সারাদেশ

দীর্ঘদিন পর গতিময় রাষ্ট্রীয় কোম্পানি বাপেক্স

ডেস্ক রিপোর্ট: দীর্ঘদিন পরে গতিতে ফিরেছে রাষ্ট্রীয় তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলন কোম্পানি বাপেক্স। প্রতিষ্ঠানটির ৪টি রিগ একসঙ্গে সচল রয়েছে, খুব কম সময় এভাবে ৪টি রিগ সচল দেখা গেছে।

কখনও লোকবল সংকট, কখনও আবার পরিকল্পনার অভাবে বাপেক্সের রিগগুলো বেকার পড়ে থাকতো। কিন্তু কয়েক মাস ধরে ৪টি রিগেই ব্যস্ত সময় পার করছে। একটি কাজ শেষ না করতেই আরেকটি কাজের ক্ষেত্র প্রস্তুত করা হচ্ছে। বিজয়-১১ রিগটি তিতাস ১৪ কূপের ওয়ার্কওভার শেষ করেছে সম্প্রতি। রশিদপুর-৫ কূপের ওয়ার্কওভারে ছিল বিজয়-১৮ রিগ। একই সময়ে কৈলাশটিলা-৮ এ ছিল বিজয় -১২ রিগ। কৈলাশটিলার-৮ এর ডিএসটি শেষ কূপটি এখান থেকে দৈনিক ২১ মিলিয়ান ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যাবে। আর বেগমগঞ্জ-৪ এ খনন কাজে রয়েছে বিজয়-১০ রিগ। বেগমগঞ্জ খনন কাজ শেষ হতে আরও মাস খানেক সময় লাগতে পারে বলে বাপেক্স সুত্র জানিয়েছে।

পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, রিগগুলোর কাজের চেইন তৈরি করা হয়েছে। কোনটিই আর বেকার বসে থাকবে না। দ্বিতীয় এবং তৃতীয় ধাপে কোনটি রিগ কোথায় যাবে তারও সিডিউল প্রস্তুত করা হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপে কৈলাশটিলা-৮ থেকে রিগ যাবে সিলেটের জকিগঞ্জ, তিতাস-১৪ নম্বর কূপে থাকা রিগ যাবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ এ। রশিদপুর-৫ থেকে রিগ যাবে সিলেট-৭ নম্বর কূপে। আর বেগমগঞ্জ-৪ নম্বর কূপে কাজ শেষ হলে ওই রিগটি যাবে জামালপুর-১ এ। আইডিকো রিগ মেরামতের কাজ শেষ পথে। মেরামত হয়ে আসলে আগামী মাস থেকে ৫টি রিগেই একসঙ্গে সচল দেখতে পাবেন।

এতোদিন যে লোকবল সংকটের কথা বলে রিগগুলো বসিয়ে রাখা হতো, সেই সংকট দূর হলো কিভাবে। এমন প্রশ্নের জবাবে পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যান বলেন, আমরা আমাদের নিজস্ব লোকবলের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করেছি। পাশাপাশি কিছু লোক আউটসোর্সিং করেছি। আমরা আমাদের সর্বোচ্চটা দিতে সচেষ্ট রয়েছি। আমরা ২০২৮ সাল পর‌্যন্ত কি কাজ করবো তার একটি সিডিউল তৈরি করেছি। চলমান ৪৮ কূপ খনন প্রকল্পের জন্য নতুন করে আরও ১০০ কূপ খনন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। ২০২৬ সালে তহবিল লাগবে এখনই চিঠি চালাচালি শুরু করেছি।

তিনি বলেন, ১০০ কূপ খনন প্রকল্পে ২০২৬ সাল থেকে ২০২৮ সালের মধ্যে শেষ হবে। এতে ২০ হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন হবে। সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে যোগান দেওয়া হবে ৭ হাজার কোটি টাকা। সরকারের কাছে প্রত্যেক বছরে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা করে অর্থায়ন চাওয়া হয়েছে।

দেশে গ্যাস সংকটের জন্য অনুসন্ধান স্থবিরতাকেই দায়ী করে আসছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা। পেট্রোবাংলার কয়েক দশকের ঢিলেমির কারণে অনেকেই সমালোচনায় মুখর ছিলেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা। তবে সেইদিন এখন বদলে যেতে শুরু করেছে। পেট্রোবাংলার খোলনচে বদলে দিয়ে পেট্রোবাংলাকে বুলেট গতি দিতে যাচ্ছেন বর্তমান চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার। একদিকে যেমন গতিময় হয়েছে, অন্যদিকে নতুন মাত্রাও যুক্ত হয়েছে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে।

এতোদিন তেল-গ্যাস অনুসন্ধান একটি নির্দিষ্ট গন্ডির মধ্যে আটকে ছিল বাংলাদেশ। আরও ছোট করে বলতে গেলে সুরমা বেসিন তথা, সিলেট থেকে শুরু করে মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, ফেনী, নোয়াখালী এবং ভোলার মধ্যে আটকে ছিল বাংলাদেশ। অন্যান্য এলাকায় কিছু অনুসন্ধান কার‌্যক্রম হলেও তার পরিমাণ নগণ্য বলাই যায়। সেখানেও আমূল পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে পেট্রোবাংলা।

বাংলাদেশে প্রচুর গ্যাস প্রাপ্তির সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। ১৯৮৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত ৯টি আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে তেল-গ্যাস সম্পদের সম্ভাবনা নিরূপণে কাজ করে। কিছু সংস্থা সারাদেশে এবং কিছু সংস্থা বিশেষ এলাকায় অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনা করে। ২০০১ সালে ইউনাইটেড স্টেটস জিওলজিক্যাল সার্ভে (ইউএসজিএস) ও পেট্রোবাংলা, হাইড্রোকার্বন ইউনিট ও নরওয়েজিয়ান পেট্রোলিয়াম ডাইরেক্টরেট সমীক্ষা পরিচালনা করে। ইউএসজিএস-পেট্রোবাংলার প্রতিবেদনে সর্বনিম্ন ৮ দশমিক ৪, গড় ৩২ দশমিক ১ ও সর্বোচ্চ ৬৫ দশমিক ৭ টিসিএফ (ট্রিলিয়ন কিউবিক ঘনফুট) গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা ব্যক্ত করা হয়েছে। অপরদিকে হাইড্রোকার্বন ইউনিট ও নরওয়েজিয়ান পেট্রোলিয়াম ডাইরেক্টরেট সর্বনিম্ন ১৯, গড় ৪২ ও সর্বোচ্চ ৬৪ টিসিএফ গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা ব্যক্ত করেছে।

বাংলাদেশে মোট ২৯টি গ্যাস ফিল্ড আবিস্কৃত হয়েছে। ২০ টি গ্যাস ফিল্ডের ১১৪টি কূপ দিয়ে দৈনিক (জুন ৩, ২০২৪) ২০৩২ মিলিয়ন গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছে। এক সময় ২৮০০ মিলিয়ন পর‌্যন্ত গ্যাস উত্তোলন করা হয়েছে। মজুদ কমে আসায় অনেক কূপেই উৎপাদন কমে এসেছে। ৫টি গ্যাস ফিল্ড (রূপগঞ্জ, কামতা, ফেনী, ছাতক ও সাঙ্গু) পরিত্যাক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। ৩টি গ্যাস ফিল্ড (কুতুবদিয়া, ভোলা ও জকিগঞ্জ) বন্ধ রয়েছে গ্যাস সঞ্চালন ব্যবস্থা না থাকায়।

বাংলাদেশের সফলতার হার উচ্চ হলেও এখন তিমিরেই মনে করেন অনেকে। তবে সেই ধারা ভেঙ্গে গতিতে ফিরেছে পেট্রোবাংলা। ধারাবাহিকতা রক্ষা করা গেলে গ্যাসের মজুদ ও উৎপাদন বৃদ্ধিতে আশার আলো দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। বাংলাদেশের ভূ-খন্ডে প্রথম কূপ খনন করা হয় ১৯১১ সালে। ১১২ বছরে অনুসন্ধান কূপ খনন করা হয়েছে কমবেশি ৯৯টি। আর ৩ বছরে ৭০টি অনুসন্ধান কূপ খনন করতে চায় পেট্রোবাংলা।

বাপেক্সের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, নিকট অতীতে কখনও বাপেক্স এমন গতিশীল ছিল না। পেট্রোবাংলার বর্তমান চেয়ারম্যানের চাপে অনেকের দম ফেলার সময় নেই। খুবই ব্যস্ত সময় পার করছি আমরা। ১০০ কূপ খনন প্রকল্পের ৫৬টি খনন করবে বাপেক্স। কাজগুলো করতে পারলে একদিকে যেমন গ্যাসের মজুদ বাড়বে, তেমনি আমাদের লোকজন দক্ষ হয়ে উঠবে। যা দেশের জন্য আরেকটি সম্পদে পরিণত হবে। তবে পেট্রোবাংলার এমন গতি অনেকে গাত্রদাহন শুরু করেছে। বিশেষ করে কিছু বিদেশি কোম্পানি ও তাদের এজেন্টরা ষড়যন্ত্র শুরু করেছেন।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *