আন্তর্জাতিক

অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনের প্রভাবে বিরল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

ডেস্ক রিপোর্ট: কোভিড-১৯ প্রতিরোধে তৈরিকৃত ব্রিটিশ-সুইডিশ ফার্মা জায়ান্টের অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনের প্রভাবে আরও একটি মারাত্মক রোগের সন্ধান পেয়েছেন গবেষকরা। 

বৃহস্পতিবার (১৬ মে) গবেষকরা জানিয়েছেন, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় তৈরি করা অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনের প্রভাবে ‘ভ্যাকসিন-ইনডিউসড ইমিউন থ্রোমবোকায়টোপেনিয়া অ্যান্ড থ্রোমবোসিসের’ (ভিআইটিটি) ঝুঁকি বেড়ে যায়। 

‘ভিআইটিটি’ রক্ত জমাট বাধার একটি অতি বিরল রোগ হলেও খুবই মারাত্মক রোগ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন তারা।

তবে এই রোগটি পৃথিবীতে নতুন না হলেও অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনের প্রভাবে এটি নতুন করে উদ্ভব হয়েছে। ২০২১ সালে করোনা মহামারীর সময়ে এটি ভারত তথা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে কোভিশিল্ড হিসেবে বিক্রি হয়েছিল। আর ইউরোপের দেশগুলোতে ভ্যাক্সজেভরিয়া নামে মানুষের শরীরে প্রয়োগ করা হয়েছিল।

এই রোগের কারণ হিসেবে গবেষকরা বলছেন, “একটি অস্বাভাবিক বিপজ্জনক রোগ এটি। যা রক্তে অটোঅ্যান্টিবডির প্লাটিলেট ফেক্টর ৪ (পিএফ৪) নামের একটি প্রোটিনের বিরুদ্ধে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছিল। যেটি ভিআইটিটির কারণ হিসেবে পাওয়া গেছে।” 

গত ফেব্রুয়ারিতে এক নথিতে অ্যাস্ট্রাজেনেকার কর্তৃপক্ষ স্বীকার করেছিল যে, টিকা গ্রহণের পর টিটিএস বা থ্রম্বসিস উইথ থ্রম্বোসিটোপেনিয়া সিনড্রোম নামের এক প্রকার শারীরিক জটিলতা দেখা দিতে পারে, তবে তা খুবই বিরল।

যুক্তরাজ্যে এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার শিকার হয়ে ২০২০ সালের টিকাদান কর্মসূচির শুরু থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ৮১ জনের মৃত্যু হয়েছে।

এর আগে গত বছর কানাডা, উত্তর আমেরিকা, জার্মানি এবং ইতালির গবেষকরা পৃথক এক গবেষণায় এই রোগের সম্পর্কে বলেছিলেন।

ওই গবেষণায় তারা বলেছেন, থ্রম্বোসিস উইথ থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া সিনড্রোম (TTS) অ্যাডেনোভাইরাস (জ্বর, সর্দি, কাশি সঙ্গে শ্বাসকষ্ট) ভেক্টর-ভিত্তিক টিকা গ্রহণকারী ব্যক্তিদের মধ্যে দেখা গিয়েছে। এটি এক ধরনের সেরিব্রাল ভেনাস সাইনাস থ্রম্বোসিস (CVST), যার মধ্যে মস্তিষ্কের শিরাস্থ সাইনাসে রক্ত জমাট বাধে, যা মস্তিষ্কের বাইরে রক্তের প্রবাহকে বাধা দেয়। এটি প্লাটিলেটের সংখ্যা কমায় এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে রক্তপাত বা রক্ত জমাট বাধার ঝুঁকি বাড়ায়। পাকস্থলী বা মস্তিষ্কেও রক্ত জমাট বাঁধতে পারে।

সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার ফ্লিন্ডার্স ইউনিভার্সিটি এবং বেশ কিছু আন্তর্জাতিক গবেষকদের সম্মিলিত এক গবেষণায়- অ্যাডেনোভাইরাস সংক্রমণের ব্যক্তিদের এই ‘ভিআইটিটি’ রোগটি হওয়ার সম্ভাবনার কথা উঠে এসেছে।

গবেষণায় কাজ করা ফ্লিন্ডার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক টম গর্ডন বলেছেন, এটি একটি প্রাণঘাতী রোগ। যা জেনেটিক ঝুঁকির মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। অ্যাডেনোভাইরাস সংক্রমণের পর এই টিকা দেওয়ার ফলে রক্ত ​​​​জমাট বাধার বিরল রোগ দেখা দিয়েছে।

তবে বর্তমানে মূল করোনা ভাইরাসটি প্রায় নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ায় এবং এটি থেকে উদ্ভূত অন্যান্য ভ্যারিয়েন্টগুলোও দুর্বল হয়ে যাওয়ায় সব টিকা বাজার থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কোম্পানি।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *