সারাদেশ

সিডরের সঙ্গে ঘূর্ণিঝড় রিমালের মিল পাওয়া যাচ্ছে

ডেস্ক রিপোর্ট: উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হানতে শুরু করেছে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট প্রবল ঘূর্ণিঝড় রিমাল। আগামী ৫ থেকে ৭ ঘণ্টার মধ্যে উপকূল অতিক্রম করবে ঘূর্ণিঝড়টি। এরই মধ্যে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় এলাকায় শুরু হয়েছে ঝড়ো বাতাসসহ বৃষ্টিপাত।

এদিকে ঘূর্ণিঝড় রিমাল এখনও পুরোপুরি আঘাত না হানলেও এরই মধ্যে ২০০৭ সালের সিডরে সঙ্গে ঘূর্ণিঝড় রিমাল-এর মিল খুজে পাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন পটুয়াখালীবাসী।

রবিবার (২৬ মে) রাত ১০টার দিকে বার্তা২৪.কমের প্রতিবেদক রায়হান আহমেদের দেওয়া তথ্যে এসব জানা গেছে।

রায়হান আহমেদ বলেন, দুপুরে কুয়াকাটার পরিবেশটা ছিল কখনো কখনো বৃষ্টি কখনও কখনও ঝড়ো বাতাস। দুপুরে যেহেতু জোয়ার ছিল তাই ঢেউ এবং সাগরের তান্ডব ছিল বেশি। উপকূলে ব্যপক ঢেউ আছড়ে পড়ছিল। পটুয়াখালীর বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা রাঙ্গাবালি।

এই রাঙ্গাবালির তিনটি উপজেলার প্রায় ২০টি গ্রাম বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে পানি ঢুকে প্লাবিত হয়েছে। তাদেরকে উপজেলা পরিষদ থেকে বাধ্য করা হয়েছে সাইক্লোন সেন্টারে নিয়ে যেতে। পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলায় পানির স্রোতে একজন বোনকে উদ্ধার করতে গিয়ে মৃত্যুবরন করেছেন।

বর্তমানের পরিস্থিতি জানিয়ে তিনি বলেন, প্রচন্ড বাতাস বইছে। বাতাসের গতি অনেক বেশি, বৃষ্টি হচ্ছে। মূলত ঝড়ের যে তান্ডব সেটা এখন চলছে।

পটুয়াখালীতে ৭০৩ টি সাইক্লোন সেন্টার এবং ২৫টা মুজিব কেল্লা। কিন্তু সন্ধার আগ পর্যন্ত তেমন কোন লোক সাইক্লোন সেন্টারে যায়নি। আসরের পর থেকে মানুষ আশ্রয় সেন্টারে যাওয়া শুরু করেছে।

এলাকাবাসীর বরাত দিয়ে তিনি বলেন, এর আগে কয়েক বছরে যে ঝড়গুলো হয়েছে সেগুলোতে এতোটা তান্ডব দেখেনি কেউ। তবে ২০০৭ সালে যে সিডর হয়েছিল সেই সিডরের যে পরিস্থিতি ছিল তার সঙ্গে ঘূর্ণিঝড় রিমেলের পরিস্থিতি প্রায় একই।

এদিকে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট প্রবল ঘূর্ণিঝড় রিমাল উপকূলে আঘাত হানতে শুরু করেছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। আগামী ৫ থেকে ৭ ঘণ্টার মধ্যে উপকূল অতিক্রম করবে ঘূর্ণিঝড়টি। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় এলাকায় ঝড়ো বাতাসসহ বৃষ্টিপাত হচ্ছে।

রবিবার (২৬ মে) রাত ৮টায় রাজধানীর আগারগাঁও বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতরে এক ব্রিফিংয়ে এসব কথা জানানো হয়।

এতে বলা হয়েছে, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘রিমাল’ উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় (২১.২ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯.২ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ) অবস্থান করছে।

এটি রবিবার (২৬ মে) সন্ধ্যা ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৩১০ কি.মি. দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৩১০ কি.মি. দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১৪৫ কি.মি. দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১৫০ কি.মি. দক্ষিণে অবস্থান করছিল।

প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্র মোংলার দক্ষিণ-পশ্চিম দিক দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ- খেপুপাড়া উপকূল অতিক্রম শুরু করেছে। ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্র আরও উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে ১-২ ঘণ্টার মধ্যে উপকূল অতিক্রম করে সম্পূর্ণ ঘূর্ণিঝড়টি পরবর্তী ৫ থেকে ৭ ঘণ্টার মধ্যে উপকূল অতিক্রম করতে পারে।

প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কি.মি. এর মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৯০ কি.মি। যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১২০ কি.মি. পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর বিক্ষুব্ধ রয়েছে।

পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।

কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।

খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার নদী বন্দরসমূহকে ৪ নম্বর নৌ-মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশ ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৮-১২ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ু তাড়িত জলোচ্ছাসে প্লাবিত হতে পারে।

প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে দমকা ও ঝড়ো হাওয়াসহ ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। অতি ভারী বর্ষণের প্রভাবে কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলের কোথাও কোথাও ভূমিধস হতে পারে।

উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।

ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্রের প্রধান ড. মো. শামীম হাসান ভূঁইয়া জানান, সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ ঝড়টি বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম শুরু করে। এটি পর্যায়ক্রমে দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করছে। পুরো ঘূর্ণিঝড়টি আগামী ৫ থেকে ৭ ঘণ্টার মধ্যে পুরো উপকূল অতিক্রম করতে পারে।

ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে দেশের বিভিন্ন জেলায় ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে বলে জানান তিনি। এ সময় পার্বত্য অঞ্চলে ভূমিধসের সম্ভবনা রয়েছে বলেও জানান।

উপকূলীয় অঞ্চলে ৪ দিনের জন্য ১০ হাজার আনসার-ভিডিপি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *