সারাদেশ

রাজধানীতে মাদকবিরোধী অভিযানে গ্রেফতার ২৭

ডেস্ক রিপোর্ট: ‘আজকে আমরা ঈদের চেয়েও বেশি আনন্দিত। আমাদের সন্তানেরা আমাদের কাছে ফিরে এসেছে। এর থেকে বড় আনন্দের আর কি হতে পারে! স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে। আমাদের রাত গিয়ে আজ সকাল হয়েছে।’

মঙ্গলবার (১৪ মে) বিকেলে ৫টার দিক চট্টগ্রাম বন্দর জেটির নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনালে বসে বার্তা২৪.কমের এ প্রতিবেদককে ছেলে ফিরে পাওয়ার অনুভূতি এভাবে তুলে ধরলেন এমভি আব্দুল্লাহ জাহাজের অয়েলার আইনুল হকের মা লুৎফে আরা বেগম।

এসময় আইনুলের মা ছেলে জিম্মিদশা অবস্থায় থাকা দিনগুলো কথা জানান। বলেন, ‘ওরা যখন জিম্মি ছিল ওই সময়টা আমি এত বেশি অসুস্থ হয়ে যায়, একদিন রাতে তিনটায় ডাক্তার আনতে হয়েছিল। ডাক্তার সব চেকআপ করে দেখে আমার কোন সমস্যা নেই। বলেছেন, দুশ্চিন্তা করার কারণে আমার এমন হয়েছে। তখন আমাকে ঘুমের ওষুধ দেন, পুরো রোজার মাস ঘুমের ওষুধ খেয়ে থাকতে হয়েছে।’

‘ঈদের সময় তো আমরা ঈদ পালন করিনি। ওই সময়টা আমাদের মধ্যে দুশ্চিন্তা এবং উৎকণ্ঠার মধ্য দিয়ে গিয়েছিল। আমরা চেয়েছি ঈদের দিনটা খুব তাড়াতাড়ি চলে যাক। তখন আমাদের ছেলেরা জিম্মি ছিল।’

ছেলে ফিরে আসায় আনন্দের যেন সীমা নাই ৫০ বছর বয়সী লুৎফে আরা বেগমের। তিনি বলেন, ‘ছেলেরা মায়ের বুকে ফিরে এসেছে এর থেকে বড় আনন্দের কি আছে। সেই জিম্মি মায়ের ছেলে মায়ের বুকে ফিরে এসেছে। এর থেকে বড় আনন্দে আর কিছু হতে পারে না। প্রথমে জাহাজ থেকে নামা মাত্র ছেলেকে আমি জড়িয়ে ধরেছি। এখান থেকে গিয়ে ওর পছন্দ অনুযায়ী রান্না করব। ওর বন্ধুরা আসবে তাদের জন্য আয়োজন করব।’

ছেলেকে আবার জাহাজে যেতে দেবেন কি-না জানতে চাইলে আইনুলের মা বলেন, ‘আমার ছেলে প্রাপ্তবয়স্ক। সেটি তার ইচ্ছা ও উপর নির্ভর করছে। সে যদি যেতে চায় তাহলে অবশ্যই যাবে। আর তাছাড়া দুর্ঘটনা তো পৃথিবীর যেকোনো কিছুতেই হয়, শুধু জাহাজে জলদস্যু আক্রমণ করে এমন তো না। মানুষের জীবন-মৃত্যু হচ্ছে আল্লাহর হাতে। দুর্ঘটনা তো যে কোন জায়গায় হতে পারে।

আইনুলরা দুই ভাই। তাদের কোনো বোন নেই। করোনার সময় বাবা মারা যান। বাবার কিছু ব্যবসার টাকা ও আইনুলের আয় দিয়ে চলছে সংসার। চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্সে পড়ছেন ছোট ভাই মাইনুল হক। তাদের গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে৷ তবে ছোট ছেলেকে নিয়ে নগরীর কাজির দেউরিতে বসবাস করেন করছেন মা লুৎফে আরা।

ছেলে জাহাজ থেকে আসলে ঘরে নতুন বউ তোলার আশা বেঁধে রেখেছিলেন আইনুলের মা। আজ ছেলেকে কাছে পাওয়ার পর সেই কথা জানালেন লুৎফে আরা বেগম। বললেন, ‘আমার কোন মেয়ে নেই দুইটি মাত্র ছেলে। এর মধ্যে আইনুল বড়। এখনো বিয়ে করেনি। এবার যেহেতু দেশে ফিরেছে ইনশাল্লাহ বিয়ে করানোর ইচ্ছা আছে। মেয়েও দেখতেছি। সবাই দোয়া করবেন ছেলের জন্য যাতে একটি ধার্মিক ও ভদ্র মেয়ে আমি পাই।’

এদিন বিকেল চারটায় ২৩ নাবিককে সঙ্গে নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি-১ জেটিতে ভিড়ে লাইটার জাহার এমভি জাহান মনি। এর কয়েক ঘণ্টা আগে থেকেই নাবিকদের এক নজর দেখতে বন্দর জেটিতে ভিড় করেছেন নাবিকের স্বজনরাসহ শতশত মানুষ।

মঙ্গলবার সকাল ১১টা ৪০ মিনিটে কুতুবদিয়া থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্দেশে ২৩ নাবিক নিয়ে রওনা দেয় এমভি জাহান মনি-৩। বিকেল চারটায় অবসান হয় দীর্ঘ দুমাসের অপেক্ষার। এর মধ্যেই শুরু হয় নাবিকদের বরণের উৎসব। লাল রঙের জাহাজটি বন্দরে ভিড়ার কয়েক মিনিট আগে থেকেই নাবিকরা দূর থেকে হাত নেড়ে জানান দেন, আমরা এসেছি! এদিকে জেটিতে থাকা স্বজনরাসহ সকলে তাদেরকে হাত উঁচিয়ে স্বাগত জানায়। এরপর ৪টা ১৮ মিনিটের দিকে জাহাজ থেকে একে একে নেমে আসেন ২৩ নাবিক। নাবিকদের বরণ করে নেয় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। সেখানে আগে থেকেই অপেক্ষা করেছিলেন নাবিকদের পরিবারের সদস্যরা। নাবিকদের কাছে পেয়ে আনন্দঘন পরিবেশ তৈরি হয় জেটি এলাকায়।

এর আগে সোমবার (১৩ মে) বিকেল ৬টায় বঙ্গোপসাগরের কুতুবদিয়া চ্যানেলে ২৩ নাবিকসহ নোঙর করে এমভি আব্দুল্লাহ।

এমভি আব্দুল্লাহতে ছিলেন যে ২৩ নাবিক:

জাহাজের মাস্টার মোহাম্মদ আবদুর রশিদ, চিফ অফিসার মো. আতিক উল্লাহ খান, সেকেন্ড অফিসার মোজাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, থার্ড অফিসার এন মোহাম্মদ তারেকুল ইসলাম, ডেক ক্যাডেট মো. সাব্বির হোসাইন, চিফ ইঞ্জিনিয়ার এএসএম সাইদুজ্জামান, সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. তৌফিকুল ইসলাম, থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. রোকন উদ্দিন, ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার তানভীর আহমেদ, ইঞ্জিন ক্যাডেট আইয়ুব খান, ইলেকট্রিশিয়ান ইব্রাহীম খলিল উল্লাহ, এবি পদের মোহাম্মদ আনোয়ারুল হক, মো. আসিফুর রহমান, মো. সাজ্জাদ হোসাইন, জয় মাহমুদ, ওএস পদের মো. নাজমুল হক, অয়েলার পদের আইনুল হক, মোহাম্মদ শামসুদ্দিন, মো. আলী হোসেন, ফায়ারম্যান মোশাররফ হোসেন শাকিল, চিফ কুক মো. শফিকুল ইসলাম, জিএস পদের মোহাম্মদ নুর উদ্দিন ও ফিটার মোহাম্মদ সালেহ আহমদ।

গত ১২ মার্চ মোজাম্বিকের মাপুতো বন্দর থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে আসার পথে ভারত মহাসাগরে সোমালি জলদস্যুর কবলে পড়ে বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহ। চট্টগ্রামভিত্তিক শিল্প গ্রুপ কেএসআরএমের মালিকানাধীন জাহাজটি ৩২ দিন জলদস্যুর কাছে জিম্মি থাকে। এরপর ১৪ এপ্রিল মুক্তিপণ দেওয়ায় জাহাজ থেকে নেমে যায় জলদস্যুরা।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *