সারাদেশ

সেবার ব্রত নিয়ে রিমালে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানো

ডেস্ক রিপোর্ট: হজযাত্রীদের কল্যাণে হাব সর্বদা নিরলস ও সততার সঙ্গে কাজ করছে। এক কথায়, হজযাত্রীদের সেবা নিশ্চিত, বিড়ম্বনাহীন ও স্বাচ্ছন্দপূর্ণ হজযাত্রা নিশ্চিত করার জন্য হাব নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

বার্তা২৪.কম-এর সঙ্গে একান্ত আলাপে হজ এজেন্সি মালিকদের সংগঠন হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)-এর সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম এমন মন্তব্য করেছেন।

হজফ্লাইট শুরুর পর থেকে আশকোনা হজ ক্যাম্পে হজযাত্রীদের সুবিধাদি নিশ্চিত ও বিড়ম্বনাহীন হজযাত্রার লক্ষ্যে এম শাহাদাত হোসাইন তসলিমের তৎপরতা আলাদাভাবে নজর কেড়েছে। অতীতের যেকোনো বছরের তুলনায় এবারের ব্যবস্থাপনা নিয়ে অভিযোগ অনেক কম পাওয়া যাচ্ছে। হজযাত্রার শেষ দিকে এসে কিছু হজ এজেন্সির নানাবিধ অনিয়মের কথা শোনা গেলেও স্বস্তির বিষয় হলো, ধর্ম মন্ত্রণালয় এবং হাবের প্রচেষ্টায় অনেকটা নিরসনের পথে।

হজ ব্যবস্থাপনা ও বাংলাদেশ থেকে হজযাত্রার নানা প্রসঙ্গ নিয়ে এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম বলেন, ‘প্রত্যেক এজেন্সির হজযাত্রীদের সংখ্যা অনুসারে হজের ধারাবাহিক কাজগুলো সঠিকভাবে সমাধান হচ্ছে কিনা, সে বিষয়টি প্রত্যেক এজেন্সিকে আলাদা আলাদাভাবে মনিটরিং করি। হজযাত্রীদের ভিসার জন্য কি কি ধারাবাহিকতা সম্পন্ন করতে হয় এবং কোন কোন ধাপ কখন কিভাবে করতে হয় তা আমরা জানি এবং সে মোতাবেক প্রত্যেকটি এজেন্সিকে মনিটরিং করা হয়। যে কারণে বর্তমান হজ ব্যবস্থাপনা শৃঙ্খলায় ফিরে এসেছে।’

হজ যাত্রীদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করছেন এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম, ছবি: সংগৃহীত কোনো হজ এজেন্সি কর্তৃক যাতে আল্লাহর মেহমান হজযাত্রীদের কোনো অধিকার লঙ্ঘিত না হয়, হাব সে বিষয়ে সদা তৎপর। যদি কোনো হজ এজেন্সি এর ব্যত্যয় করে, তাহলে তাকে যথাযথ শাস্তি দেওয়া হয় এবং এ বিষয়ে হাব কঠোর ভূমিকা পালন করে বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, ‘হাব তার সদস্যদেরকে সর্বদা মনিটরিংয়ের মধ্যে রাখে। যে কারণে এবার হজের টাকা নিয়ে লাপাত্তা হওয়ার মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি। ইহরাম গায়ে জড়িয়ে কোনো হজযাত্রীকে চোখের পানি ফেলতে হয়নি, হজযাত্রীদের মিছিল করতে হয়নি।’

চলতি বছর বাংলাদেশ থেকে ব্যবস্থাপনাসহ হজযাত্রীর সংখ্যা ৮৫ হাজার ১১৭ জন। এরমধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনার হজযাত্রীর সংখ্যা ৪ হাজার ৫৬২ এবং বেসরকারি হজযাত্রীর সংখ্যা ৮০ হাজার ৬৯৫ এই বিপুল সংখ্যক হজযাত্রীর হজ ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করছে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অনুমোদিত ২৫৯টি হজ এজেন্সি। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত সর্বশেষ (২৭ মে) বুলেটিনের তথ্যমতে ৪৫ হাজার ৪৩ জন হজযাত্রী সৌদি আরব পৌঁছেছেন।

সৌদি সরকারের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বেশিরভাগ এজেন্সি প্রয়োজনীয় কাজ শেষে ভিসা করাতে পেরেছে কয়েকটি এজেন্সি পারেনি, এর কারণ কি। এমন প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘ভিসা প্রক্রিয়া এখনও চলমান, প্রায় সব ভিসা হয়ে গেছে। সামান্য কিছু ভিসা সবসময়ই থেকে যায়। কারণ সবযাত্রী হজে গমন করেন না বা করতে পারেন না। কেউ মৃতুজনিত কারণে, অসুস্থতা বা স্বেচ্ছায় যাওয়া নিজের বা পরিবারের যাত্রা বাতিল করেন। এ কারণে কিছু সংখ্যক লোক হজে গমন না করা এটা স্বাভাবিক ঘটনা।’

এবারও কয়েকটি এজেন্সির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, দেখা গেছে মধ্যস্বত্বভোগী ও ভাড়াটে হজ মুয়াল্লিম হজ ব্যবস্থাপনার বিশৃঙ্খলার জন্য দায়ি, এটা নিরসনের কি কোনো পথ নেই?

জবাবে হাব সভাপতি বলেন, ‘তথাকথিত কাফেলা বা মোয়াল্লেম নামক মধ্যস্বত্বভোগী বর্তমান হজ ব্যবস্থাপনায় প্রধান অন্তরায়। বিশেষ করে গ্রামের সহজ-সরল হজযাত্রীদের থেকে কমমূল্যে হজে নেওয়ার কথা বলে প্রলুব্ধ করে এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে হজযাত্রীরা বিড়ম্বনা বা প্রতারণার শিকার হন। এসব মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্মরোধে ধর্ম মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও হাব মিলে সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। দেশব্যাপী তাদের তালিকা করে নির্মূল করা বা আইনের কাঠামোতে নিয়ে আসার বিষয়ে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য শীঘ্রই কাজ শুরু করা হবে।

হজ ক্যাম্পে হাজিরা সৌদি গমনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন, ছবি: বার্তা২৪.কম হাব হজযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে কিভাবে কাজ করছে?

এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম বলেন, ‘বাংলাদেশের হজযাত্রীদের প্রায় ৯৫ ভাগ হাব সদস্যদের মাধ্যমে হজে গমন করেন। হাব সদস্যরা এই বিশাল সংখ্যক হজযাত্রীর সেবা প্রদানে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছে। হজ একটি দ্বিরাষ্ট্রিক বিষয়। মিনা, আরাফাত ও মুজদালিফায় হজযাত্রীদের সেবা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সৌদি সরকারের, সেখানে বহু প্রতিকূলতার মাঝেও হজযাত্রীদের সেবা নিশ্চিত করতে হাব সদস্যরা কঠোর পরিশ্রম করেন। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজযাত্রীদের হাব সদস্যরা ব্যক্তিগতভাবে সেবা শুশ্রুষা করেন, তাদের সার্বিক বিষয়াদি দেখভাল করেন, অসুস্থ হলে ক্লিনিকে নিয়ে যান, মিনা ও আরাফাতের তাঁবুসহ মুজাদিলফায় ব্যক্তিগতভাবে তাদের দেখাশোনা ইত্যাদি কাজগুলো হাব সদস্যরা করে থাকেন। তাছাড়া বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজযাত্রীদের বাংলাদেশি বাবুর্চি দ্বারা রান্না করা উপাদেয় খাবার সরবরাহ করেন। এগুলোর কারণে হজব্যবস্থাপনায় বেসরকারিভাবে হজযাত্রীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মোতাবেক হজযাত্রীদের কল্যাণে হাব নিরলস ও সততার সঙ্গে কাজ করছে।’ 

তিনি বলেন, ‘হজ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ ও সৌদি দুটি পর্ব আছে। হজের ভিসা হওয়ার জন্য প্রত্যেক হাজির বিপরীতে মিনায় তাঁবুর স্থান বুকিং নিশ্চিত, সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান বুকিং নিশ্চিত, ক্যাটারিং বুকিং নিশ্চিত, গাড়ী বুকিং নিশ্চিত, মক্কা ও মদিনায় হোটেল বুকিং ইত্যাদি নিশ্চিতের পর ভিসার আবেদন করতে হয়। ভিসা হওয়ার পর বিমান টিকিট করে তাদেরকে সৌদি আরব প্রেরণ করা হজের বাংলাদেশ পর্বের মূল কাজ। হজযাত্রী সৌদি আরব পৌঁছার পর তাদের প্যাকেজ মোতাবেক হোটেল প্রাপ্তি, খাওয়া ও মিনা আরাফাত ও মুজদালিফায় সেবা ইত্যাদি নিশ্চিত করে হজযাত্রীদের ভালোভাবে হজের পর বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনা হজের সৌদি পর্বের কাজ। আমরা সেই চেষ্টাটাই করছি।’

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *