সারাদেশ

‘রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে কুচক্রী মহল কারখানায় হামলা, ভাঙচুর চালাচ্ছে’

ডেস্ক রিপোর্ট: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সহজে জামানত ছাড়া ঋণের বিজ্ঞাপন দিত একটি চক্র। এরপর ঋণ পেতে অ্যাপস ইনস্টল করলেই হাতিয়ে নেওয়া হতো গ্রাহকদের ব্যক্তিগত তথ্য। এরপর সেগুলো ব্যবহার করে ব্ল্যাকমেইল করে টাকা হাতিয়ে নিতো চক্রটি। চক্রটির বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ পেয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা’র (ডিবি) সাইবার এন্ড স্পেশাল ক্রাইম (দক্ষিণ) বিভাগের অর্গানাইজড ক্রাইম ইনভেষ্টিগেশন টিম এক ভারতীয় নাগরিকসহ চক্রের চারজনকে গ্রেফতার করেছে। 

রাজধানীর খিলগাঁও এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেওয়ার পর এমন তথ্য উঠে আসে। এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি কম্পিউটার, দুইটি ল্যাপটপ, ১৪ টি মোবাইল ফোন, প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়া ২০ হাজার টাকা, বিদেশি মুদ্রা ও একটি পাসপোর্ট উদ্ধার করা হয়।

সাইবার ক্রাইমের কর্মকর্তারা বলছেন, চীনের তৈরি এই অ্যাপসটির মূল নিয়ন্ত্রণকারী ভারতীয়রা। তারা বাংলাদেশে তাদের প্রতিনিধি নিয়োগ দিয়ে কাজ করে আসছিল।

গ্রেফতারকৃতরা হলো- ভারতীয় নাগরিক সাবের হোসেন (২৮), বাংলাদেশি নাগরিক আহাম্মেদ হোসেন ভূঁইয়া রানা (২১), মো. বাপ্পি (২১) ও মিশানুর মাহমুদ মিশাল (২৫)।

বৃহস্পতিবার (৯ নভেম্বর) অভিনব এই অপরাধী চক্রের সদস্যদের গ্রেফতারের তথ্য নিশ্চিত করেছেন সাইবার ক্রাইম বিভাগের অর্গানাইজড ক্রাইম ইনভেষ্টিগেশন টিমের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) কাজী মাকসুদা লিমা।

তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম জামানতহীন সহজ শর্তে ঋণের বিজ্ঞাপন দিয়ে ফাঁদ পাততো একটি চক্র। জরুরি আর্থিক প্রয়োজনে কেউ চক্রের ফাঁদে পা দিলেই হতো সর্বনাশ। চীনের তৈরি এই অ্যাপস থেকে উচ্চ সুদে ঋণ দেওয়া হতো। কিন্তু গ্রাহক যখন লোনের আবেদন করার জন্য তাদের অ্যাপস মোবাইলে ইনস্টল করতো তখনই সকল বাক্তিগত তথ্য (কন্ট্রাক লিস্ট, এসএমএস কনটেন্ট, গ্যালারী ইত্যাদি), ছবি ও ভিডিও প্রতারণা চক্রটি পেয়ে যেতো। এরপর গ্রাহককে লোন দেয় তারা। পরবর্তীতে লোন আদায় করতে একটি বিশেষ অ্যাপস দিয়ে গ্রাহকদের কল করা হতো।

অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার বলেন, ঋণের টাকা পরিশোধ ও বাড়তি টাকা আদায়ের জন্য আগে থেকেই হাতিয়ে নেওয়া ছবি ও ভিডিও ব্ল্যাকমেইল করে মোটা অংকের টাকা আদায় করতো। আর এই টাকা আদায়ে ব্যবহার করা হতো ভারতীয় মোবাইল ব্যাংকের একাউন্ট। ভুক্তভোগীদের পাঠানো টাকার ৭০ শতাংশ পেতো ভারতীয় সদস্যরা আর বাকি ৩০ শতাংশ পেতো বাংলাদেশিরা। এই লেনদেন হতো বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে।

যেভাবে প্রতারক হয়ে উঠলো তারা

গ্রেফতার বাংলাদেশি এজেন্ট মিশানুর মাহমুদ মিশাল (২৫) ডিপ্লোমা ইন কম্পিউটার সাইন্স (ড্রপ আউট) এর সাথে একই এলাকায় থাকা আহাম্মেদ হোসেন ভূঁইয়া রানা (২১), মোঃ বাপ্পির (২১) পরিচয় হয়। এরা প্রত্যেকে প্রযুক্তির নানান বিষয়ে জ্ঞান ও দক্ষতা থাকায় স্বল্প পরিশ্রমে বেশি টাকা আয়ের জন্য চায়না ভিত্তিক অনলাইন লোন অ্যাপের এজেন্ট হিসেবে কাজ করে। বাপ্পী ৩ থেকে ৪ বছর আগে খাবার ডেলিভারী ম্যান হিসেবে কাজ করতো। এই কাজ করে যেখানে সে মাসে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা আয় করতো সেখানে এই প্রতারণার কাজ করে ঘরে বসেই মাসে ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা আয় করতেন। বছর খানেক আগে বাড্ডায় এক অফিসে নিয়োগ পেয়ে প্রতারণার এই কাজ শেখে বাপ্পী। কিন্তু কিছুদিন পর ঐ অফিসের লোকজনকে পুলিশ গ্রেফতার করলে বাসায় বসেই ল্যাপটপের মাধ্যমে এই কাজ করত বাপ্পি।

কাজী মাকসুদা লিমা বলেন, গ্রেফতার ভারতীয় নাগরিক সাবের হোসেন মূলত চক্রের মোবাইল ব্যাংকের হিসেবের গুলোর দায়িত্বে ছিলেন। কিছুদিন আগে তিনি বাংলাদেশে এসেছেন বন্ধ হয়ে যাওয়া কিছু একাউন্ট চালু করতে। এর আগেও বিভিন্ন সময়ে এই কাজে তিনি বাংলাদেশে এসেছেন। চক্রের সঙ্গে জড়িত বেশ কয়েকজনের নাম এসেছে। তাদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। 

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার ও স্মার্ট ফোনে অ্যাপস ডাউনলোড এবং ইন্সটলের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকার অনুরোধ জানিয়ে গোয়েন্দা পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, অনলাইনে চটকদার বিজ্ঞাপণ দেখে যাচাই না করে ক্লিক করা যাবে না। ডিজিটাল মাধ্যমের বিভিন্ন লিংক বা সাইট যাচাই বাছাই ছাড়া প্রবেশের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *