সারাদেশ

দেশীয় শিল্প সুরক্ষায় শুল্ক বসলো যে সব পণ্যে

ডেস্ক রিপোর্ট: দেশীয় শিল্প সুরক্ষায় বিদেশ থেকে আমদানীকৃত কার্পেট, ফেরো এলয়, স্টিলের তার, পানি পরিশোধন যন্ত্র, সুইচ-সকেট, ইলেকট্রিক মোটর, মোবাইল, ল্যাপটপ সহ বিভিন্ন পণ্যে শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।

বৃহস্পতিবার (৬ জুন) জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত বাজেটে এ তথ্য জানান তিনি। এসময় উপস্থিত ছিলেন সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রপ্তানিমুখী শিল্পের বহুমুখী প্রসারের কৌশল হিসেবে বিভিন্ন উপখাতের জন্য শুল্ক-কর হাস/বৃদ্ধির কথা জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, কর্মসংস্থান সৃজন ও দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে শিল্প খাতের গুরুত্ব অপরিসীম। এছাড়াও উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের ক্ষেত্রে সম্ভাব্য বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় শিল্পখাতের পূর্ব প্রস্তুতি গ্রহণ আবশ্যক। বিনিয়োগ বৃদ্ধি, যথাযথ প্রতিরক্ষণের মাধ্যমে বিদ্যমান শিল্পের উৎপাদন ক্ষমতার সর্বোচ্চ ব্যবহার এবং রপ্তানিমুখী শিল্পের বহুমুখী প্রসারের কৌশল হিসেবে বিভিন্ন উপখাতের জন্য শুল্ক-কর হাস/বৃদ্ধির নিম্নরূপ প্রস্তাব করছি।

মোবাইল ফোন শিল্প: দেশে মোবাইল ফোন উৎপাদনে উৎসাহিত করতে উৎপাদনে ব্যবহৃত উপকরণ আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে জারীকৃত বিদ্যমান প্রজ্ঞাপনের কার্যকারিতার মেয়াদ ৩০ জুন, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ তারিখ পর্যন্ত বহাল রয়েছে। দেশীয় উৎপাদনকারী এ ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলিকে প্রদত্ত সহায়তা অব্যাহত রাখার জন্য উক্ত প্রজ্ঞাপনের কার্যকারিতার মেয়াদ ৩০ জুন, ২০২৬ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত বৃদ্ধি করার রাখা হয়েছে।

পানি পরিশোধন যন্ত্র উৎপাদনকারী শিল্প: গৃহস্থালীতে ব্যবহারযোগ্য পানি পরিশোধন যন্ত্র (Water Purifier) দেশে উৎপাদিত হওয়ায় এর আমদানিতে শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি করে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

সুইচ সকেট উৎপাদনকারী শিল্প: দেশে মানসম্মত সুইচ সকেট উৎপাদিত হওয়ায় দেশীয় শিল্প সুরক্ষায় আমদানীকৃত সুইচ, সম্পূর্ণ সকেট এবং এগুলোর পার্টসের ন্যূনতম মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে।

ইলেক্ট্রিক মোটর: ইলেক্ট্রিক মোটর ব্যবহার করা হয় মূলত বিভিন্ন শিল্পে মধ্যবর্তী পণ্য হিসেবে। তাই পণ্যটির দেশীয় কারখানা গড়ে উঠায় দেশীয় শিল্পকে উৎসাহ প্রধানে এই পণ্যটি থেকে কর অব্যাহতির প্রস্তাব রাখা হয়েছে।

মোটরসাইকেল যন্ত্রাংশ: দেশে মোটর সাইকেল সংযোজনকারী প্রতিষ্ঠানকে উৎসাহিত করতে মোটর সাইকেল এর ইঞ্জিন ইন সিকেডি এর পার্টসসমূহে ৩ (তিন) শতাংশের অতিরিক্ত আমদানি শুল্ক, রেগুলেটরি ডিউটি ও সম্পূরক শুল্ক হতে অব্যাহতি প্রদানের প্রস্তাব রাখা হয়েছে।

এয়ারক্রাফট ইঞ্জিন ও প্রপেলার: দেশীয় বিমান পরিচালনাকারী সংস্থাগুলো বিদেশি সংস্থাগুলোর তুলনায় প্রতিযোগিতায় ক্রমশ পিছিয়ে যাচ্ছে। এমতাবস্থায়, এভিয়েশন খাতের উত্তরণকল্পে এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা বিবেচনায় এয়ারক্রাফট ইঞ্জিন ও প্রপেলারের ওপর আমদানি পর্যায়ে প্রযোজ্য মূল্য সংযোজন কর প্রত্যাহার করার প্রস্তাব করা হয়।

ল্যাপটপ: বর্তমান সরকার ঘোষিত স্মার্ট বাংলাদেশ স্লোগান বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে ল্যাপটপ (Laptop) দেশীয় ভোক্তাদের নিকট সহজলভ্য করতে এবং নকল/Refurbished Laptop ক্রয়ের মাধ্যমে প্রতারণার হাত থেকে ক্রেতাদের রক্ষা করতে ল্যাপটপ এর আমদানি শুল্ক শতাংশ হতে বৃদ্ধি করে ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। একই সাথে আমদানি পর্যায়ে আরোপিত মুসক প্রত্যাহার করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে সর্বমোট করভার ৩১% হতে কমে ২০.৫০% এ গিয়ে দাঁড়াবে।

পুনঃপ্যাকেজিং শিল্প: পুনঃপ্যাকেজিং শিল্প উৎসাহিত করতে বাল্ক আকারে মিথাইল এলকোহল আমদানীতে শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব দিয়েছেন।

Polyester (Synthetic) Staple Fibre (PSF) শিল্প : Polyester (Synthetic) Staple Fibre (PSF) Pet Chips (Textile Grade) পণ্য দুইটিকে দেশী শিল্প সুরক্ষায় অন্য সকল শুল্ক মওকুফ করে আমদানি শুল্ক ১ শতাংশ রাখার প্রস্তাব রাখা হয়েছে।

Polypropylene Yarn: দেশে নতুন গড়ে উঠা এই শিল্পের বিকাশের লক্ষ্যে Polypropylene Yarn নামীয় পণ্যটির আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি কার্পেট উৎপাদনের অন্যতম মূল কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার হয়।

ম্যাংগানিজ: ম্যাংগানিজ আমদানিতে আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। ফেরো এ্যালয় রড, বার, এ্যাংগেল ইত্যাদি পণ্য উৎপাদনকালে তা পরিশোধন করার কাজে ব্যবহৃত হয়। ফেরো এ্যালয় নামীয় পণ্য উৎপাদনে একটি অপরিহার্য কাঁচামাল হচ্ছে ম্যাংগানিজ।

LRPC Wire: বর্তমানে দেশে বিভিন্ন ধরণের উৎকৃষ্ট মানের আয়রন এবং নন-এ্যালয় স্টিলের তার (wire) উৎপাদিত হচ্ছে যা ব্যবহৃত হলে বৈদেশিক মুদ্রার ওপর চাপ কমবে। ফলে, এ জাতীয় পণ্যের আমদানি পর্যায়ে শুল্ককর বৃদ্ধির মাধ্যমে আমদানিকে নিরুৎসাহিত করে দেশীয় শিল্পকে অধিকতর বিকাশে সহযোগিতা করতে LRPC Wire এর আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব রাখা হয়।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *