বেনাপোল থেকে ৫৪৯ যাত্রী নিয়ে প্রথম যাত্রা মোংলা কমিউটারের
ডেস্ক রিপোর্ট: বেনাপোল স্থলবন্দরের গুরুত্বের কারণে যাত্রীদের দাবির মুখে এবার বেনাপোল-মোংলা রেলপথে শনিবার (১ জুন) থেকে যাত্রী সেবা শুরু করেছে রেল কর্তৃপক্ষ। আপাতত দিনে একটি ও সপ্তাহে ৬ দিন রেল চলবে এরুটে। পরবর্তীতে যাত্রীদের চাহিদা অনুপাতে রেলের সংখ্যা বৃদ্ধি ও পণ্য পরিবহনে বাণিজ্য সেবা চালু করবে রেল বিভাগ।
প্রথম যাত্রায় কোন ধরনের আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই ৫৪৯ জন যাত্রী নিয়ে সকাল ১০টায় বেনাপোল-খুলনা-মোংলা রুটে মোংলা কমিউটার ট্রেন ছেড়েছে বেনাপোল থেকে। এসব যাত্রীদের মধ্যে ৩৭ জন মোংলার যাত্রী রয়েছে। নিরাপদ এ যাত্রায় সময় ও অর্থ সাশ্রয়ে এপথে যাতায়াতকারী পাসপোর্টধারী ও ব্যবসায়ীরা উপকৃত হবেন বলে জানিয়েছেন।
জানা যায়, দেশের সবচেয়ে বড় স্থলবন্দর বেনাপোল। মোংলা সমুদ্র বন্দর ব্যবহারেও বেশ আগ্রহ রয়েছে ব্যবসায়ীদের। এ দুই পথে ভারতের সাথে বাংলাদেশের রেল, সড়ক ও নৌপথে পথে রয়েছে যাত্রী ও বাণিজ্য সেবা। এছাড়া দর্শনীয় স্থান ঘুরতেও অনেকে বেনাপোল-মোংলা রুট ব্যবহার করে থাকে। এরুটে যাত্রী সেবা বাড়াতে ব্যবসায়ী ও পাসপোর্টধারীদের দাবির মুখে রেল কর্তৃপক্ষ বেনাপোল-খুলনা-মোংলা রুটে চালু করেছে যাত্রী সেবা। ট্রেন চলাচলের জন্য চার হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে খুলনা থেকে মোংলা পর্যন্ত নতুন রেলপথ এখন পুরোপুরি প্রস্তুত।
নতুন এই রুটে ‘মোংলা কমিউটার’ নামে একটি ট্রেন চলাচল করবে। খুলনা থেকে যশোর হয়ে বেনাপোল পর্যন্ত চলাচল করে বেতনা এক্সপ্রেস নামে একটি লোকাল ট্রেন। সেই ট্রেনটি ফেরার পথে খুলনার ফুলতলা জংশন থেকে মোংলার দিকে যাত্রা করবে, তখন ফুলতলা থেকে মোংলা পর্যন্ত ট্রেনটি ‘মোংলা কমিউটার’ নাম ধারণ করে চলবে। ভাড়া নির্ধারণ হয়েছে বেনাপোল থেকে মোংলা মাত্র ৮৫ টাকা। ট্রেনের সাপ্তাহিক বন্ধের দিন মঙ্গলবার। খুলনা থেকে ভোর ৬টায় বেনাপোলে পৌঁছাবে সকাল সাড়ে ৮টায় । পরে বেনাপোল থেকে ৯টা ১৫ মিনিটে ছেড়ে মোংলা পৌঁছাবে দুপুর ১২টা ৩৫ মিনিটে। পরে দুপুর ১ টায় মোংলা থেকে ছেড়ে ট্রেনটি বেনাপোল পৌঁছাবে বিকাল সাড়ে ৪টায়। ২০১০ সালে একনেকে অনুমোদনের প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে। উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। দীর্ঘ ৯১ কিলোমিটার নতুন এ রেলপথে ৫.১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি রেলসেতু নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া ১১টি প্লাটফর্ম, ১০৭টি কালভার্ট, ৩১টি ছোট ব্রিজ ও ৯টি আন্ডারপাসের নির্মাণ সম্পন্ন। ভারত সরকারের ঋণ সহায়তা চুক্তির আওতায় খুলনা-মোংলা রেল প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান এলঅ্যান্ডটি এবং ইরকন ইন্টারন্যাশনাল।
পাসপোর্টধারী যাত্রী মিনতি রানি বলেন, আগে বেনাপোল থেকে মোংলা বাসে যেতে ৪ ঘণ্টা সময় লাগতো। ভাড়া গুনতে হতো ৩৫০ টাকা। এখন রেলে বেনাপোল থেকে মাত্র ৮৫ টাকায় যেতে পারবো মোংলা। রেল সেবায় সময় ও অর্থ সাশ্রয় হবে আমাদের।
বেনাপোল বন্দরের ব্যবসায়ী নেতা আমিনুল হক জানান, বাণিজ্যিক কারণে মোংলা বন্দর যেতে হয়। তবে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল না থাকায় দ্রুত পণ্য খালাস কাজে বিঘ্ন ঘটতো। এখন রেল সেবা চালুতে দ্রুত পণ্য খালাসে সহায়ক হবে।
বেনাপোল রেল নিরাপত্তা বাহিনীর ইনচার্জ আসাদুজ্জামান রানা জানান, বেনাপোল-মোংলা রেল সেবা চালুতে বেনাপোল আন্তর্জাতিক রেল ষ্টেশনের ব্যস্ততা বাড়বে। এতে যাত্রীদের নিরপত্তা ব্যবস্থাও বাড়ানো হয়েছে।
বেনাপোল আন্তর্জাতিক রেল ষ্টেশন মাস্টার সাইদুর রহমান জানান, বেনাপোল ও মোংলা বন্দরের গুরুত্ব বিবেচনা করে মোংলা কমিউটার চালু হয়েছে। পরবর্তীতে এ পথে বাণিজ্য সেবা দেওয়া হবে।
সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।