সারাদেশ

দূর্গতদের জন্য এনজিওগুলো যা করতে পারে, জানালেন পিকেএসএফ এমডি

ডেস্ক রিপোর্ট: চট্টগ্রাম ডুবলেই ‘সাতেপাঁচে’ না থাকলেও এতদিন ট্রলের শিকার হতেন নায়ক রিয়াজ। ঢাকা শহরের বাসিন্দা রিয়াজের সমালোচনা হতো একটাই কারণে, গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরীর নির্বাচনী প্রচারণায় এসে এই নায়ক বলেছিলেন, ‘চিটাংগের যে রাস্তা দিয়ে আমরা এসেছি, বাংলাদেশের রাস্তা মনে হয়নি, মনে হয়েছে ইউরোপের রাস্তা।’ এরপর থেকে চট্টগ্রাম শহরে জলাবদ্ধতা হলেই সবাই টেনে আনতেন রিয়াজকে। জলাবদ্ধতার সময়গুলোতে চট্টগ্রামবাসীর ফেসবুক পোস্ট, কমেন্ট, রিল, ভিডিওতে শুধুই থাকতেন রিয়াজ। কেউ কেউ তো মজা করে বলতেন ‘নায়ক রিয়াজের তেলে, চট্টগ্রাম ডুবল জলে’।

চলচ্চিত্র অভিনেতা রিয়াজ মনে হয় এবার ‘নিস্তার’ পেলেন। কেননা যার জন্য প্রচারণায় এসে মন্তব্য করে রিয়াজ সমালোচনায় পড়েছিলেন, সেই চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম যে নিজেই জলাবদ্ধতা নিয়ে সব সমালোচনা নিজের ‘কোর্টে’ ডেকে আনলেন!

ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে সোমবার (২৭ মে) সকালে ভারি বর্ষণে তলিয়ে যায় চট্টগ্রামের নিম্নাঞ্চল। বহদ্দারহাট, শুলকবহর, মুরাদপুর, ষোলশহর, চকবাজার, কাতালগঞ্জ, রাহাত্তারপুল, হালিশহর, আগ্রাবাদ-যেদিকে সড়কে চোখ যায় সেদিকেই থই থই পানি-কোথাও হাঁটু সমান, কোথাও বা আবার পানি কোমর ছাড়িয়ে বুক ছুঁয়েছে। অবশ্য দুপুরের পর বেশিরভাগ জায়গায় পানি নেমে যেতে শুরু করে। ঠিক সেই সময়েই বেলা ১টা ৫৪ মিনিটে মোহাম্মদপুর এলাকার আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারের প্রবেশমুখের একটি ছবি মেয়রের ফেসবুক পেজে দেওয়া হয়। পানিবিহীন সড়কের সেই ছবি দিয়ে ওপরে লেখা হয়, ‘মুরাদপুর ফ্লাইওভারের পাশের সড়কটি অল্প বৃষ্টিতেই তলিয়ে যেতো, আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর সড়কটি বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিত করে, পানি চলাচলের জায়গা প্রশস্ত করি। নতুন করে সংস্কার করার পর বন্যা হলেও পানি খুব দ্রুত নেমে যায়। আজকের এই চিত্র।’

মূলত এই ছবি দিয়েই তোপের মুখে পড়েছেন মেয়র। সেই পোস্টে রাত ৮টা পর্যন্ত প্রায় ছয় ঘণ্টায় ১১ হাজার মানুষ রিঅ্যাক্ট করেছেন। কিন্তু তাদের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষই ‘হা হা’ দিয়েছেন, যার সংখ্যা- ৬ হাজার ৭০০ এর ওপর। আর মন্তব্য করেছেন ২ হাজার ২০০ জন। সেই মন্তব্যের মধ্যে বেশিরভাগই ছিল সমালোচনা করে লেখা। যেখানে অনেকেই পানির ওঠার ছবি ও ভিডিও দিয়েছেন। ৬৪৯ জন মেয়রের পোস্টটি শেয়ারও করেছেন। তবে অতিরিক্ত সমালোচনা হওয়ার পর মন্তব্যের ঘর সংরক্ষিত করে দেওয়া হয়। কমেন্ট সেকশন বন্ধ করে দেওয়ায় এখন চাইলেও কেউ সেখানে মন্তব্য করতে পারছেন না।

শুধু সাধারণ নগরবাসী নয়, আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরাও পানি নেমে যাওয়ার পরের ছবি দিয়ে মেয়রের ‘ক্রেডিট’ নেওয়াটাকে মানতে পারেননি। তাদের একজন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং উত্তর জেলা যুবলীগের শিক্ষা প্রশিক্ষণ ও পাঠাগার বিষয়ক সম্পাদক জয়নাল আবেদীন। তিনি লেখেন, ‘মাত্র কয়েক ফুট জায়গার ছবি দিয়ে পুরো চট্টগ্রামের চিত্র দেখাইলেন? আপনি পারেনও বটে! সারাদিন সারা চট্টগ্রামের চিত্র মানুষ দেখেনি? কেউ কেউ টিনের চশমা পরে থাকলেও চট্টগ্রামবাসী পরেনি!’

সমাজকর্মী মোহাম্মদ কায়সার আলী চৌধুরী জানতে চান ছবিটি কয়টার সময় তোলা। লেখেন, ‘মাননীয় মেয়র এটা কয়টার ছবি একটু উল্লেখ করে দিলে বা লাইভ করলে জনগণ উপকৃত হতো।’

তারিক শরীফ নামের আরেকজন লেখেন, ‘পুরো চট্টগ্রাম শহরের চিত্র তুলে ধরুন। আপনি একটি ফ্লাইওভারের ছবি আপলোড করে নগরবাসীকে সান্ত্বনা দিয়ে কি হবে, আমরা তো সবাই ভুক্তভোগী।’ কেউ কেউ মেয়রের দেওয়া ছবির জায়গাটি সকালে জলাবদ্ধতার সময় কেমন ছিল সেই দৃশ্যের ভিডিও-ছবিও দেন।

মেয়রের ছবির নিচে ‘ইতিবাচক’ মন্তব্য করার সংখ্যা নিতান্তই। কিন্তু যারা এমন মন্তব্য করেছেন তারাও তোপের মুখে পড়েছেন। তাদের একজন নগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এম আর আজিম। যুবলীগের এই নেতার মন্তব্য নিয়ে রহিম উদ্দিন নামের একজন লেখেছেন ‘আপনার আলহামদুলিল্লাহ বলাটা তেল মারা মনে করছি, কারণ পুরো চট্টগ্রাম পানির নিচে, মাননীয় মেয়র সেখানে বিলাসিতা করে শুকনো জায়গার ছবি একটা নিয়ে চট্টগ্রামের মানুষকে বোকা ভাবতে শুরু করলেন। চট্টগ্রামের পানি আপনিও চোখে দেখেননি মনে হয়।’

রিমালের প্রভাবে চট্টগ্রামে সোমবার ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত ১৩২ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড হয়েছে। এর আগে রোববারও দিনভর থেমে থেমে বৃষ্টি হয়েছে। এই বৃষ্টিতে বেশিরভাগ নগরবাসীর মতো ভোগান্তিতে পড়েন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীও। নগরীর বহদ্দারহাটে চট্টগ্রাম মেয়রের বাসভবন যথারীতি পানিতে তলিয়ে যায়। মেয়র বাসা ছেড়ে বের হতে না পারায় সকালে অফিসেও পৌঁছাতে পারেননি। বাসার সামনে জমে থাকা পানি মোটর দিয়ে সড়কে ফেলার পর স্বাভাবিক হয় পরিস্থিতি। সেখানে একটি জায়গার ছবি দিয়ে কৃতিত্ব নেওয়ার চেষ্টাকে ‘নিম্নরুচির’ পরিচয় বলে মনে করছে চট্টগ্রামের নাগরিক সমাজ।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রাম জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আখতার কবির চৌধুরী মেয়রের পোস্টের কড়া সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানের কর্মের সাময়িক সুফলকে নিজের সফলতা দাবি করা দেউলিয়াত্বের আরেক রূপ। মেয়রের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা ব্যক্তির ফেসবুক পেজে এমন নিম্নরুচির প্রচারণা দেখে নগরবাসী হিসেবে লজ্জিত।’

সবকিছু মিলিয়ে এবারের জলাবদ্ধতায় নায়ক রিয়াজ নগরবাসীর ‘হাস্যরস’ থেকে অব্যাহতি পেলেন। এবার তাকে নিয়ে তেমন কোনো ট্রল-মিম হয়নি। কেননা রিয়াজ যাঁকে মেয়র বানাতে প্রচারণায় এসে তোপের মুখে পড়েছিলেন, সেই রেজাউল করিম চৌধুরীর পোস্টই যে আজ ‘ভাইরাল’! তাই মেয়র কি রিয়াজকে ‘দায়মুক্তি’ দিয়ে জলাবদ্ধতা নিয়ে সমালোচনাটা নিজের কাঁধেই তুলে নিলেন-সেই প্রশ্নও আসছে চারপাশ থেকে!

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *