সারাদেশ

অপমানের চূড়ান্ত পর্যায়ে গেলে লোহার খাঁচায় ঢুকতে হয়: ড. ইউনূস

ডেস্ক রিপোর্ট: বাংলাদেশে মূলত দুই ধরনের বিচার ব্যবস্থা প্রচলিত আছে একটি ফৌজদারী অপরটি দেওয়ানী বিচার ব্যবস্থা। খুন, মারামারি, চুরি, ডাকাতি, মাদক প্রভৃতি মামলার বিচার হয় ফৌজদারী আইনে। আর জমিজমা, পদ-পদবি প্রভৃতির বিচার হয় দেওয়ানী আইনে।

বিচার ব্যবস্থায় আইনের ‘ফাঁকফোকর’ একটি ব্যাপক পরিচিত শব্দ। আইনের ফাঁক গলে অপরাধীরা যেমন ছাড়া পেয়ে যায় তেমনি বিনা বিচারে, বিনা অপরাধে জেল খাটার নজিরও কম নয়।

আইন বিজ্ঞানের একটি প্রতিষ্ঠিত নীতি হলো শত অপরাধী খালাস পেয়ে যাক কিন্তু একজন নিরাপরাধ ব্যক্তিও যেন সাজা না পায়। তাই ফৌজদারী বিচার ব্যবস্থায় আসামির বিরুদ্ধে অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত না হলে তাকে সাজা দেওয়া যায় না। আসামির বিরুদ্ধে অপরাধ শতভাগ প্রমাণ করতে হয় নতুবা আসামি ‘বেনিফিট অব ডাউট’এ খালাস পেয়ে যান।

ফৌজদারী বিচার ব্যবস্থায় একজন অপরাধীকে সাজা দিতে কয়েকটি ধাপ অতিক্রম করতে হয়। মামলা দায়ের, তদন্ত, অভিযোগপত্র (চার্জশিট), বিচার, রায়, আপিল ও রায় কার্যকর। মামলা দায়ের থেকে আপিল পর্যন্ত যে কোন পর্যায়ে তদন্ত প্রক্রিয়া ও বিচার ব্যবস্থায় ত্রুটির কারণে খালাস পেয়ে যেতে পারেন আসামিরা। এতে ন্যায় বিচার বাধাগ্রস্ত হয়, সমাজে অপরাধ সংঘটনের প্রবণতা বাড়ে।

এতো কথার অবতারণা করা হচ্ছে সম্প্রতি ঝিনাইদহ-৪ আসনের তিনবারের এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার প্রথমে নিখোঁজ ও পরে খুনের মামলার বিচার নিয়ে। এ ঘটনায় কলকাতা ও ঢাকায় পৃথক দুটি মামলা হয়েছে। দুই মামলায় চার আসামি গ্রেফতার হয়েছে। তারা পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে খুনের কথা। একই সাথে লাশ গুম করতে মরদেহ টুকরা টুকরা করে কেটে বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে দেওয়া হয়।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ সাংবাদিকদের বলেন, মামলায় ভিকটিমের মরদেহ বা মরদেহের অংশ বিশেষ না পাওয়া গেলে তদন্তকারী কর্মকর্তার সুরতহাল, ভিসেরা ও মেডিকেল রিপোর্ট দিতে বেগ পেতে হয়। এগুলো না পাওয়া গেলে মামলাটি নিষ্পত্তি করাও অনেক কঠিন হয়ে যায়।

ফৌজদারী অপরাধ বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা মহানগরের সাবেক পাবলিক প্রসিকিউটর সিনিয়র আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী তদন্তাধীন মামলায় কথা বলা সমীচীন মনে করেন না। তবে তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, লাশের সুরতহাল, ভিসেরা ও মেডিকেল রিপোর্ট ছাড়া মামলা প্রমাণ করা কঠিন, তবে অসম্ভব নয়। তবে সর্বাত্মক চেষ্টা করার পরও লাশ পাওয়া কিংবা তার খন্ডিত অংশ না পাওয়া গেলেও আসামিদের স্বীকারোক্তি ও পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে মামলা প্রমাণ করা ও আসামিদের সাজা দেওয়া সম্ভব।

আইন বিশেষজ্ঞ শাহদীন মালিক বলেন, ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে আসামিদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি এবং যথেষ্ট পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্যপ্রমাণ থাকলে মামলা প্রমাণ করা যায়। তবে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি যদি না থাকে তাহলে মামলা প্রমাণ করা কঠিন হয়ে যায়।

বহু স্পর্শকাতর ফৌজদারী মামলায় অভিজ্ঞ সিনিয়র আইনজীবী আমিনুল গণী টিটো স্পর্শকাতর এ মামলায় আগ বাড়িয়ে কথা বলতে রাজি নন। তবে তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, লাশ পাওয়া না গেলে কিংবা লাশের কোন অংশের ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে মৃত্যু নিশ্চিত না হলে আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দেওয়া যায় না। কেননা হত্যাকাণ্ডের ঘটনার কোন প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী নাই। কিংবা এখন পর্যন্ত কোন আসামি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ার কথাও শুনিনি।

ডিবি পুলিশ আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আশা করি তারা মামলা প্রমাণের জন্য পর্যাপ্ত সাক্ষী ও আলামত জব্দ করবেন। তদন্ত কর্মকর্তারা কী পারবেন কী পারবেন না তা কেউ জানি না। তাই এখনই এ মামলা নিয়ে মন্তব্য করা ঠিক হবে না, বলেন তিনি।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *