সারাদেশ

কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে এসএমই খাতের ভূমিকা অনস্বীকার্য: রাষ্ট্রপতি

ডেস্ক রিপোর্ট: চট্টগ্রাম বন্দরের বহুল প্রতীক্ষিত বে-টার্মিনাল প্রকল্পের অধীন মাল্টিপারপাস টার্মিনাল নির্মাণে ১০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করছে আবুধাবি পোর্টস গ্রুপ (এডি পোর্টস)। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৬ মে) রাজধানীর হোটেল ওয়েস্টিনে চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল এবং আবুধাবি পোর্টস গ্রুপের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার সাইফ আল মাজরুই স্মারকে সই করেন। এসময় নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ও এডি পোর্টসের বাংলাদেশ এজেন্ট সাইফ পাওয়ারটেকের প্রতিনিধিরা উপস্থিতি ছিলেন।

সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী, সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবি পোর্টস গ্রুপ বে-টার্মিনাল প্রকল্পের অধীনে মাল্টিপারপাস টার্মিনাল নির্মাণে বিনিয়োগ করবে। তারা অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি যন্ত্রপাতিও সরবরাহ করবে।

জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানোর লক্ষ্যে চট্টগ্রাম শহরের দক্ষিণ পাশে বঙ্গোপসাগরের তীরে ‘বে- টার্মিনাল’ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ‘বে-টার্মিনাল’ নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়ার পর সেখানে ফিজিবিলিটি স্টাডির জন্য ২০১৭ সালে কনসালটেন্ট নিয়োগ করা হয়। কনসালটেন্ট প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ফিজিবিলিটি স্টাডি ও মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করা হয়। গত বছরের ১৪ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী চূড়ান্ত মাস্টারপ্ল্যানের মোড়ক উন্মোচন করেন।

সমীক্ষা অনুযায়ী, মাস্টারপ্ল্যানে এক হাজার ২২৫ মিটার দীর্ঘ দুটি কন্টেইনার টার্মিনাল এবং এক হাজার ৫০০ মিটার দীর্ঘ একটি মাল্টিপারপাস টার্মিনালসহ মোট তিনটি টার্মিনাল রয়েছে। তিনটি টার্মিনালের দৈর্ঘ্য চার দশমিক ৯৫ কিলোমিটার। মাস্টারপ্ল্যানে মোট ১১টি জেটি রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।

চ্যানেলে যথোপযুক্ত নাব্যতা থাকায় সেখানে ১২ মিটার ড্রাফটের এবং ৩০০ মিটার দৈর্ঘ্যের জাহাজ ভেড়ানো সম্ভব হবে। আবহাওয়া এবং সাগরের বড় বড় ঢেউ থেকে রক্ষা করতে একটি ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ ব্রেক ওয়াটার বা ঢেউনিরোধক বাঁধ নির্মাণ করা হবে। বে-টার্মিনাল থেকে বহির্নোঙরের দূরত্ব এক কিলোমিটার।

মাল্টিপারপাস টার্মিনালটি চট্টগ্রাম বন্দর ও আবুধাবি পোর্টস গ্রুপ যৌথভাবে নির্মাণ করবে। এক হাজার ২২৫ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি কন্টেইনার টার্মিনাল নির্মাণে সিঙ্গাপুরের পিএসএ এবং অপরটি নির্মাণে দুবাইয়ের ডিপি ওয়ার্ল্ড অর্থায়ন করার সম্ভাবনা রয়েছে। ছয় কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ব্রেক ওয়াটার ও অ্যাক্সেস চ্যানেল ড্রেজিং করবে বিশ্বব্যাংক।

বে-টার্মিনাল প্রকল্পের জন্য ৬৬ দশমিক ৮৫ একর ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি ইতোমধ্যে অধিগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে এবং ৫০০ দশমিক ৬৯ একর সরকারি খাস জমি অনুমোদন পেয়েছে। ব্রেক ওয়াটার নির্মাণে বিশ্বব্যাংকের বিনিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে। বছরে ৫০ লাখ কন্টেইনার হ্যান্ডলিং লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ২০২৬ সালে অপারেশনে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

স্মারক সই অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরে বিদেশি বন্দর পরিচালনাকারীরা বিনিয়োগ করছেন। আমি সম্ভাবনা ও স্বপ্ন দেখি, এক সময় আসবে, যখন চট্টগ্রাম বন্দর পৃথিবীর অন্য কোনো দেশেও এর কার্যক্রম পরিচালনা করবে।

অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোস্তফা কামাল, চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল, বাংলাদেশে নিযুক্ত সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূত আব্দুল্লা আলী আব্দুল্লা কাসিফ আল মৌদি, আবুধাবী পোর্টস গ্রুপের ইন্টারন্যাশনাল অফিসের রিজিওনাল চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার আহমেদ আল মুতায়া।

নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বঙ্গবন্ধুর পথ ধরে মেরিটাইম সেক্টরে আমাদের যে যাত্রা, তা পুনর্জীবিত ও উজ্জীবিত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার সময়ে সমুদ্র ও পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত তৈরি হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর গত ১৫ বছরে আন্তর্জাতিক বন্দরের সক্ষমতা অর্জন করেছে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, মোংলা বন্দরের আপগ্রেডেশন হচ্ছে। মোংলা বন্দর চট্টগ্রাম বন্দরের মতো সক্ষমতা অর্জন করবে। পায়রা বন্দরে নির্মাণাধীন জেটিতে ২০০ মিটার দৈর্ঘ্যের জাহাজ ভিড়েছে। এটি নতুন অনুভূতি। আগে মাদার ভেসেলে পণ্য পরিবহনের জন্য আমাদের কলম্বো ও সিঙ্গাপুর বন্দরের ওপর নির্ভরশীল হতে হতো। বর্তমানে মাতারবাড়িতে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মিত হচ্ছে। এতে করে নির্ভরশীলতা কমে যাবে। মাতারবাড়ি বন্দর আঞ্চলিক হাবে পরিণত হবে।

তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল পরিচালনার জন্য সৌদি আরবের রেড সি গেটওয়ে টার্মিনালের সঙ্গে চুক্তি সই হয়েছে। খুব শিগগিরই এর কার্যক্রম শুরু হবে। বে-টার্মিনাল নির্মিত হলে ২৪ ঘণ্টা জাহাজ আসা-যাওয়া করবে। জোয়ার-ভাটার জন্য অপেক্ষা করতে হবে না। চট্টগ্রাম বন্দর অন্য ধরনের উচ্চতায় চলে যাবে। বে-টার্মিনালের সঙ্গে সড়ক, রেলওয়ে কানেক্টিভিটি থাকবে। পণ্য পরিবহন সহজলভ্য হবে। বে-টার্মিনাল বাংলাদেশের সমুদ্র পরিবহনের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। অল্প সময়ের মধ্যেই মাল্টিপারপাস টার্মিনালের নির্মাণ কাজ শুরু করতে চাই।

জানা যায়, টার্মিনালটি নির্মিত হলে চট্টগ্রাম বন্দর বছরে ১০ লাখ টিইইউ (টোয়েন্টি-ফুট ইকুইভ্যালেন্ট ইউনিট) কন্টেইনার এবং ৭০ লাখ মেট্রিক টন কার্গো হ্যান্ডলিং করতে পারবে। এতে দেশের আমদানি ও রপ্তানি দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি পরিবহন খরচ এবং সময় কমে আসবে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, আন্তর্জাতিক কন্টেইনার টার্মিনাল পরিচালনায় এডি পোর্ট গ্রুপ একটি দক্ষ প্রতিষ্ঠান। এডি পোর্ট গ্রুপের ৫টি সমন্বিত বিজনেস ক্লাস্টার ডিজিটাল, ইকোনমিক সিটিস এন্ড ফ্রি জোন, লজিস্টিকস, মেরিটাইম এবং পোর্ট রয়েছে। আবুধাবি অর্থনৈতিক উন্নয়ন বিভাগের তত্ত্বাবধানে আবুধাবি পোর্ট গ্রুপ মাকতা গেটওয়ে এডভান্সড ট্রেড এন্ড লজিস্টিক প্লাটফরম তৈরি এবং পরিচালনা করেছে। যা আবুধাবি জুড়ে বাণিজ্য ও লজিস্টিক নৌ, স্থল ও আকাশ পথে পরিষেবা গুলোকে একীভূত করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রমসহ বে-টার্মিনাল প্রজেক্টে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সাথে যৌথভাবে এডি পোর্ট গ্রুপ বিনিয়োগ করবে । এই সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের ফলে চট্টগ্রাম বন্দরে তথা বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য বিদেশী বিনিয়োগ আসবে এবং দেশীয় অর্থের সাশ্রয় হবে। এতে দেশের অর্থনীতি উপকৃত হবে। এডি পোর্ট গ্রুপের সাথে অংশীদারিত্বে কাজ করার ফলে চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন সম্ভব হবে এবং কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে মর্মে আশা করা যায় ।

উল্লেখ্য, বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরে ১০ মিটার গভীরতা ও ২০০ মিটার দৈর্ঘ্যের বড় জাহাজ প্রবেশ করতে পারে না। বে টার্মিনালে ভিড়তে পারবে ১২ মিটার গভীরতা ও ২৮০ মিটার পর্যন্ত দৈর্ঘ্যের জাহাজ।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *