সারাদেশ

কিশোরগঞ্জে ভালোবাসায় সিক্ত হলেন বিজ্ঞানী হুমায়ুন কবির

ডেস্ক রিপোর্ট: নিরবচ্ছিন্ন সেবা নিশ্চিত করতে শহরের বিভিন্ন এলাকায় রাস্তা খুঁড়ে চলছে বিভিন্ন পরিষেবা সংস্থার উন্নয়ন কার্যক্রম। তবে ধীরগতিতে চলা উন্নয়নের এই খোঁড়াখুঁড়িতে চরম ভোগান্তিতে সাধারণ জনগণ।

এইভাবে ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে রাজধানীর কমলাপুর ও গোপীবাগ এলাকার মাঝামাঝিতে অবস্থিত সাদেক হোসেন খোকা সড়কটিও।

এই সড়কটিতে রয়েছে, একাধিক সরকারি বেসরকারি স্থাপনা, বেশ কয়েকটি মোটর ওয়ার্কশপ এবং অসংখ্য বহুতল আবাসিক ভবন। এখানে রয়েছে এলাকার একমাত্র কমিউনিটি সেন্টার সাদেক হোসেন খোকা কমিউনিটি সেন্টার।

এছাড়াও রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র মতিঝিল এলাকায় যাতায়াতের সহজ পথ হিসেবে এই সড়কটিই ব্যবহার করেন কমলাপুর, মুগদা, মাণ্ডা ও মানিকনগরসহ আশপাশের বেশ কয়েকটি এলাকার বাসিন্দারা। তবে কথিত উন্নয়নের খোঁড়াখুঁড়ির কবলে পড়ে প্রায় এক মাস ধরে বন্ধ রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটি। সে কারণে যাতায়াত ভোগান্তিতে অসংখ্য স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ সাধারণ পথচারী এবং এ এলাকার ব্যবসায়ীরা।

খোঁড়াখুঁড়িতে বোঝা যাবে না, এটা রাস্তা নাকি খাল খনন চলছে! ছবি- বার্তা২৪.কম বৃহস্পতিবার (২৩ মে) সাদেক হোসেন খোকা সড়কে গিয়ে দেখা যায়, সাদেক হোসেন খোকা কমিউনিটি সেন্টারের সামনে রাস্তার কাটা অংশের কিছুটা বালি দিয়ে কোনোরকমে ভরাট করা হয়েছে।

বালির ওপর দিয়ে হেঁটে একটু সামনে আগাতেই দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়তে হলো এই ভেবে যে, এখানে কি কোনোভাবে খাল খননের কাজ চলছে!

দ্বিধাদ্বন্দ্ব নিয়ে আরেকটু আগাতেই দেখা গেল, বিশাল এক পানিভর্তি গর্ত। গর্তের পাশেই একটি সাইনবোর্ডে বড় করে লেখা- ‘সাবধান উন্নয়ন কাজ চলছে, সাময়িক অসুবিধার কারণে দুঃখিত’!

বোর্ডে কর্তৃপক্ষের নাম দেখে বোঝা গেল, সড়কটিতে চলছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন কাজ।

সড়কটির দুই ধারে শুধু ফুটপাত রেখে পুরো সড়কটিই খোঁড়াখুঁড়ির কারণে ফুটপাতও ঢেকে গেছে কাটা রাস্তার মাটি, বালি আর বর্জ্য দিয়ে। সে কারণে ফুটপাত দিয়ে চলাচল করতেও একধরনের যুদ্ধই করতে হচ্ছে পথচারীদের। এছাড়া খোঁড়াখুঁড়িতে রাস্তাটি বন্ধ থাকায় সেখানকার মোটর ওয়ার্কশপেও মেরামতের জন্য আসতে পারছে না কোনো গাড়ি। লোকজন না থাকায় অন্যান্য ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলোতেও নেই বেচাকেনা। এতে করে অর্থনৈতিকভাবে কষ্টের মধ্য দিয়ে দিন পার করছেন মোটর ওয়ার্কশপের মালিক, শ্রমিক ও অন্যান্য ব্যবসায়ীরা।
এখানেই শেষ নয়! একই সড়কের সঙ্গে সংযুক্ত মতিঝিলের ‘মধুমিতা’ সিনেমা হলের সামনের সড়কটিও মেরামত কাজের ধীরগতির কারণে অনেকটা যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে আছে বছরের পর বছর- এমন তথ্যই জানা যায় স্থানীয় জনসাধারণের সঙ্গে কথা বলে।

সাদেক হোসেন খোকা সড়ক খোঁড়াখুঁড়িতে মানুষসহ কোনো যানবাহন চলাচল করতে পারে না! ছবি- বার্তা২৪.কম সাদেক হোসেন খোকা সড়কের ব্যবসায়ী মো. আলমগীর মনা বার্তা২৪.কমকে বলেন, পৃথিবীর কোথাও বাংলাদেশের মতোন এইভাবে রাস্তা কেটে উন্নয়ন কাজ করতে দেখিনি বা শুনিওনি। উন্নয়ন কাজ চলছে এতে আমরাও খুশি। কিন্তু প্রায় একমাস ধরে রাস্তাটার এই বেহাল দশা থাকবে কেন! একটা মানুষও ঠিকমতো এদিক দিয়ে হেঁটে যেতে পারেন না। আর গাড়ি-ঘোড়া তো বন্ধই! এদিকে যদি গাড়ি না আসে, আমাদের ব্যবসা কীভাবে হবে! এই এক মাস ধরে আমাদের কোনো ব্যবসা নেই। আমরা কীভাবে চলবো! স্টাফদের বেতনই-বা কীভাবে দেবো!

আরেক ব্যবসায়ী মো. শরিফ বলেন, এখানকার একটা মোটরওয়ার্কশপেও কাজ নেই। প্রায় এক মাস ধরে সব বন্ধ। আমাদের ব্যবসায়ীদের চলার মতো আর কোনো অবস্থা নেই। পুরো রাস্তাটা একসঙ্গে না কেটে সিটি কর্পোরেশনের উচিত ছিল, রাস্তার একপাশ করে কেটে কাজ করা। এক পাশের কাজ শেষ হলে আরেক পাশের কাজ ধরা। কিন্তু তারা করলো কী, সারা রাস্তাটা একবারে কাটলো আর রাস্তাটা বন্ধ হয়ে গেল! একবারে পুরো রাস্তা কেটেছে, তাতেও কোনো সমস্যা ছিল না, যদি তারা তাদের কাজটা তাড়াতাড়ি শেষ করতো।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, একদিন কাজ করলে তো দুইদিন তাদের কোনো খোঁজ থাকে না। রাতের বেলা কাজ করেন। রাস্তাটা যেহেতু বন্ধই, তারা তো পারেন দিনে-রাতে কাজ করে অল্প সময়ের মধ্যে রাস্তাটা খুলে দিতে! আজকে এতদিন ধরে রাস্তাটাকে পুরো নাজেহাল করে রেখেছে।

সড়কটির দুইপাশে অবস্থিত অন্যান্য মোটর ওয়ার্কশপের ব্যবসায়ীরাও একই কথা বলেন। খোঁড়াখুঁড়িতে প্রায় একমাস ধরে রাস্তাটি বন্ধ থাকায় প্রতিনিয়ত তাদের ব্যবসায়িক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। দেখা দিয়েছে, অর্থনৈতিক সংকট- এমনটিই জানিয়েছেন এ এলাকার ব্যবসায়ীরা।

রাস্তার দুইপাশ খুঁড়ে এমন অবস্থা করে রাখা হয়েছে তাতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন এলাকাবাসী, ছবি- বার্তা২৪.কম সাদেক হোসেন খোকা সড়ক দিয়েই প্রতিদিন যাতায়াত করেন ব্যবসায়ী মো. মোস্তফা। কাটাছেঁড়া রাস্তার বেহাল দশায় অতিষ্ঠ এই ব্যবসায়ী বলেন, সাধারণ মানুষের কথা কেউ ভাবে না! আমাদের কথা শোনার কেউ আছে! এমন অবস্থা করে রেখেছে যে, পায়ে হেঁটে চলাচলেরও কোনো উপায় রাখেনি। রাস্তার এই হালের জন্য আমরা যারা প্রতিনিয়ত এখান দিয়ে যাতায়াত করি, তাদের ভোগান্তির কোনো শেষ নেই। রাস্তা বন্ধ রেখে তারা দিনের বেলায় কোনো কাজ করে না কেন! আবার একদিন কাজ করলে দুইদিন কোনো খবর থাকে না। তারা রাতেই যখন কাজ করবে তাহলে পুরো রাস্তাটা কেন খুঁড়লো! রাস্তার একপাশ খুঁড়তো অন্যপাশ মানুষ ও যানবাহনের জন্য খোলা রাখতো! উন্নয়ন কাজ করলে রাস্তা কাটতে হবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্ত ধীরগতিতে কাজ করে তারা আমাদের কেন কষ্ট দিচ্ছে!

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নারী পথচারী রীতিমতো ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, যারা এই কাজগুলো করেছে, তারা কয়জন মানুষের কথা ভাবেন! আমাদের কথা বলে কোনো লাভ আছে! আমাদের কষ্টে তাদের কিছু যায়-আসে না। সুতরাং কিছু বলেও কোনো লাভ নেই। এইটুকু রাস্তা পার করতে আমার খুব কষ্ট হয়ে যায়। তারা মানু্ষের চলাচলের জন্য ফুটপাত পর্যন্ত রাখেনি। বালি, মাটি আর আবর্জনা দিয়ে ভরে রেখেছে। কাউকে কিছু বলার নেই। ওপরে একজন আছেন, তিনিই দেখছেন!

জনসাধারণ ও ব্যবসায়ীদের প্রশ্ন, ধীরগতিতেই যদি কাজ করা হবে তাহলে পুরো সড়কটি কেন একসঙ্গে খোঁড়া হলো। এতদিন ধরে রাস্তাটি বন্ধ করে কেন সবাইকে ভোগান্তিতে ফেলা হলো!

এক মাস ধরে খোঁড়াখুঁড়ি করে রাখা হয়েছে কিন্তু কাজে নেই অগ্রগতি। ভোগান্তিতে আছেন এলাকাবাসী, ছবি- বার্তা২৪.কম জনসাধারণ থেকে শুরু করে এখানকার ব্যবসায়ীদের দাবি, সিটি কর্পোরেশন যেন তাদের ভোগান্তির কথা আমলে নিয়ে দিনরাত টানা কাজ করে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে যেন সড়কটি মেরামত করে দেয়।

প্রায় একমাস হয়ে গেলেও কেন এখনও পর্যন্ত সড়কটির এই বেহাল দশা বার্তা২৪.কমের এমন প্রশ্নে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সুলতান মিয়া বলেন, নগরবাসীর নিরবচ্ছিন্ন সেবা নিশ্চিত করতেই উন্নয়ন কাজ চলছে। একদিনও কাজ বন্ধ থাকছে না। খুব তাড়াতাড়িই কাজ শেষ হয়ে যাবে। সাময়িক একটু অসুবিধা হলেও খুব শিগগিরই এর সুফল ভোগ করবেন এলাকাবাসী।

‘মধুমিতা’র সামনের সড়কটির কাজও খুব দ্রুত চলছে এবং সাদেক হোসেন খোকা সড়কের সঙ্গেই এই সড়কটির কাজও শেষ হয়ে যাবে বলে জানান তিনি।

রাস্তা কাটার ফলে মানুষের ভোগান্তি হচ্ছে স্বীকার করে কাউন্সিলর বলেন, সাধারণের অসুবিধার কথা চিন্তা করেই দিনের বেলা কাজ করা হয় না। রাতের বেলা কাজ করা হয়।

সিটি কর্পোরেশনের বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যেই রাস্তার সব কাটাছেঁড়ার কাজ শেষ করতে হবে। হাতে বেশি সময় নেই। তাই একসঙ্গে পুরো রাস্তার কাজ ধরা হয়েছে। এখানে ধীরগতিতে কাজ করার কোনো সুযোগ নেই। তবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের দেওয়া কথা অনুযায়ী আগামী ৩০ জুনের মধ্যে সব কাজ শেষ করা হবে এবং পরদিন থেকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের কোনো রাস্তায় কোথাও কাটাছেঁড়া থাকবে না।

এর আগে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি নিয়ে সংবাদমাধ্যমে ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর খায়রুল আলম বলেন, এসব প্রকল্প আগে থেকেই নেওয়া হয়ে থাকে। জুনের আগেই এসব প্রকল্পের কাজ শেষ করার তাড়া থাকে। ধাপে ধাপে পর্যায়ক্রমে কাজগুলো করতে দেরি হয়ে যায়। তবে যেসব এলাকায় জনদুর্ভোগ বেশি হচ্ছে, সেসব এলাকার কাজ দ্রুত শেষ করার চেষ্টা চলছে। নগরের উন্নয়ন কাজের জন্য নগরবাসীকে সাময়িক একটু ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *