আন্তর্জাতিক

‘কালো টাকা সাদা করার সুযোগের বিষয়টি যৌক্তিক হতে পারে না’

ডেস্ক রিপোর্ট: কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়ার বিষয়টি কোনো বিবেচনায় যৌক্তিক হতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের একাধিক গবেষক।

শুক্রবার (৭ জুন) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত বাজেট-পরবর্তী এক সংবাদ সম্মেলনে এ সব কথা বলেন গবেষকগণ।

সিপিডির পক্ষ থেকে বাজেট পর্যালোচনার লক্ষ্যে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, দেশের প্রচলিত আইনে যেখানে সৎ করদাতাদের জন্য সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কর নির্ধারণ করা আছে, সেখানে কালো টাকার মালিকরা মাত্র ১৫ শতাংশ কর পরিশোধের সুযোগ পাবেন।

রেয়াতি সুদে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিয়ে দুর্নীতিবাজদের উৎসাহিত করার পাশাপাশি সঠিকভাবে সৎ করদাতাদের নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে বলে মনে করেন তারা।

এটাকে বৈষম্য হিসেবে চিহ্নিত করে তিনি বলেন, ১৫ শতাংশ কর দিয়েই সুযোগ দেয়া হবে। সর্বোচ্চ করের হার ৩০ শতাংশ, যারা সৎভাবে আয় করে এবং নিয়মিত কর দেয় তাদের দিতে হচ্ছে ৩০ শতাংশ।

ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘এটা কোন ধরনের সামাজিক নায্যতা? যারা নিয়মিত কর দিচ্ছেন তাদের প্রতি এটা একটা বিরাট অন্যায়। নৈতিকভাবে, অর্থনৈতিকভাবে কোনোভাবেই এটা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।’ 

কর আদায়ের প্রেক্ষিত বিবেচনা করলেও কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়ার যৌক্তিকতা নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, এর মাধ্যমে তেমন কর আদায় হয় না। এ ধরনের পদক্ষেপ সফল হলে দেশের কর জিডিপির হার এত কম থাকত না বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, এই ব্যবস্থার মাধ্যমে যারা কর ফাঁকি দেয় তাদের উৎসাহিত করা হচ্ছে আর যারা কর দিচ্ছেন তাদের তিরস্কার করা হচ্ছে।

কালো টাকার মালিকদের প্রশয় দেয়া আওয়ামী লীগের মতো ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দলের দর্শনের সঙ্গে একেবারেই বেমানান বলে মন্তব্য করেন সিপিডির ডিশটিংগুইশড ফেলো প্রফেসর মুস্তাফিজুর রহমান।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে দুর্বৃত্তায়ন, কর খেলাপি ও ঋণ খেলপিদের বিষয়ে শূন্য সহিষ্ণুতার কথা বলা হয়েছিল। লোন ও ঋণ খেলাপির বিষয়ে শূন্য সহিষ্ণু থাকার কথা ছিল।

“যিনি কর ও ঋণ খেলাপি করেছেন, টাকা পাচার করেছেন। এই দুষ্টু চক্রকে মাথায় হাত বুলিযে সুবিধা দিয়ে এই টাকা অর্থনীতির মূল ধারায় নিয়ে আসবেন, না কী দুর্বৃত্তায়নের বিরুদ্ধে জেহাদের দিকে যাবেন?” প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, বৈধ আয়ের মালিকরা ৩০ শতাংশ কর দিবেন আর কর ফাঁকি ও অবৈধভাবে অর্জন করা টাকায় মাত্র ১৫ শতাংশ কর আরোপ করে বৈষম্য সৃষ্টি করা হচ্ছে।

কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়ার বিষয়টিকে এক ধরনের প্রণোদনা মূলক ব্যবস্থা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।

তিনি বলেন, কালো টাকা স্বয়ংক্রিয়ভাবে করতে পারার মতো কোনো ইনস্ট্রুমেন্ট এই মুহূর্তে সরকারের হাতে নেই। ইন্টিগ্রেটেড ফাইন্যান্সিয়াল সিস্টেম চালু না হলে এই ধরনের উদ্বুদ্ধ করা, প্রেরণা দেয়া, কম করে সাদা করার সুযোগ দেয়ায় খুব লাভ হয় না।

তিনি বলেন, দুর্ভাগ্যবশত বাংলাদেশের রাজস্বনীতি এখন ব্যক্তি ও গোষ্ঠী নির্ভর নীতিতে পরিণত হয়েছে। এ সব বিষয় রাজস্ব আদায়ে বড় ধরনের আঘাত ফেলে।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *