সারাদেশ

মানিকগঞ্জে অগ্নিদগ্ধ হয়ে নারীর মৃত্যু

ডেস্ক রিপোর্ট: কর্পোরেট কোম্পানিতে চাকরির দেয়ার কথা বলে নরসিংদীর রোমেল মিয়াকে লিবিয়ায় নিয়ে যায় একটি চক্র। এরপর নিয়ে গিয়ে করা হয় জিম্মি। মুক্তিপণ বাবদ দাবি করে ১২ লাখ টাকা। পরিবারের মুক্তিপণ দিতে অক্ষম হওয়ায় উপায় না দেখে নরসিংদী পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) দ্বারস্থ হয় রোমেল মিয়ার পরিবার।

অভিযোগ পেয়ে ঘটনার তদন্তে নামে সরকারি এই সংস্থার কর্মকর্তারা। সংঘবদ্ধ চক্রের মূলহোতা সোহেল (২৪) সহ ৩ জনকে গ্রেফতার করে পিবিআই।

মঙ্গলবার (৪ জুন) দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে পিবিআই প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান পিবিআই নরসিংদী জেলার পুলিশ সুপার (অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) মো. এনায়েত হোসেন মান্নান।

গ্রেফতারকৃতরা হলো, সোহেল, ওয়াসিম হোসেন ও আকারিছ মিয়া।

এনায়েত হোসেন মান্নান বলেন, ৪ লাখ টাকার চুক্তিতে রোমেলকে লিবিয়া নেওয়ার চুক্তি হয়। গত ৬ মার্চ ২ লাখ টাকা পরিশোধ করে এবং ১৪ মার্চ ১ লাখ ২৪ হাজার টাকার সমপরিমাণ ডলার নিয়ে রহমত উল্লাহ ও বিল্লাল মিয়ার সঙ্গে রওনা দেন রোমেল। ট্যুরিস্ট ভিসায় দুবাই-মিশর হয়ে রোমেলকে নিয়ে যাওয়া হয় লিবিয়ায়।

সেখানে নিয়ে রোমেলকে আটকে রেখে স্বজনদের ভিডিও কলে রেখে ১২ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। গত ১০ এপ্রিল রোমেলের ভাই বাবুল ও তার স্বজনরা পিবিআই কার্যালয়ে এসে বিষয়টি জানায়। টাকা না পাঠালে কখনো বলে হাত কেটে ফেলবে, কখনো বলে মেরে ফেলবে। লিবিয়া থেকে বারবার ভয় দেখায় ঘটনাটি পুলিশকে জানালে ভিকটিম রোমেলকে হত্যা করা হবে।

পরে পিবিআই’ তাদের তৎপরতা গোপন রেখে জিম্মিকারীদের দেওয়া চারটি বিকাশ নম্বরে দেড় লাখ টাকা পাঠানো হয়। চক্রটি টাকা রিসিভ করে আরও টাকা পাঠাতে তাগাদা দেয়। এই পর্যায়ে পিবিআই ৩টি টিম একযোগে ঢাকার দোহার, নবাবগঞ্জ, কিশোরগঞ্জের ভৈরব এবং নরিসিংদীর রায়পুরা থানা এলাকায় অভিযান চালানো হয়। এ সময় ওয়াসিম হোসেন ও আকারিছ মিয়াকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় ৯টি মোবাইল সেট, মুক্তিপণের দেড় লাখ টাকা ও বিকাশ সিমসহ মোট ২২টি সিম কার্ড জব্দ করা হয়।

এ সময় পিবিআই তথ্য পায়, জিম্মিকারীদের মূলহোতা সোহেল বাংলাদেশে রয়েছে। সে যাতে পালাতে না পারে সেজন্য সকল বিমান বন্দর ও স্থলবন্দরে চিঠি দেওয়া হয়। একপর্যায়ে গত ১৯ এপ্রিল সোহেল দেশ থেকে দুবাই পালিয়ে যাওয়ার জন্য হযরত শাহজালাল বিমান বন্দরে গেলে ইমিগ্রেশন পুলিশ তাকে আটক করে। পরে সেখান থেকে তাকে গ্রেফতার করে পিবিআই।

সোহেল রিমান্ডে অনেক তথ্য প্রদান করে। পিবিআই’র তৎপরতায় সোহেলের মোবাইল দিয়ে লিবিয়ায় অবস্থানরত চক্রের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলার পর রোমেলকে ছাড়তে রাজি হয়।

অনেক নাটকীয়তার পরে সোহেলের কথামতো লিবিয়ার সদস্যরা রোমেলকে একদিন ঘুরিয়ে রাত ৩টায় ত্রিপলীতে রহমত উল্লাহর কাছে কাছে পৌঁছে দিয়ে ভিকটিমকে ছেড়ে দেওয়ার দায়িত্ব দেয়। রোমেলকে ছেড়ে দিলে তাকে ত্রিপলী থেকে দেশে আনার জন্য পাসপোর্ট ভিসা ও বিমান টিকেটের জটিলতা দেখা দেয়। পিবিআই লিবিয়ার অ্যাম্বাসিতে একাধিকবার কথা বলে অনেক চেষ্টার পর গত ২৪মে রোমেলকে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়।

তিনি বলেন, ভিকটিম রোমেল লিবিয়াতে সে ছাড়া আরও ১১ জন বাংলাদেশীকে জিম্মি অবস্থায় দেখেছেন বলে জানায়, বিষয়টি যাচাই করা হচ্ছে। এছাড়া তদন্তে প্রাপ্ত ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও ব্যাপক আর্থিক ট্রানজেকশন যাচাই করা হচ্ছে।

পিবিআই’র তৎপরতা ও লিবিয়ায় অবস্থাররত বাংলাদেশ দূতাবাসের চেষ্টায় রোমেলকে দেশে ফেরানো সম্ভব হয় বলেও জানান তিনি।

ভুক্তভোগী রোমেল বলেন, বিল্লাল-রহতউল্লা আমাকে ট্যুরিস্ট ভিসায় দুবাই-মিশর হয়ে লিবিয়া নিয়ে যায়। সেখানে দিনের পর দিন রেখে আমাকে নির্যাতন করা হয়। বাড়ির লোকজনকে ভিডিওতে রেখে ব্যাপক মারধর করে ১২ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়।

সেখানে কয়েকজন লোক ছিল, একজন যে প্রধান তাকে সবাই বেয়াই বলে ডাকতো। এছাড়া, দেলোয়ার, আরিফ, রুহুল, তানভীর, সাইফুল, আবুল, হৃদয় খান, তানভীর নামে আরও কয়েকজন ছিল। তারা বলতো ১২ লাখ টাকা দিবি নয়তো মেরে ফেলব। তারা বার বার টাকা দেওয়ার জন্য তাড়া দিতো, সময় দিতে রাজি না। তারা বলতো তোর মতো অনেক রোমেল হারায়ে গেছে, তোকেও মেরে ফেলবো।

তিনি বলেন, কোনসময় কল্পনা করি নাই বাংলাদেশের মুখ দেখব। আমি ফিরে আসতে পারছি এজন্য পিবিআইকে ধন্যবাদ।

রোমেলের বাবা আসাদ বলেন, যখন আমার ছেলে যায় তখন রমজান মাস ছিল। আমরা গরীব মানুষ, ভিটা বিক্রি করে ছেলেকে বিদেশ পাঠাইছিলাম, পরে যখন আবার টাকা চায় আমরা কই থেকে টাকা দিবো? ছেলে ফিরে আসছে, এজন্য আমি খুশি।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *