সারাদেশ

চতুর্থ ধাপের উপজেলা নির্বাচনে ভোট পড়েছে ৩৪.৩৩ শতাংশ: সিইসি

ডেস্ক রিপোর্ট: সরকার নতুন করে টেলিযোগাযোগ আইন করছে। টেলিযোগাযোগ আইন ২০২৪ এর খসড়া তৈরি করা হয়েছে। এ বিষয়ে অংশীজনদের মতামত চাওয়া হয়েছে। তবে এরই মধ্যে যে খসড়া আইন তৈরি করা হয়েছে, তা নিয়ে খাত সংশ্লিষ্টদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, টেলিযোগাযোগ আইন ২০২৪ খসড়ায় মন্ত্রী ও সরকার কর্মকর্তা বা পরামর্শকদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ক্ষতিপূরণ মামলা দায়ের করা যাবে না। অর্থ্যাৎ এ বিষয়ে কেউ আইনের আশ্রয় নিতে পারবে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি সংবিধানের লঙ্ঘন।

নতুন টেলিযোগাযোগ আইনের খসড়ার ত্রয়োদশ অধ্যায়ের বিবিধ এর ৭৩ এর ১ ধারায় বলা হয়েছে, এই আইন বা তদধীন প্রণীত প্রবিধান বা প্রদত্ত কোনো আদেশ বা নির্দেশ প্রদানের জন্য বা উহার অধীনে সরল বিশ্বাসে কৃত বা কৃত বলিয়া আপাতদৃষ্টে বিবেচনা করা যায় এমন কিছুর কারণে কোনো ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্থ হইলে তিনি মন্ত্রী বা সরকারের কোনো কর্মচারী বা কমিশনের চেয়ারম্যান বা অন্য কোনো কমিশনার বা কর্মকর্তা ও কর্মচারী বা পরামর্শকের বিরুদ্ধে কোনো ক্ষতিপূরণের মামলা দায়ের করিতে পারিবেন না।

২ ধারায় বলা হয়েছে, লাইসেন্সধারীর কোনো কাজ বা কাজ হইতে বিরত থাকার ফলে সৃষ্ট কোনো ক্ষতি বা সম্ভাব্য ক্ষতির জন্য সরকার বা কমিশন দায়ী থাকবে না।

টেলিফোনে বিরক্ত করার দণ্ড

একটি ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি যুক্তিসঙ্গত কারণ ব্যতীত যদি অন্য কোনো ব্যক্তির নিকট এইরূপে বারবার টেলিফোন করেন যে, উহা উক্ত অন্য ব্যক্তির জন্য বিরক্তিকর হয় বা অসুবিধার সৃষ্টি করে, তাহা হলে এইরূপে টেলিফোন করা একটি অপরাধ হইবে বা উহার জন্য দোষী ব্যক্তি অনধিক এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড এবং উহা অনাদায়ে অনধিক ৬ মাস কারাদণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।

টেলিফোনে আড়িপাতার দণ্ড

কোনো এক বা একাধিক ব্যক্তি ভাব বা তথ্যের বিনিময়কালে বা আলাপকালে যদি অন্য কোনো ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে টেলিযোগাযোগ যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে আড়িপাতেন, তাহা হইলে এই কাজ হইবে একটি অপরাধ এবং তজ্জন্য তিনি অনধিক ২ বৎসর কারাদণ্ডে বা অনধিক ৫ কোটি টাকা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন।

তবে শর্ত থাকে যে, ধারা ৭৬ এর অধীন সরকার হইতে ক্ষমতাপ্রাপ্ত গোয়েন্দা সংস্থা, তদন্তকারী সংস্থা বা আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে নিয়োজিত সংস্থার কোনো কর্মকর্তার ক্ষেত্রে এই ধারার বিধানাবলি প্রযোজ্য হইবে না। তবে এছাড়াও বিভিন্ন আইন লঙ্ঘনে দায়ে বিভিন্ন ধরনের দণ্ড ও বিশাল অংকের টাকার জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।

টেলিযোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও সাংবাদিক রাশেদ মেহেদী বলেন, আইনের এ ধরনের ধারা বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের বড় বাধা হবে। এখন যেসব মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি টেলিযোগাযোগ খাতে আছে, তারাও বিনিয়োগ প্রত্যাহার করতে পারে। আদালতে আইনগত প্রতিকার অধিকার খর্ব করা সংবিধানের লঙ্ঘন।

অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশের (এমটব) মহাসচিব লে. কর্নেল (অব:) মোহাম্মদ জুলফিকার বলেন, ড্রাফট টেলিযোগাযোগ আইনের খসড়ায় সন্নিবেশিত বেশ কিছু বিষয়ে আমাদের পর্যবেক্ষণ/ভিন্নমত আছে, যা আমরা সরকারের কাছে ইতোমধ্যেই উপস্থাপন করেছি। আমরা আশাকরি প্রেরিত পর্যবেক্ষণগুলো সরকার ইতিবাচক দৃষ্টিতে মূল্যায়ন করবে এবং চূড়ান্তভাবে আইনটি জারির সময় বিষয়গুলো সঠিকভাবে প্রতিফলিত হবে।

টেলিযোগাযোগ আইন ২০২৪ এর খসড়া এমটব ও আইএসপিএবি’র সাথে পরামর্শ করা হয়েছে। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ আইন, ২০০১ এর আগে ২০০৬ ও ২০১০ সালে দুইবার সংশোধন করা হয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, আমাদের নতুন টেলিযোগাযোগ আইনের মাধ্যমে বিনিয়োগ আকর্ষণের কথা বলা হচ্ছে। তবে খসড়ায় যে ধরনের ধারা রাখা হচ্ছে তাতে বিশেষ করে বিদেশি বিনিয়োগাকরীদের মধ্যে শঙ্কা তৈরি করবে, যা বিনিযোগ বাধাগ্রস্থ করবে।

টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক অবশ্য বলেছেন, আইনটির প্রাথমিক খসড়া এটি। এটি চূড়ান্ত করার আগে এতে সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডাদের সাথে আলোচনা চলছে এবং জনগণের মতামত নেওয়া হচ্ছে। আইনটির মাধ্যমে বিনিয়োগ আকর্ষণ, কর্মসংস্থান তৈরি, ব্যবসার সুযোগ তৈরি এবং আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারিক দিক দ্রুত করাই এর উদ্দেশ্য।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *