প্রত্যেক কাজ নিয়তের উপর নির্ভরশীল

মানুষ কখনো কখনো ভালো নিয়তের কারণে আমল না করেও সওয়াব পেয়ে থাকে। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো ভালো কাজের আশা করল, অতঃপর তা করতে পারল না, তবুও তার জন্য সওয়াব লেখা হবে।’ (বোখারি : ৬৪৯১)।

আপনি নিয়ত করলেন—আমি অমুককে কিছু টাকা সদকা দেব, আজ রাতের শেষাংশে তাহাজ্জুদ পড়ব কিংবা আজ এশার নামাজের পর দুই রাকাত সালাতুল হাজত বা নফল পড়ব। অথবা নিয়ত করলেন, আমি সদকায়ে জারিয়া করব, গরিব অসহায়দের বস্ত্র বিতরণ করব ইত্যাদি ইত্যাদি যত সওয়াবের কাজ আছে।

আপনি জানেন, আপনার এই নেক কাজের নিয়ত করার নিমিত্তে আপনার আমলনামায় একটি করে নেকি লেখা হয়।

নেক কাজটি এখনো করেননি, করবেন বলে ভেবেছেন—আপনার আমলনামায় উঠে গেল নেকি। এটা আমাদের কথা নয়, হাদিসের কথা। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, আমার বান্দা যখন কোনো ভালো কাজের নিয়ত করে অথচ এখনো তা করেনি, তখন আমি তার জন্য একটি সওয়াব লিখি; আর যদি তা কাজে পরিণত করে তবে দশ থেকে সাতশগুণ পর্যন্ত সওয়াব লিখি।

পক্ষান্তরে কেউ যদি গুনাহের কাজের ইচ্ছা করে, তার আমলনামায় কি পাপ লেখা হবে, যেভাবে ভালো কাজের নিয়ত করায় নেকি লেখা হয়? না, লেখা হবে না। কেউ যদি নিয়ত করল যে, সে অমুক পাপ কাজ করবে, কিংবা নিকৃষ্ট কোনো পাপের ইচ্ছাও করে তা আমলনামায় লেখা হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত সে ওই গুনাহের কাজটা না করে।

আরেক হাদিসে আছে, যদি কেউ মন্দ কাজের নিয়ত করে অথচ এখনো তা কাজে পরিণত করেনি তবে এর জন্য কিছুই লিখি না। আর তা কাজে পরিণত করলে একটি মাত্র পাপ লিখি। (মুসলিম : ২৩৩) এমনকি যদি এমন হয়, কোনো ব্যক্তি তাহাজ্জুদের নিয়ত করে ঘুমাল। কিন্তু গভীর ঘুমে চলে গেল তাহাজ্জুদের সময়। সে ব্যক্তি তাহাজ্জুদ না পড়েও তাহাজ্জুদ পড়ার সওয়াব পাবে।

হাদিসে আছে,নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি শয়নকালে রাতের বেলায় তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ার নিয়ত করে শুয়েছে, কিন্তু অতিরিক্ত ঘুমের চাপে ভোর হয়ে গেছে—সে তার নিয়ত অনুযায়ী সওয়াব পাবে। তার ঘুমই আল্লাহর পক্ষ থেকে সওয়াব হিসেবে গণ্য হবে।’ (নাসায়ি : ৩/২৫৮)।

আরেকটি হাদিসে তাবুক যুদ্ধের ময়দানে উপস্থিত সাহাবিদের উদ্দেশ্য করে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘নিশ্চয়ই মদিনায় এমন কিছু মানুষ রয়েছে, তাবুক পর্যন্ত প্রতিটি পথে-প্রান্তরে; প্রতিটি টিলা-টক্করে যারা তোমাদের সঙ্গেই ছিল। তারাও তোমাদের মতো জিহাদের সওয়াব লাভ করবে। কারণ পূর্ণ নিয়ত থাকা সত্ত্বেও অসুস্থতা বা অন্য কোনো ওজর তাদের এ অভিযানে অংশগ্রহণে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।’ (মুসলিম : ১৯১১)।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *