আন্তর্জাতিক

চট্টগ্রাম নগরীতে ব্যবসাবান্ধব উন্নয়নে বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ চাই: শাহজাহান চৌধুরী

ডেস্ক রিপোর্ট: ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের ঘোষিত বাজেট নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন চট্টগ্রাম নগর জামায়াতে আমীর, সাবেক এমপি ও জামায়াতের সংসদীয় দলের সাবেক হুইপ শাহজাহান চৌধুরী। তিনি চট্টগ্রাম নগরীতে ব্যবসাবান্ধব উন্নয়নে বাজেটে বিশেষ বরাদ্দের আহ্বান জানিয়েছেন।

শুক্রবার (৭ জুন) বিকেলে এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানান তিনি। জামায়াত নেতা শাহজাহান চৌধুরী বলেন, জাতীয় সংকট মোকাবেলায় কোন দিক নির্দেশনা এই বাজেটে নেই। এই বাজেটে জনগণের কল্যাণ হবে না বরং জনদুর্ভোগ বাড়াবে।

বিবৃতিতে তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে চট্টগ্রাম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। চট্টগ্রাম বন্দর, বিশ্বের প্রাচীনতম বন্দরগুলির একটি। শুধু অর্থনৈতিক দিক নয়, চট্টগ্রাম সৌন্দর্যের দিক থেকেও অনন্য। কিন্তু চট্টগ্রাম ধীরে ধীরে তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য হারিয়ে ইট পাথরের নগরীতে পরিণত হচ্ছে। সঠিক পরিকল্পিত উন্নয়নের অভাবে চট্টগ্রাম মহানগরী বর্তমানে তার স্বকীয়তা হারাচ্ছে। অবৈধ স্থাপনা গড়ে তোলায় সামান্য বৃষ্টিতে জলজট কোথাও স্থায়ী জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষ একের পর এক মাস্টার প্ল্যান করে চট্টগ্রামকে ধ্বংসের নগরীতে পরিণত করছে।

বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, অনির্বাচিত জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের জন্য ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার যে উচ্চাকাঙ্খি মোটা অংকের ঘাটতি বাজেট পেশ করেছেন, তা বাস্তবতা বিবর্জিত। গত বছরের বাজেটও সরকার পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করতে পারেনি। এবারের প্রস্তাবিত বাজেটও সরকার পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করতে পারবে না।

সাবেক হুইপ শাহজাহান চৌধুরী বলেন, অর্থমন্ত্রী ‘সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ও স্মাার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের অঙ্গীকার’ শীর্ষক শিরোনামে বাজেট জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করেছেন। বাস্তবে বাংলাদেশকে সুখী ও সমৃদ্ধ করার পরিবর্তে দুর্নীতি ও দুঃশাসনের মাধ্যমে এবং বিদেশে অর্থপাচারের ব্যবস্থা করে ও দুর্নীতিবাজদের সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে বাংলাদেশকে সমৃদ্ধ করার পরিবর্তে দেশকে অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে বর্তমান সরকার।

তিনি আরও বলেন, প্রস্তাবিত বাজেট ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের তুলনায় ১১ দশমিক ৫৬ শতাংশ বেশি। এবার ব্যয় বেড়েছে ৮২ হাজার ৫ শত ৮২ কোটি টাকা। বড় অংকের ব্যয় মেটাতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে ৪ লাখ ৯৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে দেওয়া হয়েছে। এটি অর্জন করতে চলতি সংশোধিত বাজেট থেকে ৬৬ হাজার কোটি টাকা বেশি আহরণ করতে হবে। যা বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন অর্থনীবিদরা। বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা। বাকি ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। চলতি অর্থ বছরে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৭ শতাংশের বেশি নির্ধারণ করা হয়েছে। আগামী অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ হতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

মহানগরী আমীর বলেন, বাজেটে ব্যক্তি শ্রেণির আয় সীমা গতবছরের মতই রাখা হয়েছে, যা গ্রহণযোগ্য নয়। বেশি আয়ের লোকদের আয়করের সীমা ২৫ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি করে ৩০ শতাংশ করা হয়েছে। রাজস্ব আয় বাড়ানোর জন্য ভ্যাট ও আমদানি শুল্কখাতে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছে। স্থানীয় শিল্পের কর অবকাশ ও ভ্যাট অব্যাহতির সুবিধা সংকুচিত করা হয়েছে। এতে দেশীয় পণ্যের উৎপাদন খরচ বাড়বে। পাশাপাশি এসি ও এলইডি তৈরির উপকরণ আমদানিতে শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। ফলে এসি ও টিভির মূল্যসহ বৈদ্যুতিক জিনিসপত্রের মূল্য বৃদ্ধি পাবে। মোবাইল ফোনে কথা বলা ও ইন্টারনেট ব্যবহারের ওপর সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধি করা হয়েছে। এতে ভোক্তার খরচ বৃদ্ধি পাবে। বাজেটে ১৫ শতাংশ কর দিয়ে অপ্রদর্শিত অর্থ অর্থাৎ কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রাখা হয়েছে। যা কোনোভাবেই সমর্থন যোগ্য নয়।

শাহজাহান চৌধুরী আরও বলেন, বর্তমান আওয়ামী সরকার ক্ষমতায় আসার পর নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রীর দাম অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। ঘোষিত বাজেটে দাম আরও বৃদ্ধি করা হয়েছে। সরকার ক্ষমতায় আসার সময় ১০ টাকা কেজি দরে চাল খাওয়ানোর ঘোষণা দিলেও বাস্তবে ৬০/৭০ টাকার নিচে বাজারে কোনো চাল নেই। ডাল, তেল, মাছ, মুরগী, ডিম, দুধ ও শিশু খাদ্যের দাম লাগামহীনভাবে বেড়েই চলেছে। দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের জীবিকা নির্বাহ এখন দুঃসহ হয়ে পড়েছে। সরকার দলীয় লোকজন কর্তৃক বাজার নিয়ন্ত্রণ ও সিন্ডিকেটের ফলে সাধারণ মানুষ তাদের নিকট জিম্মি হয়ে পড়েছে। মূলত সরকারের ছত্রছায়ায় এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী কারসাজি করে পণ্যের মূল্য তাদের ইচ্ছে মত বাড়িয়ে দিচ্ছে। একদিকে দ্রব্য মূল্যের ঊর্ধ্বগতি অপরদিকে ব্যবসা-বাণিজ্যে দুরবস্থা ও শিল্প-কারখানা বন্ধ হয়ে চাকুরি হারিয়ে সাধারণ মানুষের জন্য বেঁচে থাকা এখন খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *