‘কর্নেল-মেজরসহ মিয়ানমারের আরও ১৩৮ বিজিপি আশ্রয় নিল বাংলাদেশে’
ডেস্ক রিপোর্ট: ছয় মাস আগে মেহেদি রাঙা হাতে রঙিন শাড়ি পড়ে বাবার বাড়ি থেকে বরের হাত ধরে শ্বশুর বাড়িতে গিয়েছিলেন ফারিয়া হাসান ইতি (২৫)। আর ছয় মাস পর গত শনিবার (১১ মে) রাতে ইতি বাবার বাড়িতে ফিরেছেন সাদা কাফনে মোড়ানো লাশ হয়ে।
ফারিয়া হাসান ইতির বাড়ি ময়মনসিংহের গৌরীপুর পৌর শহরের সতীষা মহল্লায়। তার বাবা অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য মো. আব্দুর রশিদ।
গত শুক্রবার (১০ মে) রাজধানী ঢাকার সাভার এলাকার একটি বাসা থেকে ইতির মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এই ঘটনায় ইতির স্বামী শাকিরুল হক শুভকে আটক করেছে পুলিশ।
শুভ ময়মনসিংহের গৌরীপুর পৌর শহরের বালুয়াপাড়া মহল্লার গোলাম মোহাম্মদ খান পাঠানের ছেলে।
ইতির বাবা মো. আব্দুর রশিদের অভিযোগ, তার মেয়েকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। তিনি বলেন, মেয়ের লাশে আঘাতে চিহ্ন রয়েছে। তাকে নির্মমভাবে আঘাতের পর হয়তো ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়েছে বা হত্যা করে ফাঁসিতে ঝুলিয়েছে। আমার মেয়ে মরতে পারে না।
ইতির মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন সাভার মডেল থানার ওসি শাহ জামান। তিনি জানান, এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। নিহতের স্বামী মো. শাকিরুল হক শুভকে (৩০) আটক করা হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
নিহতের পরিবার সূত্রে জানা যায়, ২০২৩ সালের ৮ ডিসেম্বর শুভর সঙ্গে ইতির বিয়ে হয়। ইতি সাভারে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সিনিয়র স্টাফ নার্স হিসেবে কর্মরত ছিলেন। আর তার স্বামী ঢাকায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন।
বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রী চাকরির সুবাধে সাভারের তালতলা বেকারি এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন।
শুক্রবার সকাল ৮টার দিকে ইতি হাসপাতালে উিউটি শেষ করে বাসায় ফেরেন। সকাল ১০টার দিকে ইতি তার মা পারভীন আক্তারের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় তিনি তার মাকে জানান, আমি কী এখানে থেকে মরব; না চলে আসব? তখন তার মা ইতিকে জানান, তোদের কী হয়েছে? তখন কোনো কিছুই বলে নাই।
এরপর ওর বোনকে ফোন দিয়ে কারণ জানতে চাই, তখনো কিছু বলে নাই। এরপর হঠাৎ আমার মেয়ের চিৎকার শুনতে পাই, এই চিৎকারই, শেষ কথা, মেয়ের কণ্ঠের শেষ চিৎকার। এরপর থেকে মেয়ের ফোন বন্ধ, মেয়ের জামাই শুভর ফোনে একাধিকবার কল দিলেও ফোন রিসিভ করে নাই।
তিনি আরও জানান, সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে বেয়াই (শুভর বাবা) ফোন দিয়ে বলেন, মেয়ের কী অবস্থা একটু খোঁজ নেন, তখন আমরা বলেছি, মেয়ের ফোন বন্ধ, জামাইতো কল রিসিভ করে না। এরপর শুভর নম্বরে কল দিলে সে রিসিভ করে, প্রথমে আমরা কেমন আছি এসব জিজ্ঞাস করে। তারপরে বলে ইতি আর নাই! সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পরিকল্পিতভাবে নির্যাতন করে আমার মেয়েকে মেরে ফেলা হয়েছে, আমি আমার মেয়ের হত্যার বিচার চাই।
শুভর বাবা গোলাম মোহাম্মদ খান জানান, আমি প্রথম শুনেছি আমার পুত্রবধূ ইতি অসুস্থ। পরে জানলাম সে আত্মহত্যা করেছে। ঘরের দরজা ভেঙে প্রতিবেশীরা এসে তাকে উদ্ধার করে। ঘরে ভাত-মাছ-মাংস রান্না করাছিল কেউ কিছু খায়নি। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সম্ভবত বিরোধ চলছিল।
এদিকে ইতির মৃত্যুতে শোক বইছে এলাকাজুড়ে। ছুটেছে এসেছে ইতির বান্ধবীরাও। কয়েকদিন আগে বিয়ের মেহেদি রাঙা সেই হাত, বিয়ের শাড়ি আর স্মৃতিময় ঘটনা বলে তারা কান্নায় ভেঙে পড়ছেন।
ইতির বান্ধবী তাসফিয়া জাহান উর্মি জানায়, ইতি অত্যন্ত শান্ত স্বভাবের একটা মেয়ে। সে স্কুলজীবনে আমাদেরকে নানা পরামর্শ দিতো। সে মৃত্যুর পথ বেছে নেবে বিশ্বাসযোগ্য নয়।
ইতির লাশের ময়নাতদন্ত শেষে শনিবার রাতে গৌরীপুর পৌর শহরের সতিষা গ্রামের বাবার বাড়িতে এসে পৌঁছলে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। রাতেই তার লাশ বাবার বাড়ির পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হয়।
সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।