বিনোদন

চাঁদাবাজির ‘আঁতুড়ঘর’: ১০০ গজের সড়কে রিকশায় চাঁদাবাজি ২১ লাখের বেশি

ডেস্ক রিপোর্টঃ রাজধানীর ফার্মগেট থেকে কিছুটা এগিয়ে গেলেই পান্থপথ সিগন্যাল। ফার্মগেট থেকে পান্থপথ সিগন্যাল পর্যন্ত সড়কটির দূরত্ব মাত্র ৭০০ মিটার। তবে ৭০০ মিটার সড়কের মধ্যে পান্থপথ সিগন্যাল থেকে কাজীপাড়ার মোড় পর্যন্ত আনুমানিক মাত্র ১০০ গজ সড়ক থেকেই বছরে ২১ লাখের বেশি অবৈধ চাঁদা আদায় হয় বলে জানা গেছে। জনবহুল সড়কটি এখন পরিণত হয়েছে অবৈধ চাঁদাবাজির ‘আঁতুড়ঘর’ হিসেবে।

রাজধানীর ফার্মগেটে অবস্থিত আনন্দ সিনেমা হলের সামনের সড়ক ধরে কিছুদূর এগিয়ে গেলেই চোখে পড়বে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এশিয়া প্যাসিফিক। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি পার হয়ে সামনে এগোলেই পানি ভবনের পুরাতন গেট সংলগ্ন দেখা মিলবে রাস্তা দখল করে শত শত রিকশা পার্কিং করে রাখা হয়েছে। ফলে নিত্যদিন দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন এই সড়কে চলাচলকারী সাধারণ মানুষ।

সড়কটি দখল করে গড়ে ওঠা অবৈধ রিকশা গ্যারেজের কারণে সাধারণ মানুষ দুর্ভোগের শিকার হলেও লাভবান হচ্ছেন হাতেগোনা কিছু মানুষ। যার মধ্যে রয়েছেন সরকারদলীয় স্থানীয় কিছু নেতাকর্মীর নামও।

সড়ক দখল করে গড়ে ওঠা অবৈধ রিকশা গ্যারেজের কারণে সাধারণ মানুষেড় দুর্ভোগ।

সরেজমিনে সড়কটি ঘুরে দেখা গেছে, সন্ধ্যার ৭টার পর থেকে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে চলাচলকারী রিকশা এসে জমা হয় এই স্থানটিতে। দিনের বেলা ৫০ থেকে ৫০টি রিকশা সব সময় এখানে পার্কিং করে রাখা হলেও রাত যত গভীর হয় ততই লম্বা হতে থাকে রিকশার লাইন। মূলত রিকশাচালকেরা সারাদিনের রোজগার শেষে রিকশাগুলো সারা রাত পার্কিং করে রাখেন এই সড়কটিতে। প্রধান সড়কে রিকশা পার্কিংয়ের ফলে সন্ধ্যার পর থেকে অধিকাংশ সময়ে যানজটও দেখা যায় এই সড়কে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, সড়ক দখল করে গড়ে তোলা এই গ্যারেজে প্রতিদিন আনুমানিক ৩০০ এর বেশি রিকশা পার্কিং করে রাখা হয়। এই পার্কিং বাবদ রিকশা থেকে প্রতিদিন ২০ টাকা করে চাঁদা নেওয়া হয়।

সর্বনিম্ন ৩০০ রিকশার ধরলে হিসাব অনুযায়ী প্রতিদিন এই স্বল্প দূরত্বের জায়গাটিতে গড়ে তোলা রিকশা গ্যারেজ থেকেই চাঁদা আদায় হয় ৬ হাজার টাকা। এই হিসেবে মাসে চাঁদার পরিমাণ দাঁড়ায় ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। আর বছর শেষে এই হিসেব দাঁড়ায় ২১ লাখ ৬০ হাজার টাকায়।

এই রিকশা গ্যারেজ থেকেই চাঁদা আদায় হয় মাসে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। 

সড়কে চলাচলকারী সাধারণ মানুষের অভিযোগ, লাইনম্যানের মাধ্যমে নিয়মিত চাঁদা নিয়ে এই সড়কের উপরে রিকশা রাখা হয়। আর এই চাঁদার ভাগ পান ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতাকর্মীরা। মূলত তারাই লাইনম্যানের মাধ্যমে টাকা তোলেন।

অভিযোগের সূত্র ধরে অনুসন্ধান চালায় বার্তা২৪.কম। অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে লাইনম্যানের কথিত দায়িত্বে থাকা সোহেল নামের একজনের নাম। তিনিই নিয়মিত চাঁদা তুলেন ও প্রধান সড়ক দখল করে গড়ে তুলেছেন রিকশার গ্যারেজ। এছাড়াও এই রিকশা গ্যারেজ সংলগ্নই ফুটপাতের পাশেই তিনি গড়ে তুলেছেন একটি ভাতের হোটেলও।

এদিকে, গ্যারেজ রাখা বেশ কয়েকজন রিকশাচালকের সঙ্গে কথা বললে তারাও স্বীকার করেন রিকশা-প্রতি ২০ টাকা করে চাঁদা দিতে হয়। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে রিকশার মালিকেরা তাদের রিকশার সংখ্যা হিসেব করে সোহেলকে চাঁদা দেন বলেও জানান তারা।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে লাইনম্যান সোহেল বার্তা২৪.কমকে বলেন, এগুলো চাঁদাবাজি না। যারা গরিব মানুষ তারা এখানে রিকশা রেখে যায়। রাতে রেখে যায়, আবার সকালে নিয়ে যায়। আপনারা অন্য সবকিছু দেখেন না কেন? এই রাস্তা নিয়ে আপনাদের এত প্যারা কেন ভাই, অন্য কাজ করেন না? আমি আপনার সঙ্গে পরে কথা বলব।

সড়কের উপরে রাখা রিকশার চাঁদার ভাগ পান ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতাকর্মীরাও। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে তেজগাঁও ট্রাফিক বিভাগের ডিসি উপ-পুলিশ কমিশনার মোস্তাক আহম্মেদ বার্তা২৪.কমকে বলেন, যখন দায়িত্বে থাকি তখন মূল রাস্তা (প্রধান সড়ক) আমরা খালি রাখি। আর ফুটপাতগুলো সাধারণত থানা পুলিশ দেখেন।

তিনি বলেন, আমার ট্রাফিক পুলিশ যখন দিনের বেলা ডিউটিতে থাকে, তখন আমরা সব রাস্তাগুলো ফাঁকা রাখার চেষ্টা করি। মেইন সড়ক দখল করে রাখার সুযোগ নেই। আর যদি এমন বিষয় থেকে থাকে, তাহলে আমরা থানা পুলিশকেও ব্যবস্থা নিতে বলব।

তেজগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন বার্তা২৪.কমকে বলেন, বেশ কয়েকবার এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। নিয়মিত উচ্ছেদও করা হয়। আমরা প্রতিনিয়তই এদের বিরুদ্ধে কাজ করি। এর মাঝেও পুলিশ এনে তাদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা আমাদের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

মাঝেমধ্যে উচ্ছেদ করা হলেও তারা আবার কীভাবে জায়গা দখল করে আবার কার্যক্রম শুরু করে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অভিযান চালালে সবাই ভালো হয়ে যায়, কিন্তু উচ্ছেদ শেষ হলে আবার আগের অবস্থানে ফিরে যায়; কী করার বলেন। যতক্ষণ মানুষ ভালো না হবে, ততক্ষণ এসব কাজ সম্পূর্ণভাবে সম্পন্ন করা কঠিন।

তবে তেজগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন মাঝে মধ্যে উচ্ছেদের তথ্য জানালেও আশপাশে ব্যবসায়ীদের ভাষ্য বলছে, এই এলাকায় অবস্থানরত ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদ করা হলেও রিকশার গ্যারেজটি উচ্ছেদ করা হয়নি।

নাম না প্রকাশের শর্তে স্থানীয় এক ব্যবসায়ী বলেন, এখানে ফুটপাত বা রাস্তার আশেপাশে বিভিন্ন সময়ে অভিযান চালিয়ে সব দোকান ভেঙে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু রিকশার এই গ্যারেজে কোন দিন অভিযান চালাতে দেখিনি। আজ প্রায় ৪ থেকে ৫ বছর এখানে ব্যবসা করছি, কিন্তু এতদিনের মধ্যে একবারের জন্যও এই গ্যারেজের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিতে দেখিনি।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) বার্তা২৪.কমকে বলেন, আপনি হোয়াটসঅ্যাপে ঠিকানাসহ ডিটেইলস তথ্য দেন, আমরা বিষয়টা দেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবো।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪ এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *