সারাদেশ

খোঁজা হচ্ছে আনার হত্যার হাতিয়ার

ডেস্ক রিপোর্ট: সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারকে হত্যা এবং হাড় থেকে মাংস আলাদা করে টুকরো করার কাজে ব্যবহৃত হাতিয়ার খুনিরা কাদের কাছ থেকে কীভাবে পেয়েছিল, তার খোঁজে নেমেছে ভারতের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডির কলকাতা ব্যুরো।

দ্য টেলিগ্রাফ জানিয়েছে, আনারকে হত্যার সময় ব্যবহার করা সরঞ্জাম কলকাতা থেকেই সংগ্রহ করা হয় বলে জানতে পেরেছে সিআইডি।

এই হত্যা মামলার তদন্তে কাজ করা এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে সংবাদ সংস্থা পিটিআই বলেছে, দেহ টুকরা করার কাজে বিশেষ করে চাপাতি ব্যবহার করা হয়েছে। খুনিরা এগুলো স্থানীয় (কলকাতা) দোকান থেকে কিনেছে।

ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘সন্দেহভাজন খুনিদের গ্রেপ্তারের পর তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আমরা সেসব স্থান (দোকান) শনাক্ত করার চেষ্টা করছি।’

কলকাতার গোয়েন্দাদের ভাষ্য অনুযায়ী, তারা একজন কসাইকে গ্রেপ্তার করেছে, যিনি খুন করার পর আনারের দেহকে ৮০ টুকরা করে তাতে হলুদ মাখান। তারপর টুকরাগুলো নিউ টাউনের কাছে একটি খালে ও আরও কয়েকটি স্থানে ফেলে দেওয়া হয়।

সিআইডির ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘নিউ টাউনের ওই ফ্ল্যাটে পাওয়া আঙুলের ছাপ মিলিয়ে দেখার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।’

সম্প্রতি ওই ফ্ল্যাটের সেপটিক ট্যাংক থেকে কয়েক কেজি মাংসের টুকরা এবং ফ্ল্যাট থেকে কিছু চুল পাওয়া গেছে। সেগুলোর ফরেনসিক পরীক্ষা করা হচ্ছে।

উদ্ধার করা মাংসের টুকরার সঙ্গে এমপি আনারের সন্তানদের ডিএনএ মিলিয়ে দেখার প্রস্তুতি চলছে। এখন কলকাতায় যাওয়ার জন্য ভিসার অপেক্ষায় আছেন আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন।

আনার হত্যার প্রধান সন্দেহভাজন ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরের যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী আখতারুজ্জামান শাহীন ও তার অন্যান্য সহযোগীদের ধরতে তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে ভারত ও বাংলাদেশের গোয়েন্দারা।

অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার হারুন অর রশীদের নেতৃত্বে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি প্রতিনিধি দল কলকাতা থেকে ঘুরে আসার পর ডিবির আরেকটি দল নেপাল গেছে।

সেখানে সন্দেহভাজন আসামি সিয়াম হোসেন আটকের খবর মিলেছে। এরপর হারুনের নেতৃত্বে শনিবার (১ জুন) কাঠমান্ডু যায় গোয়েন্দা দলটি।

শনিবার টাইমস অব ইন্ডিয়া জানায়, আনার হত্যার রহস্য উদ্‌ঘাটনে ভারতের সিআইডি বিশেষ তদন্ত দল গঠন করে কাজ শুরু করেছে।

স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম (এসআইটি) নামে এ দল একজন আইজির নেতৃত্বে তিনজন ডিআইজি এবং বিভিন্ন পর্যায়ের ১০-১২ জন কর্মকর্তা নিয়ে গঠন করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তদন্ত দলটি দ্রুততার সঙ্গে প্রযুক্তিগত তথ্যপ্রমাণ ও ফরেনসিক রিপোর্ট সংগ্রহের কাজটি নিশ্চিত করবে। প্রধান সন্দেহভাজন আখতারুজ্জামান শাহীনকে ধরতে ঢাকার পুলিশ ও ইন্টারপোলের সঙ্গে সমন্বয় করবে তারা।

ঢাকা ও কলকাতার পুলিশের ভাষ্য, আনার খুন হওয়ার পর ঢাকা থেকে দিল্লি হয়ে কাঠমান্ডু, সেখান থেকে দুবাই হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান শাহীন।

টাইমস অব ইন্ডিয়া লিখেছে, তদন্তের জন্য সে দেশের সিআইডির বিশেষ তদন্ত দলটি শিগগির নেপালেও যাবে।

ঝিনাইদহ-৪ আসনের তিনবারের সংসদ সদস্য আনার কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। গত ১১ মে তিনি চিকিৎসার জন্য ভারতে যান। প্রথমে কলকাতার বরাহনগরে তার বন্ধু স্বর্ণ ব্যবসায়ী গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে ওঠেন। কিন্তু সেখান থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হন।

২২ মে সকালে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে খবর আসে, নিউ টাউনের এক বাড়িতে খুন হয়েছেন আনার।

এ হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে ভারতীয় পুলিশের দেওয়া তথ্যে বাংলাদেশে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দ্বিতীয় দফায় রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।

ওই তিনজন হলেন: আমানুল্লা সাঈদ ওরফে শিমুল ভুঁইয়া ওরফে শিহাব ওরফে ফজল মোহাম্মদ ভুঁইয়া, তানভীর ভুঁইয়া ও সেলেস্টি রহমান।

যশোর থেকে সাইফুল আলম মোল্লা মেম্বার নামে আরেকজনকে আটক করে ডিবি। তিনি পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির নেতা খুলনার শিমুল ভুঁইয়ার সহযোগী বলে পুলিশ জানিয়েছে।

পুলিশ বলছে, আনার হত্যার হোতা তার বাল্যবন্ধু ও ঝিনাইদহের যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী আখতারুজ্জামান ওরফে শাহীন। আর খুনের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছেন চরমপন্থি নেতা আমানুল্লা ওরফে শিমুল।

আনার কলকাতায় যাওয়ার পরদিন বৈঠক করার জন্য নিউ টাউনে আখতারুজ্জামান শাহীনের ভাড়া বাসায় যান। সেখানেই আসামিরা তাকে হত্যা করে।

তদন্তের এক পর্যায়ে জিহাদ হাওলাদার নামের এক কসাইকে গ্রেপ্তার করে পশ্চিমবঙ্গের সিআইডি। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, ২৪ বছর বয়সি জিহাদ হাওলাদার বাংলাদেশের খুলনার বাসিন্দা। অবৈধভাবে ভারতে অনুপ্রবেশ করেছিলেন তিনি। আনারকে হত্যার প্রায় দুই মাস আগে সন্দেহভাজনরা তাকে মুম্বাই থেকে কলকাতায় নিয়ে আসেন।

জিজ্ঞাসাবাদে সিআইডিকে জিহাদ বলেছেন, আখতারুজ্জামানের নির্দেশেই তিনি সব কাজ করেছেন। আরও চার জন বাংলাদেশি এই কাজে সাহায্য করেছেন।

ভারতীয় গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল বাংলাদেশে এসে ২৪ মে ঢাকায় গ্রেপ্তার তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে যান। এরপর ২৫ মে কলকাতায় যান বাংলাদেশের ডিবির তিন কর্মকর্তা। তারাও জিহাদকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন এবং তাকে নিয়ে সেই বাড়ি ঘুরে দেখেন।

সঞ্জিভা গার্ডেনস নামের বিলাসবহুল ওই অ্যাপার্টমেন্ট ব্লকের সেপটিক ট্যাংক থেকে গত মঙ্গলবার বেশ কিছু মাংসের টুকরো উদ্ধার করার কথা জানায় পুলিশ। ডিএনএ পরীক্ষার জন্য পরে তা ভারতের কেন্দ্রীয় ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানো হয়।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *