সারাদেশ

সৈয়দপুরে বিমান চলাচল স্বাভাবিক, বিকল উড়োজাহাজ পার্কিংয়ে

ডেস্ক রিপোর্ট: মিয়ানমার থেকে বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য অনুদানের পর এবার প্রথমবারের মত বিদেশি ঋণে বড় দুইটি প্রকল্প নিয়েছে সরকার। রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি হোস্ট কমিউনিটির জন্য সড়ক, পানি, বিদ্যুৎ, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য অবকাঠামোসহ বিভিন্ন পরিষেবা নিশ্চিত করতে এই দুই প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৪৮২.৯৭ কোটি টাকা।

মঙ্গলবার (২৮ মে) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এই দুই প্রকল্পের চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে একনেক সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভা শেষে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী আব্দুস সালাম অনুমোদন পাওয়া প্রকল্পগুলোর বিস্তারিত সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেন। এ সময় পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শহীদুজ্জামান সরকার, পরিকল্পনা বিভাগের সিনিয়র সচিব সত্যজিত কর্মকার ও পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, রোহিঙ্গা ও হোস্ট কমিউনিটির জন্য নেওয়া দুই প্রকল্পে ৮৪৮২.৯৭ কোটি টাকা ব্যয়ের মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ৭৫৭.৭৯ কোটি টাকা ও বাস্তবায়নকারী সংস্থার তহবিল থেকে ৫.৫৩ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। এর বাইরে দুই প্রকল্প বাস্তবায়নে বিদেশি উৎস থেকে ঋণ হিসেবে ৪৪৭৫.২৭ কোটি টাকা ও অনুদান হিসেবে ৩২৪৪.৩৮ কোটি টাকা সংগ্রহ করা হবে।

এই দুই প্রকল্পে ঋণ ও অনুদান মিলে ৭৭১৯.৬৫ কোটি টাকা বিদেশি সহায়তার পুরোটাই দিচ্ছে বহুজাতিক উন্নয়ন সংস্থা বিশ্বব্যাংক।

সংবাদ ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, প্রায় ১৪ হাজার ৩৩৭ কোটি ৩৮ লাখ টাকা ব্যয় ধরে সভায় মোট ১১টি প্রকল্পের চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ৬ হাজার ৫৪১ কোটি ৫২ লাখ টাকা ও বিদেশি উৎস থেকে ৭ হাজার ৮৭৯ কোটি ১৫ লাখ টাকা ব্যয় হবে।

মন্ত্রী জানান, Host and Forcibly Displaced Myanmar Nationals (FDMN) Enhancement of Lives through a Multi-Sectoral Approach Project (HELP): Infrastructure Related Project বাস্তবায়নে ৪০৮১.৮৪ কোটি টাকা প্রাক্বলিত ব্যয়ের মধ্যে বিশ্বব্যাংক ঋণ ও অনুদান হিসেবে দিচ্ছে ৩৮১৪.৮৯ কোটি টাকা। অবশিষ্ট অর্থ সরকার ও বাস্তবায়নকারী সংস্থার তহবিল থেকে ব্যয় হবে।

সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ, বিদ্যুৎ বিভাগ, স্থানীয় সরকার বিভাগ, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) যৌথভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। ইআরডি এই পাঁচ বাস্তবায়নকার সংস্থার মধ্যে সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করবে।

ইআরডির সমন্বয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের Inclusive Services and Opportunities (ISO) for Host communities and FDMN Populations Project বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৪০১.১৩ কোটি টাকা। এই প্রকল্পে ৩৯০৪.৭৬ কোটি টাকা দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক।

সভায় অনুমোদন পাওয়া পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের চট্টগ্রাম জেলার বোয়ালখালী উপজেলাধীন কর্ণফুলী নদী এবং সংযুক্ত খালসমূহের বিভিন্ন স্থানে ভাঙন রোধকল্পে তীর সংরক্ষণ কাজ প্রকল্পে ১৩৪.০৯ কোটি টাকা ও দক্ষিণ চট্টগ্রামের বাঁশখালী ও আনোয়ারা উপজেলায় টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা (১ম পর্যায়) প্রকল্পে ৮৭৪.৫৭ কোটি টাকা ব্যয় হবে।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের নওগাঁ জেলার মহাদেবপুর উপজেলায় ৪৮০০০ মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন চালের আধুনিক স্টিল সাইলো নির্মাণ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৬৭.৫২ কোটি টাকা।

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের রাজশাহী, নাটোর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে ২১০০ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের Technical Assistance for Repurposing of Agricultural Public Support Towards a Sustainable Food System Transformation in Bangladesh (TARAPS) প্রকল্পে ব্যয় হবে ১৮০.৫০ কোটি টাকা।

কুমিল্লা-লালমাই-চাঁদপুর-লক্ষ্মীপুর-বেগমগঞ্জ (আর-১৪০) (লক্ষ্মীপুর আন্তঃজেলা বাসস্ট্যান্ড হতে বেগমগঞ্জ চৌরাস্তা) এবং বেগমগঞ্জ-সোনাইমুড়ী-রামগঞ্জ (আর-১৪২) (সোনাইমুড়ী হতে রামগঞ্জ) আঞ্চলিক মহাসড়ক ৪- লেনে উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৬৭৯.৩২ কোটি টাকা।

আটটি নতুন প্রকল্প অনুমোদনের পাশাপাশি সভায় চলমান তিনটি প্রকল্পের সংশোধনী অনুমোদন করা হয়েছে। এর মধ্যে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের বিআইডব্লিউটিসি’র জন্য ৩৫টি বাণিজ্যিক ও ৮টি সহায়ক জলযান সংগ্রহ এবং ২টি নতুন স্লিপওয়ে নির্মাণ প্রকল্পের দ্বিতীয় সংশোধনীতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮৩৭.১৬ কোটি টাকা।

প্রকল্পটির প্রথম সংশোধনীতে ১৩১৮.২০ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছিল। এ হিসাবে এই প্রকল্পের ব্যয় বাড়ছে ৫১৮.৯৬ কোটি টাকা। ১৮৮৫.৯৬ কোটি টাকা ব্যয় ধরে কক্সবাজার বিমানবন্দর উন্নয়ন (১ম পর্যায়) শীর্ষক প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে একনেক। এই প্রকল্পের সর্বশেষ প্রাক্বলিত ব্যয় থেকে সংশোধনীতে ব্যয় কমেছে ১২৯.৬৯ কোটি টাকা।

এর বাইরে ১২৯.১৪ কোটি টাকা ব্যয় বাড়িয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর এ পানি শোধনাগার ও গভীর নলকূপ স্থাপন প্রকল্পের দ্বিতীয় সংশোধনী অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *