সারাদেশ

স্কটল্যান্ড থেকে সাইকেল চালিয়ে দুই ভাই মদিনায়

ডেস্ক রিপোর্ট: স্কটল্যান্ড থেকে সাইকেল চালিয়ে দুই ভাই মদিনায়

হজ পালন করতে স্কটল্যান্ড থেকে সাইকেল চালিয়ে দুই ভাই সৌদি আরব পৌঁছেছেন, ছবি: সংগৃহীত

পবিত্র হজপালন করতে যুক্তরাজ্যের স্কটল্যান্ড থেকে সাইকেল চালিয়ে দুই ভাই সৌদি আরব পৌঁছেছেন।

গত ১ এপ্রিল আবদুর রহমান (৩৪) ও রেহান আলী (২৯) নামের দুই ভাই ওই অঙ্গরাজ্যের মিডলোথিয়ান বনিরিগ শহর থেকে যাত্রা শুরু করেন।

সম্প্রতি তারা সৌদি আরবের মদিনা নগরীতে পৌঁছলে তাদের ফুল, খেজুর ও কফি উপহার দিয়ে অভ্যর্থনা জানানো হয়।

এক মাসের বেশি সময়ের এ যাত্রাপথে তারা ৩৬৩৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে নেদারল্যান্ডস, জার্মানি, বুলগেরিয়া, তুর্কি, লেবাননসহ ১৩টি দেশ অতিক্রম করেন।

দীর্ঘ এ যাত্রাপথে তারা গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলায় আক্রান্তদের জন্য অর্থ সংগ্রহ করেন। মূলত তারা ২০১৯ সালে লন্ডন থেকে হজ করতে যাওয়া একটি সাইকেল অভিযাত্রীদল থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন।

এ প্রসঙ্গে আবদুর রহমান বলেন, ‘ওই ঘটনার পর আমি ভাবছিলাম, তারা কী সুন্দরভাবে হজ করতে যাচ্ছেন। তখন মনে হয়, আমারও এমন কাজ করার সামর্থ্য রয়েছে। এরপর আমি হজযাত্রার পরিকল্পনা শুরু করি। পরিকল্পনা ও প্রস্তুতির সময় আমরা প্রতিদিন গাজায় ফিলিস্তিনিদের আক্রান্ত হওয়ার খবর পেতে থাকি। তখন আমরা ওয়ার্ল্ড কেয়ার ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে গাজাবাসীর জন্য অর্থ সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নিই।’

রেহান বলেন, ‘২০২২ সালের নভেম্বরে আমরা মক্কা ভ্রমণ করেছি। তখন থেকে আমি ও আমার ভাই পুনরায় মক্কায় গিয়ে হজ করতে চাচ্ছিলাম। গত বছর আমরা সিদ্ধান্ত নিই, ২০২৪ সালে আমরা হজ ভ্রমণ সম্পন্ন করব। এমন দুর্দান্ত ভ্রমণকে আমরা ফিলিস্তিনের গাজাবাসীর জন্য অর্থ সংগ্রহের সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করি।’

চুরির ২৩ বছর পর হাজরে আসওয়াদ যেভাবে উদ্ধার হয়

হাজরে আসওয়াদ, ছবি: সংগৃহীত

পবিত্র কাবাঘরের পূর্ব কোণে স্থাপিত একটি কালো পাথরকে আরবিতে হাজরে আসওয়াদ বলা হয়। একে মুসলমানরা জান্নাতি পাথর হিসেবে বিশ্বাস করে। এই পাথরের সঙ্গে নবী কারিম (সা.)-এর স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে। ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ বিধান হজ ও উমরা পালনের সময় তাওয়াফের প্রতি চক্করে হাজরে আসওয়াদে চুমু দেওয়া সুন্নত।

যদি হাজরে আসওয়াদ চুম্বন দেওয়া সম্ভব না হয়, ডান হাত দিয়ে ইশারা করলেও হবে। অর্থাৎ কালো পাথরটির দিকে সম্প্রসারিত করে স্বীয় হস্তে চুম্বন করলেও সুন্নত আদায় হয়ে যাবে এবং আল্লাহতায়ালা হাজরে আসওয়াদ চুম্বনের সওয়াব ও বরকত দান করবেন। তাই মুসলমানদের কাছে হাজরে আসওয়াদের গুরুত্ব অপরিসীম।

তবে অবাক করা তথ্য হলো, এই হাজরে আসওয়াদ একসময় চুরি হয়েছিল। আব্বাসি আমলে এই বিস্ময়কর ঘটনা ঘটে। অনেকে হয়তো জানেনই না, চুরি যাওয়া হাজরে আসওয়াদ উদ্ধার করতে আব্বাসি খলিফাদের ২৩ বছর সময় লেগেছিল।

হাজরে আসওয়াদ, ছবি: সংগৃহীত ৯৩০ সালের জানুয়ারি মাসে শিয়া ইসমাইলি গোষ্ঠী কারামিতার নেতা আবু তাহের আল-কারামাতি এটি চুরি করেছিলেন এবং বর্তমান বাহরাইনে অবস্থিত একটি সামরিক ঘাঁটিতে নিয়ে গিয়েছিলেন।

আবু তাহির আল-কারামাতি বাহরাইনকে ঘিরে গড়ে ওঠা সেকালের কারামিতা অঞ্চলের শাসক ছিলেন। তার ভাই আবু সাইদ হাসান ছিলেন কারামিতা রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা। ৯২৩ সালে আবু তাহির ভাইয়ের স্থলাভিষিক্ত হন। সে বছরই তিনি বসরা আক্রমণ করেন। পাঁচ বছর পর ৯২৭ সালে আক্রমণ করেন বসরা। আব্বাসি খলিফাদের তিনি বাগদাদ দখলের হুমকিও দেন। ইরাকের বিভিন্ন জনপদে নিয়মিত লুটতরাজ চালান।

৯৩০ সালে এই নেতা আব্বাসিদের হাত থেকে মক্কা ছিনিয়ে নেওয়ার গোপন পরিকল্পনা করেন। আব্বাসিরা তা বুঝতে পেরে তাকে মক্কায় প্রবেশে বাধা দেন। পরে তিনি শাসকগোষ্ঠীর সঙ্গে শান্তি আলোচনা করে মক্কায় প্রবেশ করেন। তবে মক্কায় প্রবেশ করে তিনি চুক্তি লঙ্ঘন করেন। হজের প্রথম দিনেই তিনি মক্কায় আক্রমণ করে বসেন। কারামিতা বাহিনী ঘোড়া নিয়ে মসজিদুল হারামে প্রবেশ করে। হাজিদের তারা নির্বিচারে হত্যা করতে থাকে। ঐতিহাসিকগণ বলেন, সেবার প্রায় ৩০ হাজার হাজি খুন হন।

হাজরে আসওয়াদ চুম্বনের জন্য সবসময় ভিড় থাকে, ছবি: সংগৃহীত কারামিতা বাহিনী পবিত্র কাবাঘর লুট করেছিল। বাড়িঘর ধ্বংস করেছিল। অনেক হাজির মরদেহ জমজম কূপে ফেলে দিয়েছিল। লাশ পচাতে রাস্তায়ও ছড়িয়ে-ছিটিয়ে দিয়েছিল তারা। আবু তাহির হাজরে আসওয়াদ কুক্ষিগত করেছিলেন। তিনি সেটি নিজের মসজিদে নিয়ে যান। মূলত মসজিদটিকে তিনি পবিত্র কাবাঘরের মতো পবিত্র স্থান ঘোষণা করতে চেয়েছিলেন, যা কখনোই পূর্ণ হওয়ার নয়।

আবু তাহিরের ভয়ংকর পরিণতি সম্পর্কে ঐতিহাসিকেরা লেখেন, মৃত্যুর সময় তার দেহ পুরোটায় পোকায় খেয়ে ফেলেছিল। দীর্ঘ ২৩ বছর পর বিপুল পরিমাণ টাকার বিনিময়ে পাথরটি উদ্ধার করা হয়েছিল। এ সময় পাথরটি ভেঙে কয়েক টুকরো হয়ে গিয়েছিল।

হাজরে আসওয়াদ তাওয়াফের শুরু এবং সমাপ্তিস্থল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বিভিন্ন হাদিসে নবী কারিম (সা.) এ পাথরের মর্যাদা বর্ণনা করেছেন।

যুগ যুগ ধরে পাথরটি নানাভাবে সংরক্ষিত ছিল। সুরক্ষার জন্য পাথরটি খাঁটি রৌপ্যের ফ্রেমে আবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। সর্বশেষ ২০০২ সালে বাদশাহ ফাহাদের সময় তা স্থাপন করা হয়।

পঞ্চাশের দশকে তোলা হাজরে আসওয়াদের ছবি একটি বাদামী পেস্টে আবৃত পাথরটি মুসল্লিরা স্পর্শ করেন এবং চুম্বন করেন। পেস্টে রয়েছে মোমের মিশ্রণ, কস্তুরী ও অম্বর।

১৩৭৬ হিজরির ১ রবিউল আউয়াল মোতাবেক ১৯৫৭ সালে ক্যালিগ্রাফার শেখ মুহাম্মদ তাহির আল কুর্দি হাজরে আসওয়াদের ৮টি খণ্ডের চিত্র অঙ্কন করেন। তিনি কালো পাথরের ওপর স্বচ্ছ কাগজ রেখে আলাদাকরে ছবিগুলো আঁকেন।

কয়েক বছর আগে ফক্স স্ট্যাক প্যানোরামা প্রযুক্তি ব্যবহার করে হাজরে আসওয়াদের সবচেয়ে স্বচ্ছ ছবি তোলা হয়। ৪৯ হাজার মেগাপিক্সেলের ১০৫০ ছবি তুলতে ৭ ঘণ্টা সময় লাগে। এরপর প্রায় ৫০ ঘণ্টা সময় ব্যয়ে তা ব্যবহারযোগ্য করা হয়। ৩০ সেন্টিমিটার ব্যাসরেখার কালো ও লালচে বর্ণের পাথরটি ডিম্বাকৃতির।

;

আল্লাহর ওয়াস্তে বলি, হজের সফরে সেলফি নয়

জামারাতে পাথর নিক্ষেপের সময় সেলফি তোলার এই ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে, ছবি: সংগৃহীত

হজ ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের অন্যতম। যাদের পবিত্র মক্কায় যাতায়াত ও হজের কাজ সম্পাদন করার মতো আর্থিক ও দৈহিক সামর্থ্য আছে তাদের জন্য জীবনে একবার হজপালন করা ফরজ।

এবার পবিত্র হজ জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১৬ জুন অনুষ্ঠিত হতে পারে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ থেকে হজ ফ্লাইটে হাজিদের সৌদি আরব যাওয়া শুরু হয়েছে।

মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সন্তুষ্টি অর্জনই হজের মূল উদ্দেশ্য। তাইতো হাজার হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে হাজি সাহেবরা ছুটে আসেন পবিত্র মক্কায়। মহান রবের প্রতি ভক্তি, ভালোবাসা আর প্রেম উথলে উঠে হাজিদের হৃদয় আঙ্গিনায়। পবিত্র কাবার চত্বরে আসতেই তারা নিজেকে আবিষ্কার করেন পরম সৌভাগ্যবান হিসেবে।

বায়তুল্লাহর প্রতিটি পদে পদে, প্রতিটি পদক্ষেপে তারা খুঁজে ফেরেন মহান রবের সন্তুষ্টি। সেই সন্তুষ্টি পেতে চাইলে হজসহ যাবতীয় ইবাদত হতে হবে লৌকিকতামুক্ত, শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। লোক দেখানো যেকোনো ধরনের কার্যক্রমই হজসহ যাবতীয় ইবাদত-বন্দেগির চেতনাকে বিনষ্ট করে দেয়।

তবুও বর্তমানে হজের মতো গুরুত্বপূর্ণ ও মহান ইবাদতে গিয়েও মোবাইল ফোনের ক্যামেরা ব্যবহার করে সেলফি তথা নিজেদের ছবি তোলায় ব্যস্ত হচ্ছেন অনেক হজযাত্রী। জেনে কিংবা না জেনে তারা মক্কার স্মৃতিবিজড়িত বিভিন্ন জায়গার ছবি কিংবা সেলফি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।

ইহরাম বাঁধার স্থান (মিকাত) থেকে শুরু করে বিমানে, ইহরামে, বায়তুল্লাহ তাওয়াফে, জমজমের পানি পানে, সাফা-মারওয়া সায়িতে, আরাফাতের ময়দানে, মিনার কঙ্কর নিক্ষেপে এমনকি মাথামুণ্ডনেও সেলফি তুলে তা টুইটার বা ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করছেন অনেক হাজি সাহেব।

নিজেই নিজের ছবি তোলাকেই সেলফি বলা হয়। আজকাল বিশেষ কোথাও গেলে সেখানে সেলফি তুলে বিশেষ মুহূর্তের এমন ছবি পোস্ট করা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খুবই জনপ্রিয় প্রবণতা।

বর্তমান সমাজে সেলফি একটি রোগের মতো হয়ে গেছে। মহাকাশ গবেষণা থেকে শুরু করে দিনমজুর পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছেছে এ সেলফির ব্যবহার। অতি গুরুত্বপূর্ণ ও মহান ইবাদত হজে গিয়েও সেলফির ব্যবহার একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা শুধুমাত্র মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যই হজের আহকামগুলো ইখলাসের সঙ্গে যথাযথ আদায় করতে হয়।

লোক দেখানো যেকোনো ধরনের কার্যক্রমই ইবাদত-বন্দেগির চেতনাকে বিনষ্ট করে দেয়। সেলফির কার্যক্রম, ক্যামেরার ফ্ল্যাশ ইবাদতের অন্তরায়। মুমিন হৃদয়ের একনিষ্ঠতায় মারাত্মক বিঘ্ন ঘটায় এই সেলফি। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, যেকোনো রকম আত্মপ্রদর্শনে মুমিনের বড় সম্পদ তাকওয়া অর্জন হয় না। তাই হজের সফরে নিজেকে প্রদর্শনের ইচ্ছাকে দমিয়ে রাখতে হবে।

হজ তথা ইবাদতে সেলফির মাধ্যমে সাধারণত মানুষের বাহবা পাওয়াই উদ্দেশ্য হয়ে থাকে, যার মাধ্যমে ইবাদত রিয়াগ্রস্ত হয়, যাকে হাদিসে বলা হয়েছে ‘শিরকে আসগর’ ছোট শিরক। এ সম্পর্কে রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘সামান্যতম রিয়াও (লোক দেখানো আমল) শিরক।’ -সুনান ইবনে মাজাহ

অন্যত্র রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি লোক দেখানো ইবাদত করে, আল্লাহ এর বিনিময়ে তার লোক দেখানো উদ্দেশ্য প্রকাশ করে দেবেন।’ -সহিহ বোখারি

বর্তমানে মহামারির মতো ছড়িয়ে পড়া এই সেলফি তোলা ও ভিডিও করা নবী কারিম (সা.)-এর হাদিসের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। যেখানে মানুষ শুধু আল্লাহকে পেতেই যায়, সেখানে লাইক-কমেন্ট পেতে মরিয়া হওয়া অত্যন্ত গর্হিত কাজ।

মনে রাখতে হবে, বায়তুল্লাহ জিয়ারত বা হজ মূলত আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে মুসলিম জাতির পিতা হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর স্মৃতির নির্দশনসমূহ ও তার পরিবারের চরম আত্মত্যাগের স্মরণ।

সুতরাং হজের সময় নিজেই নিজের ছবি তুলে পোস্ট করা থেকে বিরত থেকে হজের কার্যাদি সম্পন্নের দিকে মনোনিবেশ করতে হবে। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদেরকে তার সন্তুষ্টির জন্য হজে অংশগ্রহণ ও একমাত্র তার সন্তুষ্টির জন্যই হজপালন করার তাওফিক দান করুন। আমিন!

লেখক : আলেম, প্রাবন্ধিক ও কলেজ শিক্ষক।

;

চরিত্রবান তাহাজ্জুদগোজারের মর্যাদা পায়

মুমিন তার চরিত্রের সৌন্দর্য দিয়ে রোজাদার তাহাজ্জুদগুজার ব্যক্তির মর্যাদা লাভ করতে পারে, ছবি: সংগৃহীত

সাহাবি হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হলো, ইয়া রাসুলুল্লাহ! কোন ব্যক্তি শ্রেষ্ঠ? হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) জবাব দিলেন, এমন মুমিন, যে নিজের জান-মাল দিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করে। তারা জিজ্ঞাসা করলেন, তারপর কে? তিনি বললেন, এমন মুমিন, যে নির্জনে কোনো পাহাড়ের উপত্যকায় বাস করে, সে আল্লাহকে ভয় করে এবং মানুষকে তার অনিষ্ট থেকে নিরাপদ রাখে। -সহিহ বোখারি : ২৭৮৬

মানুষের উত্তম-অনুত্তম কিংবা সর্বোত্তম হওয়ার বিষয়টি আপেক্ষিক। তবে প্রকৃত উত্তম মানুষ তারাই, যারা কোরআন-হাদিস তথা আল্লাহ তার রাসুলের দৃষ্টিতে উত্তম। বর্ণিত হাদিসে এরই একটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হয়েছে।

মুমিনের কিছু গুণ হিসেবে হাদিসে আরও বলা হয়েছে, প্রতিবেশীর সঙ্গে উত্তম আচরণ করা মুমিনের গুণ। হজরত আবু শুরাইহ খুজায়ি (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী কারিম (সা.) বলেছেন, আল্লাহর কসম, সে মুমিন নয়, আল্লাহর কসম সে মুমিন নয়, আল্লাহর কসম, সে মুমিন নয়। জানতে চাওয়া হলো, কে ইয়া রাসুলুল্লাহ! তিনি বললেন, যার অনিষ্ট ও উৎপীড়ন থেকে তার প্রতিবেশী নিরাপদ থাকে না। -সহিহ বোখারি : ৬০১৬

হাদিসের উপস্থাপনা থেকেই বোঝা যাচ্ছে যে, আল্লাহর রাসুল (সা.) কী প্রতাপ নিয়ে বিষয়টি ইরশাদ করেছেন। কত কঠিন ছিল বলার ভাব! সুতরাং প্রতিবেশীকে নিরপাদে রাখা, তার সঙ্গে উত্তম আচরণ করা মুমিন হিসেবে আমাদের কর্তব্য।

সহিহ মুসলিম শরিফের এক হাদিসে এসেছে, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, সে জান্নাতে যাবে না, যার অনিষ্ট থেকে তার প্রতিবেশী নিরাপদ থাকে না। -সহিহ মুসলিম : ৪৬

আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর এমন প্রতাপান্বিত ইরশাদ, আর এমন ভয়াবহ হুঁশিয়ারির পরও প্রতিবেশীর সঙ্গে আচরণ সুন্দর করা সত্যিই বড় দুর্ভাগ্যের কথা।

নির্মাণ কাজসহ চলাফেরায় অসুবিধা সৃষ্টি এবং উচ্চ আওয়াজে গান-বাদ্য বা সঙ্গীত ছেড়ে দেওয়া কতটা অন্যায়মূলক কাজ- এটা সহজেই অনুমেয়। এক কথায় প্রতিবেশীর আরাম ও বিশ্রামের ব্যাঘাত ঘটে, এমন কাজ অন্যায়। এগুলো থেকে বিরত থাকা।

হাদিসে আরও ইরশাদ হয়েছে, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী কারিম (সা.) বলেছেন, সে তো মুমিন নয়, যে নিজে তৃপ্তিভরে আহার করে, আর তার প্রতিবেশী থাকে অনাহারে, অর্ধাহারে। -আল আদাবুল মুফরাদ : ১১২

বর্ণিত হাদিসসমূহে মুমিনের চরিত্রের মহাত্ম্য ফুঁটে উঠেছে। আর এমন মুমিন সম্পর্কে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, নিশ্চয়ই মুমিন তার চরিত্রের সৌন্দর্য দিয়ে রোজাদার তাহাজ্জুদগুজার ব্যক্তির মর্যাদা লাভ করতে পারে। -সুনানে আবু দাউদ : ৪৭৯৮

অর্থাৎ আল্লাহর যে বান্দা নিজের আমল-আকিদা, কর্ম ও বিশ্বাসের ক্ষেত্রে সাচ্চা মুমিন হবে, সেই সঙ্গে সুন্দর চরিত্রের অধিকারী হবে, সে যদিও রাতে বেশি নফল নামাজ পড়ে না, বেশি রোজা রাখে না, তবুও সে তার সুন্দর চরিত্রের কারণে ওই ব্যক্তির মর্যাদা লাভ করবে, যে দিনে রোজা রাখে, আর রাতভর নফল নামাজ আদায় করে। -মাআরিফুল হাদিস

;

যে পাথরে দাঁড়িয়ে হজের ঘোষণা দেওয়া হয়

মাকামে ইবরাহিম, ছবি: সংগৃহীত

পবিত্র কাবাঘরের নির্মাণ কাজ শেষ হলে আল্লাহতায়ালা হজরত ইবরাহিম (আ.)-কে মানুষের মধ্যে হজের ঘোষণা দেওয়ার নির্দেশ দেন। যার বর্ণনা সুরা হজের ২৭ নম্বর আয়াতে রয়েছে।

নির্দেশ অনুসারে হজরত ইবরাহিম (আ.) হজের ঘোষণা দেন। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, হজরত ইবরাহিম (আ.) পাথরের ওপর দাঁড়িয়ে ঘোষণা দিলেন, হে মানবজাতি! তোমাদের ওপর হজ ফরজ করা হয়েছে। এই আহবান পুরুষের মেরুদণ্ড এবং নারীর জরায়ুতে বিদ্যমান সব ব্যক্তি শুনতে পায়। যারা মুমিন এবং যারা হজ করবে বলে আল্লাহর জ্ঞানে ছিল তারা ‘লাব্বাইক’ বলে সাড়া দেয়। -ফাতহুল বারি : ৬/৪০৬

মাকামে ইবরাহিম মূলত সেই সম্মানিত পাথর, যার ওপর দাঁড়িয়ে হজরত ইবরাহিম (আ.) কাবাঘর নির্মাণ করেন; বিশেষত যখন কাবাঘরের দেয়ালের ওপরের অংশ গাঁথতে হয়েছিল। কাবাঘর নির্মাণ শেষ হলে তিনি এখানে দাঁড়িয়েই মানুষের মাঝে হজের ঘোষণা দিয়েছিলেন। -শিফাউল গিরাম : ১/২০৩

আল্লামা ইবনে কাসির (রহ.) মাকামে ইবরাহিম সম্পর্কে ইমাম বোখারি (রহ.)-এর সূত্রে লেখেন, ‘ইবরাহিম ও ইসমাঈল (আ.) কাবাঘর নির্মাণ করছিলেন, তখন তারা ঘরের তুলনায় কাবার ভিটি উঁচু করেন। ইসমাঈল (আ.) পাথর নিয়ে আসছিলেন এবং ইবরাহিম (আ.) তা দিয়ে নির্মাণ করছিলেন। যখন দেয়াল উঁচু হয়ে গেল, তখন ইসমাঈল (আ.) ইবরাহিম (আ.)-এর জন্য এই পাথরটি নিয়ে এলেন, যেন তিনি তার ওপর দাঁড়িয়ে নির্মাণকাজ করতে পারেন।

মাকামে ইবরাহিমের ওপর দুটি পায়ের ছাপ রয়েছে, ছবি: সংগৃহীত তারা উভয়ে দোয়া করেন, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের পক্ষ থেকে কবুল। নিশ্চয়ই আপনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী।’ -সুরা বাকারা : ১২৭

আল্লাহ তাদের দোয়াকে এমনভাবে কবুল করেন যে হজরত ইবরাহিম (আ.) যে পাথরের ওপর দাঁড়িয়ে কাবাঘর নির্মাণ করেন তাকে অমরত্ব দান করেন। ফলে কেয়ামত পর্যন্ত মক্কায় আসা মুসল্লিরা তাওয়াফ শেষে মাকামে ইবরাহিমকে সামনে রেখে দুই রাকাত নামাজ আদায় করবে। -তাফসিরে ইবনে কাসির : ১/১৬১

মাকাম অর্থ অবস্থান বা দাঁড়ানোর স্থান। মাকামে ইবরাহিম অর্থ ইবরাহিম (আ.)-এর দাঁড়ানোর স্থান। পবিত্র কাবা চত্বরের বিশেষ স্থানকে মাকামে ইবরাহিম বলা হয়, যা হাজরে আসওয়াদ থেকে সাফা-মারওয়ার দিকে ১৪ মিটার এবং জমজম কূপ থেকে ১০.৫ মিটার দূরে অবস্থিত।

মাকামে ইবরাহিমের ওপর দুটি পায়ের ছাপ রয়েছে। ইমাম তাবারি (রহ.) বলেন, আল্লাহ মক্কা নগরীতে ইবরাহিম (আ.)-এর একাধিক স্মৃতি সংরক্ষণ করেছেন। তার একটি হলো- সেই পাথর, যার ওপর ইবরাহিম (আ.) দাঁড়িয়ে ছিলেন। -তাফসিরে তাবারি : ৪/১১

আল্লাহতায়ালা মাকামে ইবরাহিমকে বিশেষ মর্যাদা দান করেছেন। যার কয়েকটি হলো-

আল্লাহর নিদর্শন : পবিত্র কোরআনে মাকামে ইবরাহিম আল্লাহর নিদর্শন হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘তাতে অনেক সুস্পষ্ট নিদর্শন আছে, যেমন মাকামে ইবরাহিম। আর যে ব্যক্তি সেখানে প্রবেশ করে সে নিরাপদ।’ -সুরা আলে ইমরান : ৯৭

নামাজের স্থান : পবিত্র কোরআনে মাকামে ইবরাহিমকে নামাজের স্থান বানানোর ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা মাকামে ইবরাহিমকে নামাজের স্থান হিসেবে গ্রহণ করো।’ -সুরা বাকারা : ১২৫

তাওয়াফের পর নামাজ : তাওয়াফের পর মাকামে ইবরাহিমকে সামনে রেখে নামাজ আদায় করা সুন্নত। ইবনে ওমর (রহ.) বলেন, ‘যখন রাসুলুল্লাহ (সা.) মক্কায় আগমন করেন, তখন তিনি সাতবার তাওয়াফ করেন এবং মাকামে ইবরাহিমের পেছনে দুই রাকাত নামাজ আদায় করেন।’ -সুনানে নাসায়ি : ২৯৩০

;

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *