সারাদেশ

‘পরিবেশ দূষণে মানসিক রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ’

ডেস্ক রিপোর্ট: পরিবেশ দূষণের ফলে মানুষ মানসিক রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। তাছাড়া পরিবেশ দূষণ বুদ্ধিমত্তার ব্যাপক হ্রাস ঘটায় এবং মানসিক রোগ ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রম ছাড়াও মানুষের শরীরের প্রতিটি অঙ্গকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

বুধবার (০৭ জুন) বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষ্যে চ্যারিটি সংস্থা এইডমিইউকে আয়োজিত ‘এনভায়রনমেন্টাল কেয়ার ফর মেন্টাল রিপেয়ার’ শীর্ষক জনসচেতনতামূলক কর্মসূচিতে বক্তারা এসব তথ্য জানান।

যুক্তরাজ্যের ইয়র্ক সিটির শ্যামবলস কর্ণারের সামনে অনুষ্ঠিত কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন-এইডমিইউকের সিইও মাকসুদ রহমান, ফিনান্স ডিরেক্টর দেওয়ান ছয়েফ আহমেদ, প্রোজেক্ট ও প্লানিং ডিরেক্টর জিহান আহমেদ চৌধুরী, হেড অব কমিউনিকেশনস রিয়াজ চৌধুরী, হেড অব ইভেন্ট আনামু হক কায়েস, হেড অব ভলানটিয়ার আব্দুস শহিদ, ইভেন্ট প্ল্যানার মোহাম্মদ তাজিম উল্লাহ।

কর্মসূচিতে বিভিন্ন গবেষণার তথ্য তুলে ধরে বক্তারা বলেন, পরিবেশ দূষণের কারণে বিষণ্নতা, উদ্বেগ, সাইকোসিস এবং স্নায়ুরোগ ডিমেনশিয়া হতে পারে। কিশোর-কিশোরদের মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হতে পারে। 

গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, দরিদ্র আবাসন, অত্যধিক ভিড়, সবুজ স্থানের অভাবের কারণে এসব মানসিক সমস্যা দেখা দিচ্ছে। চাইলে পরিবেশদূষণ রোধ করা যায়। এর জন্য নানা রকম যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা যেতে পারে। যেমন প্রযুক্তির সাহায্যে তুলনামূলক কম দূষিত বায়ু নির্গমন হয় এমন অঞ্চল সম্প্রসারণ করা। বায়ু দূষণের আওতায় আসা প্রতিটি ব্যক্তির মানসিক স্বাস্থ্য চিকিৎসা নিশ্চিত করার চেয়ে সেটি সহজ।

কর্মসূচিতে উল্লেখ করা হয়, ব্রিটিশ জার্নাল অব সাইকিয়াট্রিতে প্রকাশিত পর্যালোচনা অনুসারে, দূষণ বায়ুর গুণমান মানসিক স্বাস্থ্যকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করে।

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কাম ভুইয়ের নেতৃত্বে, ইউকেআরআই-অর্থায়িত বায়োএয়ারনেট প্রোগ্রামের গবেষকরা প্রমাণ পেয়েছেন যে, বায়ু দূষণের কারণে বিষণ্নতা, উদ্বেগ, সাইকোসিস এবংস্নায়ুরোগ ডিমেনশিয়া হতে পারে। অধ্যাপক ভুই বলছেন, ‘’বায়ু দূষণ এবং মানসিক স্বাস্থ্য উভয়ই প্রধান চ্যালেঞ্জ যা বিশ্বকে এখন এবং আগামী কয়েক বছর ধরে মোকাবিলা করতে হবে। আমাদের পর্যালোচনা দেখায় যে, খারাপ বায়ুর গুণমান এবং দুর্বল মানসিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি নির্দিষ্ট মানসিক ব্যাধিগুলোর যোগসূত্রের প্রমাণ রয়েছে। বিশেষ করে, জৈব এরোসলসহ দূষণকারী বায়ু কণা জড়িত রয়েছে। 

অধ্যাপক ভুই আরও বলেন, ‘খারাপ বায়ুর গুণমান ইতিমধ্যে দরিদ্র শারীরিক স্বাস্থ্য এবং কিছু ধরনের ক্যান্সারসহ রোগের বিকাশের সাথে জড়িত, তবে বায়ু দূষণ কীভাবে মানসিক স্বাস্থ্যকেও প্রভাবিত করতে পারে সেদিকে এখনও খুব কম মনোযোগ দেওয়া হয়েছে। 

যুক্তরাজ্যের ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় দেখা গেছে, বায়ুদূষণের সংস্পর্শে আসলে এতটাই গুরুতর মানসিক সমস্যা দেখা দেয় যে তাদের চিকিৎসার প্রয়োজন পড়ে। লন্ডনবাসী ১৩ হাজার জনের ওপর পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে— নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইডের সঙ্গে তুলনামূলক সামান্য বাড়তি সংস্পর্শেই কমিউনিটিভিত্তিক চিকিৎসার প্রয়োজন ৩২ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায় এবং হাসপাতালে ভর্তির ঝুঁকি বাড়ে ১৮ শতাংশ। শুধু লন্ডনেই না বিশ্বের প্রায় সব বড় শহরের ক্ষেত্রেই এই ফলাফল প্রযোজ্য হতে পারে। লাখো মানুষকে বাঁচাতে হলে তাই বায়ু দূষণ দূর করতে হবে।

গবেষণা কার্যক্রমে অংশ নেওয়া ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের জোয়ান নিউবারি বলেন, ‘চাইলে বায়ু দূষণ রোধ করা যায় এবং জনসংখ্যার বড় অংশকে দূষণ অঞ্চল থেকে দূরে রাখা যায়। এর জন্য নানারকম যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা যেতে পারে। যেমন প্রযুক্তির সাহায্যে তুলনামূলক কম দূষিত বায়ু নির্গমন হয় এমন অঞ্চল সম্প্রসারণ করা যায়। বায়ু দূষণের আওতায় আসা প্রতিটি ব্যক্তির মানসিক স্বাস্থ্য চিকিৎসা নিশ্চিত করার চেয়ে সেটি সহজ।’

গবেষণার নেতৃত্বদানকারী কিংস কলেজ লন্ডনের ইওনিস বাকোলিস বলেন, ‘সাম্প্রতিক বছরগুলোতে লন্ডনে বায়ু দূষণের মাত্রা কমলেও তাকে নিরাপদ বলা যাবে না। এমনকি বায়ু দূষণের হার একদম কম হলেও প্রভাব একই থাকে।’

গবেষণাটিতে দেখা গেছে যে, বায়ু দূষণের ফলে ছোট ছোট হতাশা এবং উদ্বেগ বৃদ্ধির হার উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও দূষণাঞ্চলে নানারকম মানসিক রোগের প্রকোপ এবং আত্মহত্যার ঘটনাও বেড়েছে। 

অন্যান্য গবেষণায় দেখা গেছে যে, বায়ু দূষণ বুদ্ধিমত্তার ‘ব্যাপক’ হ্রাস ঘটায় এবং এটি ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রমের সঙ্গেও যুক্ত। মানবশরীরে বায়ু দূষণের প্রভাব সংক্রান্ত ২০১৯ সালের একটি বৈশ্বিক পর্যালোচনা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে যে, বায়ু দূষণ মানুষের শরীরের প্রতিটি অঙ্গকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

দক্ষিণ লন্ডনের বাসিন্দাদের ওপর পরিচালিত ব্রিটিশ সাইকিয়াট্রি জার্নালে প্রকাশিত নতুন এই গবেষণায় তারা বাসিন্দাদের প্রথমবারের মত মানসিক রোগ কবে ধরা পড়ে সেই খোঁজ নেন। সেই সঙ্গে উচ্চমানের যন্ত্র ব্যবহার করে তাদের বাসস্থানের চারপাশের বায়ু দূষণ পরিস্থিতি পরীক্ষা করে দেখেন।

বিশ্বব্যাংকের এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশের দূষণ-প্রবণ এলাকাগুলোর প্রায় ১৪ শতাংশ বাসিন্দা বিষণ্নতায় ভুগছেন। গবেষণাটিতে বিভিন্ন প্রশ্নের মাধ্যমে মানসিক স্বাস্থ্য পরিস্থিতি পরিমাপ করা হয়।

বায়ুদূষণের শারীরিক ও মানসিক প্রভাব নিয়ে বিশ্বব্যাংকের গবেষণায় দেখা গেছে যে, সবচেয়ে বেশি বায়ুদূষণ হচ্ছে ঢাকায়। ঢাকায় যানজট ও নির্মাণাধীন প্রকল্পের কারণে যে পরিমাণ বায়ুদূষণ হয়, তা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বায়ুমানের চেয়ে ১৫০ শতাংশ বেশি এবং ইটভাটার কারণে যে দূষণ হয় তা ১৩৬ শতাংশ বেশি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত মাত্রা থেকে ১ শতাংশ দূষণ বাড়লে বিষণ্নতায় ভোগা মানুষের সংখ্যা ২০ গুণ বেড়ে যেতে পারে।

তাই পরিবেশদূষণ রোধ করার পাশাপাশি জনসচেতনতার কোনো বিকল্প নেই 

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *