সারাদেশ

ক্যাম্প পরিস্থিতি: নিরাপত্তা ও প্রত্যাবাসনের প্রেষণা

ডেস্ক রিপোর্ট: রোহিঙ্গা সংকট ক্যাম্প পরিস্থিতি: নিরাপত্তা ও প্রত্যাবাসনের প্রেষণা

ছবি: বার্তা২৪.কম

মিয়ানমারের আভ্যন্তরীণ সংঘাত ও রাখাইনে আরাকান আর্মির (এএ) সাথে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সংঘর্ষ চলমান থাকায় সেখানে শান্তি ও স্থিতিশীলতার সম্ভাবনা এখনও অনিশ্চিত। এই বাস্তবতায় রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে কোনো আশার আলো দেখা যাচ্ছে না। চলমান পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গা সমস্যা দীর্ঘায়িত হওয়ার পাশাপাশি আরও জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে।

গত সাত বছর ধরে বাংলাদেশ মানবিক বিবেচনায় রোহিঙ্গাদের বোঝা টেনে চলছে। রোহিঙ্গাদের ত্রাণ সহায়তা কমে আসছে এবং রোহিঙ্গাদের কারণে বাংলাদেশের নিরাপত্তা হুমকি সৃষ্টি হচ্ছে। রোহিঙ্গারা দলগত সশস্ত্র তৎপরতা, অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার, মাদক, মানবপাচার, চাঁদাবাজি, অপহরণ বাণিজ্য ও দোকান দখল থেকে শুরু করে বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ২০২৩ সালে ৬৪ জন ও ২০২৪ সালের মে মাস পর্যন্ত ৩৩ জন হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে। রোহিঙ্গাদের একটা বড় অংশ মাদকের পাশাপাশি অস্ত্র চোরাকারবারেও জড়িত। এই মাদক চোরাকারবারের সঙ্গে রয়েছে আন্তর্জাতিক যোগাযোগ। এর ফলে মাদকাসক্তি তরুণ প্রজন্মকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেওয়ার পাশাপাশি ক্যাম্পের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বাধা সৃষ্টি করছে।

রোহিঙ্গারা বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে ক্যাম্পে নানা ধরনের অপরাধ ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাচ্ছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নারী ও শিশুরা ব্যাপক অনিরাপত্তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। বিশেষ করে নারীরা যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নারী ও শিশু পাচারকারীরা সক্রিয়। ক্যাম্পের জনঘনত্বের কারণে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত সদস্যদের পক্ষে সবসময় নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না। রোহিঙ্গারা ক্যাম্প থেকে বেরিয়ে বিভিন্ন স্থানে কর্মসংস্থান করছে আর ক্যাম্পগুলো মানব পাচার, মাদক চোরাচালান, জঙ্গি নিয়োগসহ নানা অপরাধের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে এবং স্থানীয়দের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে যাচ্ছে।

কক্সবাজারের ৩২টি ক্যাম্পেই অপরাধমূলক কাজকর্ম চলছে। নিরাপত্তা বাহিনী ১৫ মে মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান স্যালভেশন আর্মির (আরসা) ক্যাম্পে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধার এবং আরসার দুই সদস্যকে গ্রেফতার করে। রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আরসা আধিপত্য বিস্তার কোন্দলসহ খুন, অপহরণ, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তাদের বিরুদ্ধে হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ড পরিচালনা ও পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে অস্ত্র-গোলাবারুদ সংগ্রহ করে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নাশকতা সৃষ্টির অভিযোগ রয়েছে।

নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা ১৯ মে উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন পাহাড়ে আরসার আস্তানায় অভিযান চালিয়ে শীর্ষ চার সদস্যকে গ্রেফতার ও বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করে। মিয়ানমারের অভ্যন্তরে এ এ’র সাথে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর চলমান সংঘাতে কারণে রোহিঙ্গাদের সশস্ত্র সংগঠন আরসা, আল ইয়াকিন, আরএসওসহ বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্যরা ক্যাম্পে অবস্থান করছে। ক্যাম্পে অবস্থানকারী এসব সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্যরা অস্থিরতা তৈরি করতে এবং নাশকতার উদ্দেশে ক্যাম্পে একের পর এক আগুন লাগাচ্ছে বলে সাধারণ রোহিঙ্গারা মনে করে।

২৫ মে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে তিন শতাধিক বসতি আগুনে সম্পূর্ণ পুড়ে যায়। একইসঙ্গে আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয় ২ শতাধিক বসতি আর অর্ধশত দোকানপাট। ১২ মে কক্সবাজারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যরা উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করে। তারা ক্যাম্প পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ, রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আলাপ এবং নানা কার্যক্রম ঘুরে দেখেন। রোহিঙ্গা প্রতিনিধিরা তাদের কাছে মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার আগ্রহের কথা জানায়। তারা ক্যাম্প ইনচার্জদের সাথে আলোচনা করে ও এই সংকট নিরসনের উপায়গুলো জানার চেষ্টা করে এবং এই সংকট নিরসনে সুপারিশমালা প্রণয়ন করবেন বলে জানায়।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অনেক সন্ত্রাসী দল এবং তাদের নেতারা প্রভাব প্রতিপত্তি খাটিয়ে বিভিন্ন ধরনের চোরাকারবারের মাধ্যমে প্রচুর অর্থ উপার্জন করে আরাম আয়েশে জীবন যাপন করছে। তাদের অনেকে এই সুবিধাজনক পরিস্থিতি ছেড়ে মিয়ানমারে ফিরে যেতে অনিচ্ছুক। তারা বিভিন্ন সময় প্রত্যাবাসন বিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত। এদেরকে চিহ্নিত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া জরুরি।

রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে দ্রুত ক্যাম্পের জনঘনত্ব কমানো দরকার। বর্তমান পরিস্থিতিতে আগুন নিয়ন্ত্রণ ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে নানা ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। রোহিঙ্গাদেরকে ভাসানচরে স্থানান্তর করা গেলে এবং ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের জন্য আরও আবাসন তৈরি করা হলে বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। ভাসানচরে রোহিঙ্গা স্থানান্তরের জন্য যে ব্যয় হবে সে জন্য দাতা দেশ ও সংস্থাগুলোর কাছে কোন অর্থ সাহায্য পাওয়া যাচ্ছে না। বাংলাদেশের একার পক্ষে এটা সামাল দেয়া দুরূহ। বাংলাদেশ রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তায় সাধ্য অনুযায়ী ব্যবস্থা নিচ্ছে। মিয়ানমারে শান্তি ফিরে আসার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না এবং রাখাইনে অশান্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে। মিয়ানমার সেনাবাহিনী সুযোগ পেলে দখলকৃত এলাকাগুলোতে আক্রমণের তীব্রতা বাড়ালে সংকট আর ও বাড়তে পারে। চলমান সংকটের রাজনৈতিক সমাধান এখনও দেখা যাচ্ছে না।

বাংলাদেশ কী করছে:

বাংলাদেশ রাখাইন ও কক্সবাজারের পরিস্থিতি এবং সংকট নিরসন ও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর উন্নতির লক্ষ্যে জাতিসংঘের সব সংস্থা, তহবিল এবং কর্মসূচিকে সুসংহতভাবে কাজ করার আহ্বান জানায়। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন দ্রুত না করা গেলে অস্থিরতা আর ও বাড়তে পারে। মিয়ানমার থেকে মাদক আসছে এবং অনেক রোহিঙ্গা মাদক কারবারে জড়িয়ে গেছে। একই সঙ্গে অস্ত্র ও হত্যায় জড়িতদেরও চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে। এদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার জন্য বাংলাদেশ কাজ করে যাচ্ছে। নিরাপত্তা বাহিনী আন্তরিকতার সাথে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করার কারণে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পরিস্থিতি এখনো শান্তিপূর্ণ এবং নিয়ন্ত্রিত। আন্তর্জাতিক সংস্থাসহ বাংলাদেশ রোহিঙ্গা ফেরত পাঠানো নিয়ে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। ক্যাম্প কর্তৃপক্ষ আগুন নিয়ন্ত্রণে আন্তরিকতার সাথে কাজ করছে। তবে ক্যাম্পের ভেতরে রাস্তার স্বল্পতা ও জায়গার অভাবে দ্রুত অগ্নিকাণ্ডের স্থানে অগ্নি নির্বাপণের গাড়ি নিতে সমস্যা হয়। এছাড়াও আগুন লাগার সম্ভাব্য কারণ অনুসন্ধান ও প্রয়োজনে দোষী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে।

ক্যাম্পকে নিরাপদ করতে নিয়মিত এপিবিএন, পুলিশ, বিজিবি ও র‌্যাব একসঙ্গে যৌথ টহল এবং জরুরি প্রয়োজনে সেনাবাহিনীও প্রস্তুত রয়েছে। ক্যাম্পে থেকে রোহিঙ্গা যাতে বাহিরে যেতে না পারে তার জন্য কেটে ফেলা কাঁটাতারের বেড়াগুলো সংস্কার ও দ্রুত মেরামতের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে তাদের নিরাপদ অবস্থান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পর্যাপ্ত সংখ্যক নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগ করেছে এবং ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের জন্য নিরাপদ বাসস্থানের ব্যবস্থা করেছে।

বাংলাদেশ প্রায় ১৩ লাখ রোহিঙ্গার পূর্ণ নাগরিক অধিকারসহ মিয়ানমারে নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবাসনের প্রচেষ্টায় ওআইসি রাষ্ট্রদূতদের সংহতি অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে। ওআইসিভুক্ত দেশগুলোর জাতিসংঘে স্থায়ী প্রতিনিধিরা রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদারতার প্রশংসা করে ও রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশের দাবির প্রতি পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করে।

বাংলাদেশ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার কার্যক্রম চলমান রেখেছে এবং কূটনৈতিক ও আইনি দুই প্রক্রিয়াতেই এগোচ্ছে। এ সমস্যা সমাধানের জন্য বাংলাদেশ কূটনৈতিক পথ অনুসরণ করছে এবং একই সাথে আন্তর্জাতিক আদালতের আশ্রয় নিয়েছে। বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা ও স্থানীয়দের জন্য ৭০০ মিলিয়ন ডলারের একটি প্রকল্প অনুমোদন করেছে বিশ্বব্যাংক। ৭০০ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে ৩১৫ মিলিয়ন ডলার অনুদান ও ৩৮৫ মিলিয়ন ডলার ঋণ। মূলত ৩১৫ মিলিয়ন ডলার অনুদানের সাথে এলাকার অবকাঠামো উন্নয়নে আরও ৩৮৫ মিলিয়ন ডলারের ঋণ দেওয়া হয়েছে। মৌলিক সেবা প্রদান এবং দুর্যোগ ও সামাজিক সহিষ্ণুতা তৈরিতে দুটি প্রকল্পের আওতায় এই অর্থ ব্যয় হবে।

চলমান প্রেক্ষাপটে করণীয়:

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তা নিশ্চিতে জনঘনত্ব কমাতে হবে। ভাসানচরে রোহিঙ্গাদেরকে স্থানান্তরের মাধ্যমে এই জনঘনত্ব কমানো সম্ভব। ভাসানচরে আরও আবাসন তৈরি করে আরও রোহিঙ্গা বসবাসের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। স্থানান্তর ও বাসস্থান নির্মাণে দাতাদেশ ও সংস্থার সহায়তা নেয়ার উদ্যোগ চলমান রাখতে হবে। ক্যাম্পে মাদক ও অস্ত্র চোরাচালান বন্ধে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা ও ক্যাম্পের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। ক্যাম্পের শৃঙ্খলা নিশ্চিতে মাঝে মাঝে সমন্বিত অভিযান পরিচালনা করতে হবে এবং এর পাশাপাশি ক্যাম্পে সার্বক্ষণিক গোয়েন্দা তৎপরতা ও নজরদারি বাড়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে।

দীর্ঘদিন বাংলাদেশে অবস্থান করার ফলে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে আগ্রহ যাতে হারিয়ে না যায় সেজন্য রোহিঙ্গাদের মধ্যে রাখাইনে ফিরে যাওয়ার প্রেষণা চলমান রাখা। রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত এনজিও ও অন্যান্য সংস্থাগুলোকে এই প্রেষণা প্রদান কার্যক্রমে সক্রিয় রাখার ব্যবস্থা নেয়া। রাখাইন রাজ্যে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে মিয়ানমারের সংঘাত বন্ধের জন্য আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সব পক্ষের চাপ অব্যাহত রাখার উদ্যোগ চলমান রাখা নিশ্চিত করা। বিশ্বব্যাংক থেকে প্রাপ্ত অর্থ সুচিন্তিতভাবে এবং পরিকল্পিত উপায়ে ব্যবহার করে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং বাংলাদেশের নিরাপত্তা ঝুঁকি কমাতে ব্যবহার করার উদ্যোগ নেয়া।

রোহিঙ্গা সংকটে বাংলাদেশ বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। এই সংকট সমাধানে বাংলাদেশ সাধ্যমতো আন্তরিকতার সাথে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বের অন্যান্য সংকটের কারণে রোহিঙ্গাদের সহায়তা যেন বাধাগ্রস্ত না হয় এবং সহায়তা যেন কমে না যায় সে জন্য আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে এই সংকটের বিষয়ে সবাইকে হালনাগাদ রাখা এবং সহায়তার নতুন উৎস সন্ধানে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সহায়তায় প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা।

রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনই এই সংকটের একমাত্র সমাধান। তাই এই সমস্যা সমাধানে সকল পক্ষকে সাথে নিয়ে সংকটের স্থায়ী সমাধান খুঁজে বের করা ও তা কার্যকরী করার উদ্যোগ চলমান রাখতে হবে। রোহিঙ্গা সংকট বাংলাদেশের জন্য একটা গুরুতর সমস্যা এবং এই সমস্যা সমাধানে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সকল পক্ষের সাথে আমাদেরকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।

লেখক: মিয়ানমার ও রোহিঙ্গা বিষয়ক গবেষক, ব্রি.জে. হাসান মো. শামসুদ্দীন, এনডিসি, এএফডব্লিউসি, পিএসসি, এমফিল (অব.)।

কাকের মাংসই খাক ঠুকরে কাক!

ছবি: বার্তা ২৪

সাংবাদিকতা জগতে একটা কথা প্রচলিত আছে, কাকের মাংস কাক খায় না। এর মানে হচ্ছে- এক সাংবাদিক কিংবা সংবাদপত্র যদি এমন কিছু করে যা সমালোচনার যোগ্য তখন অন্য সাংবাদিক বা সংবাদমাধ্যম তা নিয়ে খবর করে না, বলতে গেলে স্পিকটিই নট। যুক্তি একটাই- কাকের মাংস কাক খায় না। কেন খায় না সে প্রশ্নটি আমরা কখনোই করিনি! বাইবেলাস বলে বিবেচনা করে মেনে নিয়েছি, মেনে গেছি। ফলে সাংবাদিকের, সংবাদ মাধ্যমের অন্যায় সামনে খুব একটা কখনোই আসেনি। আনবেটা কে? এসব খবরতো আনে সংবাদমাধ্যম। সে নিজেই যদি কিপিং মাম সিদ্ধান্তে চলে যায় তাহলে কিভাবেই বা সামনে আসবে?

না… সাংবাদিকদের সেসব অন্যায়ের ঝাঁপি খুলতে বসিনি। যা কিছু জানি বা জেনেছি, তা আগেও চেপে গেছি, এখনো চেপে যাচ্ছি! মাঝে মধ্যে যে লিখিনি তা নয়, একবারতো সরাসরি এই শিরোনামেই লিখেছিলাম- এই সাংবাদিককে এবার থামতে হবে! তা নিয়ে ধকল কম যায়নি। একবার এক পত্রিকার অন্যায্য সাংবাদিকতার বিরুদ্ধে লিখে তো এই হুমকিই পেয়েছিলাম- ঢাকার রাস্তায় ট্রাকের চাকায় পিষ্ট করেই মেরে ফেলা হবে! সে হুমকি এসেছিলো এক সাংবাদিক নেতার তরফ থেকে। যাই হোক নিজের সেসব কাহিনী বলতেও এই লেখা নয়। শুধু বলে রাখি একজন সাহসী ও সত্যিকারের সাংবাদিক এডিটর ইন চিফ ছিলেন বলেই আমিও সাহস করেছিলাম। নইলে মতলবি কোনো সাংবাদিকের সম্পাদিত সংবাদপত্রে এটা করা সম্ভব হতো না।

মূল কথায় ফিরি। লেখাটা শুরু করেছি শিরোনামটি লিখে নিয়ে। বলেছি- কাকের মাংসই খাক ঠুকরে কাক! বিশ্বাস করুন-এটাই আমার মনের কথা। সত্যিই চাই সংবাদপত্রেরও যা কিছু অন্যায়, সাংবাদিকেরও যা কিছু বিচ্যুতি তা প্রকাশ করুক অন্য সংবাদমাধ্যম।

কেন? সে প্রশ্নটি বোধ হয় আজ আর কেউ করবে না। কারণ সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে এখন আর কিছু অজানা থাকেনা। মিডিয়া ট্রায়াল বলতে এখন সোশ্যাল মিডিয়া ট্রায়ালই বুঝায়। সেই ট্রায়াল কিন্তু হয়ে যাচ্ছে।

কথা বলছি দেশের কয়েকটি প্রধান সারির সংবাদমাধ্যমসহ গজিয়ে ওঠা আরও কিছু তথাকথিত সংবাদমাধ্যমের বুমধারী কর্মীরা প্রতিক্রিয়া নিচ্ছিলেন সদ্যমৃত এক অভিনেত্রীর ছয় বছর বয়সী সন্তানের, সেই প্রসঙ্গে। যা পরবর্তীতে একাধিক সংবাদমাধ্যমের কনটেন্ট হিসেবে প্রচারিত হয়। সাধারণের চোখে যা অন্যায় হিসেবেই ধরা পড়ে। ছবিতে ধরা পড়ে শিশুটির কিংকর্তব্যবিমুঢ়তা!

কিন্তু সদ্য মাতৃহারা এক অবুঝ শিশুর সামনে বুম ধরে পক্ষান্তরে সাংবাদিকতাকেই যে ডুম করে দেওয়া হলো- তা মেনে নেওয়ার মতো নয়। কেন নয়? তার ব্যাখ্যার কি প্রয়োজন আদৌ আছে? শিশুটির চোখ কি সেকথা বলছে না?

বলছে। আমরাই কেবল বুঝতে পারছি না। কারণ আমরা এখন ছুটছি ভাইরাল কনটেন্ট নামের এক মরিচিকার পেছনে! কি ভয়ঙ্কর এই ভাইরাল? সত্যিই তা কতটা মহামারিতে রূপ নিয়েছে- এই একটি ছবিই তার প্রমাণ।

ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় যারা কাজ করেন তারা একটি কথা খুব বলেন- তাদের প্রয়োজন একটু সাউন্ড বাইট! কিন্তু সে প্রয়োজনীয়তা কি সাংবাদিকতার নীতি-নৈতিকতা, রীতি রেওয়াজেরও ঊর্ধ্বে? নিশ্চয়ই নয়। 

আমি বলবো যে সাংবাদিক ভাইয়েরা কাজটি করেছেন, এবং যে গেট কিপাররা তা প্রচার বা প্রকাশের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন- তারা একবার শিশুটির চোখের দিকে তাকান? তার অভিব্যক্তিটুকু দেখুন, আর বোঝার চেষ্টা করুন- কাজটা কতটা অন্যায় হয়েছে। আর তা সাংবাদিকতার নীতিমালারও কতটা পরিপন্থি।

প্রথমত: মা হারানোর পর কারো কাছে তার প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়াটাই সাংবাদিকতায় অগ্রাহ্য। তাও আবার শিশুর মুখ সংবাদে তুলে আনা। অনুমতি ছাড়া যা করা নিতান্তই অন্যায়।

চাইল্ড রাইটস ইন্টারন্যাশনাল নেটওয়ার্কের কোড অব কন্ডাক্ট মতে, কোনো উদ্দেশ্য হাসিল করতে শিশুর ছবি প্রকাশ করা যাবে না। কেবল যদি তা সার্বিকভাবে শিশুদের ভালোর জন্য, তাদের অধিকারের জন্য হয় তাহলেই সেটা করা সম্ভব। তাও স্রেফ শিশুকে জিজ্ঞেস করলে হবে না, অনুমতি নিতে হবে তার বাবা-মায়েরও। সাংবাদিতার নীতিমালাও সে কথাই বলে।

এখানে তো শিশুটি তার মাকেই হারিয়েছে। তার অনুমতি মিলবেই কী করে? আর হলফ করেই বলা যায় এই ছবি তুলতে গিয়ে সংবাদকর্মীরা কারও কোনো অনুমতির ধার ধরেননি! না করেছেন, সাংবাদিকতার নীতিমালার তোয়াক্কা। না মেনেছেন সংবাদমাধ্যমের নিজস্ব নীতি, যদি আদৌ থেকে থাকে। কিংবা না খাটিয়েছেন নিজস্ব বোধ-বুদ্ধি। 

অতএব, আমাদের আত্মপোলব্ধির সময় এখন সত্যিই এসেছে। এসেছে আত্ম সমালোচনার সময়ও। আমরা যতই চেপে যেতে চেষ্টা করি, কিংবা চেপে যাই না কেনো, আর কিছুই থাকে না লোকচক্ষুর অন্তরালে! কিংবা থাকে না সমালোচনার ঊর্ধ্বে। আমরা নিজরা কথা না বললে অন্যরা বলবে। তাদের হাতে এখন রয়েছে অনেক বড় প্ল্যাটফর্ম- সোশ্যাল মিডিয়া। যা আমাদের তথাকথিত মূলধারার মিডিয়ার চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী ও প্রভাবশালী।

আমরাই সেটা হতে দিয়েছি- ঘুরিয়ে বললে বলা যায়, আমাদের অযোগ্যতাই মূল মিডিয়াকে খোঁড়া কিংবা খোঁজা করে দিয়েছে। 

এবার বোধ হয় সময় হয়েছে শোধরানোর। আর আমরাতো জানিই সমাজের যা কিছু বিচ্যুতি তা শোধরাতে সংবাদমাধ্যমই পারে বড় ভূমিকা রাখতে। সুতরাং কাকের মাংসই কাক খাক। তাতে সার্বিক পরিবর্তন আসলেও আসতে পারে।

মাহমুদ মেনন: বার্তা২৪.কম এর এডিটর অ্যাট লার্জ এবং যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়াস্থ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির শিক্ষক।

;

‘একতা ও বৈচিত্র্যই ভারতের প্রধান শক্তি’

ছবি: বার্তা২৪.কম

ভারতের জাতীয় নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে মূল্যায়ন তুলে ধরে দিল্লিভিত্তিক থিংকট্যাঙ্ক প্রতিষ্ঠান বিবেকানন্দ ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশনের সিনিয়র ফেলো এবং ও. পি. জিন্দাল গ্লোবাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. শ্রীরাধা দত্ত বলেছেন, ইউনিটি অ্যান্ড ডাইভারসিটিই ভারতের মেইন স্ট্রেন্থ। এই নির্বাচনেও তা প্রতিফলিত হয়েছে।

ভারতের নির্বাচনী ফলাফল নিয়ে মূল্যায়ন জানাতে মঙ্গলবার (৪ জুন) বিকেলে মোবাইল ফোনে বার্তা২৪.কমকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন তিনি। কথা বলেছেন পরিকল্পনা সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম।

বার্তা২৪.কম: ভারতের এবারের নির্বাচন বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে খুব গুরুত্বপূর্ণ। এবারের নির্বাচনকে কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?

ড. শ্রীরাধা দত্ত: এখন অবধি যেটি বুঝতে পারছি, এনডিএ মেজরিটি পাচ্ছে নিশ্চয়ই কিন্তু চারশ’ পাবে বলে যে প্রচার করেছিল তা পাচ্ছে না। যেটা বোঝা যাচ্ছে, তিনটি প্রদেশে একটু অন্যরকম ফল এসেছে-বাংলা, মহারাষ্ট্র ও উত্তরপ্রদেশ। যেটা বলা হচ্ছে যে, ব্যাকওয়ার্ড ক্লাসের ভোট ইন্ডিয়া জোট বা কংগ্রেসের কাছে যাচ্ছে, নারীদের ভোটও বিজেপি বিরোধীদের কাছে যাচ্ছে। আর…আমার যেটি নিজস্ব ধারণা, আমাদের দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কথা বলছি, কিন্তু বেকারত্বের হার এখনো অনেক বেশি। সেখানে তারুণ্য ফ্যাক্টর হিসেবে খুব কাজ করেছে। বিশেষ করে উত্তরপ্রদেশে একটা অংশে মুসলিম ফ্যাক্টর কাজ করে, আরেকটা ব্যাকওয়ার্ড ফ্যাক্টর কাজ করে…আর ইয়ুথ ফ্যাক্টর কাজ করেছে। একেবারে সঠিক করে বলা যাবে না যে কোন কোন ফ্যাক্টর কাজ করেছে। কিন্তু আমার ধারণা হচ্ছে…আমরা যেটা দেখছিলাম, বিভিন্ন জনের সঙ্গে কথা বলছিলাম; আপনাদের ওখানে (বাংলাদেশে) দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি অনেক বেশি, এখানেও এই ফ্যাক্টরগুলো বিজেপির বিরুদ্ধে কাজ করেছে। যে কারণে এনডিএ ভালো করেছে। তিনটি টাইমে এন্টি-ইন্টেম্পেন্সি কাজ করেছে, সেজন্য ৩০০ তারা করে নিয়েছে। সেটা তো নিশ্চয়ই ভালো বলব। কিন্তু ওরা যে (বিজেপি) হাইপটা রেখেছিল ৪০০, সেটা হবে না।

বার্তা২৪.কম: আরেকটি বড় বিষয় আলোচনায় এসেছে, ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি, ভারতে ঐতিহাসিকভাবে পরম্পরা আছে অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হিসেবে। কিন্তু এবারে নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলো ধর্মীয় অনুষঙ্গকে ব্যবহার করেছে ভোটের প্রচারে। এটা কি ভারতের রাজনৈতিক ক্রমবিবর্তনের একটি বাস্তবতা কিনা?

ড. শ্রীরাধা দত্ত: অনেক সময় আমাদের একাডেমিয়াতেও আলোচনা হয়, গেল ১৫ বছর ধরে যে একটা পার্টিকুলার একটি ধর্মকে বেশি ফোকাস দেওয়া হয়েছে, সেটা কিন্তু ভারত নয়। আমি সেই ভারতে বড় হয়নি, সেই ভারতে আমি থাকি না। আমি এখনো বিশ্বাস করি, সেক্যুলার ফেব্রিকটা আমাদের সবার কাছে অনেক বড়। যে হিন্দু তার কাছেও বড়, যে মুসলিম বা অন্য ধর্মের, তার কাছেও বড়। এই সরকার কাজ করেছে সেটা নিয়ে সন্দেহ নেই; আমাদের ইনফ্রাস্ট্রাকচার বেড়েছে, আমাদের ইকনোমিক ট্রান্সফরমেশন হয়েছে, নিশ্চয়ই সেগুলো তো হয়েছে। তারা ৪০০ আসন পাবে না, ৩০০ হবে কোন রকমে, এতে স্পষ্ট যে ধর্মীয় ফ্যাক্টরটা আমাদের এখানে এতটা কাজ করে না। কিছুটা একটা কাজ করে, সেটা অস্বীকার করলে মিথ্যা বলা হবে। কিন্তু সেই শতাংশটা কম। আমাদের তো হিন্দু মেজরিটি দেশ। তার মধ্যেই আমি বিশ্বাস করি, আমরা সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে থাকতে চাই। এখানে কাউকে বেশি জোর দেওয়ার বা কাউকে অন্যদৃষ্টিতে দেখা সেটা আমরা কেউ পছন্দ করি না। সেটা বোধহয় আরও পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে দিনে দিনে।

বার্তা২৪.কম: এ ভারতবর্ষ তো বিবেকানন্দের ভারতবর্ষ, নেতাজীর ভারতবর্ষ…

ড. শ্রীরাধা দত্ত: অবশ্যই। বিজেপি অনেক কাজ করেছে, অনেক গুণ আছে, সেটা আলদা। কিন্তু ‘হিন্দুত্ব’ আসপেক্টটা বোধহয় সবাই বিশ্বাস করে না। সেই হিসেবে দেখতে গেলে, বাইরের দেশের যে আশঙ্কা ছিল-ভারতবর্ষ কি পাল্টে যাচ্ছে কিনা! আপনি নিজেও যেটি বললেন, স্বামী বিবেকানন্দের ভারতবর্ষ, নেতাজীর ভারতবর্ষ কি এখনকার ভারতবর্ষ নয়? আমার নিজস্ব মত হচ্ছে, চিরকাল যে ভারতবর্ষ ছিল, সেটা থাকবে। ইন্টারন্যাশনাল পলিটিক্স-ডমেস্টিক পলিটিক্স-এ ওপর নিচ হতেই থাকবে। কিন্তু আমার যেটা মেইন স্ট্রেন্থ ‘ইউনিটি অ্যান্ড ডাইভারসিটি’ সবখানেই আমরা এটা বলি..আমাদের তামিলনাড়ু, মহারাষ্ট্রে যতটা তফাৎ আবারও কোথাও গিয়ে আমরা ঠিকই মিলে যাই এক জায়গায়। ভারতে দেখুন ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলোতে বিভেদ কাজ করে না। এত বড় দেশে তো সব নিরঙ্কুশ হবে না। সবখানেই কিছু মানুষ ধর্মটাকে বিভেদের হাতিয়ার করতে টেনে আনে। আমেরিকাতে কি নেই? আমরা দেখেছি ট্রাম্প কি করে গেছেন। আমরা সেক্যুলারিজমের ফেব্রিকটাকে তুলে রাখতে সব সময় চেষ্টা করি।

বার্তা২৪.কম: নতুন যে সরকার আসছে তাদের বড় চ্যালেঞ্জ কি হবে বলে আপনি মনে করেন?

ড. শ্রীরাধা দত্ত: আমরা ইতোপূর্বে সংসদে বিরোধীদের অনেক দাবি সেভাবে মানেনি তা দেখেছি কিন্তু এবার তা হবে না। এখন বিরোধীদের জোর থাকবে সংসদে। সবাইকে নিয়েই চলতে হবে। আপাতত একটি বিষয় যা আমি বললাম, বেকারত্বের বিষয়টি দেখতে হবে। আমরা এখন ৩ ট্রিলিয়নের ইকোনমি, কিছুদিন পর ৫ ট্রিলিয়নের ইকোনমি হবে-আপনাদের দেশেও দেখবেন, বড়লোকরা বড়লোক হয়েছে, গরিবেরা আরও গরিব হচ্ছে। আমাদের দেশেও তাই হয়েছে। দেখতে হবে মাঝখানে যারা মিড্ল ক্লাস আছেন তাদেরকেও। ইউক্রেন-প্যালেস্টাইন যুদ্ধ বলুন কিংবা সমুদ্রপথগুলো অনিরাপদ হয়ে গেছে, অর্থনীতি তো এসব কারণে খারাপ হয়েই আছে। তারপরেও অর্থনীতি কিভাবে সবার কাছে পৌঁছে যায়-সেটা নতুন সরকারকে আরও নজর দিতে হবে। ইয়ুথ এমপাওয়ারমেন্ট সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তাদের কথা তো ভাবতেই হবে।

বার্তা২৪.কম: এই নির্বাচনে অন্যান্য দলগুলোর যে অঙ্গীকার ছিল সেই বিষয়ে আপনার মূল্যায়ন কি?

ড. শ্রীরাধা দত্ত: এখন যা দেখছি তাতে রিজিওনাল পার্টিগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছিল। কিন্তু উড়িষ্যাতে সেটা সেটব্যাক হয়েছে। রিজিওনাল পার্টি যে এতবছর ধরে ছিল, আমাদের জ্যোতিবসু দীর্ঘদিনের চিফ মিনিস্টার ছিলেন, সেখানেও সেটব্যাক হয়েছে। রিজিওনাল পার্টিগুলো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে তা বোঝাই যাচ্ছে। অনেক স্থানে হেভিওয়েটরা পরাজিত হয়েছেন। কিছু জায়গাতে মানুষ পরিবর্তন চাইছে। মহারাষ্ট্রে রিজিওনাল পার্টি খুব চমৎকার করেছে, কেউ ভাবেনি। রিজিওনাল পার্টির ভূমিকা বেড়েই চলেছে। আগে আমরা দেখতাম ন্যাশনাল পার্টিগুলোর খুব ইনফ্লুয়েন্স থাকে, কিন্তু এই নির্বাচনে রিজিওনাল পার্টিগুলোর জায়গাটা ভালো দেখছি।

বার্তা২৪.কম: রাজনীতিবিদদের দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ার প্রবণতা বাড়ছে। এটি ভারতের রাজনীতিতে পূর্বের সঙ্গে বর্তমানের কতখানি বৈপ্যরীত্য হাজির করছে?

ড. শ্রীরাধা দত্ত: এই সমস্যাটা তো আছেই। এর আবার উল্টো উদাহরণ হচ্ছে, উড়িষ্যাতে যিনি হারলেন তিনি তো দুর্নীতির জন্য হারেননি। আবার অনেক স্থানে যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আছে, তারা নির্বাচনে বেরিয়ে এসেছেন। এই দুই ধরণের দৃষ্টান্তই আছে। সব সময় যে এক জিনিসই কাজ করছে তা নয়। উড়িষ্যাতে পরিষ্কার ইমেজ, স্বচ্ছ সরকার-সেখানে অনেকে বলছেন-উন্নয়ন হয়নি বলে তাদের সরে যেতে হয়েছে। আবার দেখুন গুজরাটে বড় প্রকল্প হচ্ছে, দুর্নীতি তো আছে, ফুটে উঠেছে। কিছু জায়গায় পিছিয়ে যেতে হয়েছে, আবার কিছু জায়গায় এগিয়েও গেছে।

বার্তা২৪.কম: জনগণের মধ্যেও এই প্রবণতা ছায়া ফেলছে তাহলে…

ড. শ্রীরাধা দত্ত: জনগণ সব নজরে রাখছে। দুর্নীতি নিয়ে কথা-বিতর্ক সবই চলছে। সবাই বিরক্ত, এই জিনিসটা কেউই চায় না। ইনডিভিজ্যুয়াল লেবেলে কিছু করাও সম্ভব না।

বার্তা২৪.কম: কেজরিওয়াল বা অন্য অনেক রাজনীতিকদের অবদমিত রাখার চেষ্টা হয়েছে বলেও অভিযোগ আছে। ক্ষমতাসীনদের হস্তক্ষেপ কতখানি সেখানে কাজ করছে?

ড. শ্রীরাধা দত্ত: কিছু উদাহরণ তো আপনারা দেখছেনই, দিল্লির চিফ মিনিস্টারকে যা করা হল..। সব দলই যখন সেন্ট্রালে হেভি থাকে তারা চেষ্টা করেছে। ইডি দিয়ে বা এজেন্সি দিয়ে চেষ্টা করে। আবার মানুষ যখন ভোটে তাদের বিদায় করে দেয়..জম্মু-কাশ্মীরে দেখুন। কাশ্মীরে যিনি জেলে বন্দি, তার ছেলে ক্যাম্পেইন করে জিতে গেল। তার মানে মানুষ তো বুঝতে পারে, তাকে অকারণে ভেতরে রাখা হয়েছে, যার কোন যুক্তি নেই। মানুষের চিন্তা-ধারা বা বোঝার ক্ষমতাকে যদি আমরা ঠিক করে না বুঝি তাহলে সমস্যা। অনেকেই আছেন যারা দুর্নীতির জন্য টিকেট পায়নি, মানুষ সাপোর্ট দেয়নি-এমনও আছে। ভোটারদের একটা নিজস্ব চিন্তাধারা আছে।

;

বেনজীর কি তবে ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার প্রচেষ্টার অংশ?

ছবি: বার্তা২৪.কম

দ্রুততম সময়ের মধ্যে তিনটি বড় ঘটনা এই মুহূর্তে আলোচিত। দুর্নীতিতে সম্পৃক্ততার অভিযোগে সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব) আজিজ আহমেদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা, ভারতে ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম হত্যাকাণ্ড এবং সাবেক পুলিশপ্রধান বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ব্যবস্থা, এবং তার দেশে থাকা-না থাকা নিয়ে ধোঁয়াশা। ঘটনাগুলো পর পর ঘটেছে, এবং একটির আলোচনা অন্যটিকে ছাপিয়ে না গিয়ে একই সঙ্গে আলোচিত হচ্ছে।

সাবেক সেনাপ্রধান যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার মধ্যে ছিলেন না। যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু ঢাকা সফরের পর পরই আজিজ আহমেদ ও তার পরিবারের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দেশটি। বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা দেয়নি যুক্তরাষ্ট্র, তবে তিনি আগে থেকে দেশটির নিষেধাজ্ঞায় আওতায় ছিলেন। র‍্যাবের সাবেক যে সাত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের যে নিষেধাজ্ঞা চলমান তার মধ্যে আছে বেনজীর আহমেদের নাম। এবার তার বিরুদ্ধে নতুন করে কোন সিদ্ধান্ত না আসলেও দুদক ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের যে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি, তার মধ্যেই পড়েছেন বেনজীর আহমেদ। অথচ দায়িত্বে থাকাকালে তিনি ছিলেন সরকারঘনিষ্ঠ এবং প্রভাবশালী।

সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার ভারতে গিয়ে নিখোঁজ হওয়ার পর জানা গিয়েছিল তিনি চিকিৎসার জন্যে গিয়েছিলেন। এরপর তার মৃত্যুর সংবাদ প্রকাশের পর চিকিৎসা বিষয়ক কোন তথ্য আর আসছে না। তার দুঃখজনক মৃত্যুর পর সমবেদনা ছাপিয়ে সামনে আসছে অতীত, যা সুখের নয় তার পরিবারের জন্যে, বিব্রতকর অবস্থা ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের জন্যে। তিনি সোনা চোরাকারবারি ছিলেন, হুন্ডি ব্যবসায় জড়িত ছিলেন, দক্ষিণাঞ্চলের আগের সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর অন্যতম ছিলেন, ইন্টারপোলের রেড নোটিশ পাওয়া অপরাধী ছিলেন—এসব তথ্য সামনে এসেছে। তথ্যগুলো এতখানি শক্তিশালী যে, মৃত্যুতে স্বাভাবিক সমবেদনার চাইতে এটাই বেশি আলোচনার। এই আলোচনায় স্রেফ সরকারবিরোধী রাজনৈতিক গোষ্ঠীর অংশগ্রহণ থাকছে এমন না; বরং সব শ্রেণিপেশার মানুষের মাঝে তার জনপ্রতিনিধি বিষয়ক পরিচিতির চাইতে এসবই মুখ্য হয়ে ওঠেছে।

হত্যাকাণ্ডের তিন সপ্তাহেও আনোয়ারুল আজীম আনারের মরদেহের সন্ধান মেলেনি। ঢাকা ও কলকাতা পুলিশ এনিয়ে তদন্ত করছে। চাঞ্চল্যকর তথ্য আসছে। পুলিশের পক্ষ থেকে দেওয়া বক্তব্যে এখন পর্যন্ত এটাকে ‘রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড’ বলে দাবি হচ্ছে না। অপরাধ সাম্রাজ্যের কর্তৃত্ব ও আর্থিক দ্বন্দ্ব এখানে প্রভাবক। চিকিৎসার নামে কাউকে কিছু না জানিয়ে বা তথ্য গোপন করে ভারতে গমন এবং সেখান থেকে কলকাতায় গিয়ে নিহত হন তিনি। মৃত্যুর পর যে অতীত সামনে আসছে, তাতে জনপ্রতিনিধি মনোনয়নের প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা চলছে। বিতর্কিতদের কীভাবে মনোনয়ন দেয় রাজনৈতিক দলগুলো, এই প্রশ্ন ওঠছে প্রবলভাবে। যদিও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এই প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন, জনপ্রিয়তা দেখে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল তাকে। আনোয়ারুল আজীম আনার তিনবারের এমপি, জনপ্রিয় ছিলেন তিনি; এই উত্তর কাউকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি, বিশেষত সর্বশেষ তিন নির্বাচনকে এখানে উদাহরণ হিসেবে টানা হয়েছে। কারণ এই তিন নির্বাচনে কোন জনপ্রতিনিধির জনপ্রিয়তা নির্দেশক কিনা এনিয়ে প্রশ্নও আছে ঢের!

আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যাকাণ্ড বাদে অপর দুই ঘটনার সঙ্গে দুর্নীতি জড়িত। জেনারেল (অব) আজিজ আহমেদ ও তার পরিবারের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নিষেধাজ্ঞা দুর্নীতির মাধ্যমে রাষ্ট্রের নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ এবং দুর্নীতিতে সহায়তার অভিযোগে। যুক্তরাষ্ট্রের ভাষায়, তিনি তার ভাইকে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য জবাবদিহি এড়াতে সহযোগিতা করেছেন। অন্যায়ভাবে সামরিক খাতে চুক্তি বা ঠিকাদারি পাওয়া নিশ্চিত করতে তিনি তার ভাইয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছেন। নিজের স্বার্থের জন্য সরকারি নিয়োগের বিনিময়ে ঘুষ নিয়েছেন। গত ২০ মে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের ওয়েবসাইটে নিষেধাজ্ঞার তথ্য প্রকাশের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছিলেন, এটা সেনাবাহিনীর বিষয়। অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীও একই ধরনের কথা বলেছিলেন। পরে সড়ক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, দুদক চাইলেই সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত করতে পারে। এই আলোচনাও চলমান রয়েছে, তবে এখন পর্যন্ত দুদকের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের তৎপরতা দৃশ্যমান হয়নি।

দুদক এবার ব্যস্ত সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদকে নিয়ে। গত ১৮ এপ্রিল বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। অভিযোগ অনুসন্ধানে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে তার ব্যাংকের লেনদেনের তথ্য চেয়ে পরের সপ্তাহেই চিঠি দেওয়া হয় বাংলাদেশ ব্যাংকের বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটে (বিএফআইইউ), স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের তথ্য চেয়ে চিঠি দেওয়া হয় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব), সিটি করপোরেশন, ভূমি অফিস, রেজিস্ট্রি অফিস, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ বিভিন্ন দফতরে। সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোর তথ্য পাওয়ার পর দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বেনজীর আহমেদ ও তার স্ত্রী-সন্তানদের ৬২১ বিঘা জমি, ঢাকার চারটি ফ্ল্যাট এবং ৩৩ ব্যাংক হিসাব, বেনজীর ও তার স্ত্রী-সন্তানদের নামে থাকা ১৯টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও তিনটি বিও হিসাব (শেয়ার ব্যবসা করার বেনিফিশিয়ারি ওনার্স অ্যাকাউন্ট) এবং ৩০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র ও সাভারের জমি জব্দের আদেশ আসে আদালত থেকে।

এরইমধ্যে জানা গেছে, পরিবারসহ বেনজীর আহমেদ দেশে নেই। জানা যাচ্ছে, চিকিৎসার নামে গত মাসের প্রথম সপ্তাহে তিনি সিঙ্গাপুর চলে গেছেন। এখন তিনি কোথায় সেটাও কেউ বলতে পারছে না।

বেনজীর আহমেদ র‍্যাব ও পুলিশপ্রধান থাকাকালে তার সম্পদ বিষয়ক তথ্য প্রকাশিত হয়নি। কেন প্রকাশিত হয়নি, এ প্রশ্নের উত্তর একটাই—ভয়ে কেউ মুখ খোলার সাহস করেনি। তিনি ছিলেন বিপুল ক্ষমতার অধিকারী এবং সরকারঘনিষ্ঠ। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পুলিশের অতি-ক্ষমতায় তার বিরুদ্ধে কাউকে কিছু বলার সুযোগ দেয়নি। তবে তিনি দায়িত্ব থাকাকালেই এই সম্পদের মালিক হয়েছেন। এবং এটা নিশ্চিতভাবেই ক্ষমতার অপব্যবহার করে। একজন সরকারি কর্মকর্তার বেতন-ভাতা এতখানি নয় যে কাউকে শত কিংবা হাজার কোটি টাকার সম্পদের মালিক করতে পারে! এখানে কাজ করেছে সরকারের ‘সুনজর’, তা না হলে কি এমনটা সম্ভব?

বেনজীর আহমেদ হুট করে এমন সম্পদের মালিক হননি। সরকার কি তবে এটা জানত না? এটা বিশ্বাস করা কঠিন। তবে কি সরকার তাকে সহায়তা করেছে? করেনি কীভাবে বলি? বক্তব্যে-বিবৃতিতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি যেখানে সেখানে কেন তবে বেনজীর ছাড় পেলেন? কারণ হয়ত একটাই—পুলিশপ্রধানকে আস্থায় রেখে পুরো বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণ! রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ মোকাবিলায় প্রশাসনকে ব্যবহার করতে যে পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছে তাতে বেনজীরদের মতো লোকেরা ছাড় পেয়েছেন। আর এই ছাড়ে বৈধ-অবৈধ পথে হয়েছেন বিপুল সম্পদের মালিক, বিপুল ক্ষমতার অধিকারী।

তবু প্রশ্ন, সরকারঘনিষ্ঠ বেনজীর আহমেদ কেন তবে সেই সরকারের আমলেই আইনি ব্যবস্থার মুখে? উত্তর ওই যে আমেরিকার নিষেধাজ্ঞা। যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু ঢাকা সফরের সময় দুদেশই দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থার বিষয়ে এক সঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে। ডোনাল্ড লুর সফরের পর পরই সাবেক সেনাপ্রধানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার পর ঢাকাকে বড় কিছু দেখাতে হচ্ছে। মানবাধিকার ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার মধ্যে থাকা বেনজীর আহমেদ এক্ষেত্রে হয়ে গেছেন ‘সহজ সমাধান’। এখন ঢাকা ওয়াশিংটনকে বলতে পারছে, সাবেক পদ-পদবি নির্বিশেষে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতিতেই আছে সরকার।

সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব) আজিজ আহমেদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা, সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারের হত্যাকাণ্ড-পরবর্তী কালো অতীত সামনে আসা এবং আগে থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার মধ্যে থাকা বেনজীর আহমেদের বিপুল সম্পদের তথ্য প্রকাশের পর সরকার পড়েছে ভাবমূর্তি সংকটে। এই সংকট থেকে উত্তরণে দরকার ছিল বড় কিছুর। বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে দুদকের ব্যবস্থা, এবং এতে সরকারের সায় দেওয়া সে ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার প্রচেষ্টার অংশ।

আগেও আমরা দেখেছি এমন কিছুর। ক্যাসিনোকাণ্ডের পর যুবলীগের চেয়ারম্যানসহ আরও অনেকের ওপর থেকে ‘ছায়া’ সরে গিয়েছিল। এবার সম্ভবত সরেছে আজিজ-বেনজীরের ওপর থেকে। ওমর ফারুকসহ আরও অনেককে দিয়ে আমরা বুঝেছি—ছায়া সরলে থাকে কেবলই কায়া। বেনজীরদের ক্ষেত্রেও হয়ত সেই অদৃশ্য ছায়া সরেছে! আমরা কায়া দেখছি, কিন্তু কার ছায়া সেটা ঠিক দেখতে পাচ্ছি না; এটা দেখাও যাবে না!

;

তিস্তা পুনরুজ্জীবন প্রকল্প বাস্তবায়নে দোদুল্যমানতা নয়

তিস্তা পুনরুজ্জীবন প্রকল্প বাস্তবায়নে দোদুল্যমানতা নয়

তিস্তা সমস্যা নিয়ে বহুযুগ ধরে বার বার শুধু কথা চলে আসছে। কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না বাংলাদেশের তিস্তা তীরবর্তী কয়েক কোটি মানুষের জীবনধারণের সাথে সম্পর্কিত বহুবিধ আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন। প্রতি বছর খরা যায়, বর্ষা আসে। তাপে পুড়ে যায়, অকাল বন্যায় ভেসে যায় জমির ফসল। থমকে যায় সেসব সমস্যা প্রতিকারের সব প্রচেষ্টা।

গত ১৯৯৩ সাল থেকে তিস্তা নদী সম্পর্কিত সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য বাংলাদেশ আপ্রাণ প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে। কিন্তু এর সমস্যাগুলোর বড় অংশ অভিন্ন, আন্তর্জাতিক ও দ্বিপাক্ষিক হওয়ায় বাংলাদেশের একার পক্ষে সমাধান করা দুরূহ ব্যাপার। তাই প্রতিবেশী ভারতের সাথে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার ভিত্তিতে চুক্তি স্বাক্ষর করে এবং আন্তর্জাতিক আইন মেনে সমাধানের জন্য বার বার বৈঠক করে প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। গত তিন দশকের অধিক সময় ধরে শতাধিক বৈঠকে নানাবিধ আলাপ আলোচনার মাধ্যমে অনেকগুলো চুক্তি সই করা হয়েছে। কিন্তু নানা কারণে ও অজুহাতে সেগুলো ফলপ্রসূ হয়নি।

উজান দেশের অসহযোগিতা ও একঘেয়েমি মনোভাবের কারণে তিস্তা সমস্যা দীর্ঘদিন ফাইলে আটকে রাখা হলে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর ২০১৪ সাল থেকে তিস্তা নদীর পানিবণ্টন সমস্যার জট খুলতে শুরু করে এবং কিছুটা হলেও আশার আলো দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু ভারতের কেন্দ্রীয় ও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সাথে মতের অমিল থাকায় সেসব প্রচেষ্টা বার বার হোঁচট খেয়ে ভেস্তে যায়।

বিশেষ করে খরার সময় তিস্তা নদীর পানি সংকট সমস্যা কেন্দ্র ও রাজ্যের পারস্পরিক দোষারোপ ও মধ্যে কাদা ছোড়াছুড়ি মধ্যে চরম বৈপরীত্য পরিস্ফুট হয়ে উঠে। দীর্ঘ প্রতীক্ষার প্রহর গুনে হতাশ হয়ে পড়ে সরকার ও তিস্তা পাড়ের ভুক্তভোগীরাসহ গোটা বাংলাদেশের মানুষ। অনির্দিষ্টকালের জন্য ভারতের নিকট থেকে আশানুরূপ সাড়া না পেয়ে বাংলাদেশ বিকল্প উপায় খুঁজতে থাকে। এর প্রেক্ষিতে তৃতীয় কোনো পক্ষকে তিস্তা পুনরুজ্জীবন প্রকল্পে এগিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানানো হলে এগিয়ে আসে চীন। তারা চীনের দু:খ বা হোয়াংহো নদীর পুনরুজ্জীবন প্রকল্পের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে তিস্তা সমস্যা সমাধানে হাত বাড়ায়।

তিস্তা পুনরুজ্জীবন প্রকল্পে বিনিয়োগের জন্য ২০১৬ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর চীনের ‘পাওয়ার কন্সট্রাকশন কর্পোরেশন অব চায়না’- কোম্পানির সাথে বাংলাদেশের এক সমঝোতা স্মারক সাক্ষরিত হয়ে। সেটিও দীর্ঘদিন যাবত দোদুল্যমান অবস্থায় ছিল। পাঁচ বছর পূর্বে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী চীনের প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে তাগাদা দিলে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আশাবাদ শুরু হয়। চীন ইতোমধ্যে বাংলাদেশের তিস্তা ক্যাচমেন্ট এলাকায় ১১৫ কি.মি. অংশে জরিপ সম্পন্ন করে প্রকল্পের খসড়া তৈরি করে। চীন ভারতের তিস্তা অংশে সিকিম তিস্তা খাড়ি ও শিলিগুড়ির অদূরে ‘চিকেন নেক’এলাকায় সুগভীর জরিপ চালাতে আগ্রহ প্রকাশ করলে সেটা নিয়ে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তার অভাবের কারণে অনাগ্রহ লক্ষণীয় হয়ে উঠে।

তিস্তা পুনরুজ্জীবন প্রকল্পে চীনের বিনিয়োগ ও চৈনিক ইঞ্জিনিয়ার ও বিশেষজ্ঞদের ভারতের মাটিতে অবস্থান ও আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারকে ভারত নিজেদের নিরাপত্তা হুমকি হিসেবে মনে করে। তবুও গত ৭ জানুয়ারি ২০২৪ জাতীয় নির্বাচনের পর পরই চীন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন কাজ শুরু করতে চেয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনের পর পাঁচ মাস গত হলেও প্রকল্পের কাজ এখনও শুরু করা হয়নি।

এরই মাঝে আমাদের প্রধানমন্ত্রী ২০২৩ সালের ২ আগস্ট রংপুরে এক নির্বাচনী জনসভায় তিস্তা পুনরুজ্জীবন প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়ন করার ঘোষণা দেন। সেই ঘোষণা বাস্তবায়নের জন্য শুরুর দিনক্ষণ শোনার জন্য এবছর মে মাসের নিদারুণ খরার দিনগুলি পর্যন্ত অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছে তিস্তা পাড়ের ভুক্তভোগী অধিবাসীরা।

তিস্তা পুনরুজ্জীবন প্রকল্প নিয়ে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং চীনের পাওয়ার কনস্ট্রাকশন করপোরেশন অব চায়না বা পাওয়ার চায়নার মধ্যে যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছিল সেই পরিকল্পনায় পূর্ব চীনের জিয়াংসু প্রদেশের সুকিয়ান সিটির আদলে তিস্তা নদীর দুই পাড়ে পরিকল্পিত স্যাটেলাইট শহর, নদী খনন ও শাসন, ভাঙন প্রতিরোধ ব্যবস্থা, আধুনিক কৃষি সেচ ব্যবস্থা, মাছ চাষ প্রকল্প ও পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

চীনা কোম্পানিটি ইতোমধ্যে তিস্তা পাড়ে নির্মিতব্য প্রকল্প বাস্তবায়নে নকশা ও সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শেষ করেছে। তিস্তা নদী পাড়ের জেলাগুলো নীলফামারী, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, রংপুর ও গাইবান্ধায় চীনের তিনটি প্রতিনিধি দল কাজ করে চলছে। এরমধ্যে গত ১০ মে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে তিস্তার বুকে ড্রেজিং এবং ব্যারাজ নির্মাণের প্রস্তাবিত বহুমুখী প্রকল্পটিতে অর্থ বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে নয়াদিল্লি। ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রা বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে ঢাকায় এক বৈঠকে এই প্রস্তাব করেছেন।

এ প্রেক্ষিতে আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মন্তব্য হলো, ‘আমরা তিস্তায় একটা বৃহৎ প্রকল্প হাতে নিয়েছি। ভারত সেখানে অর্থায়ন করতে চায়। আমি বলেছি, তিস্তায় যে প্রকল্পটি হবে, সেটি আমাদের প্রয়োজন অনুযায়ী হবে। আমাদের প্রয়োজন যেন পূরণ হয়।’ আমাদের প্রয়োজন পূরণ করার জন্য এটা একটি বড় উদ্যোগ হতে পারে। তবে বহু দশক গড়িমসি করে হঠাৎ তিস্তা পুনরুজ্জীবন প্রকল্প নিয়ে ভারতের মনোযোগ চিন্তায় ফেলে দিয়েছে আমাদের নীতি নির্ধারকদেরকে। এর পিছনে ভূ-রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধন ছাড়াও আরো কোনো রহস্য লুক্কায়িত আছে কি-না তা ভেবে দেখতে বলা হয়েছে।

কলকাতার বাংলা পত্রিকা আনন্দবাজার বলেছে, ‘চিন ইতোমধ্যেই বাংলাদেশের তিস্তা প্রকল্পে বিনিয়োগ ও প্রযুক্তি সহযোগিতার প্রস্তাব দিয়েছে ঢাকাকে। জানুয়ারিতে শেখ হাসিনার নতুন সরকার শপথ নেওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ঢাকায় চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন নতুন বিদেশমন্ত্রী মাহমুদের সঙ্গে দেখা করে তিস্তা নিয়ে তাদের প্রকল্পে দ্রুত ছাড়পত্র দেওয়ার অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে প্রবাহিত তিস্তা নদীর জলপ্রবাহ নিয়ে তৃতীয় একটি দেশের ইঞ্জিনিয়ার ও কারিগরদের কাজ করা নিয়ে বাংলাদেশের কাছে উদ্বেগ জানিয়েছিল দিল্লি।

‘মূলতঃ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে তিস্তার বুকে ড্রেজিং এবং ব্যারাজ নির্মাণের প্রস্তাবিত বহুমুখী প্রকল্পটিতে অর্থ বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে তারা। অন্তত ১২ বছর ধরেই বাংলাদেশ এই প্রকল্প নিয়ে বেজিংয়ের কাছে দরবার করছিল। হাসিনার চিঠির পরে চিন বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে তিস্তার ১১৫ কিলোমিটার গতিপথে সমীক্ষা চালিয়ে একটি প্রকল্পের খসড়া তৈরি করে জমা দেয়। সেই প্রকল্পে তিস্তার বুকে ড্রেজিং করে ১০ মিটার গভীরতা বাড়ানোর পাশাপাশি দুপাশের জমি উদ্ধার করে সেখানে চার লেনের রাস্তা তৈরি এবং কয়েকটি ব্যারাজ ও সেচ-খালের মাধ্যমে জলের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণের কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু তার পরে প্রকল্পটি ছাড়পত্র পায়নি। এখন ভারত সেই প্রকল্পটি রূপায়ণের প্রস্তাব দিল।’

তবে চীনের সাথে আগে চুক্তি হওয়া এবং তার উপর ভারতের জাতীয় নির্বাচন চলাকালীন হঠাৎ ভারতের এই প্রস্তাব কিছুটা রহস্যজনক। বাংলাদেশের সকল নীতিনির্ধারক এবং জনগণ এতদিন পরে হঠাৎ ভারতের এই বিনিয়োগের আগ্রহকে কীভাবে গ্রহণ করবে তা চিন্তার বিষয়। বাংলাদেশ কতটুকু বিশ্বস্ততার সাথে ভারতের এই অর্থায়ন আগ্রহ বিবেচনা করবে তা সময় হলে বুঝা যাবে।

তিস্তা পুনরুজ্জীবন প্রকল্প নিয়ে চীনের কাজ শুরু করার সময় ঘনিয়ে আসার পর শুধু তাদের পররাষ্ট্র সচিবের প্রস্তাবে তিস্তা পানিবণ্টন নিয়ে এতদিনের ঘুমন্ত ভারতকে আস্থায় রাখা সহজ হবে না। একতরফাভাবে তিস্তার পানি প্রত্যাহার করে নেয়ার অভ্যাস যে ভারতের তৈরি হয়েছে এবং তার ফলে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক নদী তিস্তার প্রবাহের আইনগত ও ন্যায্য হিস্যা প্রদানের ব্যাপারে যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে তা খুব বেদনাদায়ক। সেখানে তৃতীয় কোনো দেশের সাথে তিস্তা পুনরুজ্জীবন প্রকল্প চুক্তি সই হওয়ার পর ভারতের অর্থায়নের আগ্রহ দেখানোর বিষয়টি চীনের আগ্রহ ও অংশগ্রহণ ঠেকানোর জন্য ভারতের নতুন দোদুল্যমানতা তৈরি হতে পারে বলে বিশ্লেষকগণ মনে করছেন।

এছাড়া তিস্তা পুনরুজ্জীবন প্রকল্প নিয়ে বাংলাদেশের ‘নিড’বা প্রত্যাশাগুলো কি তা এখনও ভারতকে জানানো হয়নি। ভারত ও চীনের মধ্যে আঞ্চলিক ভূরাজনৈতিক কর্তৃত্ব নিয়ে যে টানাপড়েন চলছে তা আরো বেশি উসকে দেবে যদি বাংলাদেশ চীনের সাথে স্বাক্ষরিত চুক্তি ভঙ্গ করে ভারতের দিকে হাত বাড়ায়। এছাড়া চীন বাংলাদেশের প্রতি আস্থা হারিয়ে আমাদের চলমান অন্যান্য বৃহৎ প্রকল্পে তাদের বিনিয়োগ ও প্রযুক্তিগত সহায়তা হ্রাস বা বন্ধ করে দিতে পারে।

তাই ভারতের পররাষ্ট্রসচিবের অর্থায়নের আগ্রহের প্রস্তাব চীনের তিস্তা পুনরুজ্জীবন প্রকল্পকে আরো দীর্ঘায়িত করার পাশাপাশি বাংলাদেশের সাথে চীনের সুসম্পর্ক নষ্ট করতে পারে। ভারতের অর্থায়ন প্রস্তাবের পর ইতোমধ্যে চীন বাড়তি ত্রিশ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের চাহিদা শুনিয়েছে। কাজ শুরু না হতেই এমন বাগড়ায় বাংলাদেশের ‘শ্যাম রাখি না কুল রাখি’-র মতো দোটানা অবস্থা তৈরি হয়েছে বলে কেউ কেউ মনে করছেন।

কিন্তু কোনোরূপ জনমত যাচাই না করে হঠাৎ আমাদের দেশের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে এমন ভাবনার উদয় হলো কেন?

তিস্তা পানি সমস্যা সমাধানের জন্য ভারত বার বার প্রতিশ্রুতি দেবার পরও কাজ হয়নি। এজন্য বিকল্প উপায় খুঁজে বের করেছি আমরা। সেটাতে নিবিষ্ট থাকতে সমস্যা কোথায়? এই দোদুল্যমানতা পরিহারে গভীরভাবে চিন্তা করতেই হবে। আর এজন্য আরো গভীরভাবে ভেবে ভারতের অর্থায়নের প্রস্তাবে সাড়া দেয়া উচিত। আগাম বড় কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ফেলা আরেকটি হঠকারিতা হতে পারে। তাই বিষয়টি অতি দ্রুত আরো গুরুত্ব দিয়ে ভাবা উচিত বলে বিশ্লেষকগণ মনে করছেন।

লেখক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের প্রফেসর ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সাবেক ডিন।

;

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *