সারাদেশ

প্রথম দুই ঘণ্টায় ভোট পড়েছে ৭-৮ শতাংশ: ইসি

ডেস্ক রিপোর্ট: পেশায় চিকিৎসক হলেও নেশা পর্বতারোহণ। সেই নেশায় চট্টগ্রামের সন্তান বাবর আলীকে নিয়ে গিয়েছিল এভারেস্টের চূড়ায়। এর দুদিন পর লোৎসে পর্বতের চূড়ায় উঠতে সক্ষম হয়েছেন তিনি।

মঙ্গলবার (২১ মে) বাংলাদেশ সময় সকাল ৬টা ৫ মিনিটে এভারেস্টের চূড়া ছুঁয়েছেন ৩৩ বছরের এই তরুণ। বেসক্যাম্প টিমের বরাতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন অভিযানের প্রধান সমন্বয়ক ফরহান জামান। 

এর আগে গত রোববার (১৯ মে) সকাল সাড়ে ৮টায় দীর্ঘ ১১ বছর পর এভারেস্টে সফল ষষ্ঠ বাংলাদেশি হিসেবে লাল-সবুজ পতাকা উড়িয়েছেন বাবর। বাবর আলীর প্রতিটি পদক্ষেপ নিয়ে আপডেট তথ্য দেওয়া ‘ভারটিক্যাল ড্রিমার্স’ পেজেও বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে।

সেখানে বলা হয়, ‘বাংলাদেশের পর্বতারোহণের ইতিহাসে আজ লিখিত হলো অভূতপূর্ব ও রোমাঞ্চকর এক অধ্যায়। আর লেখক আমাদের স্বপ্ন সারথি-বাবর আলী। এটিই এই বাংলাদেশের কোনো সন্তানের প্রথম লোৎসে সামিট এবং প্রথম একই অভিযানে দুইটি ৮ হাজারি শৃঙ্গ সামিট। বাবর এখন নেমে আসা শুরু করেছে। বেসক্যাম্পে পৌঁছালেই হবে মূল উৎসব।’

অভিযানের সমন্বয়ক ফরহান জামান জানান, ‘রোববার এভারেস্ট সামিট শেষে তিনি বেসক্যাম্প-৪ এ বিশ্রামে ছিলেন। সোমবার রাতে তিনি লোৎসে সামিটের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। মঙ্গলবার (২১ মে) ভোর ৬টা ৫ মিনিটে তিনি লোৎসে সামিট সম্পন্ন করেছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘এখনো আমাদের অভিযান শেষ হয়নি। নিরাপদে বেসক্যাম্পে ফিরে এলেই আমরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারবো। আশা করছি বাবর ২৩ মে’র মধ্যে বেসক্যাম্পে নেমে আসবে এবং আগামি ৩ জুন দেশে ফেরার সম্ভাবনা রয়েছে।’

১১ বছর পর মাউন্ট এভারেস্ট শীর্ষে আরোহণ করে গত দুই দিন ধরে বাংলাদেশের পাহাড় প্রেমি মানুষের মাঝে আনন্দের কম্পন বইয়ে চলেছেন বাবর আলী। দুইদিনের ব্যবধানেই এই পর্বতারোহী আবারও খুশির ঝড় তুললেন পৃথিবীর চতুর্থ শীর্ষ পর্বত (২৭ হাজার ৯৪০ ফুট) উচ্চতার মাউন্ট লোৎসের শীর্ষে লাল সবুজের অলংকার এঁকে দিয়ে। এটিই প্রথমবারের মতো কোন বাংলাদেশি পর্বতারোহীর মাউন্ট লোৎসে শিখর স্পর্শ করার ঘটনা।

বাবর আলী মূলত এই অভিযানে মাউন্ট এভারেস্টের পাশাপাশি মাউন্ট লোৎসে শীর্ষে যাওয়ার পরিকল্পনা নিয়েই এপ্রিলের শুরুতে দেশ ছেড়েছিলেন। বাংলাদেশের পর্বতারোহীরা ইতিপূর্বে মাউন্ট এভারেস্ট শীর্ষে সামিট করলেও একই অভিযানে দুটি আট হাজার ফুট উচ্চতার পর্বত কোন বাংলাদেশি সামিট করেননি। বাবর আলী এভারেস্ট ও লোৎসে শীর্ষ স্পর্শ করে বাংলাদেশের পর্বতারোহণের ইতিহাসে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা করেছেন। তৈরি করেছেন পরবর্তী প্রজন্মের জন্য এক অনুপ্রেরণার দৃষ্টান্ত।

পরিকল্পনা অনুযায়ী, ১৯ মে এভারেস্ট সামিট করে ক্যাম্প-৪ এ ফিরে আসেন তিনি। এতে সময় লেগেছে প্রায় ১৪ ঘণ্টা। স্বাভাবিকভাবেই শরীরও হয়ে যায় ক্লান্ত। ছক আঁকা ছিল সারাদিন বিশ্রাম নিয়ে রাতে আবার শুরু করবেন লোৎসের উদ্দেশ্য যাত্রা। কিন্তু শরীরের অবস্থা বিবেচনা করে তিনি শেরপাদের ছককে নিজের মতো করে পরিবর্তন করেন। নিজেকে ঝুঁকি মুক্ত রাখতে ওই রাত তিনি থেকে যান ক্যাম্প-৪ এ এবং সয়ে নেন এভারেস্ট চূড়া অভিযানের ধকল।

এদিকে ওই স্থানের সাথে যোগাযোগ বিভ্রাটে এই বিলম্ব নিয়ে শুরু হয় নানা জল্পনা-কল্পনা। বিশ্রাম এবং পর্যাপ্ত ঘুমের পর গতকাল (সোমবার) মধ্যরাতে শুরু করেন তার চূড়ান্ত লক্ষ্য মাউন্ট লোৎসের উদ্দেশ্যে যাত্রা। টানা প্রায় দুইদিন অনিশ্চিত অবস্থায় থেকেও অবশেষে মঙ্গলবার সকল সুহ্রদদের উদ্বেগের অবসান ঘটিয়ে নেপালের স্থানীয় সময় সকাল ৫টা ৫০ মিনিটে বাবর আলী স্পর্শ করেন কাঙ্খিত লোৎসে পর্বত শিখর। এই অভিযানের পরিচালক প্রতিষ্ঠান স্নোয়ি হরাইজনের স্বত্বাধিকারী বোধা রাজ বান্ডারি এবং বেসক্যাম্পের ধর্মা তামাং এর দেওয়া তথ্যের বরাতে এসব তথ্য জানান অভিযানের প্রধান সমন্বয়ক ফরহান জামান। এভারেস্ট এর মতো এই সামিটেও বাবরের সাথে ছিলেন তার শেরপা সাথী বীর বাহাদুর তামাং।

এই অভিযানে মোট খরচ হচ্ছে ৪৫ লাখ টাকা। যাতে মূল পৃষ্ঠপোষক হিসেবে আছেন ভিজ্যুয়াল নীটওয়্যার লিমিটেড। এছাড়া সহ-পৃষ্ঠপোষক ছিলেন এভারেস্ট ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, ঢাকা ডাইর্ভাস ক্লাব, বীকন ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, ব্লু জে, চন্দ্রবিন্দু প্রকাশনী, গিরি, ভারটিক্যাল ড্রিমার্স।

এছাড়াও অভিযানের জন্য গণ তহবিল সংগ্রহে অংশ নিয়েছেন দেশ-বিদেশের নানা সামাজিক ও ক্রীড়া সংগঠন এবং অগণিত শুভাকাঙ্ক্ষী। অভিযানের সার্বিক সমন্বয় করেছে ডা. বাবর আলীর নিজের ক্লাব ভার্টিক্যাল ড্রিমার্স।

চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার বুডিশ্বচরে জন্ম নেওয়া এই তরুণ পেশায় একজন চিকিৎসক। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করে শুরু করেছিলেন চিকিৎসা পেশা। তবে থিতু হননি। চাকরি ছেড়ে দেশ-বিদেশ ঘোরার কর্মযজ্ঞ শুরু করেন। সঙ্গে নানা স্বেচ্ছাসেবী কাজে যোগ দেন। করোনায় তার ভূমিকাও ছিল বেশ প্রশংসার। সব কিছুকে পিছনে রেখে পাহাড়-প্রেমী হিসেবেই নিজেকে পরিচয় দিতে ভালোবাসেন এই তরুণ।

২০১৪ সালেই ক্লাব কর্তৃক আয়োজিত নেপালে এক হিমালয় অভিযানে বাবর সামিট করেন এক পাঁচ হাজার মিটার উচ্চতার পর্বত। সেই তার হিমালয়ে পথচলা শুরু। এরপর পর্বতারোহণের বিশুদ্ধতম ধরণ বলে পরিচিত আল্পাইন স্টাইলে ২০১৬ সালে ক্লাব থেকে সামিট হয় ভারতের মাউন্ট ইয়ানাম, যা ছিল বাংলাদেশ থেকে প্রথমবার কোন ২০ হাজার ফুট উচ্চতার পর্বত সামিট এবং সেই দলের সদস্য ছিলেন তিনি।

পর্বতারোহণকে ধ্যান-জ্ঞান মেনে তিনি বেসিক মাউন্টেনিয়ারিং কোর্স করেন ভারতের নেহেরু ইন্সটিটিউট অফ মাউন্টেনিয়ারিং থেকে। ২০১৪ সাল থেকে প্রায় প্রতিবছর করেছেন এক বা একাধিক হিমালয় অভিযান। এছাড়াও নিজেকে উপযুক্ত করে তুলতে বাবর নিয়মিত দৌঁড়ান, করেছেন ক্রস কান্ট্রি সাইক্লিং, করেন কায়াকিং, পায়ে হেঁটে টানা ৬৪ জেলা ভ্রমণ করেছেন সিঙ্গেল ইজার প্লাস্টিকের বিরুদ্ধে।

গত বছরের ১৩ এপ্রিল কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগর থেকে সাইকেলযাত্রা শুরু করেছিলেন বাংলাদেশি পর্বতারোহী বাবর আলী। এক মাসের চেষ্টায় প্রায় চার হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে তামিলনাড়ুর কন্যাকুমারি গিয়ে থেমেছিলেন তিনি। পথে যেতে যেতে ১৩টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মনোরম দৃশ্য অবলোকন করার সুযোগ হয়েছিল তার। এর আগে ২০১৯ সালে পরিবেশ রক্ষার ব্রত নিয়ে বাংলাদেশের ৬৪ জেলা হেঁটে পার করেন তিনি। হেঁটে বাংলাদেশ ও সাইকেলে ভারতবর্ষ পাড়ি দেওয়া বাবর আলী এবার লিখলেন নতুন গল্প। এই গল্প শুধু নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার নয়, দেশকে গর্বিত করারও। গল্পটা যে-এভারেস্ট-জয়!

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *