সারাদেশ

সিঙ্গাপুরে প্রবাসীদের আতঙ্ক ‘লোন শার্ক’

ডেস্ক রিপোর্ট: বৈধ ব্যাংকিং পন্থায় ঋণ পান না বলে অনিবন্ধিত প্রক্রিয়া থেকে অনেক সময় ঋণ নিয়ে থাকের সিঙ্গাপুরের প্রবাসী কর্মীরা। কিন্তু সময়মতো সেই ঋণ পরিশোধ করতে না পারলে, এক ভয়াবহ অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। বেনামে চিঠি দিয়ে হয়রানি করা হয় কর্মীকে নিয়োগ দেয়া মালিকপক্ষকে। এমনকি বাংলাদেশে কর্মীর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে সেই ছায়া ঋণ ব্যবস্থা। যাকে বলা হয় ‘লোন শার্ক’।

তবে চলতি বছরের লোন শার্কের ঘটনা সবাইকে বিস্মিত করেছে! ঋণ না নিলেও বাংলাদেশি কর্মী শরীফের নামে একের পর এক চিঠি আসতে শুরু করে। এক পর্যা‌য়ে বাধ্য হয়ে শরীফকে চাকরিচ্যুত করে নির্মাণ কোম্পানি হিয়াপ সেং পিলিং। এই ঘটনায় আতঙ্ক বিরাজ করছে দেশটিতে অবস্থিত বাংলাদেশি শ্রমিকদের মধ্যে।

চলতি বছরের শুরুতে ‘লোন শার্ক’ এর চিঠি পায় হিয়াপ সেন লিং কোম্পানি। তবে সেই সময় বিষয়টিকে কর্তৃপক্ষ কোন গুরুত্ব দেয়নি। পূর্বেও কোম্পানিটিতে শ্রমিকদের অনিবন্ধিত উৎস থেকে লোন নেয়ার বিষয়ে চিঠি এসেছিল। সেগুলো সহজেই ব্যক্তি পর্যায়ে সমাধান করা হয়েছে।

তবে কোম্পানির নিরাপত্তা সমন্বায়ক শরীফ উদ্দিনের নামে পাঠানো চিঠিটিতে হত্যার হুমকি দেয়া হয়। আর এই বাংলাদেশি শ্রমিক বরাবরই লোন শার্ক থেকে ঋণ নেয়ার অভিযোগটি অস্বীকার করে আসছে।

এই অবস্থায় হিয়াপ সেং কোম্পানি শরীফের বিরুদ্ধে কোন ধরনের ব্যবস্থা না নিয়ে বরং পুলিশের কাছে অভিযোগ করে। কোম্পানির পরিচালক ওয়েন ইয়ান বলেন, ‘আমরা সাধারণত আমাদের কর্মীদের বিশ্বাস করি।’

পর্যায়ক্রমে কোম্পানিটিতে দশটি চিঠি পাঠানো হয়। সবগুলোই পুলিশকে জানানো হয়। তবে এতেই লোন শার্ক থেমে থাকেনি। এরপর চিঠি পাঠানো শুরু করে হিয়াপ সেং কোম্পানির অফিস বিল্ডিংয়ের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকে। ইয়ান বলেন, চিঠিগুলোতে আমাদের কোম্পানির নাম উল্লেখ করা হতো যেন ম্যানেজমেন্ট কর্পোরেশন আমাদেরকে এই ভবন থেকে চলে যেতে বলে। তবে এরপরও কোম্পানিটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় ব্যবসা পরিচালনা করে যাচ্ছিল।

তবে বিষয়টি গভীর উদ্বেগের বিষয় হয়ে উঠে যখন শরীফের জন্য কোম্পানির মালিকের মেয়ের বাসাতেও চিঠি পাঠানো হয়। এমনকি তার প্রতিবেশীদের বাসাতেও চিঠি পাঠায় শার্ক লোন।

ইয়ান বলেন, তার দুজন শিশু সন্তান রয়েছে। এ ধরনের চিঠিতে সে ভয় পেয়েছে। সে নিজেও হিয়াপ সেন কোম্পানিতে চাকুরি করেন। ওর বাসার ঠিকানা এই চক্র কীভাবে পেলো, এটা তাকে আতঙ্কিত করেছে। এমনকি চিঠিতে তার গাড়ির নম্বরও দিয়েছে।

ইয়ান বলেন, এই ঘটনার পর আমরা খুব চিন্তিত হই। পুলিশের কাছে রিপোর্ট করি এবং শরীফকে অব্যাহতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেই।

লোন শার্কের কারণে প্রবাসী শ্রমিকদের ছাঁটাই না করার আহ্বান জানিয়েছে সিঙ্গাপুরের কর্ম সংস্থান মন্ত্রণালয়। তবে হিয়াপ সেং জানিয়েছে, একজন শ্রমিকের কারণে পুরো কোম্পানির কয়েক হাজার শ্রমিককে তারা বিপদে ফেলতে পারে না। এছাড়াও শরীফের জন্য তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে।

এদিকে পুলিশের তদন্তেও শরীফের ঋণ নেয়ার কোনো ধরনের প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

এই অবস্থায় শুধু লোন শার্কের মিথ্যা অভিযোগের কারণে প্রবাসী শ্রমিকদের মধ্যে এখন আতঙ্ক বিরাজ করছে।

হাজী লেন এলাকার বাংলাদেশি শ্রমিক আনোয়ার বার্তা২৪-কে বলেন, এখানে অনেক সময় একজন আরেকজনের পেছনে শত্রুতা করে এই ধরনের ঘটনা ঘটায়। শরীফের এই ঘটনা এখন সবার মুখে মুখে। অনেকেই ধারণা করছে হয়তো অন্য কোন শরীফ নামের ব্যক্তির ঋণের কারণে এই শরীফ উদ্দিন ফেসে গিয়েছেন। 

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *