আন্তর্জাতিক

প্লাটিনাম জয়ন্তী স্মরণীয় করে রাখতে চায় আওয়ামী লীগ

ডেস্ক রিপোর্ট: চলতি বছর প্রতিষ্ঠার ৭৫ বছর পূর্তিতে পা দিতে চলেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। আগামী ২৩ জুন মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী এই দলটি ৭৫ বছরে পা রাখবে।

দিনটিকে জাঁকজমকপূর্ণ ও উৎসবমুখর উদযাপনের মধ্য দিয়ে স্মরণীয় করে রাখতে চায় ক্ষমতাসীন দলটি। আওয়ামী লীগের প্লাটিনাম জয়ন্তী উদযাপন করা হবে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত। সে জন্য ইতোমধ্যে গঠন করা হয়েছে, বিভিন্ন উপকমিটি। দফায় দফায় সভা করে নির্ধারণ করা হচ্ছে কর্মসূচি।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, প্রতিষ্ঠার প্লাটিনাম জয়ন্তী স্মরণীয় করে রাখতে চায় আওয়ামী লীগ। সেজন্য নেওয়া হচ্ছে, তিনদিনব্যাপী মূল অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি। তিনদিনের মূল্য অনুষ্ঠানের পাশাপাশি দেশব্যাপীও আয়োজন করা হবে নানা অনুষ্ঠানের।

এসময় বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে তরুণ প্রজন্মের প্রতি। তরুণদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বঙ্গবন্ধু এবং দল সম্পর্কে জানাতে থাকবে বিশেষ আয়োজন।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি শেখ হাসিনা, ছবি- সংগৃহীত

ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ তার ৭৫ বছর পূর্তিতে প্লাটিনাম জয়ন্তী জাঁকজমকভাবে উদযাপনের ব্যাপারে গত ৩০ এপ্রিল দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

পরে ৬ মে সম্পাদকমণ্ডলির সভা করে এবং ১০ মে এক যৌথসভায় কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে ঢাকা মহানগর ও সব সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সঙ্গে বৈঠকে এবিষয়ে আলোচনা করা হয়। সর্বশেষ, গত ২২ মে দিবসটি উদযাপনে দলের সংস্কৃতিবিষয়ক উপকমিটি ‘সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যসমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় আমাদের অভিনিবেশ ও কর্মস্পৃহা’ শীর্ষক সভা করে।

এছাড়াও বিভিন্ন উপকমিটি গঠনের মাধ্যমে সেরে নিচ্ছে দিনটি উদযাপনের পূর্বপ্রস্তুতি।

আওয়ামী লীগের প্লাটিনাম জয়ন্তী নিয়ে দলটির এক সভায় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ২৩ জুন ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা ও উৎসবের মধ্য দিয়ে প্লাটিনাম জয়ন্তী উদযাপিত হবে। এ লক্ষ্যে প্রস্তুতি শুরু হয়েছে।

প্লাটিনাম জয়ন্তী পালনে যত আয়োজন
দলীয় সূত্রে জানা যায়, আওয়ামী লীগ তার প্লাটিনাম জয়ন্তীতে তিনদিনের মূল অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে, যা ২৩ জুন শুরু হয়ে শেষ হবে ২৫ জুন। এর মধ্যে ২৩ জুন সকালে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে শুরু হবে কার্যক্রম।

দলীয় সূত্র বলছে, প্রাথমিক কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী, তিনদিনের কেন্দ্রীয় ও মূল অনুষ্ঠানমালা চলবে ২৩ থেকে ২৫ জুন পর্যন্ত। প্রথম দিন ২৩ জুন সকালে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে এবং পরে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানাবেন দলের নেতাকর্মীরা।

একই দিন টুঙ্গিপাড়া বঙ্গবন্ধু সমাধিসৌধ কমপ্লেক্স, বনানী কবরস্থানে ১৫ আগস্টে শহীদ বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্য ও ৩ নভেম্বরের শহীদ জাতীয় চার নেতার কবরে শ্রদ্ধা নিবেদনের কর্মসূচিও রাখা হয়েছে।

এদিন দুপুরে রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বর্ণাঢ্য সমাবেশ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে।

দ্বিতীয় দিন অর্থাৎ ২৪ জুন আয়োজন করা হবে, আলোচনা সভা ও সেমিনারের। শেষদিন ২৫ জুন বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে হবে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

এই তিনদিনের মূল কর্মসূচি ছাড়াও রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে আনন্দ শোভাযাত্রা, কেন্দ্রীয় ও ধানমণ্ডি কার্যালয় ও বঙ্গবন্ধু ভবনসহ সারাদেশের সব দলীয় কার্যালয় ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় আলোকসজ্জা, সেমিনার ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হবে।

এছাড়াও হাসপাতাল এবং কর্মজীবী, এতিমখানা, গরিব, অসহায় ও দুস্থ মানুষের মধ্যে বিতরণ করা হবে খাদ্যসামগ্রী। আন্দোলন-সংগ্রামে আওয়ামী লীগ এবং সরকারের টানা চার মেয়াদের সাফল্য ও অর্জনের চিত্র তুলে ধরতে সারাদেশে ব্যানার, ফেস্টুন, তোরণ, বিলবোর্ড ও প্ল্যাকার্ড সাঁটানো হবে।

আওয়ামী লীগের প্লাটিনাম জয়ন্তীতে বিশেষভাবে দলটির প্রতিষ্ঠার স্মারক রাজধানীর ঐতিহাসিক রোজ গার্ডেনেও বর্ণাঢ্য সাজসজ্জা ও নানা রঙের ব্যানার-ফেস্টুন স্থাপনের প্রস্তুতিও চলছে। তবে দেশে বিদ্যুৎতের সংকট থাকায় আলোকসজ্জা সীমিত রাখা বা পুরোপুরি বন্ধ রাখার কথাও জানিয়েছিল দলটি।

আমন্ত্রণ পাচ্ছেন যারা
ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ তাদের ৭৫ বছর পূর্তি কেন্দ্রীয় থেকে শুরু করে সারাদেশে জেলা, উপজেলা, থানা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড পর্যায়ে উদযাপন করবে। এক্ষেত্রে বিএনপিসহ অন্যান্য বিরোধীদলগুলোকেও আমন্ত্রণ জানাবে আওয়ামী লীগ। এছাড়াও আওয়ামী লীগের এ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হবে বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক দলকেও।

পূর্বের ধারাবাহিকতায় এবারও মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশকে সাহায্য করা ও পাশে থাকা বিভিন্ন দেশের রাজনেতিক দলকে আমন্ত্রণ জানানো হতে পারে। সেইসঙ্গে বাংলাদেশের উন্নয়নে সহযোগী বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক দলগুলোকেও জানানো হতে পারে আমন্ত্রণ। তবে জানা যায়, এখনো কোনো কিছুই চূড়ান্ত হয়নি। দলের পরবর্তী সভায় এসব বিষয় চূড়ান্ত করা হবে।

তরুণদের প্রতি থাকছে বাড়তি নজর
আওয়ামী লীগ প্লাটিনাম জয়ন্তীতে তরুণ প্রজন্মের প্রতি বিশেষ নজর রাখবে বলে জানা গেছে। দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মহান মুক্তিযুদ্ধ, আওয়ামী লীগের ইতিহাস সম্পর্কে তরুণদের জানাতে বিশেষ আয়োজন করা হবে। সে জন্য কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত আয়োজন করা হবে রচনা প্রতিযোগিতার।

এছাড়াও আয়োজন করা হবে বিষয়ভিত্তিক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সেমিনার। জাতীয় পরিবেশ দিবস উপলক্ষে উদযাপন করা হবে বৃক্ষরোপণ সপ্তাহ। গঠন করা বিভিন্ন উপকমিটিগুলো থেকে প্রস্তাব থেকে আসা নতুন নতুন আরো কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে। এসব কর্মসূচি খসড়া আকারে প্রথমে ঠিক করা হবে। পরে দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুমোদনের ভিত্তিতে তা চূড়ান্ত করা হবে।

দিনটি উপলক্ষে তরুণদের উদ্দেশ করে আওয়ামী লীগের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোও নেবে নানান কর্মসূচি। ইতোমধ্যে, ছাত্রলীগ দেশব্যাপী ‘বাংলাদেশ-স্বাধীনতা-মুক্তিযুদ্ধ’ শিরোনামে রচনা প্রতিযোগিতার আয়োজন করার কথা জানিয়েছে। প্রতিযোগীদের জন্য উপজেলা, জেলা এবং কেন্দ্রীয়ভাবেও থাকবে পুরস্কারের ব্যবস্থা।

পরিকল্পনা রয়েছে, সারাদেশে গাছের চারা রোপন করার। নতুন করে সাজানো হবে ঢাকার প্রবেশ দ্বারগুলোও। তবে এসবই এখনো খসড়া পর্যায়ে আছে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা। সে জন্য শিগগিরই বিভিন্ন পেশাজীবী, সমাজের আলোকিত মানুষ ও দলীয় সিনিয়র নেতাদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হবে বলেও জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্রটি।

উন্নয়ন ও অর্জনে আওয়ামী লীগের ৭৫ বছর
ঢাকার রোজ গার্ডেনে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন প্রতিষ্ঠা হয়, আওয়ামী লীগের। সে সময় দলটির নাম ছিল ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’। পরে ১৯৫৫ সালের তৃতীয় জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে সব ধর্ম, বর্ণের প্রতিনিধি হিসেবে দলের নাম থেকে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দেয় আওয়ামী লীগ।

আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি ছিলেন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী এবং সাধারণ সম্পাদক ছিলেন শামসুল হক। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান ছিলেন প্রতিষ্ঠাকালীন যুগ্ম সম্পাদক। পরে ১৯৫০ সালে তিনি সাধারণ সম্পাদক হন।

আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি ছিলেন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। তৎকালীন একটি ছবিতে আবদুল হামিদ খান ভাসানীর সঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, ছবি- সংগৃহীত

বাংলাদেশে হওয়া ১২টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্যে টানা চতুর্থবার ও মোট ষষ্ঠ দফায় ক্ষমতায় আছে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। এ সময়ের মধ্যে দেশের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয় ও দেশ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নৃশংস হত্যার প্রায় ২৩ বছর পর বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সপ্তম, নবম, দশম, একাদশ ও দ্বাদশ সংসদে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। এসময় বিদ্যুৎ, রাস্তাঘাট, পদ্মাসেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল, ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে, বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইটসহ নানান উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে দেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে গেছে দলটি।

দলটির ৭৫ বছর পূর্তিতে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বার্তা২৪.কমকে বলেন, আওয়ামী লীগের একজন কর্মী হিসেবে ৭৫ বছর আমার জন্য একটি বড় প্রাপ্তি! বাংলাদেশের যা কিছু অর্জন, তা হয়েছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে।

কামাল হোসেন বলেন, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হয়েছে আর তাঁর অনুপস্থিতিতে তাঁর কন্যার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আমি এই দলের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে কাজ করতে পারছি, এটা আমার কাছে বিশাল পাওয়া! আমি এই কারণে মহান আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করি! বঙ্গবন্ধু কন্যার কাছে আমি কৃতজ্ঞ! তিনি আমাকে সাংগঠনিক দায়িত্ব দিয়েছেন এবং সংসদ সদস্য হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *