আন্তর্জাতিক

কোটা বহালের রায়ের প্রতিবাদে জাবিতে বিক্ষোভ ও মহাসড়ক অবরোধ

ডেস্ক রিপোর্ট: প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে বাতিলকৃত মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহালের পক্ষে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও ঢাকা–আরিচা মহাসড়কে প্রতীকী অবরোধ পালন করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা।

বৃহস্পতিবার (৬ জুন) সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে জড়ো হয়ে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নেয়। পরবর্তীতে আন্দোলনকারীরা ঢাকা– আরিচা মহাসড়ক পাঁচ মিনিটের জন্য প্রতীকী অবরোধ করে।

সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের জন্য ২০১৮ সালে জারিকৃত পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে গতকাল বুধবার (৫ জুন) হাইকোর্টের বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের বেঞ্চের দেওয়া রায় দেন। এ রায়ে সরকারি চাকরিতে মেধাবী শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হবে বলে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা দাবি করেন।

আমাদের যে আন্দোলন এটা বৈষম্যমূলক ব্যবস্থার বিরুদ্ধের আন্দোলন মন্তব্য করে সমাবেশে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী আরিফ সোহেল বলেন, আমাদের সংবিধানে মুক্তিযুদ্ধের যে ঘোষণা পত্র আছে সেখানে তিনটি মূলনীতি উল্লেখ আছে সাম্য, সামাজিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার। কোটা পদ্ধতি আমাদের এই তিনটি মূলনীতির বিরুদ্ধে। আমরা আমাদের সংবিধানের এই তিনটি মূলনীতি বাস্তবায়নের জন্য আন্দোলন করছি।

এ সময় কোটা পদ্ধতি পুনর্বহালের রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী তৌহিদুল সিয়াম বলেন, কোটা পদ্ধতির মাধ্যমে যারা দিনের পর দিন পড়ালেখা করছে তাদের প্রতি বৈষম্য করা হয়। আমরা এই বৈষম্যমূলক প্রথার বিরুদ্ধে আন্দোলন করছি। অতি দ্রুত আমরা একটি সংগঠন দাঁড় করাবো।

স্বাধীনতার ৫৩ বছরে এসে সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ কোটা বহাল রাখাকে বৈষম্যমূলক উল্লেখ করে বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী আল মামুন বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা দেশের সূর্য সন্তান। তাদের আমরা শ্রদ্ধা করি। তবে কোটা পদ্ধতির মাধ্যমে আমাদের প্রতি অবিচার করা হচ্ছে। কোটা পদ্ধতি থাকলে আমার মতো সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের মেধার মূল্যায়ন পাবে না।

আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বললে তারা জানায়, অচিরেই আমরা একটি প্ল্যাটফর্মের আওয়াত আন্দোলন পরিচালনা করবে। আজ (বৃহস্পতিবার) রাতে আলোচনার ভিত্তিতে আগামীকালের কর্মসূচী ঘোষণা করা হবে।

উল্লেখ্য, কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ আন্দোলনের পর সরকারি চাকরিতে নবম থেকে ত্রয়োদশতম গ্রেডে নিয়োগের ক্ষেত্রে ৪৫% কোটা তুলে দিয়ে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগে সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। কোটা পর্যালোচনা কমিটির সুপারিশির ভিত্তিতে ২০১৮ সালের ৩ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এরপর ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর জারি করা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক পরিপত্রে বলা হয়, নবম গ্রেড (পূর্বতন প্রথম শ্রেণি) এবং ১০ম থেকে ১৩ তম গ্রেডের (পূর্বতন দ্বিতীয় শ্রেণি) পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া হবে; এবং নবম গ্রেড (পূর্বতন প্রথম শ্রেণি) এবং ১০ম থেকে ১৩তম গ্রেডের (পূর্বতন দ্বিতীয় শ্রেণি) পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি বাতিল করা হলো।

তবে এ সিদ্ধান্তে সময়ের প্রেক্ষাপটে কোনো অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জন্য কোটার প্রয়োজন দেখা দিলে বা কোটার অপরিহার্যতা দেখা দিলে সরকার ব্যবস্থা নিতে পারবে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। তিনি আরও বলেন, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণিতে যে ব্যবস্থা আছে তা বহাল আছে।

পরবর্তীতে ঐ পরিপত্র চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন অহিদুল ইসলামসহ সাত শিক্ষার্থী (মুক্তিযোদ্ধার স্নতান)৷ ঐ রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২১ সালের ৭ ডিসেম্বর রুল জারি করেন হাইকোর্ট৷

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *