দুপুর ১টার মধ্যে ৮০ কিমি বেগে ঝড়-বৃষ্টির আশঙ্কা
ডেস্ক রিপোর্ট: আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের ৭ মাস পরে শনিবার (১ জুন) থেকে খুলনা-মোংলা রেললাইনে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করবে। নতুন এই রুটে বেতনা এক্সপ্রেসটি মোংলা কমিউটার নামে চলাচল শুরু করবে।
বৃহস্পতিবার (৩০ মে) রাতে রেলওয়ে পশ্চিম বিভাগের (রাজশাহী) ব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জানা যায়, এই ট্রেনটির রুট হবে খুলনা থেকে বেনাপোল, বেনাপোল থেকে মোংলা, আবার মোংলা থেকে বেনাপোল। এরপর বেনাপোল থেকে খুলনা। এই রুটের দূরত্ব ১শ’ ৩৮ দশমিক ৬৪ কিলোমিটার।
২০২৩ সালের ১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী খুলনা-মোংলা রুটে যাত্রীবাহি ট্রেন চলাচলের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এর দীর্ঘদিন পর নানা জটিলতা কাটিয়ে মোংলা বন্দর থেকে বেনাপোল স্থল বন্দর পর্যন্ত এই ট্রেনটি চলাচল শুরু হচ্ছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের জেনারেল ম্যানেজার (পশ্চিম) রাজশাহীর দপ্তরাদেশ নং-৫৪.০১.৮১০০.১৫৪.০৩.০২৯.১৪-০৫১ স্মারকে খুলনা-বেনাপোল-মোংলা রুটে কমিউটার ট্রেন পরিচালনা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, মহাপরিচালকের কার্যালয়ের পত্র নং- ৫৪.০১.২৬০০.০০৮.১৮.০১৪.১৬ (অংশ-২)-১৩০; তারিখঃ ২৮ মার্চ, ২০২৪ মোতাবেক ৯৬ ও ৯৫ নং বেতনা কমিউটার এর রুট আংশিক পরিবর্তন করত।
খুলনা-বেনাপোল-মোংলা-বেনাপোল-খুলনা রুটে নতুন কমিউটার ট্রেন ১ জুন ২০২৪ তারিখ হতে চলাচল করবে। বেনাপোল থেকে ট্রেন ছাড়ার পর নাভারণ, ঝিকরগাছা, যশোর জংশন, রূপদিয়া, সিঙ্গিয়া, চেঙগুটিয়া, নওয়াপাড়া, বেজেরডাঙ্গা, ফুলতলা, আড়ংঘাটা, মোহাম্মদনগর, কাটাখালি, চুলকাটি বাজার, ভাগা ও দিগরাজ স্টেশনে যাত্রাবিরতির পর মোংলায় পৌঁছাবে। খুলনা স্টেশন থেকে প্রতিদিন দুপুরে বেনাপোলের উদ্দেশ্যে বেতনা এক্সপ্রেস ছেড়ে যেত। কিন্তু দুপুরে খুলনা স্টেশন থেকে আর ট্রেনটি চলবে না। ওই সময়ে খুলনা স্টেশন থেকে বেনাপোলগামি যাত্রীদের আড়ংঘাটা অথবা মোহাম্মদ নগর স্টেশন থেকে উঠতে হবে।
আবার সকালে বেনাপোল থেকে ছেড়ে আসা ট্রেনটি দুপুরে আর খুলনা স্টেশনে আসবে না। খুলনার যাত্রীদেরকে আড়ংঘাটা অথবা মোহাম্মদ নগর স্টেশনে নামতে হবে। এতে খুলনা শহরে আসতে ৭ থেকে ৮ কিলোমিটার অন্য যানবাহনে উঠতে হবে যাত্রীদেরকে।
খুলনা-মোংলা রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প পরিচালক মো. আরিফুজ্জামান জানান, খুলনা থেকে মোংলা পর্যন্ত রেল লাইন ট্রেন চলাচলের জন্য পুরোপুরি উপযোগী রয়েছে। ৮টি স্টেশনে আসবাবপত্রসহ প্রয়োজনীয় অন্যান্য সরঞ্জামও পৌঁছে গেছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, খুলনা-মোংলা রেলপথ প্রকল্পটি শুরু হয় ২০১০ সালে। প্রকল্পের আওতায় মূল লাইনসহ রেলওয়ে ট্র্যাকের দৈর্ঘ্য ৮৬ দশমিক ৮৭ কিলোমিটার। তার মধ্যে ৬৪ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেলপথ। আর রূপসা নদীর ওপর নির্মাণ করা হয়েছে ৫ দশমিক ১৩ কিলোমিটার রেলসেতু। জমি অধিগ্রহণ, রেললাইন, রেলসেতু নির্মাণসহ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ হাজার ৭শ’ ২১ কোটি টাকা। ২০২১ সালে আবারও সময় ও ব্যয় দুটিই বাড়ানো হয়। তখন ব্যয় দাঁড়ায় ৪ হাজার ২শ’ ৬০ কোটি ৮৮ লাখ ৫৯ হাজার টাকা। সর্বশেষ ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয় কিন্তু সেই মেয়াদ শেষ হয় ২০২৪ সালের ৩১ মার্চ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই পথে ট্রেন চলাচল শুরু হলে এই অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্নপূরণের পাশাপাশি ব্যবসায়ীরা মোংলা বন্দর দিয়ে দ্রুত কম খরচে মালামাল নিতে পারবেন। গতিশীল হবে মোংলার সঙ্গে যাতায়াত সুবিধা। নতুন এই রুটে ‘মোংলা কমিউটার’ নামে ট্রেন চলাচল করবে। খুলনা থেকে যশোর হয়ে বেনাপোল পর্যন্ত চলাচল করে বেতনা এক্সপ্রেস নামে একটি লোকাল ট্রেন। সেই ট্রেনটি ফেরার পথে খুলনার ফুলতলা জংশন থেকে মোংলার দিকে যাত্রা করবে, তখন ফুলতলা থেকে মোংলা পর্যন্ত ট্রেনটি ‘মোংলা কমিউটার’ নাম ধারণ করে চলবে। ট্রেনের সাপ্তাহিক বন্ধের দিন মঙ্গলবার। খুলনা থেকে ভোর সোয় ৬টায় ছেড়ে বেনাপোলে পৌঁছাবে সকাল সাড়ে ৮টায়। বেনাপোল থেকে ছেড়ে মোংলা পৌঁছাবে দুপুর ১২টা ৩৫ মিনিটে। ফুলতলা থেকে যাওয়ার পথে মোংলা কমিউটার মোহাম্মদনগর, কাটাখালী, চুলকাটি বাজার রেলস্টেশনে যাত্রা বিরতি দেবে। মোংলা থেকে বেলা ১টায় ছেড়ে বেনাপোল পৌঁছাবে সাড়ে ৪টায়।
রেলওয়ে পশ্চিম বিভাগের (রাজশাহী) ব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার জানান, আপাততঃ খুলনা বেনাপোল রুটের বেতনা এক্সপ্রেস ট্রেনটি ‘মোংলা কমিউটার’ নামে চলাচল করবে। বেনাপোল বন্দর থেকে মোংলায় রেল চলাচল আগামী ১ জুন থেকে চালু হচ্ছে । এর ফলে উপকৃত হবে যাত্রীরা। ২০২৩ সালের ১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভার্চুয়ালি এই রেলপথ উদ্বোধন করেন। এর আগে গত ৩০ অক্টোবর ফুলতলা থেকে মোংলা পর্যন্ত পরীক্ষামূলকভাবে ট্রেন চালানো হয়। এরপর কয়েকদফা পাথর বোঝাই করে লাইনের নানাদিক পরিক্ষা নিরীক্ষা করা হয়। কিন্তু স্থায়ী জনবল নিয়োগসহ নানা জটিলতায় যাত্রী নিয়ে ট্রেন চালু করা যায়নি।
সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।