সারাদেশ

উপজেলা পরিষদ নির্বাচন: সিলেটে কেন্দ্রে ভোটার আনাই চ্যালেঞ্জ প্রার্থীদের

ডেস্ক রিপোর্ট: রাত পোহালেই সিলেটে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে চারটি উপজেলায় ভোটগ্রহণ শুরু হবে। বুধবার (৮ মে) সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলবে ভোটগ্রহণ। এ চার উপজেলায় তিনটি পদে মোট ৫৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। শেষ মুহূর্তে এসে এখন আলোচানার টেবিলে চলছে ভোটের হিসেব-নিকাশ। ভোটের দিন যে প্রার্থী যত বেশি ভোটার কেন্দ্রে নিয়ে আসবেন সেই প্রার্থী পড়বেন বিজয়ের মালা। ভোটারদের কেন্দ্র আনাটাই হচ্ছে সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জিং। তাই বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছেন প্রার্থীরা। বিশেষ করে অঞ্চল ভিত্তিক ভোটার আনার চেষ্টা করবেন তারা।

নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে ইতোমধ্যে সব প্রস্তুতি নিয়েছে প্রশাসন। এছাড়া ভোটের দিন চারটি উপজেলায় আবহাওয়া স্বাভাবিক থাকবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা যায়, প্রথম ধাপে সিলেট জেলার সদর, দক্ষিণ সুরমা, গোলাপগঞ্জ ও বিশ্বনাথ উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। চার উপজেলায় ৮ লাখ ১৪ হাজার ৫২ ভোটার রয়েছেন। তিনটি পদে মোট ৫৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সিলেট সদর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ৬ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৮জন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। দক্ষিণ সুরমা উপজেলায় চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫ জন করে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩জন লড়ছেন।

গোলাপগঞ্জ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ৩জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫ জন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২জন প্রতিদ্বন্দ্বী রয়েছেন। আর বিশ্বনাথ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ১০ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৬ জন এবং ৩জন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ভোটের লড়াইয়ে আছেন।

এদিকে, ভোটের দিন কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিত নিয়ে রয়েছে নানা আলোচনা। সিলেটের চারটি উপজেলার মধ্যে মাত্র শুধু বিশ্বনাথে অংশগ্রহণ করেছে বিএনপির নেতাকর্মীরা। বাকি সবগুলো উপজেলায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীই প্রার্থী। তাই ভোটার উপস্থিত নিয়ে রয়েছে তাদের মধ্যে একটা চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জকে সামনে রেখে ভোটারদের দোয়ারে দোয়ারে ঘুরেছেন প্রার্থীরা। নিজ অঞ্চলের ভোটের বিষয়টি প্রাধন্য দিয়েছেন তারা।

প্রার্থীরা বলছেন, বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ও জাতীয় নির্বাচনে ভোটার উপস্থিত ছিল তুলনামূলক কম।তাই তারা এবার ভোটারদের কেন্দ্রমুখী বিভিন্ন কৌশলে প্রচারণা করেছেন। বিশেষ করে তরুণ ভোটারদের কাজ করেছেন। এছাড়াও ভোট কেন্দ্রে নারী নিয়ে আসতে ছুটে ঘিয়েছেন ঘরে ঘরে।

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, ভোটে আড়াই হাজারের বেশি পুলিশ সদস্য, সাড়ে তিন হাজারের বেশি আনসার সদস্য ও ৪জন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট ও ৩৬ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োজিত থাকবেন। এর বাইরে বিজিবি ও এপিবিএন সদস্যরাও মাঠে থাকবে। চারটি উপজেলায় ৩০২টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হবে। এরমধ্যে ১৭৪টি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ ধরে নিরাপত্তা পরিকল্পনা করেছে সিলেট জেলা ও সিলেট মহানগর পুলিশ( এসএমপি)। এসএমপির আওতাধীন সদরে ৬২ টি কেন্দ্রের মধ্যে ৪৫টি ঝুঁকিপূর্ণ ও দক্ষিণ ‍সুরমার ৬৩টি কেন্দ্রের ৩৯টি ঝুঁকিপূর্ণ নির্ধারণ করা হয়েছে। আর জেলার দুই উপজেলায় ৯০টি ঝুঁকিপূর্ণ ধরা হয়েছে। তন্মধ্যে গোলাপগঞ্জে ১০৩টি কেন্দ্রের ৬৩টি ও বিশ্বনাথে ৭৪টি কেন্দ্রের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ২৭টি নির্ধারণ করা হয়েছে।

ভোটার উপস্থিত নিয়ে বিশ্বনাথ উপজেলায় চেয়ারম্যান প্রার্থী ও সদ্য বহিষ্কৃত যুক্তরাজ্য বিএনপির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক সেবুল মিয়া বলেন, বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ও জাতীয় নির্বাচনে মানুষের ভোটের প্রতি আগ্রহ ছিলো না।তাই ভোটের দিন ভোটার উপস্থিত ছিল কম। কিন্তু যেহেতু এখন স্থানীয় সরকার নির্বাচন তাই প্রত্যেকে তার নিজ এলাকাসহ অঞ্চল ভিত্তিক ভোটে জোর দিয়েছেন বেশি। আমি আমার জায়গা থেকে চেষ্টা করেছি প্রতিটি এলাকায় যোগাযোগ করার। এখন দেখি বাকিটা ভোটার উপর ভিত্তি করছে।

চেয়ারম্যান প্রার্থী ও দক্ষিণ সুরমা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বদরুল ইসলাম বলেন, অন্যান্য নির্বাচন থেকে এবারের নির্বাচনে ভোটারদের উপস্থিত বেশি হবে বলে আমার ধারণা। কেননা আমাদের কর্মী-সমর্থকরা নির্বাচনী এলাকার প্রতিটি পাড়া-মহল্লা গিয়ে ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে এসে ভোটপ্রদানের আহ্বান জানিয়েছে। এছাড়া আমি আমার নির্বাচনী এলাকায় তরুণ ভোটারদের বেশি গুরুত্ব দিয়েছি।কারণ তরুণরাই যাচাই-বাচাই করে ভোট দিয়ে তাদের পছন্দের প্রার্থীদের বিজয়ী করবে। আমি আশা করি আমাকে উপজেলাবাসী ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন।

ভোটের দিন বিকেল পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন সিলেট আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক দীলিপ বৈষ্ণব। তিনি বলেন, যে চারটি উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে সেগুলোতে দিনের বেলায় বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। তবে সন্ধ্যার পর বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।

এব্যাপারে সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, নির্বাচন ঘিরে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কেউ কোনো বিশৃঙখলা তৈরি করার চেষ্টা করলে সঙ্গে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে সিলেটের সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও চার উপজেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

তিনি বলেন, ইতোমধ্যে আমাদের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। ভোটারদের উপস্থিতি প্রার্থীদের উপর নির্ভর করছে। তারা জনগণের সঙ্গে কতটা সম্পৃক্ত হতে পেরেছেন এবং প্রচার প্রচারণা করেছেন তা ভোটারদের উপস্থিতি বলে দেবে।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *