সারাদেশ

মায়ানমারের কাউকে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

ডেস্ক রিপোর্ট: সিলেটে প্রতিনিয়ত বন্যার পানিতে প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে নতুন করে প্লাবিত হয়েছে বেশ কয়েকটি এলাকা। পাহাড়ি ঢল ও নদ নদীর পানি বাড়ায় সিলেটের সীমান্তবর্তী ৫টি উপজেলায় আকস্মিক বন্যা দেখা দিয়েছে। এছাড়াও গোলাপগঞ্জ উপজেলায় দুটি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে শুরু করেছে বলে জানা গেছে। বন্যা প্লাবিত এলাকার জন সাধারণদের আতঙ্কিত না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট উপজেলার কর্মকর্তারা।

প্লাবিত উপজেলা কানাইঘাট, জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ ও জকিগঞ্জে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চাল, শুকনো খাবার ও অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেট কার্যালয়ের তথ্য মতে, বৃহস্পতিবার(৩০মে) সন্ধ্যা ৬টায় সিলেটের সুরমা, কুশিয়ারা ও সারি নদীর পাঁচটি পয়েন্টে পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

সুরমা নদী কানাইঘাট উপজেলা সন্ধ্যা ৬টায় বিপদসীমার ১৩৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল। একই সময়ে কুশিয়ারা নদীর পানি জকিগঞ্জের অমলসীদ পয়েন্টে বিপদসীমার ২১৩ সেন্টিমিটার এবং শেওলা পয়েন্টে ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া, সারি গোয়াইন পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ৩৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে এ সময় পানি প্রবাহিত হয়।

এদিকে, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সিলেট জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও দুর্গত মানুষের খোঁজ নিতে জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান উপজেলাগুলোতে পরিদর্শন করেছেন। সেনাবাহিনীকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

জানা যায়, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৫টি উপজেলার মানুষের জন্য ২০০ বস্তা করে মোট ১ হাজার বস্তা শুকনো খাবার, ১৫ মেট্রিক টন করে ৭৫ মেট্রিক টন চাল, ৫০ হাজার টাকা করে আড়াই লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। প্লাবিত এলাকা ছাড়াও আশপাশের উপজেলাগুলোকে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও মাইকিং করে জানিয়ে দেয়া হচ্ছে আতঙ্কিত না হয়ে কেউ প্লাবিত হলে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের সদস্য বা উপজেলা প্রশাসকে জানানোর জন্য।

গোয়াইনঘাট উপজেলার ৫৬টি, জৈন্তাপুরে ৪৮টি, কোম্পানীগঞ্জে ৩৫টি ও জকিগঞ্জে ৫৮টি, কানাইঘাট ১৮টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। কেন্দ্রগুলোতে ইতোমধ্যে প্রায় আড়াই হাজার মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন।

এদিকে, নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে গোলাপগঞ্জ উপজেলা। ইতোমধ্যে বুধবারী বাজার ইউনিয়ন ও বাঘা ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে ৫৭টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে।

গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো.তৌহিদুল ইসলাম বলেন, বন্যায় উপজেলার ৭৫ ভাগ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বন্যার পূর্বাভাস থাকায় আমরা আগেই ৫৬টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করে রেখেছিলাম। কাল রাতেই ১৬৭টি পরিবার আশ্রয় নেয়, সকাল থেকে যা ৩০০ ছাড়িয়েছে।

জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উম্মে শালিক রুমাইয়া জানান, উপজেলার ৩০ ভাগ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ৪৮টি আশ্রয় কেন্দ্রে প্রায় ৭০০ লোক আশ্রয় নিয়েছে। এ পর্যন্ত কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। আমাদের এই সংকটময় সময়ে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে সকলের সম্মিলিত সহযোগিতায় এই পরিস্থিতি মোকেবেলা করতে হবে।

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুনজিত কুমার চন্দ বলেন, ৩৫টি আশ্রয় কেন্দ্র রয়েছে। এখনো কোনো লোক আশ্রয় কেন্দ্রে উঠেনি। তারা তাদের আত্মীয় স্বজনদের বাসা-বাড়িতে উঠেছেন। উপজেলার ১৪৮টি গ্রামের মধ্যে ৭৫টি গ্রাম বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। মানুষ আতঙ্কিত না হওয়ার জন্য মাইকিং করে সতর্ক করা হচ্ছে।

জকিগঞ্জ উপজেলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আফসানা তাসনিম জানান, উপজেলার অবস্থা খুবই খারাপ। পানি হু-হু করে প্রবেশ করেছে। অন্ততপক্ষে অর্ধশত গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ৫৮টি আশ্রয় কেন্দ্রে উঠেছে ১০-১২টি পরিবার।

কানাইঘাট উপজেলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারজানা নাসরীন জানান, সন্ধ্যা ৬টার দিকে পানি কিছুটা কমেছে। আমাদের ১৮টি কেন্দ্রের মধ্যে ১৬টি কেন্দ্রে মানুষ উঠেছে। প্রায় ১২০০-১৫০০ মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন।

গোলাপগঞ্জ উপজেলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আলী রাজিব মাহমুদ মিঠুন জানান, আমাদের এখানে দুটি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের কয়েকটি গ্রাম কিছুটা প্লাবিত হয়েছে। ৫৭ টি আশ্রয় কেন্দ্র রয়েছে। ইতোমধ্যে তিনটি পরিবারকে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়েছে।

সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোবারক হোসেন জানান, ইতোমধ্যেই গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কোম্পানীগঞ্জ ও কানাইঘাট, জকিগঞ্জ উপজেলায় আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় জেলা প্রশাসন সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছে।

ইতোমধ্যে জেলা ও উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির বৈঠক হয়েছে। উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে কন্ট্রোল-রুম খোলা হয়েছে। বন্যা-কবলিত মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসা হচ্ছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে সবার কাছে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া হবে।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *