আমদানি করে বাংলাদেশে বিক্রি করতে হলে তাদেরও আমাদের তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন মেনে প্যাকেজিং করতে হবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক ডা. গোলাম মহিউদ্দিন ফারুক বলেন, তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী তামাক নিয়ন্ত্রণের অন্যতম হাতিয়ার। কিন্তু তামাকজাত পণ্যের মোড়কের ভিন্নতা, মানহীন মোড়ক, সাইজের ভিন্নতা, সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী প্রদানের উপযুক্ত মোড়ক না থাকা এসব সমস্যার একমাত্র সমাধান হতে পারে স্ট্যান্ডার্ড প্যাকেজিং। সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণীর সঠিক বাস্তবায়নে স্ট্যান্ডার্ড প্যাকেজিং প্রবর্তন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

সভাপতির বক্তব্যে হেলাল আহমেদ বলেন, তামাক কোম্পানিগুলো প্রতিনিয়ত আইন লঙ্ঘন করছে। তারা তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন ভঙ্গ করছে। প্যাকেজিং আইন লঙ্ঘন করছে। ধোঁয়াবিহীন তামাকের (জর্দ্দা, গুল প্রভৃতি) ব্যবহার বাংলাদেশের কালচারের সঙ্গে মিশে আছে। এর ব্যবহার কমাতে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী বড় ভূমিকা রাখতে পারে। এক্ষেত্রে মোড়কে এই সতর্কবাণীর পরিমাণ ৫০ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি করে ৯০ শতাংশ করা অত্যন্ত জরুরি।

আব্দুস সালাম মিয়া বলেন, সমস্যা উদ্ঘাটন ও সমাধানের জন্য গবেষণা করা প্রয়োজন। সিদ্ধান্ত নিতে হলে গবেষণা করতে হবে। আজকের এ গবেষণার ফল সরকারকে তামাক নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করবে। তামাক নিয়ন্ত্রণে এ ধরনের গবেষণা ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী, ২০৪০ সালের মধ্যেই বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত করা সম্ভব বলে আশা করছি!

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *