সারাদেশ

কুমিল্লায় বিএনপির দু’গ্রুপের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ ১

ডেস্ক রিপোর্ট: মিথ্যা নথিপত্র ও যোগ্যতা প্রমাণের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংশ্লিষ্ট্য দপ্তরে জমা না দেওয়ার অভিযোগে পার্বত্য চট্টগ্রামে শতকোটি টাকার উন্নয়নকাজ বাস্তবায়নকারি বেশ কয়েকটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভূক্তি করেছে সওজ কর্তৃপক্ষ।

তালিকাভূক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো এস অনন্ত বিকাশ ত্রিপুরা, হাসান টেকনো বিল্ডার্স লিমিটেড, মি. ইউটি মং, ইউনুছ এন্ড বাদ্রার্স।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাঙামাটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের সড়ক সার্কেল অফিসের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোফাজ্জল হোসেন হায়দার।

তিনি জানান, চলমান ডিভার্ট ক্যাটাগরিতে নামোল্লেখ থাকাকালীন সময়ে কালো তালিকাভূক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো আর কোনোভাবেই ইজিপিতে প্রবেশ করতে পারবে না। কিন্তু, খোঁজ নিয়ে জানা গেছে যে, জালিয়াতির অভিযোগে কালোতালিকাভূক্ত হওয়ার পরেও এখনো পর্যন্ত দিব্যিই কাজ চালিয়ে যাচ্ছে অভিযুক্ত এসব ঠিকাদারেরা।

এদিকে ইজিপি প্রকিউরমেন্ট সিস্টেম ওয়েব পোর্টালে উল্লেখ করা হয়েছে, খাগড়াছড়ির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এস অনন্ত বিকাশ ত্রিপুরা ও বান্দরবানের মি. ইউটি মং নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দুটি পার্বত্য রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে সড়ক ও জনপথ বিভাগের অধীনে ব্রীজ নির্মাণসহ সড়ক উন্নয়নের চলমান কাজগুলোর তথ্য প্রদান না করেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়ন করছে।

এছাড়াও হাসান টেকনো বিল্ডার্স লিমিটেড নামক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি ফলস ডকুমেন্ট দিয়ে ইজিপি টেন্ডারে অংশ নিয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগের অধীন উন্নয়ন কাজ পরিচালনা করছে। এই ধরনের প্রতারনামূলক আচরণের জন্য রাঙামাটি সড়ক সার্কেল অফিসের আওতাধীন সওজ কর্তৃপক্ষ উপরোক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট্য কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে, ২০ বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন একজন প্রকৌশলী জানিয়েছেন, চলমান কাজের জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট অনলাইনে সাবমিট করার পর সেসব কাগজপত্র যাচাই-বাছাইয়ের পর উক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে সংশ্লিষ্ট্য টেন্ডার কাজের নোহা এবং কার্যাদেশ প্রদান করাই হচ্ছে নিয়ম।

কিন্তু, ভিন্ন উপায়ে কোনো প্রকার যাচাই-বাছাই না করে টেন্ডার কাজ দিয়ে দেওয়ার পর সেকাজ বাস্তবায়নাধীন সময়ে কালো তালিকাভূক্ত করার বিষয়টি রহস্যজনক।

অপরদিকে দূর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি (দূপ্রক) রাঙামাটির সভাপতি ওমর ফারুক বলেছেন, কাজ দেওয়ার আগেই কাগজপত্র যাচাইয়ের দরকার ছিলো এবং সেটিই নিয়ম। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছাড়া শতকোটি টাকার কাজ বাস্তবায়ন করবে; এই ধরনের প্রতারনামূলক আচরনের দ্বায়ভার সংশ্লিষ্ট্য অফিস কর্তৃপক্ষ কোনোভাবেই এড়াতে পারে না। যেসকল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে এখন কালো তালিকাভূক্ত করা হলো,কার্যাদেশ দেওয়ার আগেই কেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি এবং এই ক্ষেত্রে আইনের চরমভাবে ব্যতয় ঘটেছে বলেও মন্তব্য করেছেন দূপ্রক সভাপতি।

খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, কালো তালিকাভূক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এস অনন্ত বিকাশ ত্রিপুরা রাঙামাটি সড়ক সার্কেল অফিসের আওতাধীন টেন্ডার আইডি নং-৭৩৮৭১৭, ৮১৪৯৩৮, ৭৩৯১২৩, ৭৩৮৯২৫, ৮৫৩৬৩৮ এই পাচঁটি টেন্ডার কাজ বাস্তবায়ন করছে।

রাঙামাটি মহালছড়ি খাগড়াছড়ি-২ সড়কে ৬০.৭৫০ মিটার দীর্ঘ সোনাইছড়ি সেতু, রানিরহাট-কাউখালী রোডে ৬৩.০৫৫ মিটার দীর্ঘ বেতছড়ি সেতু। বান্দরবানের আজিজনগর-গজালিয়া-লামায় সড়কে ২৫.৭৪ মিটার দীর্ঘ কাট্টলীপাড়া ব্রিজ, খাগড়াছড়ির-দীঘিনালা-বাঘাইহাট-সাজেক রোড এর ডাইভারশন রোড ও অ্যাপ্রোচ রোডসহ জামতলী ব্রিজ) নির্মাণ, চট্টগ্রাম-রাঙামাটি সড়ক, ঘাগড়া- চন্দ্রঘোনা-বাঙ্গালহালিয়ার সারফেস ড্রেনসহ আরসিসি রিটেনিং ওয়াল, মহালছড়ি-খাগড়াছড়ি রোড এবং বাঙ্গালহালিয়া-রাজস্থলী রোডের নির্মাণ কাজ বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেয়নি এস অনন্ত বিকাশ ত্রিপুরা নামক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

অপরদিকে, বান্দরবানের মালিকানাধীন মি: ইউটি মং নামক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কর্তৃক বাস্তবায়িত টেন্ডাই আইডি নং-৭৫৫৭১৮, ৭৩৯০৪১ এবং ৭৩৯১৫৬ এর টেন্ডার কাজ বাস্তবায়িত হচ্ছে।

বান্দরবানের লামা-আলীকদম রোডের ফাইসাখালী ইয়াংছা ব্রীজ, রোয়াংছড়ি রুমা সড়কের কলাতলী ব্রীজ ও বান্দরবান-চিম্বুক-থানচি-আলীকদম-নাইখংছড়ি খালের উপর গার্ডার ব্রীজ নির্মাণ এই প্রকল্পগুলোতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইউটি মং তাদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সওজ কর্তৃপক্ষের নিকট তথা ইজিপি’তে সাবমিট করেনি।

রাঙামাটিতে কাজ করা কুমিল্লার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হাসান টেকনো বিল্ডার্স লিমিটেডের ব্যাপারে সরকারি ইপ্রকিউর ওয়েব পোর্টালে উল্লেখ করা হয়েছে, এই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ফলস ডকুমেন্ট সাবমিট করায় তাদেরকে কালো তালিকাভূক্ত করা হয়েছে।

সওজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, একাধিকবার নোটিশ প্রদানের পরও উপরোক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে কোনো ধরনের সন্তোষজনক জবাব না পাওয়ায় তাদেরকে কালো তালিকাভূক্ত করেছে কর্তৃপক্ষ।

একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, কালো তালিকাভূক্তির পরেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে আতাঁত করে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বিল প্রদানসহ বিভিন্ন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে, যা টেন্ডার আইনের সম্পূর্ন বিরোধী।

অফিসের কতিপয় কর্মকর্তারা বড় বড় এসকল ঠিকাদারদের সাথে অনৈতিক সুবিধা গ্রহণ করে কাগজপত্র যাচাই-বাছাই না করেই নিজেদের স্বার্থে অবৈধ পন্থায় টেন্ডার কাজ পেতে সহায়তা করে। এতে করে সরকারকে নিয়মিত ভ্যাট-ট্যাক্স প্রদান করা বৈধ ঠিকাদাররা কাজ পাওয়া থেকে বঞ্চিতই থেকে যাচ্ছে।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *