খেলার খবর

উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধনে ১১ নভেম্বর কক্সবাজার আসছেন প্রধানমন্ত্রী

ডেস্ক রিপোর্ট: বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে গড়ে ওঠা অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি কক্সবাজার জেলার কোনায় কোনায় লেগেছে উন্নয়নের ছোঁয়া। সাগর তীরের জেলায় প্রায় সাড়ে ৩ লক্ষ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজ চলছে। যার মধ্য দিয়ে বদলে গেছে কক্সবাজার।

কক্সবাজারে মোট ৯৮ টি প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। যার মধ্যে রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত ২৩ প্রকল্প। উল্লেখযোগ্য প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে, ৫১হাজার ৮৫৪.৮৮ কোটি টাকা ব্যয়ে মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে ১২শ মেগাওয়াট আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প। এছাড়াও মাতারবাড়িতে ১৭হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা ব্যয়ে গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মিত হয়েছে। মহেশখালীতে এলএনজি টার্মিনাল, এসপিএম প্রকল্প নতুন দিনের হাতছানি দিচ্ছে। সেই সাথে জেলাবাসীর স্বপ্নের রেল আসছে কক্সবাজারে। ১৮হাজার ৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে দোহাজারী-কক্সবাজার পর্যন্ত ১০২ কিলোমিটার রেল লাইন এখন প্রস্তুত। প্রস্তুত দেশের প্রথন আইকনিক রেলস্টেশন। কক্সবাজার বিমানবন্দর আন্তজার্তিক মানে উন্নীতকরণের কাজ প্রায় শেষের দিকে। ১৫শ ৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণ, ২৭৫ কোটি টাকা ব্যয়ে আন্তজার্তিক পেসেঞ্জার টার্মিনাল ভবন নির্মাণ। এছাড়াও ২হাজার ১৫কোটি ব্যয়ে বিমানবন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের কাজও শেষের দিকে।

অন্যদিকে টেকনাফের সাবরাংয়ে ১১শ ৬৪ একর জমিতে পর্যটন অর্থনৈতিক অঞ্চল, নাফ ট্যুরিজম পার্ক, ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ মেরিন ড্রাইভ, সোনাদিয়ার ইকো পার্ক তৈরি করছে নতুন এক পর্যটন সম্ভাবনা।

এছাড়া ২৮৮কোটি টাকা ব্যয়ে কক্সবাজার শহরের লিংকরোড-লাবনী পর্যন্ত সড়ক ৪ লেনে উন্নীতকরণ, ২৫৮কোটি ২৬লাখ টাকা ব্যয়ে পর্যটন শহরের প্রধান সড়ক প্রশস্তকরণের কাজ শেষ হয়েছে। যার সুফল ভোগ করছে পর্যটক ও স্থানীয়রা। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক আগ্রহে পর্যটন নগরীর মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ শুরু হয়েছে। ১৫৫ কোটি টাকা ব্যয়ে এই মহাপরিকল্পনা বা মাস্টার প্ল্যান প্রণয়নের কাজ চলছে।

খুরুশকুলের জলবায়ু উদ্বাস্ত ৪হাজার ৪০৯টি পরিবারের জন্য প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্প, ১হাজার ৪৬৭কোটি ব্যয়ে ১৩৯টি ভবন নির্মাণ চলছে দ্রুত গতিতে। কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ, রামুর বিকেএসপি, রামুর পেচারদ্বীপে জাতীয় সমুদ্র গবেষণা ইনষ্টিটিউট, সাগরতীরে শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম, খুরুশকুলের বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্প কক্সবাজারকে নিয়ে গেছে অনন্য উচ্চতায়।

সম্প্রতি কক্সবাজারের মানুষের অন্যতম প্রাণের দাবি কক্সবাজারের জন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এভাবেই প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতায় বদলে গেছে কক্সবাজার।

কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমোডর (অব.) মোহাম্মদ নুরুল আবছার বার্তা২৪.কমকে বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজারকে সবকিছুই দিয়েছেন। বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে কক্সবাজারেই। এই জেলায় বিভাগীয় শহরের বাইরে একমাত্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আছে। এছাড়া মহেশখালীতে আরও একটি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ করার কথা চলছে। তারমানে বুঝতে হবে কক্সবাজারের গুরুত্ব কতটুকু”।

কক্সবাজার ৩ (সদর- রামু-ঈদগাঁও) আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল বলেন, “কক্সবাজারবাসীর মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আর কিছুই চাওয়ার নেই। এখন শুধু দেওয়ার পালা। প্রধানমন্ত্রী কক্সবাজারকে দুহাত ভরে দিয়েছেন। এবার আমাদের কক্সবাজারবাসীর অনেক ঋণ রয়েছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি”।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, “কক্সবাজার জেলা বর্তমান সরকারের উন্নয়ন মহাপরিকল্পনার কেন্দ্রে অবস্থান করছে। ভৌগোলিক অবস্থানগত সুবিধা এবং পর্যটনের অফুরন্ত সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর জন্য প্রধানমন্ত্রীর অনেকগুলো বিশেষ অগ্রাধিকার প্রকল্প এবং কয়েকটি মেগা উন্নয়ন প্রকল্প এ জেলায় বাস্তবায়িত হচ্ছে। চলমান এ সকল প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে অমিত সম্ভাবনার কক্সবাজার হয়ে উঠবে আমাদের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি”।

কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আবু মুর্শেদ চৌধুরী খোকা বার্তা২৪.কমকে বলেন, “কক্সবাজারে সবকিছুতেই উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। বলা যাবে বদলে যাওয়া কক্সবাজার। সর্বশেষ একটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি ছিলো এটাও পূরণ হবে”।

এদিকে সেই বদলে যাওয়া কক্সবাজারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আসছেন ১১ই নভেম্বর। এদিন প্রধানমন্ত্রী প্রায় ৮৮ হাজার কোটি টাকার ১৯ টি প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। তার মধ্যে রেলসহ ১৫ টি প্রকল্পের উদ্বোধন ও ৪ টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন বলে জানা গেছে জেলা প্রশাসন সূত্রে। উদ্বোধনযোগ্য প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে ৯ টি বড় প্রকল্প আর ৬ টি ছোট প্রকল্প।

উদ্বোধন হতে যাওয়া প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে দোহাজারি থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন, মাতারবাড়ির আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর চ্যানেল, বাঁকখালী নদীর উপর নির্মিত সেতু,সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে কুতুবদিয়া দ্বীপকে জাতীয় গ্রীডে সংযুক্তকরণ, উখিয়ার বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প, রামু উপজেলায় কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, চকরিয়া বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ আব্দুল হামিদ পৌর বাস টার্মিনালের সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন কাজ, কুতুবদিয়া ঠান্ডা চৌকিদার পাড়া আর সি সি গার্ডার ব্রীজ,মহেশখালীর গোরকঘাটা-শাপলাপুরের জনতাবাজার সড়ক, বিমান বন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের ভূমি ভরাট, বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প, ঈদগাঁও জাহানারা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়,মহেশখালীর ইউনুছখালীর উচ্চ বিদ্যালয়, উখিয়ার রত্না ও মরিচ্যা পালং উচ্চ বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন।

অন্যদিকে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হতে যাওয়া প্রকল্পগুলো হচ্ছে মাতারবাড়ির গভীর সমুদ্র বন্দর চ্যানেলের ১ম টার্মিনাল, টেকনাফের মাল্টিপারপাস ডিজাস্টার রিসিলেন্ট শেল্টার কাম আইসোলেশন সেন্টার, রামুর জোয়ারিয়ানালার নন্দা খালী সড়কে আরসিসি গার্ডার ব্রীজ নির্মাণ,জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সমূহে কাব স্কাউটিং সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় ভবন নির্মাণ প্রকল্প।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪ ডট কম-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *