সারাদেশ

হৃদয়ছোঁয়া একটি বয়ান সংকলন

ডেস্ক রিপোর্ট: স্বভাবসুলভ হাসিমাখা কথার জাদুতে মন জয় করে নেন উপস্থিত শ্রোতাদের, মুহূর্তেই উজ্জ্বীবিত হয় মাহফিলস্থল। মুমিন হৃদয়ে ঢেউ উথলে উঠে তার হৃদয়ছোঁয়া সুরের মূর্ছনায়। হাজারো জনতা তন্ময় হয়ে হেদায়েতের কথা, আমলের কথা, জীবন পরিবর্তনের কথা শুনেন। দয়াময় আল্লাহতায়ালার সঙ্গে সম্পর্ক বাড়ানো, রাসুলের ভালোবাসা অন্তরে লালন এবং ইসলামের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের মাধ্যম বয়ান শোনে পাষাণ হৃদয়ের অনেক শ্রোতা বলে উঠেন, ‘আর নয় সুযোগ নষ্ট- এখন থেকেই ভালো মানুষ, আমলি মানুষ হওয়ার চেষ্টা করতে চাই।’ তিনি মাওলানা খালিদ সাইফুল্লাহ আইয়ূবী। দেশের আলোচিত মুফাসসিরে কোরআন। আলেমসমাজ তাকে ভালোবেসে ‘সুলতানুল ওয়ায়েজিন’ বলে ডাকেন। তিনি ‘মাহবুবুল উলামা’ বা ‘আলেমদের প্রিয়জন।’

ঢাকার অদূরে মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর উপজেলায় ১৯৭৯ সালের ৮ ডিসেম্বর তার জন্ম। জামিয়া রাহমানিয়া থেকে ১৯৯৮-৯৯ শিক্ষাবর্ষে দাওয়ায়ে হাদিস সম্পন্ন করেন। এর পর থেকেই দ্বীনের দাওয়াত নিয়ে বাংলাদেশের সর্বত্র চষে বেড়াচ্ছেন। বয়সে তরুণ, কিন্তু সান্নিধ্য পেয়েছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় আলেম, লেখক, শায়খুল হাদিস ও মুফাসসিরদের। মাওলানা মুহিউদ্দীন খান, খতিব মাওলানা উবায়দুল হক, শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক, মুফতি ফজলুল হক আমিনী, চরমোনাইয়ের পীর সৈয়দ ফজলুল করিম, আল্লামা আহমদ শফী ও মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরীসহ গত দুই দশকে তিনি সবশ্রেণির আহলে হক আলেমদের ভালোবাসা, দোয়া ও রাহনুমায়ি পেয়েছেন।

তিনি যেমন খাদেমুস সুন্নাহ অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান চৌধুরীর সঙ্গে আধ্যাত্মিক সম্পর্ক রেখে চলেন দুই যুগ ধরে। তেমনি দেশের অসংখ্য আলেম ও তরুণ ওয়ায়েজ তার সঙ্গে ইসলাহি সম্পর্ক রেখে চলেন।

যেহেতু ওয়াজের মঞ্চ এবং মিম্বরের কথায় রয়েছে বিশাল প্রভাব। বিশেষত সেসব বক্তা, যাদের দিকে মানুষ উৎকর্ণ হয়ে থাকে- তারা কী বলেন, তা শোনার জন্য; মানুষের হৃদয় যাদের কথা শুনে প্রশান্তি লাভ করে। এরই ধারাবাহিকতায় তার যুগান্তকারী বয়ানগুলো সংকলনের দাবি উঠতে থাকে ভক্তমহল থেকে, অবশেষে তা আলোর মুখ দেখছে। মাওলানা আশিকুর রহমান, মুফতি সালাহুদ্দিন মাসউদ (সম্পাদক, মাসিক কলমদানি) ও মাওলানা শুয়াইব আহমাদ অত্যন্ত যত্ন করে বয়ানগুলো গ্রন্থনা করেছেন। সম্পাদনা করেছেন মাওলানা ওয়ালী উল্লাহ আরমান।

জান্নাতের পথ, তরীকুস সুলূক ও ফয়যানে মুরশিদের লেখক মাওলানা আইয়ূবী ৫ সন্তানের জনক। প্রতিষ্ঠা করেছেন সাভারের আলমনগরে মারকাযুত তারবিয়া বাংলাদেশ নামের ভিন্নধারার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে ইসলামবিষয়ক কলামও তিনি নিয়মিত লিখে থাকেন।

যেহেতু সাধারণ মানুষের ওপর ওয়াজের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। এর মাধ্যমে বহু মানুষের আমল-আকিদা দুরস্ত হয়। মানুষ দাওয়াত ও তাবলিগে যাওয়ার উৎসাহ পায়, হক্কানি আলেম ও পীর-বুজুর্গদের সান্নিধ্যে যাওয়ার সুযোগ পায়। ওয়াজের ব্যাপকতার কারণে চরিত্র বিধ্বংসী বিভিন্ন অপসংস্কৃতিমূলক অনুষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। সমাজে চলমান নানাবিধ বিশৃঙ্খলা দূরীকরণে ওয়াজ কার্যকরী ভূমিকা রাখছে, এটা অস্বীকারের সুযোগ নেই। আর মাওলানা খালিদ সাইফুল্লাহ আইয়ূবীর মতো জনপ্রিয় একজন ওয়ায়েজের বয়ানের অনুলিপি সমাজ পরিবর্তনে আরও ব্যাপক ভূমিকা রাখবে।

মাওলানা আইয়ূবীর অসংখ্য বয়ান থেকে বাছাই করে অতিগুরুত্বপূর্ণ ২১টি বয়ান ছোট শিরোনামে বিস্তারিতভাবে সংকলন করা হয়েছে গ্রন্থটিতে। বিষয়গুলো হলো- মানুষ একটি খনি, পবিত্রতা একটি মূল্যবান হাতিয়ার, মাতাপিতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব ও কর্তব্য, সুন্নতের রঙে রঙিন হওয়া, মুমিনের হৃদয়ে ভালোবাসার হকদার, ইসলামই একমাত্র মনোনীত ধর্ম, আল্লাহর প্রতি বান্দার ভালোবাসা ও তার বহিঃপ্রকাশ, আল্লাহর ভয় ও মৃত্যুর স্মরণ, তওবার গুরুত্ব ও উপকারিতা, ঈমানের গুরুত্ব, হালাল উপার্জন এবং হারাম বর্জন, আরশের ছায়াতলে যারা হবেন মেহমান, জীবন হোক ইবাদতে পরিপূর্ণ, আত্মশুদ্ধির গুরুত্ব, ব্যক্তিজীবনে সুন্নতের গুরুত্ব, বিশ্বে মুসলমানের অধঃপতনের কারণ ও উত্তরণের উপায়, মুহররমের তাৎপর্য ও আশুরার শিক্ষা, নেক সান্নিধ্য গ্রহণের ফজিলত, সময়ের মূল্য, নবী কারিম (সা.)-এর মর্যাদা ও আল্লাহভীতি গোনাহ থেকে বাঁচার একমাত্র মাধ্যম।

৪৮০ পৃষ্ঠার গ্রন্থটি প্রকাশ করেছে দেশের জনপ্রিয় প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান মাকতাবাতুল আযহার। মূল্য ৯০০/- (নয় শত টাকা মাত্র)। 

শনিবার (১ জুন ) সকাল ৯টায় খুতুবাতে আইয়ূবীর মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান। সাভারের আলমনগরে অবস্থিত মারকাযুত তারবিয়াহ মিলনায়তনে প্রকাশনা অনুষ্ঠানে দেশবরেণ্য আলেম-উলামা, লেখক-সম্পাদক, ইসলামি স্কলার ও সাংবাদিকরা উপস্থিত থাকবেন।

আমাদের প্রত্যাশা, ‘খুতুবাতে আইয়ূবী’ এ দেশের মানুষকে এবং পরবর্তী প্রজন্মকে ইসলামের পথে চলতে অনুপ্রাণিত করবে যুগ-যুগান্তর।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *