সারাদেশ

মাওলানা মামুনুল হকের মুক্তির দাবিতে দেশব্যাপী যুব মজলিসের বিক্ষোভ

ডেস্ক রিপোর্ট: মাওলানা মামুনুল হকের মুক্তির দাবিতে দেশব্যাপী যুব মজলিসের বিক্ষোভ

মাওলানা মামুনুল হকের মুক্তির দাবিতে গাজীপুরে যুব মজলিসের বিক্ষোভ, ছবি : সংগৃহীত

মাওলানা মুহাম্মাদ মামুনুল হকসহ কারাবন্দী সব আলেমের মুক্তি ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে শুক্রবার (১০ নভেম্বর) দেশব্যাপী জেলায় জেলায় ও মহানগরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ খেলাফত যুব মজলিস।

বিক্ষোভ পূর্ব সমাবেশে বক্তারা বলেন, মাওলানা মুহাম্মাদ মামুনুল হককে প্রায় তিন বছর ধরে সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট মামলা দিয়ে কারাগারে বন্দী করে নির্যাতন করা হচ্ছে। মাওলানা মামুনুল হকের জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে হয়রানিমূলক এসব কর্মকান্ডের কারণে সরকার বিপাকে পড়বে। মাওলানা মামুনুল হক দেশের আপামর জনসাধারণের প্রতিনিধি। তাকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে।

গাজীপুর জেলা ও মহানগরীর উদ্যোগে মহানগর সভাপতি হাফেজ কাজী নিজাম উদ্দিনের সভাপতিত্বে ও সহ-সভাপতি মাওলানা মোরশেদ কামালের পরিচালনায় প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ খেলাফত যুব মজলিসের কেন্দ্রীয় সংগঠন বিভাগের সম্পাদক মাওলানা ফজলুর রহমান। বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস গাজীপুর মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক মাওলানা ফারুক আহমদ নোমানী, যুব মজলিস গাজীপুর জেলা শাখার সংগঠন বিভাগের সম্পাদক মাওলানা আব্দুল মালেক, বাইতুল মাল সম্পাদক কারী আবু বুকর, প্রশিক্ষণ বিভাগের সম্পাদক মুফতি ফয়জুল্লাহ ফরিদী, মহানগর শাখার সংগঠন বিভাগের সম্পাদক মুফতি আবরারুল হক নোমান কাসেমী, বাইতুল মাল বিভাগের সম্পাদক মাওলানা রুহুল আমিন, প্রকাশনা বিভাগের সম্পাদক মাওলানা মনজুরুল হক নোমান, কারী আনোয়ার হোসাইন প্রমুখ।

সিলেটের কোর্ট পয়েন্টে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে খেলাফত যুব মজলিস সিলেট জেলা ও মহানগর। জেলা সভাপতি মুফতি মুহাম্মদ মাহবুবুল হকের সভাপতিত্বে ও মহানগর সদস্য হাফেজ মাওলানা মিজানুর রহমানের পরিচালনায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় সমাজকল্যাণ সম্পাদক মাওলানা সামীউর রহমান মুসা।

চট্টগ্রাম মহানগরীর উদ্যোগে মহানগর সভাপতি মাওলানা রেদওয়ানুল ওয়াহেদের সভাপতিত্বে ও সহ-সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আরিফ মাহমুদের পরিচালনায় প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি মাওলানা ইমদাদুল্লাহ সোহাইল।

নোয়াখালীর প্রধান বাণিজ্যিক শহর চৌমুহনীতে জেলা সভাপতি মাওলানা খালেদ মাহমুদের সভাপতিত্বে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সহ-সভাপতি মাওলানা হাবিবুর রহমানের পরিচালনায় বিক্ষোভ মিছিলপূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস নোয়াখালী দক্ষিণ জেলার সভাপতি মাওলানা আবদুল কাইয়ুম মামুন। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ খেলাফত ছাত্র মজলিসের কেন্দ্রীয় সহকারী সাহিত্য, সংস্কৃতি ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক শাহ মুহাম্মদ জুনায়েদ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস নোয়াখালী দক্ষিণ জেলার সহ সভাপতি ডাঃ শাহাদাত হোসেন ও বিশিষ্ট লেখক, গবেষক মাওলানা মমিনুল হক চৌধুরী।

ফরিদপুর জেলা শাখার উদ্যোগে আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিল জনতা ব্যাংকের মোড় হয়ে প্রেসক্লাবে গিয়ে শেষ হয়। এতে যুব মজলিস ফরিদপুর জেলা শাখার সংগঠন বিভাগের সম্পাদক মুফতি মাহবুবুর রহমানের পরিচালনায় সভাপতিত্ব করেন যুব মজলিস ফরিদপুর জেলা শাখার সভাপতি মাওলানা মিজানুর রহমান। বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ফরিদপুর জেলা শাখার সভাপতি মাওলানা আমজাদ হোসাইন, সহ-সভাপতি মাওলানা সুবহান মাহমুদ, যুব মজলিস ফরিদপুর জেলা শাখার সহ-সভাপতি মুফতি মাহমুদুল কবির, খেলাফত ছাত্র মজলিস ফরিদপুর জেলা শাখার সভাপতি মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ প্রমুখ।

দেশের বিভিন্ন জেলায় বাংলাদেশ খেলাফত যুব মজলিসের বিক্ষোভ, ছবি : সংগৃহীত ময়মনসিংহ জেলা শাখার উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। সহ-সভাপতি মাওলানা হাবিবুর রহমানের পরিচালনায় এতে সভাপতিত্ব করেন জেলা সভাপতি মাওলানা রেজাউল করিম।

কিশোরগঞ্জ শহরের শহীদী মসজিদের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়, শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট ঘুরে শহীদী মসজিদের সামনে সমাবেশ এবং দোয়ার মাধ্যমে শেষ হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ খেলাফত যুব মজলিস কিশোরগঞ্জ জেলা সভাপতি মাওলানা মুহাম্মাদ আলী। বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস কিশোরগঞ্জ সদর শাখার সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মিসবাহ উদ্দিন, যুব মজলিস করিমগঞ্জ উপশাখার সভাপতি মাওলানা মামুনুর রশিদ, যুব মজলিস জেলা নির্বাহী সদস্য মাওলানা আইনুল ইসলাম, মুহাম্মাদ হাবীবুর রহমান, বাংলাদেশ খেলাফত ছাত্র মজলিস কিশোরগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি মুহাম্মাদ মোকাররম হোসাইনসহ প্রমুখ।

সুনামগঞ্জে মাওলানা সাইদুর রহমান সাইদের সভাপতিত্বে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন মাওলানা আব্দুল খালেক। এছাড়া হাফেজ আব্দুল্লাহ, হাফেজ আনোয়ার হোসেনসহ জেলার দায়িত্বশীলগণ উপস্থিত ছিলেন।

চাঁদপুরে মাওলানা রুহুল আমিন নেয়ামতের সভাপতিত্বে মাওলানা তারেক হাসানের পরিচালনায় বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে শহর প্রদক্ষিণ করে।

টাঙ্গাইল জেলা প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে সংগঠন বিভাগের সম্পাদক মাওলানা আবু বকরের পরিচালনায় সভাপতিত্ব করেন জেলা সভাপতি মাওলানা কামরুল ইসলাম। এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

গাজাবাসীর পাশে দাঁড়াতে কাবার ইমামের আবেদন

শায়খ ড. আবদুর রহমান আস-সুদাইস। ছবি : সংগৃহীত

দখলদার ইসরায়েলের বর্বরতার শিকার ফিলিস্তিনিদের জন্য অনুদান ও সাহায্য দিয়ে তাদের পাশে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন মক্কার পবিত্র মসজিদুল হারামের ইমাম ও ধর্মবিষয়ক পরিচালনা পর্ষদের প্রধান শায়খ ড. আবদুর রহমান আস-সুদাইস। তিনি সৌদি সরকারের উদ্যোগে চালু হওয়া অনুদান তহবিলে অর্থ দিয়ে নিপীড়িত মুসলিমদের পাশে দাঁড়াতে বলেন। গত বুধবার পবিত্র দুই মসজিদের ধর্মবিষয়ক বিভাগ প্রকাশিত এক্সের এক ভিডিও বার্তায় এ আহ্বান জানান তিনি।

শায়খ আবদুর রহমান আস-সুদাইস বলেন, মুসলিমরা পরস্পর ভাই ভাই। তাদের একে অন্যের দুর্দিনে পাশে দাঁড়ায়। আল্লাহতায়ালা তার পথে অর্থ ব্যয়ের নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, তোমরা আল্লাহকে সাহায্য করলে তিনি তোমাদের সাহায্য করবেন। তা ছাড়া হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) মুমিনদের পারস্পরিক ভালোবাসাকে একটি দেহের সঙ্গে তুলনা দিয়ে বলেছেন, মুমিনদের পারস্পরিক দয়া ও ভালোবাসা একটি দেহের মতো; দেহের একটি অঙ্গ রোগাক্রান্ত হলে দেহের সব অঙ্গ রাত জাগে এবং জ্বরে ভোগে। অতএব, একে অন্যের সাহায্যে এগিয়ে আসা মুমিনদের কর্তব্য। এ সময় তিনি কেএস রিলিফের অনুদান তহবিলে অংশ নিতে বলেন।

গত ২ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে রিয়াদভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবিক সহায়তা সংস্থা কিং সালমান হিউম্যানিটেরিয়ান এইড অ্যান্ড রিলিফ সেন্টারের (কেএস রিলিফ) মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহ শুরু হয়। সৌদি আরবের বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ ও ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের পক্ষ থেকে ৫০ মিলিয়ন রিয়াল অনুদান দেওয়ার মাধ্যমে তা চালু হয়। এর মাধ্যমে এখন পর্যন্ত সাত মিলিয়ন রিয়ালের বেশি অর্থ সংগৃহীত হয়।

এরই মধ্যে ৩৫ টন ত্রাণ সহায়তা নিয়ে সৌদি আরবের প্রথম কার্গো বিমান মিসরে পৌঁছেছে।

;

ভূমিপল্লী আবাসন জামে মসজিদ : একটি আদর্শ মসজিদের উদাহরণ

ভূমিপল্লী আবাসন জামে মসজিদ, ছবি : সংগৃহীত

মসজিদ অর্থ সেজদা বা নামাজের স্থান। মসজিদ নির্মাণের প্রধান উদ্দেশ্য নামাজ আদায়। কিন্তু শুধু নামাজ আদায়ের মাধ্যমেই মসজিদের হক পুরোপুরি আদায় হয় না। একটি মসজিদ তখনই আদর্শ মসজিদ হয়ে ওঠে, যখন মসজিদটি নামাজের পাশাপাশি নানাবিধ দীন ও জনকল্যাণমূলক কাজের কেন্দ্র হয়ে ওঠে, যেমনটি ছিল হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মসজিদ।

সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জের ভূমিপল্লী আবাসন জামে মসজিদ এমন এক আদর্শ মসজিদের উদাহরণ হয়ে উঠেছে। বিশেষত, বিশিষ্ট দাঈ, জনপ্রিয় আলোচক শায়খ আহমাদুল্লাহ জুমার নামাজের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই মুসল্লিদের ঘিরে মসজিদটি কর্মতৎপরতা ও কর্মচঞ্চলতা বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ইতোমধ্যে বিজ্ঞজনদের দৃষ্টি কাড়তে সক্ষম হয়েছে। ভূমিপল্লী আবাসন জামে মসজিদকে ঘিরে কর্মতৎপরতার কয়েকটি হলো-

পবিত্র কোরআন শিক্ষার আসর
মানবজাতির হেদায়েতের জন্য নাজিল হয়েছে কোরআন মাজিদ। দুঃখের বিষয় হলো, এদেশের অধিকাংশ মানুষ কোরআন মাজিদ পড়তে পারেন না বা যারা পারেন তাদের তেলাওয়াত শুদ্ধ নয়। এই সংকট ঘোচানোর জন্য আলোচ্য মসজিদে বয়স্ক ও শিশুদের জন্য কোরআন মাজিদ শেখার কোর্স চলমান রয়েছে।

অবকাঠামোগত উন্নয়ন
শায়খ আহমাদুল্লাহ যখন মসজিদটির খতিবের দায়িত্ব নেন, তখন মসজিদটি ছিল একতলা। সে সময় জুমার দিনে মুসল্লিদের যে উপস্থিতি থাকত তাতে একতলাই যথেষ্ট ছিল। কিন্তু শায়খ আহমাদুল্লাহ খতিব হওয়ার পর মুসল্লিদের সংখ্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেতে থাকে। মুসল্লিদের চাপ সামলাতে বর্তমানে মসজিদটির চারতলায় উন্নীত হয়েছে। প্রত্যেক জুমায় এখানে প্রায় চার হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করেন। শায়খ আহমাদুল্লাহর বয়ান ও খুতবা শোনার জন্য অনেক দূর-দূরান্ত থেকে মুসল্লিরা এই মসজিদে উপস্থিত হন।

প্রশ্নোত্তর পর্বে মুসল্লিদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন শায়খ আহমাদুল্লাহ প্রশ্নোত্তর পর্ব
প্রত্যেক শুক্রবারে জুমার নামাজ শেষে মুসল্লিদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে প্রশ্নোত্তর সেশন অনুষ্ঠিত হয়। প্রশ্নের উত্তর প্রদান করেন খতিব শায়খ আহমাদুল্লাহ। এই সেশনের মাধ্যমে মুসল্লিরা তাদের জীবনঘনিষ্ঠ সমস্যার সঠিক সমাধান পেয়ে থাকেন।

আলোচনা সংরক্ষণ ও অনইয়ারে পাবলিশড
এই মসজিদের প্রত্যেক জুমুআর বয়ান ও প্রশ্নোত্তর পর্ব রেকর্ড করা হয় এবং দেশ ও দেশের বাইরে অবস্থান করা মুসলিমদের জন্য অনলাইনে পাবলিশড করা হয়। যেন মসজিদে উপস্থিত নির্দিষ্টসংখ্যক মুসল্লিদের বাইরেও অসংখ্য মানুষের কাছে মিম্বরের বার্তা পৌঁছে যায়।

দর্শনার্থীদের ভিড়
শায়খ আহমাদুল্লাহ জনপ্রিয় ও গ্রহণযোগ্য আলেম হওয়ার কারণে জুমার নামাজের পর খতিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও দোয়া নেওয়ার জন্য দর্শনার্থীদের ভিড় পরিলক্ষিত হয়, যে দৃশ্য অন্যান্য মসজিদে সচরাচর দেখা যায় না।

সেবামূলক কাজ
এই মসজিদ থেকে নানা ধরনের সামাজিক সেবামূলক কাজের নেতৃত্ব দেয়া হয়। যেমন- শীতবস্ত্র বিতরণ, ইফতার বিতরণ, কোরবানির গোশত বিতরণ ও বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি ইত্যাদি।

ভূমিপল্লী আবাসন জামে মসজিদের মতো এদেশের সকল মসজিদ থেকে যদি মুসল্লিদের দীনি ও নৈতিক মূল্যবোধের উন্নতির জন্য নানামুখী সংস্কারমূলক কর্মকাণ্ড হাতে নেওয়া হয়, তবে এদেশের ইসলাম ও মুসলমানদের চিত্র বদলে যেতে খুব বেশি সময় লাগবে না বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

;

মধ্যপ্রাচ্যে পশ্চিমা পণ্য বর্জনের হিড়িক, তুরস্কে কোকা-কোলা নিষিদ্ধ

ইসরায়েল ও পশ্চিমা পণ্য বর্জনের দাবি দিন দিন জোড়ালো হচ্ছে

গাজায় সঙ্ঘাত চলার মধ্যে ইসরায়েলকে সমর্থন দেওয়ার জেরে বিশ্বখ্যাত কোম্পানি কোকা-কোলা ও নেসলের পণ্য পার্লামেন্ট ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে তুরস্ক। সরকারি এক বিবৃতিতে এ কথা জানানো হয়েছে এবং একজন কর্মকর্তা এ দুই কোম্পানির নাম বলেছেন।

তুরস্কের গ্র্যান্ড ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি বলেছে, ‘ইসরায়েলকে সমর্থন দেওয়া কোম্পানিগুলোর পণ্য পার্লামেন্ট এলাকার রেস্তোরাঁ, ক্যাফেটেরিয়া ও চায়ের দোকানগুলোতেও বিক্রি করা হবে না।’

বিবৃতিতে বলা হয়, পার্লামেন্ট স্পিকার নুমান কুর্তুলমুস এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধাপরাধ এবং নিরীহ মানুষ হত্যার পরও প্রকাশ্যে ইসরায়েলকে সমর্থন দিয়েছে যেসব কোম্পানি, তাদের পণ্য বয়কট করা নিয়ে গণমানুষের ভাবাবেগের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করতেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন স্পিকার।

এ দিকে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে পশ্চিমা পণ্য বর্জনের হিড়িক পড়েছে। আল জাজিরার খবরে এ সংক্রান্ত কিছু ঘটনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন বাহরাইনের একটি দোকানে ১৪ বছরের জানা আবদুল্লাহ ট্যাব নিয়ে প্রবেশ করে। গাজায় ইসরায়েলের হামলার মধ্যে ট্যাবে সে পশ্চিমা ব্র্যান্ডগুলোর তালিকা বের করে, যাতে এগুলো চিহ্নিত করে বর্জন করা যায়। জানা ও তার ১০ বছর বয়সী ভাই আলি প্রায় নিয়মিতই পার্শ্ববর্তী ম্যাকডোনাল্ডসে গিয়ে কিছু না কিছু খেত। কিন্তু এখন তারা মধ্যপ্রাচ্যের অনেকের মতোই এর পণ্য বর্জন করছে। কারণ, তারা মনে করে, এসব পণ্য কিনে ইসরায়েলকে সহায়তা করা হচ্ছে।

টিকটকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্টারবাকস, কেএফসি ও কারিফোরের মতো ব্র্যান্ডগুলো বর্জন করতে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। এতে মধ্যপ্রাচ্যে শিশুসহ সব বয়সের মানুষ এগুলো বর্জন করছে। জানা এএফপিকে বলে, ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানাতে তারা ইসরায়েলকে সমর্থন করা কোম্পানিগুলোর সব পণ্য বর্জন শুরু করছে। তারা চায় না তাদের অর্থ আরো হামলায় ভূমিকা রাখুক। বিকল্প হিসেবে স্থানীয় ব্র্যান্ডগুলোর দিকে নজর তাদের।

কুয়েতের এই বিলবোর্ডে প্রশ্ন ছুড়ে দেওয়া হয়েছে- ‘আপনি কি আজ একজন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছেন?’ গত ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ব্যাপক হামলা ও হত্যাযজ্ঞ শুরু করে ইসরায়েল। বন্ধ করে দেওয়া হয় পানি, খাবার, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি। স্কুল, হাসপাতাল, অ্যাম্বুলেন্স, শরণার্থী শিবিরসহ সব জায়গায় বেপরোয়া হামলা চালাতে থাকে ইসরায়েল। এতে এ পর্যন্ত ১০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। তাদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু।

এর জেরে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ইসরায়েলবিরোধী মনোভাব তীব্র হয়েছে। আরব দেশগুলোতে সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ বিরাজ করছে। লোকজন ইসরায়েলের পশ্চিমা মিত্র, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের ব্র্যান্ডগুলোকেও বর্জন শুরু করেছে। এ পরিস্থিতিতে ইসরায়েলের সঙ্গে আরব দেশগুলোর সম্পর্ক ছিন্ন করার দাবি উঠেছে। এসব দেশের প্রধান প্রধান শহরে ফিলিস্তিনের সমর্থনে ব্যাপক বিক্ষোভ হচ্ছে। তুরস্ক ও জর্দান ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছে। সৌদি আরব ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার আলোচনা স্থগিত করেছে। বাহরাইনের পার্লামেন্ট বাণিজ্য সম্পর্ক স্থগিত রাখার ঘোষণা দিয়েছে।

গাজায় ইসরায়েলের হামলায় আহত শিশুর ব্যান্ডেজ করা মুখ ঠাঁই পেয়েছে কুয়েত সিটির চার লেনের মহাসড়কের পাশে বিশাল বিলবোর্ডে। যারা এখনো মধ্যপ্রাচ্যে পশ্চিমা ব্র্যান্ডের পণ্য কিনছে, তাদের প্রতি ওই বিলবোর্ডে প্রশ্ন ছুড়ে দেওয়া হয়েছে- ‘আপনি কি আজ একজন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছেন?’

কুয়েতের অধিকারকর্মী মিশারি আল-ইবরাহিম বলেন, গাজায় ইসরায়েলের হামলায় পশ্চিমা দেশগুলোর সমর্থন কুয়েতে ‘বর্জনের ডাক’ কে আরো শক্তিশালী করেছে। এটা কুয়েতের মানুষের কাছে একটি ধারণাকে তুলে ধরেছে- পশ্চিমারা মানবাধিকার নিয়ে যে স্লোগান দেয় বা বলে, তা তাদের জন্য প্রযোজ্য নয়।

বর্জনের প্রধান লক্ষ্যে পরিণত হয়েছে ম্যাকডোনাল্ডস। গত মাসে মার্কিন ফাস্টফুড চেইনটির ইসরাইলি শাখাপ্রধান ঘোষণা দেন, তারা ইসরায়েলি সেনাদের হাজার হাজার প্যাকেট খাবার বিনামূল্যে দিয়েছে। এ নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে বিতর্ক শুরু হয়। এ প্রেক্ষাপটে কুয়েতের ম্যাকডোনাল্ডস (মূল ব্র্যান্ডের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়) গাজায় এক লাখ ৬০ হাজার ত্রাণসহায়তা দেয়ার ঘোষণা দেয়। সামাজিক মাধ্যমে তারা ফিলিস্তিনিদের সঙ্গেও সংহতি প্রকাশ করে। একই পদক্ষেপ নেয় কাতারের ম্যাকডোনাল্ডস।

কাতারে বেশ কয়েকটি পশ্চিমা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মালিক অনলাইনে ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন জানিয়েছিলেন। অক্টোবরেই কাতারের রাজধানী দোহায় মার্কিন ক্যাফে পুরা ভিদা মিয়ামি ও ফ্রান্সের প্যাস্ট্রি কোম্পানি মাইত্রি চোক্স বন্ধ হয়ে গেছে।

;

জুমার নামাজের আগে চার রাকাত সুন্নতের গুরুত্ব

মসজিদে নববিতে নামাজের অপেক্ষায় মুসল্লিরা

জুমার নামাজের দ্বিতীয় আজানের আগে চার রাকাত সুন্নত নামাজ পড়াকে ‘কাবলাল জুমা’ বলে। এটি শরিয়তের দ্বিতীয় উৎস হাদিস ও আসার তথা সাহাবা ও তাবেয়িনদের মুতাওয়াতির (ধারাবাহিক কর্মধারা) আমল দ্বারা প্রমাণিত।

জুমার পূর্বে নবীজির নামাজ
জুমার দ্বিতীয় আজানের আগে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) অধিক নামাজ পড়তেন এবং সাহাবাদেরকে এর প্রতি উৎসাহ দিতেন৷ তবে তিনি নফল পড়ার পাশাপাশি নিয়মিত খুতবার পূর্বে চার রাকাত এবং নামাজ শেষ করে চার রাকাত সুন্নত পড়তেন।

হজরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) জুমার পূর্বে চার রাকাত এবং পরে চার রাকাত সুন্নত পড়তেন। -আল মুজামুল আওসাত : ১৬১৭

এ প্রসঙ্গে হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকেও একটি হাদিস বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) জুমার পূর্বে এবং পরে চার রাকাত সুন্নত পড়েছেন। -আল মুজামুল কাবির : ১২৬৭৪

সাহাবি ও তাবেয়িনদের কর্মধারা
হজরত আবু আবদুর রহমান আসসুলামি থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) আমাদেরকে জুমার পূর্বে চার রাকাত এবং পরে চার রকাত পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। -মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক : ৫৫২৫

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি জুমার পূর্বে চার রাকাত পড়তেন। আর এ চার রাকাতের মাঝে কোনো সালাম ফিরাতেন না। অতঃপর জুমা শেষে দুই রাকাত এবং তারপরে চার রাকাত পড়তেন। -শরহু মাআনিল আসার : ১৯৬৫

হজরত ইবরাহিম নাখয়ি (রহ.) বলেন, তারা (সাহাবায়ে কেরাম) জুমার পূর্বে চার রাকাত আদায় করতেন। -মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা : ৫৪০৫

এই নস দ্বারা স্পষ্ট জানা যায় সাহাবায়ে কেরাম জুমার আগে চার রাকাত নামাজ পড়তেন। আর ইবাদাত সংক্রান্ত বিষয়ে সাহাবায়ে কেরামের আমল বা মন্তব্য ‘মারফু’ তথা হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর আমল হিসেবে ধর্তব্য।

উপরোক্ত মারফু, মাউকুফ, মাকতু হাদিস ও আসার দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত যে, জুমার আগে চার রাকাত নামাজ সুন্নত এবং তা হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.), সাহাবা ও তাবেয়িসহ সব যুগের উলামায়ে কেরামের ওপরই আমল করতেন।

কাবলাল জুমা নামাজ সুন্নতে মোয়াক্কাদা
উম্মাহর অধিকাংশ ইমামদের মতে জুমার নামাজের আগের সুন্নত হলো- সুন্নতে মোয়াক্কাদা। আর ইমামগণ নসের আলোকেই সুন্নতে মোয়াক্কাদা বলেছেন। কারণ নফল নামাজের বিষয়ে উৎসাহ দেওয়া যায়, আদেশ দেওয়া যায় না। আদেশ করার অর্থ, এই নামাজ অন্তত সুন্নতে মোয়াক্কাদা, যেমন পরের চার রাকাত সুন্নতে মোয়াক্কাদা।

এ বিষয়ে ইমাম ইবনে রজব হাম্বলি (রহ.) বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। তিনি বলেন, এই বিষয়ে ইজমা আছে যে, জুমার আগে সূর্য ঢলার পর নামাজ পড়া উত্তম আমল। তবে ইমামরা এই বিষয়ে মতানৈক্য করেছেন যে, জুমার আগের সুন্নত জোহরের আগের চার রাকাতের মতো মোয়াক্কাদা, নাকি আসরের আগের সুন্নতের মতো মোস্তাহাব?

এক্ষেত্রে অধিকাংশ ইমামদের মত হলো, জুমার আগের সুন্নত হলো- সুন্নতে মোয়াক্কাদা বা রাতিবা। এটি ইমাম আওজায়ি, সুফিয়ান সাওরি, ইমাম আবু হানিফা এবং তার ছাত্রদের কথা। ইমাম আহমদ ও ইমাম শাফেয়ি (রহ.)- এর মতও এমন। -ফাতহুল বারি : ৫/৫৪২-৫৪৪

জুমার দিন যাদের ক্ষমা করা হয়
ইসলামে সাপ্তাহিক দিনগুলোর মধ্যে জুমার দিনকে মর্যাদাপূর্ণ দিন হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। কোরআন ও হাদিসে এই দিনের বিশেষ সম্মান ও মর্যাদা বর্ণিত হয়েছে।

জুমার দিনের বিশেষ মর্যাদা
শেষ নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর উম্মতের জন্য এই দিনটি বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ। হজরত হুজাইফা ইবনুল ইয়ামান (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আল্লাহতায়ালা আগের জাতিগুলোর কাছে জুমার মর্যাদা অজ্ঞাত রাখেন। তাই ইহুদিরা শনিবার নির্ধারণ করে। আর খ্রিস্টানরা রবিবার নির্ধারণ করে। অতঃপর আমরা আসি। আমাদের কাছে তিনি জুমার দিনের মর্যাদা প্রকাশ করেন।’ -সহিহ মুসলিম : ৮৫৬

;

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *