বদলে গেছে আল্পনাদের জীবন
ডেস্ক রিপোর্ট: দমিয়ে রাখার চেষ্টা হয়েছে বহুবার। কিন্তু আল্পনা থেমে যাননি। সমস্ত কটাক্ষ উপেক্ষা করে তিনি আজ স্থানীয়দের কাছে ‘ডাক্তার আপা’ হিসেবে পরিচিত। কেয়ার বাংলাদেশের সৌহার্দ্য প্রকল্পের প্রশিক্ষণ নিয়ে তিনি ধাত্রী হিসেবে কাজ করছেন। নিজে সাবলম্বী হয়েছেন, পাশাপাশি অন্যদেরও তিনি আয়ের পথ দেখাচ্ছেন। বর্তমানে কেয়ার বাংলাদেশের সৌহার্দ্য প্রকল্পের আওতায় স্থানীয় সেবাদানকারী (এলএসপি) হিসেবে কাজ করছেন তিনি।
সোমবার (৩ জুন) রাজধানীর একটি হোটেলে কেয়ার বাংলাদেশ আয়োজিত “সেলিব্রেটিং অ্যান্ড লঞ্চিং লোকাল সার্ভিস প্রোভাইডারস নেটওয়ার্ক: সাপোর্টিং এ স্মার্ট বাংলাদেশ” শীর্ষক অনুষ্ঠানে নিজের জীবন বদলে ফেলার গল্প শোনান আল্পনা।
অনুষ্ঠানে সৌহার্দ্য প্রকল্পের আওতায় “উদ্যোক্তা তৈরি” শীর্ষক প্রশিক্ষণের প্রশিক্ষিত স্থানীয় সেবাদানকারীরা (এলএসপি) তাদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।
আয়োজকেরা জানান, সৌহার্দ্য প্রকল্প বেসরকারি খাতের সঙ্গে স্থানীয় সেবাদানকারীদের সম্পৃক্ততা জোরদার করতে কাজ করছে। এই প্রকল্প প্রায় ২ হাজার ৩০০ স্থানীয় সেবাদানকারীর সক্ষমতা বৃদ্ধি করেছে যা প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার পরিবারের চাহিদা পূরণের মাধ্যমে তাদের আয় বৃদ্ধিতে সহায়তা করেছে।
এই প্রকল্প ৪৫০ জন স্থানীয় সেবাদানকারীর জন্য “উদ্যোক্তা তৈরি” প্রশিক্ষণের আয়োজন করে যেন তাদের দক্ষ উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলা যায় এবং তাদের আয়মূলক কাজের পরিধি উন্মুক্ত করে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডাঃ মোহাম্মদ রেয়াজুল হক বলেন, আমরা খুবই খুশি যে এলএসপিরা রোগ, সঠিক টিকা এবং চিকিৎসা সম্পর্কে জানে। তারাই সৌহার্দ্য দ্বারা আলোকিত মানুষ। তাদের পুষ্টির বিষয়ে আরও অবগত হওয়া উচিত, যাতে অন্যরা তাদের অনুসরণ করতে পারে।
কেয়ার বাংলাদেশ এর কান্ট্রি ডিরেক্টর রাম দাস বলেন, সৌহার্দ্য প্রকল্পের মাধ্যমে প্রকল্প এলাকার দরিদ্র ও অতি দরিদ্র জনগণ তাদের জীবন-জীবিকার উন্নতি করতে সক্ষম হয়েছে। অনেক উপকারভোগী বিশেষ করে নারীরা বৈচিত্র্যময় কর্মসংস্থান, টেকসই কৃষি ও বাজারে প্রবেশাধিকার বৃদ্ধির মাধ্যমে আয় বৃদ্ধি করে আর্থিক অবস্থার উন্নতি করেছে।
উক্ত অনুষ্ঠানে সৌহার্দ্য প্রকল্প “স্থানীয় সেবাদানকারী নেটওয়ার্ক” এর আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে, এটি এমন একটি প্ল্যাটফর্ম যা স্থানীয় সেবাদানকারীদের এক ছাতার নিচে নিয়ে আসবে। অনুষ্ঠানে স্থানীয় সেবাদানকারীদের ভিজ্যুয়াল পরিচিতির জন্য “এলএসপি লোগো” এর উন্মোচন করা হয়। উল্লেখ্য যে, এই লোগোটি গাইবান্ধার মমিনুল ইসলাম নামক একজন স্থানীয় সেবাদানকারী তৈরি করেছেন, তিনি প্রায় ৩৫০ জন স্থানীয় সেবাদানকারীর সাথে প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলেন। লোগো প্রতিযোগিতার বিজয়ী এবং দুই রানার্স-আপকে অনুষ্ঠানে চেক প্রদান করা হয়।
উদ্বোধনী বক্তব্যে সৌহার্দ্য এক্টিভিটির চিফ অব পার্টি মার্ক নসবা বলেন, আমরা সবাই মিলে শুধুমাত্র স্মার্ট বাংলাদেশ তৈরিতে অবদান রাখছিনা বরং টেকসই উন্নয়ন ও সহনশীলতার পথও প্রশস্ত করছি। আসুন আমরা সকলের জন্য একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যত গড়তে একসাথে কাজ করি।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সৌহার্দ্য ৩ প্লাস প্রকল্পের সিনিয়র টিম লিডার-প্রোগ্রাম, জনাব আব্দুল মান্নান মজুমদার। তার উপস্থাপনায় তিনি স্থানীয় সেবাদানকারীদের ব্যবসায়িক নেটওয়ার্ক বা এলএসপি বিজনেস নেটওয়ার্ক মডেলের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করেন ও স্মার্ট বাংলাদেশ তৈরিতে এর প্রয়োজনিয়তা ব্যাখ্যা করেন।
বিশেষ অতিথি কেয়ার-এর আঞ্চলিক ডিরেক্টর রমেশ সিং তাঁর ভাষণে বলেন, “আজ একটি ঐতিহাসিক দিন, কারণ আজ আনুষ্ঠানিকভাবে আমাদের স্থানীয় সেবাদানকারীরা সফলভাবে তাদের উদ্যোক্তা প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেছে। আমরা সাত ধরনের সেবাদানকারীর একটি নেটওয়ার্ক চালু করেছি যারা ভবিষ্যতে স্থানীয়ভাবে নেতৃত্ব দিয়ে কেয়ার বাংলাদেশের উন্নয়ন দৃষ্টিভঙ্গিকে নিয়ে যাবে।”
যেহেতু সৌহার্দ্য ৩ প্লাস প্রকল্প শেষ হয়ে যাচ্ছে, তাই কেয়ার বংলাদেশ উন্নয়ন অংশীদার হিসেবে আন্তর্জাতিক সংস্থা, ব্যাংক, কর্পোরেট সেক্টর এবং সরকারকে এই সম্প্রদায়ের উন্নতির অগ্রযাত্রা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানায়।
সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।